নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানী জেমস ওয়াটসন আর নেই
- Update Time : ১১:২৭:৪৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৮ নভেম্বর ২০২৫
- / ৮৭ Time View
ডিএনএর ডাবল-হেলিক্স গঠন আবিষ্কার করে জীববিজ্ঞানে বিপ্লব ঘটানো নোবেলজয়ী মার্কিন বিজ্ঞানী জেমস ডিউই ওয়াটসন মারা গেছেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৭ বছর। নিউ ইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, ওয়াটসন এই সপ্তাহে লং আইল্যান্ডের একটি হসপিসে মারা যান।
ওয়াটসনের কয়েক দশকের কর্মস্থল লং আইল্যান্ডের কোল্ড স্প্রিং হারবার ল্যাবরেটরি (সিএসএইচএল) তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
১৯৫৩ সালে ডিএনএর গঠন আবিষ্কার করেন। এই আবিষ্কার শুধু জিনতত্ত্বেই বিপ্লব ঘটায়নি, বরং পরবর্তীতে জিন প্রকৌশল ও বায়োটেকনোলজির বিকাশের ভিত্তি তৈরি করে।
তবে জীবনের শেষভাগে জাতি ও বুদ্ধিমত্তা নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের কারণে তিনি বিজ্ঞানজগত থেকে একপ্রকার বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন।
ওয়াটসন ও ব্রিটিশ পদার্থবিজ্ঞানী ফ্রান্সিস ক্রিক ১৯৫৩ সালে ডিএনএর ত্রি-মাত্রিক গঠন আবিষ্কার করেন। এই যুগান্তকারী আবিষ্কারের জন্য তারা ১৯৬২ সালে চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পান।
ওয়াটসনের আত্মজীবনীমূলক বই “দ্য ডাবল হেলিক্স” প্রকাশিত হয় ১৯৬৮ সালে। তবে বইটি প্রকাশের পর ফ্রান্সিস ক্রিক ও সহকর্মী মরিস উইলকিনস অভিযোগ করেন, বইটিতে তাদের গোপনীয়তা লঙ্ঘিত হয়েছে এবং বিজ্ঞানীদের প্রতিযোগিতামূলক মনোভাবকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।
এছাড়া, তারা ডিএনএর গঠন নির্ণয়ে রোজালিন্ড ফ্র্যাঙ্কলিনের এক্স-রে তথ্য ব্যবহার করেছিলেন, কিন্তু যথাযথ কৃতিত্ব দেননি—এ নিয়েও সমালোচনা ওঠে।
২০০৭ সালে ওয়াটসন টাইমস অব লন্ডনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, আফ্রিকানদের বুদ্ধিমত্তা “আমাদের মতো নয়।”এই মন্তব্যে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে তাকে কোল্ড স্প্রিং হারবার ল্যাবরেটরির চ্যান্সেলর পদ থেকে অপসারণ করা হয়। যদিও পরে তিনি ক্ষমা চান, তবু ২০১৯ সালের এক প্রামাণ্যচিত্রে একই ধরনের বক্তব্য দিলে তিনি আবারও সমালোচিত হন।
জেমস ডিউই ওয়াটসন ১৯২৮ সালের ৬ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৪৭ সালে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাণিবিদ্যায় স্নাতক ডিগ্রি এবং পরে ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জেনেটিক্সে পিএইচডি অর্জন করেন।
১৯৫১ সালে তিনি ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাভেনডিশ ল্যাবরেটরিতে যোগ দেন। সেখানেই ক্রিকের সঙ্গে তার পরিচয় এবং যৌথ গবেষণা শুরু হয়। ১৯৫৩ সালে তারা ডিএনএর ডাবল-হেলিক্স গঠন প্রকাশ করলে জীববিজ্ঞানে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়।
তাদের আবিষ্কৃত গঠনে দেখা যায়, ডিএনএ দুটি পাকানো সিঁড়ির মতো—যার ধাপ তৈরি হয় চারটি নিউক্লিওটাইড জোড়া দিয়ে। এই গঠন থেকেই বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারেন, কীভাবে জেনেটিক তথ্য এক প্রজন্ম থেকে পরের প্রজন্মে সঠিকভাবে স্থানান্তরিত হয়।
১৯৯০ সালে ওয়াটসনকে হিউম্যান জিনোম প্রজেক্টের প্রধান করা হয়। এই প্রকল্পের লক্ষ্য ছিল মানুষের সম্পূর্ণ জিনগত গঠন বা ৩ বিলিয়ন ডিএনএ উপাদানের ক্রম নির্ধারণ করা।
তবে পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অব হেলথ (এনআইএইচ) কিছু জিন অনুক্রমের পেটেন্ট নিতে চাইলে ওয়াটসন তাতে আপত্তি জানান ও পদত্যাগ করেন। তার মত ছিল, মানব জিনের জ্ঞান সর্বজনীন সম্পদ হিসেবে উন্মুক্ত থাকা উচিত।
২০০৭ সালে তিনি বিশ্বের দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে নিজের সম্পূর্ণ জিনোম সিকোয়েন্স প্রকাশ করেন।
তবে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, তার সবচেয়ে গর্বের অর্জন ডাবল হেলিক্স আবিষ্কার নয়, বরং তার লেখা বইগুলো। বয়সকালে তিনি “অ্যাভোয়েড বোরিং পিপল” নামে একটি বই লেখেন। সেখানে নিজের বিতর্কিত ও সাহসী চরিত্রের কথা প্রকাশ করেন।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
জনপ্রিয়







































































































































































































