নির্বাচনের আগে ছেলেকে ত্যাজ্য করলেন লালু প্রসাদ

- Update Time : ০৪:৪৬:৩২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৬ মে ২০২৫
- / ৪২ Time View
‘দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ’ এবং ‘পারিবারিক মূল্যবোধ ক্ষুণ্ন’ করার অভিযোগ তুলে বড় ছেলেকে পরিবার থেকে ত্যাজ্য করলেন ভারতের বিহার রাজ্যের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও আরজেডি প্রধান লালুপ্রসাদ যাদব। শুধু তাই নয়, ছেলে তেজপ্রতাপ যাদবকে নিজের দল থেকেও তাড়িয়ে দিয়েছেন তিনি।
বিধানসভার ভোটের আগে যাদব পরিবারের এমন অশান্তির খবরে রাজ্যজুড়ে চলছে নানা রকম আলোচনা-সমালোচনা। চলতি বছরের শেষ দিকে রাজ্যটিতে বিধানসভা ভোট হওয়ার কথা রয়েছে।
গতকাল রোববার সামাজিক মাধ্যম ‘এক্স’ হ্যান্ডেলে এক বার্তায় তেজপ্রতাপকে ত্যাজ্য করার কথা জানিয়েছেন লালু প্রসাদ। তিনি লেখেন, আগামী ছয় বছর দলের সঙ্গেও তেজপ্রতাপের কোনো সম্পর্ক থাকবে না। লালুর বার্তা অনুযায়ী, তেজপ্রতাপের আচরণ পারিবারিক মূল্যবোধ ও ঐতিহ্যের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়।
কোন আচরণের জন্য জ্যেষ্ঠপুত্রের প্রতি লালু প্রসাদ এত নির্দয় হলেন, ‘এক্স’ বার্তায় তিনি অবশ্য তা ব্যাখ্যা করেননি। তবে সেই কারণ চাপাও থাকেনি। বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কই যে সেই কারণ, গণমাধ্যম ও সামাজিকমাধ্যমে দিনভর চলে সেই চর্চা।
বিহারের আরেক সাবেক মুখ্যমন্ত্রী দারোগা রাইয়ের নাতনি ঐশ্চর্যের সঙ্গে ২০১৮ সালে বিয়ে হয়েছিল তেজপ্রতাপের। কিন্তু সেই বিয়ে বেশি দিন টেকেনি। অভিযোগ, বিয়ের পরও তেজপ্রতাপ নাকি তার পুরোনো প্রেমিকার সঙ্গে সম্পর্ক রেখেছিলেন। সেই প্রেমিকার সঙ্গে নিজের ছবি দিন কয়েক আগে ফেসবুক অ্যাকাউন্টে প্রকাশ করে তেজপ্রতাপ লিখেছিলেন, ‘ওই নারী, আনুশকা যাদব, তার প্রেমিকা। দীর্ঘ ১২ বছর তাঁদের সম্পর্ক। সেটাই নাকি লালুর ক্ষোভ ও ক্রোধের কারণ। তাই এই সিদ্ধান্ত।
তেজপ্রতাপ যদিও দাবি করেছেন, তার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ‘হ্যাক’ করা হয়েছে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ছবিসহ সেই পোস্ট তিনি মুছেও দেন। বলেন, তিনি ও তার পরিবারকে হেনস্তা ও পারিবারিক ভাবমূর্তি নষ্ট করতে ওই চক্রান্ত। কিন্তু তাতে বিপর্যয় ঠেকানো যায়নি।
বিপর্যয়ের জন্য তেজপ্রতাপ নিজেই অবশ্য দায়ী। ২০১৮ সালে বিয়ের কিছুদিন পর থেকেই তার সঙ্গে স্ত্রী ঐশ্বর্যের অশান্তি ও ঝগড়ার শুরু। মাস কয়েকের মধ্যেই ঐশ্বর্য বাপের বাড়ি চলে যান। তার প্রতি লালু পরিবারের অভব্য ব্যবহারের অভিযোগও এনেছিলেন। যার দরুন দুই পরিবারের মধ্যে অশান্তি দেখা দিয়েছিল।
ঐশ্চর্যের বাবা চন্দ্রিকা রাই ছিলেন আরজেডির নেতা। লালু পরিবারের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হওয়ায় তিনি আরজেডি ছেড়ে দেন। সেই থেকে তেজপ্রতাপ ও ঐশ্বর্যের বিচ্ছেদের মামলা আদালতে বিচারাধীন। দুই পরিবার একে অন্যের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগও এনেছে। ঐশ্বর্যের অভিযোগ, তেজপ্রতাপ মাদকাসক্ত। তেজপ্রতাপের অভিযোগ, ঐশ্বর্য লোভী। তার স্ত্রী নাকি খোরপোশের জন্য বিরাট টাকা দাবি করেছেন।
তেজপ্রতাপ যে পোস্টটি মুছে দিয়েছেন, তাতে তার ও অনুষ্কার অন্তরঙ্গ ছবির সঙ্গে লেখা ছিল, ‘আমি তেজপ্রতাপ যাদব। আমার সঙ্গে ছবিতে যাকে দেখা যাচ্ছে তিনি অনুষ্কা যাদব। আমরা দুজন দুজনকে ১২ বছর ধরে চিনি। একে অন্যকে খুব ভালোবাসি। এত কাল আমরা সম্পর্কে রয়েছি। কিন্তু এই কথা কীভাবে বলব, বুঝে উঠতে পারিনি। আজ তা প্রকাশ করলাম। আশা করি, আপনারা আমাকে বুঝতে পারবেন।
তেজপ্রতাপের ছোট ভাই ও নীতীশ সরকারের সাবেক উপমুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী সামাজিকমাধ্যমে এই প্রসঙ্গে বলেছেন, প্রত্যেকের রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত জীবন আলাদা। তার (তেজপ্রতাপ) নিজের ব্যক্তিগত জীবন বেছে নেওয়ার অধিকার আছে। তার যা বলার, যা জানানোর, তা বলেছেন, জানিয়ে দিয়েছেন।
ভোটের আগে লালু পরিবারের এই অশান্তি বিরোধী জোটের পক্ষে মোটেই শুভ নয়। অপারেশন সিঁদুরের সাফল্য নিয়ে নরেন্দ্র মোদি ও বিজেপির ক্ষুরধার প্রচারের মোকাবিলার পাশাপাশি আরজেডিকে এই ঘরোয়া বিবাদের মুখোমুখিও হতে হবে।