নির্বাচনী জোয়ারে আ.লীগের সব ষড়যন্ত্র ভেসে যাবে : গয়েশ্বর

- Update Time : ১০:০০:০৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / ২৫ Time View
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, মানুষ হাওয়ার ওপর ভোট দেবে না। মানুষ মার্কা দেখে ভোট দেবে। যদি নির্বাচনের জোয়ার ওঠে, সেই জোয়ার ভেসে যাবে আওয়ামী লীগের সব ষড়যন্ত্র।
বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে বিএনপি’র ৪৭ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কেরানীগঞ্জ উপজেলা দক্ষিণ শাখা বিএনপি’র উদ্যোগে আরামবাগিচা মহিলা ডিগ্রী কলেজ মাঠে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, গর্ভবতী মা যতক্ষণ সন্তান প্রসব না করে ততক্ষণ সে প্রসব যন্ত্রণায় ভোগে। তেমনি নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আশঙ্কা থেকেই যাবে। আমাদের দেশ, আমাদের গণতন্ত্র সবাইকে এটা একসাথে ভাবতে হবে।
গয়েশ্বর বলেন, আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃত করেছে এবং শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ঘোষণাকে অস্বীকার করার দুঃসাহস দেখিয়েছে। জিয়াউর রহমান কারও পক্ষ হয়ে নয়, নিজের অধিকার ও দায়িত্ববোধ থেকেই স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগ সেই ঘোষণাকে আজও বিকৃত করে দেশের মানুষকে প্রতারিত করছে।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণেই শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যু হয়েছে। ১৫ আগস্ট অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পর আওয়ামী লীগের কেউ তাকে দেখতে যায়নি, কেবল খন্দকার মোশতাক গিয়েছিলেন। তাই আওয়ামী লীগকে মানুষের সামনে মুক্তিযুদ্ধের একচ্ছত্র মালিক সাজার অধিকার কেউ দেয়নি।
তিনি বলেন, আমিত্বের কারণে শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনা ধ্বংস হয়ে গেছে। ২৪ এর গনঅভ্যুত্থানে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে যারা অংশ গ্রহণ করেছে তাদেরকে আমরা সম্মান জানাই। তাদের অধিকাংশই এখন লেখাপড়ায় ফিরে গেছে। বৈষম্য বিরোধী যোদ্ধাদের কারণে ফেব্রুয়ারিতে যদি নির্বাচন না হয় তাহলে সবচেয়ে বেশি খেসারত দিতে হবে তাদের। শেখ হাসিনা যদি কোন কারনে দেশে আসে তাহলে বৈষম্য বিরোধী যোদ্ধারা সবার আগে শেষ হবে পরে অন্যরা। বৈষম্য বিরোধীদের নাম করে যদি অন্য কেউ এই দলে ঢুকে পড়ে তাহলে গণতন্ত্র রক্ষা হবে না।
তিনি আরো বলেন আমাদের দেশের মানুষ দল, ব্যক্তি ও মার্কা দেখে ভোট দেয়। তারা পিআর পদ্ধতি বোঝেনা। যারা পিআর পদ্ধতির নাম করে নির্বাচন ভুন্ডল করার ষড়যন্ত্র করছেন তাদেরকে আন্দোলনের মাধ্যমে রুখে দেওয়া হবে। নির্বাচন যথাসময়েই চাই।
নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতেই হতে হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য যথেষ্ট নয়। তাদেরকে শক্তি দিতে হবে। আমরা যদি বৈষম্য দূর করতে না পারি তাহলে গণতন্ত্র রক্ষার নামে যারা জুলাই আন্দোলনে রক্ত দিয়েছে, আহত হয়েছে, নিহত হয়েছে তারা শান্তি পাবে না। গয়েশ্বর বলেন, ১৫ই আগস্ট শেখ মজিব সপরিবারে হত্যা হওয়ার পরে ৩২ নম্বরে কোন আওয়ামী লীগ নেতা তাকে দেখতে যায়নি। শুধু খন্দকার মোস্তাক সেখানে গিয়েছিলেন।
