ঢাকা ১২:৪১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পাত্রী দেখতে গিয়ে অপহৃত তিন বন্ধুর লাশ মিলল পাহাড়ে

টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি
  • Update Time : ০৮:৫১:২৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ মে ২০২৩
  • / ১০৯ Time View

মোহাম্মদ ইউছুপ, ইমরান সরকার ও জমির হোসেন রুবেল

কক্সবাজারের টেকনাফে পাত্রী দেখতে যাওয়ার পথে অপহৃত হওয়ার ২৫ দিন পর তিন বন্ধুর গলিত মৃতদেহ উদ্ধার করেছে র‌্যাব ও পুলিশ।

কক্সবাজার থেকে টেকনাফে পাত্রী দেখতে আসার পথে তিন বন্ধুকে অপহরণ করেন রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা। অপহরণকারীরা ভুক্তভোগীদের পরিবারের সদস্যদের কাছে ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। পরে চাহিদা অনুযায়ী মুক্তিপণ না পেয়ে তিন বন্ধুকে হত্যা করা হয়।

আজ বুধবার টেকনাফের একটি পাহাড় থেকে ওই তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তারা হলেন মোহাম্মদ ইউছুপ, জমির হোসেন রুবেল ও ইমরান সরকার।

আজ দুপুরে পুলিশ ও র‌্যাব টেকনাফের বিভিন্ন পাহাড়ে যৌথ অভিযান চালায়। একপর্যায়ে সন্ধ্যার দিকে একটি পাহাড় থেকে তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করে। উদ্ধার হওয়া মরদেহগুলো অর্ধগলিত হওয়ায় এখনো চিহ্নিত করা যায়নি।

নিহতদের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, গত ২৮ এপ্রিল জুমার পর কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলার জালালাবাদ ইউনিয়নের মোহাম্মদ ইউছুপ, সদরের চৌফলদন্ডী ইউনিয়নের জমির হোসেন রুবেল এবং ইমরান নামের তিন বন্ধু কক্সবাজার শহরের উত্তর নুনিয়াছড়া থেকে পাত্রী দেখতে টেকনাফে আসার উদ্দেশে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ওঠেন। তাদের টেকনাফ সদর ইউনিয়নের লেঙ্গুর বিল এলাকায় বসবাস করা রোহিঙ্গা যুবক মোহাম্মদ শফির ছেলে হেলালের বাড়িতে পাত্রী দেখতে আসার কথা ছিল।

টেকনাফ পৌঁছার আগেই তাদের বহনকারী অটোরিকশায় থামিয়ে একদল রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী ইমরান, ইউছুপ, রুবেলকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে পাহাড়ে নিয়ে যায়। নিয়ে যাওয়ার দুই দিন পর তাদের হাত পা বেঁধে উপর্যুপুরি নির্যাতন করে ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ চেয়ে নির্যাতনের ভিডিও পাঠায় পরিবারের কাছে।

এদিকে, নিখোঁজদের সন্ধানে পাহাড়ে অভিযানের খবরে ছুটে আসেন নিখোঁজ এমরানের বাবা ইব্রাহিম। তিনি বলেন, ‘গত ২৫ দিন আগে আমার ছেলেসহ তিন বন্ধু মিলে টেকনাফে বেড়াতে আসে। এক সিএনজি ড্রাইভারের কাছ থেকে শুনি আমার ছেলে অপহরণ হয়েছে। ছেলে অপহরণের ঘটনা শুনে টেকনাফ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে যায়। থানায় ঘোরাঘুরি করার পর অপহরণের ৪ দিনের মাথায় থানা-পুলিশ জিডি নেয়।’

ইব্রাহিম বলেন, ‘আজকে প্রশাসন ৩ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছে। কিন্তু এখনো নিশ্চিত নই সেখানে আমার ছেলে আছে কি না।’

এ বিষয়ে অপহৃত ইউসুফের ছোট ভাই মো.ইউনুছ বলেন, আমরা টেকনাফ থানায় রয়েছি। লাশ এখনো থানায় আনা হয়নি।

এ বিষয়ে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম বলেন, টেকনাফের দমদমিয়া চেকপোস্ট এলাকার তিনটি পাহাড়ের পরের গহিন বন থেকে তিনজনের গলিত মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মৃতদেহগুলো সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির জন্য টেকনাফ থানায় নেয়া হচ্ছে। সেখান থেকে তাদের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে আনা হচ্ছে।

টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল হালিম বলেন, পুলিশ ও র‍্যাব যৌথ অভিযানে তিনটি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। কিন্তু উদ্ধার হওয়া মরদেহগুলো কঙ্কাল হয়ে যাওয়ায় শনাক্ত করা যাচ্ছে না।

র‍্যাব-১৫ কক্সবাজার ব্যাটালিয়নেরর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন বলেন, ‘তিন বন্ধু নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে তাদের উদ্ধারের চেষ্টা চালায় র‌্যাব। পরবর্তীতে এক অপহরণকারীকে আটক করা হয়। আটক ব্যক্তির স্বীকারোক্তি মতে টেকনাফ দমদমিয়া সংলগ্ন গহীন পাহাড় থেকে তিন বন্ধুর গলিত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে।’

