ঢাকা ০৮:০৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৫, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
মির্জা ফখরুল

নির্বাচনের সম্ভাবনা দেখা দিলেও একটি মহল অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করতে চাইছে

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ০৬:১৮:২৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৫
  • / ১৫ Time View

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

বিভ্রান্তি, হতাশা ও অনিশ্চয়তার মধ্যেও জাতীয় নির্বাচন হওয়ার একটি সম্ভাবনা এখন তৈরি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। কিন্তু একটি মহল পরিকল্পিতভাবে দেশে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করতে চাইছে। রোববার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন মির্জা ফখরুল। মজলুম জননেতা মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। আয়োজক বিএনপি গঠিত মাওলানা ভাসানী মৃত্যুবার্ষিকী পালন জাতীয় কমিটি।

সভায় মির্জা ফখরুল বলেন, যা–ই হোক, অনেক বিভ্রান্তি, অনেক হতাশা ও অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়েও কিন্তু এই নির্বাচনের এখন একটা সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে যে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এই নির্বাচন হবে। এখানে কিছু গোষ্ঠী, কিছু মহল আজ পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশে একটা অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করতে চায়। তারা বিভিন্ন রকম দাবি তুলে নির্বাচনকে ব্যাহত, বন্ধ, বিলম্বিত করতে চায়। কিন্তু এই দেশের মানুষের এখন সবচেয়ে বড় প্রয়োজন হলো একটা নির্বাচিত সরকার, যার পেছনে জনগণ থাকবে।

কালবিলম্ব না করে নির্বাচনপ্রক্রিয়াকে সমর্থন জানিয়ে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করার সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়ার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল।

দেশের অর্থনীতির অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন বিএনপির মহাসচিব। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নির্বাচিত সরকার না থাকলে অর্থনীতির অবস্থা আরও খারাপ হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। নির্বাচিত সরকার না থাকলে খুবই খারাপ হবে।

মির্জা ফখরুল বলেন, আগামীকাল সোমবার ফ্যাসিস্ট হাসিনার গণহত্যার রায়কে কেন্দ্র করে একটা মহল দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করার জন্য পাঁয়তারা করছে।

রাজনৈতিক বিভাজন ও অস্থিরতার সুযোগে একটি গোষ্ঠী দেশে নৈরাজ্য তৈরি করতে পারে বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, তাই নির্বাচনের বিষয়ে সব রাজনৈতিক দলের দায়িত্বশীল আচরণ জরুরি।

আলোচনা সভায় অর্থনীতিবিদ মাহবুব উল্লাহ বলেন, ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের বিষয়টি সরকার যত বলিষ্ঠতার সঙ্গে ঘোষণা করুক না কেন, পরিস্থিতি যেভাবে এগোচ্ছে, তাতে একটা কালো মেঘ ও কালো ছায়া দেখা যায়। এই নির্বাচন যদি সময়মতো অনুষ্ঠিত না হয়, তাহলে দেশের জন্য বিরাট বিপর্যয়, বিরাট সংকটের সৃষ্টি হবে বলে তাঁর ধারণা।

গণভোটের চারটি প্রশ্ন জনগণের কাছে কতটা বোধগম্য হবে, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন মাহবুব উল্লাহ।

তিনি বলেন, গণভোট ও নির্বাচন একই সঙ্গে অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু শঙ্কা জাগে, গণভোটের চারটি প্রশ্ন জনগণের কাছে কতটা বোধগম্য হবে। জনগণ কতটা তা বুঝতে পারবে। এই ব্যাপারে তাঁর যথেষ্ট সন্দেহ আছে। কারণ, এখনো বাংলাদেশের বিরাটসংখ্যক জনগোষ্ঠীকে বলা যায় নিরক্ষর। তারা কীভাবে এই চার জটিল প্রশ্নের আলোকে একটা সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে, সেটা একটা বড় প্রশ্ন। তাই আজ যেটা প্রয়োজন, সেটা হচ্ছে রাজনৈতিক একতা, যারা দেশকে ভালোবাসে, তাদের একতা।

অর্থনীতিবিদ মাহবুব উল্লাহ বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের পর যে দূরত্ব এই জুলাইয়ের শক্তিগুলোর মধ্যে তৈরি হয়েছে, তা কমাতে হবে। দেশের জন্য কাজ করতে হবে। দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য এককাট্টা হতে হবে। মনে রাখতে হবে, গণতন্ত্র না থাকলে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব থাকবে না।

গণতন্ত্রের পথে কোনো রকম বাধা সৃষ্টি এই দেশের জনগণ একেবারেই সহ্য করবে না বলে মন্তব্য করেন মাহবুব উল্লাহ। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার নির্বাচনে জনগণের অংশগ্রহণ ছিল না। সেই নির্বাচনগুলো করার জন্য শেখ হাসিনাকে সহায়তা করেছিল প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত। তাই এখানে আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামেও গণতন্ত্রের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করতে হবে। গণতন্ত্রের পথে কোনো রকম বাধা সৃষ্টি করা এই দেশের জনগণ একেবারেই সহ্য করবে না। কাজেই যাঁরা দায়িত্বে আছেন, তাঁদের আগামী নির্বাচন যাতে সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হয়, স্বাভাবিকভাবে অনুষ্ঠিত হয়, এর পথে যাতে কোনো রকম বাধা-বিপত্তি না থাকে, সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

মাহবুব উল্লাহ বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি আহ্বান, তিনি আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজনের যে ঘোষণা দিয়েছেন, তা যাতে সার্থক হয়। সেই ঘোষণা মোতাবেক যাতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান। বক্তব্য দেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আবদুস সালাম আজাদ প্রমুখ।

 