মুস্তাকের সাথে সেদিন যারা শপথ নিয়েছিলেন তারা সবাই শেখ মুজিবের মন্ত্রী ছিলেন। আওয়ামী লীগের সাথে রাজাকার পরিবারের বেশি আত্মীয়তার বন্ধন রয়েছে। প্রধান বক্তা হিসাবে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান বলেন, বেগম খালেদা জিয়া গণতন্ত্রের মা। তাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেল খাটানো হয়েছে। তাকে হত্যা করার চেষ্টা করেছে খুনি শেখ হাসিনা। বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে দীর্ঘ ১৭ বছর বিএনপি আন্দোলন করে শেখ হাসিনাকে ভারতে পালাতে সাহায্য করেছে। বাংলাদেশে এখনো অনেক আওয়ামী লীগের দোসর রয়ে গেছে।
যারা ভারতে পালিয়েছে তারা সেখান থেকে দেশকে নিয়ে নানা ষড়যন্ত্র করছে। শেখ হাসিনা মানুষের মৌলিক অধিকার,গণতান্ত্রিক অধিকার ও জনগণের ভোটাধিকার ধ্বংস করেছিল। আমরা গণতন্ত্রকে নিয়ে আর কোন ষড়যন্ত্র হতে দেব না। আওয়ামী লীগের আমলে এবিএম পদ্ধতিতে ভোট দিলে সেটি যেতো আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে। এখন কিছু রাজনৈতিক দল পিআর পদ্ধতি নিয়ে নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন দাবি দাওয়া তুলছেন এবং নির্বাচনকে বিলম্বিত করার নানা ষড়যন্ত্র করছেন। কিন্তু আমরা পিআর পদ্ধতি চাই না। এদেশের মানুষ গণতান্ত্রিক পন্থায় নির্বাচন চায়।
প্রধান বক্তা হিসেবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিনা রহমান বলেন, বেগম খালেদা জিয়া ফ্যাসিস্ট এরশাদকে পরাজিত করেছিলেন, আজও তিনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর তারেক রহমান দলকে ঐক্যবদ্ধ করেছেন। ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থান সেই লড়াইয়ের সফল প্রমাণ।
তিনি অভিযোগ করেন, পাশের দেশ আমাদের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। আওয়ামী লীগ সেই ষড়যন্ত্রকে হাতিয়ার বানিয়ে দেশ লুট করেছে। তারা ’৭১-কে বিক্রি করেছে, এখন আবার ২৪-কে পুঁজি করে খেতে চাইছে। কিন্তু ’২৪ বাংলাদেশের মানুষের সম্মিলিত সংগ্রামের জয়, এটি আওয়ামী লীগের নয়।
সভায় সভাপতিত্ব করেন ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরী। তিনি বলেন, দেশে আজ গণতন্ত্র নেই, আইনের শাসন নেই। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় টিকে থাকতে জনগণের রক্ত চুষছে। এ সরকারের বিদায় শুধু সময়ের ব্যাপার।
সভা পরিচালনা করেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোজাদ্দেদ আলী বাবু। আলোচনা সভায় দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক ও কেরানীগঞ্জ উপজেলা দক্ষিণ শাখা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট নিপুন রায় চৌধুরীর সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানের অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, বিএনপি’র নির্বাহী কমিটির সদস্য আলহাজ্ব নাজিম উদ্দিন,বিএনপি নেতা এডভোকেট সুলতান নাসের,কেরানীগঞ্জ উপজেলা দক্ষিণ শাখা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোজাদ্দেদ আলী বাবু,ওমর শাহানেওয়াজ, ইশা খান, আরসাদ রহমান সফু,ইমান উল্লাহ মাস্তান শ্রমিক দল নেতা মোহাম্মদ শাহিন প্রমূখ।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
জনপ্রিয়