 

Please Share This Post in Your Social Media

পাত্রী দেখতে গিয়ে অপহৃত তিন বন্ধুর লাশ মিলল পাহাড়ে

Update Time : ০৮:৫১:২৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ মে ২০২৩

কক্সবাজারের টেকনাফে পাত্রী দেখতে যাওয়ার পথে অপহৃত হওয়ার ২৫ দিন পর তিন বন্ধুর গলিত মৃতদেহ উদ্ধার করেছে র‌্যাব ও পুলিশ।

কক্সবাজার থেকে টেকনাফে পাত্রী দেখতে আসার পথে তিন বন্ধুকে অপহরণ করেন রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা। অপহরণকারীরা ভুক্তভোগীদের পরিবারের সদস্যদের কাছে ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। পরে চাহিদা অনুযায়ী মুক্তিপণ না পেয়ে তিন বন্ধুকে হত্যা করা হয়।

আজ বুধবার টেকনাফের একটি পাহাড় থেকে ওই তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তারা হলেন মোহাম্মদ ইউছুপ, জমির হোসেন রুবেল ও ইমরান সরকার।

আজ দুপুরে পুলিশ ও র‌্যাব টেকনাফের বিভিন্ন পাহাড়ে যৌথ অভিযান চালায়। একপর্যায়ে সন্ধ্যার দিকে একটি পাহাড় থেকে তিনজনের মরদেহ উদ্ধার করে। উদ্ধার হওয়া মরদেহগুলো অর্ধগলিত হওয়ায় এখনো চিহ্নিত করা যায়নি।

নিহতদের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, গত ২৮ এপ্রিল জুমার পর কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলার জালালাবাদ ইউনিয়নের মোহাম্মদ ইউছুপ, সদরের চৌফলদন্ডী ইউনিয়নের জমির হোসেন রুবেল এবং ইমরান নামের তিন বন্ধু কক্সবাজার শহরের উত্তর নুনিয়াছড়া থেকে পাত্রী দেখতে টেকনাফে আসার উদ্দেশে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ওঠেন। তাদের টেকনাফ সদর ইউনিয়নের লেঙ্গুর বিল এলাকায় বসবাস করা রোহিঙ্গা যুবক মোহাম্মদ শফির ছেলে হেলালের বাড়িতে পাত্রী দেখতে আসার কথা ছিল।

টেকনাফ পৌঁছার আগেই তাদের বহনকারী অটোরিকশায় থামিয়ে একদল রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী ইমরান, ইউছুপ, রুবেলকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে পাহাড়ে নিয়ে যায়। নিয়ে যাওয়ার দুই দিন পর তাদের হাত পা বেঁধে উপর্যুপুরি নির্যাতন করে ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ চেয়ে নির্যাতনের ভিডিও পাঠায় পরিবারের কাছে।

এদিকে, নিখোঁজদের সন্ধানে পাহাড়ে অভিযানের খবরে ছুটে আসেন নিখোঁজ এমরানের বাবা ইব্রাহিম। তিনি বলেন, ‘গত ২৫ দিন আগে আমার ছেলেসহ তিন বন্ধু মিলে টেকনাফে বেড়াতে আসে। এক সিএনজি ড্রাইভারের কাছ থেকে শুনি আমার ছেলে অপহরণ হয়েছে। ছেলে অপহরণের ঘটনা শুনে টেকনাফ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে যায়। থানায় ঘোরাঘুরি করার পর অপহরণের ৪ দিনের মাথায় থানা-পুলিশ জিডি নেয়।’

ইব্রাহিম বলেন, ‘আজকে প্রশাসন ৩ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছে। কিন্তু এখনো নিশ্চিত নই সেখানে আমার ছেলে আছে কি না।’

এ বিষয়ে অপহৃত ইউসুফের ছোট ভাই মো.ইউনুছ বলেন, আমরা টেকনাফ থানায় রয়েছি। লাশ এখনো থানায় আনা হয়নি।

এ বিষয়ে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম বলেন, টেকনাফের দমদমিয়া চেকপোস্ট এলাকার তিনটি পাহাড়ের পরের গহিন বন থেকে তিনজনের গলিত মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মৃতদেহগুলো সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির জন্য টেকনাফ থানায় নেয়া হচ্ছে। সেখান থেকে তাদের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতাল মর্গে আনা হচ্ছে।

টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল হালিম বলেন, পুলিশ ও র‍্যাব যৌথ অভিযানে তিনটি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। কিন্তু উদ্ধার হওয়া মরদেহগুলো কঙ্কাল হয়ে যাওয়ায় শনাক্ত করা যাচ্ছে না।

র‍্যাব-১৫ কক্সবাজার ব্যাটালিয়নেরর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন বলেন, ‘তিন বন্ধু নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে তাদের উদ্ধারের চেষ্টা চালায় র‌্যাব। পরবর্তীতে এক অপহরণকারীকে আটক করা হয়। আটক ব্যক্তির স্বীকারোক্তি মতে টেকনাফ দমদমিয়া সংলগ্ন গহীন পাহাড় থেকে তিন বন্ধুর গলিত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে।’