Please Share This Post in Your Social Media

মির্জা ফখরুল

নির্বাচনের সম্ভাবনা দেখা দিলেও একটি মহল অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করতে চাইছে

নিজস্ব প্রতিবেদক
Update Time : ০৬:১৮:২৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৫

বিভ্রান্তি, হতাশা ও অনিশ্চয়তার মধ্যেও জাতীয় নির্বাচন হওয়ার একটি সম্ভাবনা এখন তৈরি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। কিন্তু একটি মহল পরিকল্পিতভাবে দেশে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করতে চাইছে। রোববার দুপুরে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন মির্জা ফখরুল। মজলুম জননেতা মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৯তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। আয়োজক বিএনপি গঠিত মাওলানা ভাসানী মৃত্যুবার্ষিকী পালন জাতীয় কমিটি।

সভায় মির্জা ফখরুল বলেন, যা–ই হোক, অনেক বিভ্রান্তি, অনেক হতাশা ও অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়েও কিন্তু এই নির্বাচনের এখন একটা সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে যে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এই নির্বাচন হবে। এখানে কিছু গোষ্ঠী, কিছু মহল আজ পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশে একটা অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করতে চায়। তারা বিভিন্ন রকম দাবি তুলে নির্বাচনকে ব্যাহত, বন্ধ, বিলম্বিত করতে চায়। কিন্তু এই দেশের মানুষের এখন সবচেয়ে বড় প্রয়োজন হলো একটা নির্বাচিত সরকার, যার পেছনে জনগণ থাকবে।

কালবিলম্ব না করে নির্বাচনপ্রক্রিয়াকে সমর্থন জানিয়ে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করার সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়ার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল।

দেশের অর্থনীতির অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন বিএনপির মহাসচিব। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নির্বাচিত সরকার না থাকলে অর্থনীতির অবস্থা আরও খারাপ হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। নির্বাচিত সরকার না থাকলে খুবই খারাপ হবে।

মির্জা ফখরুল বলেন, আগামীকাল সোমবার ফ্যাসিস্ট হাসিনার গণহত্যার রায়কে কেন্দ্র করে একটা মহল দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করার জন্য পাঁয়তারা করছে।

রাজনৈতিক বিভাজন ও অস্থিরতার সুযোগে একটি গোষ্ঠী দেশে নৈরাজ্য তৈরি করতে পারে বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, তাই নির্বাচনের বিষয়ে সব রাজনৈতিক দলের দায়িত্বশীল আচরণ জরুরি।

আলোচনা সভায় অর্থনীতিবিদ মাহবুব উল্লাহ বলেন, ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের বিষয়টি সরকার যত বলিষ্ঠতার সঙ্গে ঘোষণা করুক না কেন, পরিস্থিতি যেভাবে এগোচ্ছে, তাতে একটা কালো মেঘ ও কালো ছায়া দেখা যায়। এই নির্বাচন যদি সময়মতো অনুষ্ঠিত না হয়, তাহলে দেশের জন্য বিরাট বিপর্যয়, বিরাট সংকটের সৃষ্টি হবে বলে তাঁর ধারণা।

গণভোটের চারটি প্রশ্ন জনগণের কাছে কতটা বোধগম্য হবে, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন মাহবুব উল্লাহ।

তিনি বলেন, গণভোট ও নির্বাচন একই সঙ্গে অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু শঙ্কা জাগে, গণভোটের চারটি প্রশ্ন জনগণের কাছে কতটা বোধগম্য হবে। জনগণ কতটা তা বুঝতে পারবে। এই ব্যাপারে তাঁর যথেষ্ট সন্দেহ আছে। কারণ, এখনো বাংলাদেশের বিরাটসংখ্যক জনগোষ্ঠীকে বলা যায় নিরক্ষর। তারা কীভাবে এই চার জটিল প্রশ্নের আলোকে একটা সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে, সেটা একটা বড় প্রশ্ন। তাই আজ যেটা প্রয়োজন, সেটা হচ্ছে রাজনৈতিক একতা, যারা দেশকে ভালোবাসে, তাদের একতা।

অর্থনীতিবিদ মাহবুব উল্লাহ বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের পর যে দূরত্ব এই জুলাইয়ের শক্তিগুলোর মধ্যে তৈরি হয়েছে, তা কমাতে হবে। দেশের জন্য কাজ করতে হবে। দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য এককাট্টা হতে হবে। মনে রাখতে হবে, গণতন্ত্র না থাকলে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব থাকবে না।

গণতন্ত্রের পথে কোনো রকম বাধা সৃষ্টি এই দেশের জনগণ একেবারেই সহ্য করবে না বলে মন্তব্য করেন মাহবুব উল্লাহ। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার নির্বাচনে জনগণের অংশগ্রহণ ছিল না। সেই নির্বাচনগুলো করার জন্য শেখ হাসিনাকে সহায়তা করেছিল প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত। তাই এখানে আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রামেও গণতন্ত্রের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করতে হবে। গণতন্ত্রের পথে কোনো রকম বাধা সৃষ্টি করা এই দেশের জনগণ একেবারেই সহ্য করবে না। কাজেই যাঁরা দায়িত্বে আছেন, তাঁদের আগামী নির্বাচন যাতে সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত হয়, স্বাভাবিকভাবে অনুষ্ঠিত হয়, এর পথে যাতে কোনো রকম বাধা-বিপত্তি না থাকে, সেই ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

মাহবুব উল্লাহ বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি আহ্বান, তিনি আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আয়োজনের যে ঘোষণা দিয়েছেন, তা যাতে সার্থক হয়। সেই ঘোষণা মোতাবেক যাতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান। বক্তব্য দেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আবদুস সালাম আজাদ প্রমুখ।