নির্বাচনকে সামনে রেখে কোনো ঝুঁকির মধ্যে যেতে চাই না আমরা: বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ

- Update Time : ১১:৪০:২২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৫
- / ৮১ Time View
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে উদ্দেশ করে বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, ‘আমরা চাই না প্রতিরক্ষা বাহিনীগুলোর মধ্যে কোনো রকমের ভারসাম্য নষ্ট হোক। আমরা সেটি অ্যাফোর্ড (সামলে নেওয়া) করতে পারব না এই মুহূর্তে। আমরা চাই, আপনার সাথে প্রতিরক্ষা বাহিনীর সুসম্পর্ক বজায় থাকুক। রাষ্ট্র একটা ব্যালান্সড অবস্থায় থাকতে হবে। আমরা নির্বাচনকে সামনে রেখে কোনো রকমের ঝুঁকির মধ্যে যেতে চাই না। যেতে পারব না। সেটা আমরা অ্যাফোর্ড করতে পারব না।’
পতিত স্বৈরাচার এবং তাদের দোসর একটি দেশ এই সুযোগ নেওয়ার জন্য বসে থাকবে বলে সতর্কবার্তা দিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেছেন, ‘সুতরাং আমাদেরকে একদম প্রতিবিপ্লবী হলেও চলবে না। আমাদেরকে বাস্তবতার নিরিখে আমাদের পদক্ষেপটা নিতে হবে।’
জুলাই সনদ নিয়ে আজ বুধবার রাতে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভায় এ কথা বলেন বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি–নির্ধারণী ফোরামের সদস্য সালাইউদ্দিন আহমদ।
এ সময় প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্দেশ করে তিনি আরও বলেন, ‘মাননীয় উপদেষ্টা আমাদের কন্টিনিউয়াস সমর্থন আপনার প্রতি ছিল, আছে। কিন্তু এটা কন্ডিশনাল (শর্তসাপেক্ষ)। আমাদের সমর্থন আরও অব্যাহত থাকবে, তবে এটা সীমাহীন নয়। আমরা চাই, আপনার নেতৃত্বে একটা ঐতিহাসিক নির্বাচন—এটাই হচ্ছে কন্ডিশন (শর্ত)। আপনার প্রতি আমাদের সীমাহীন সমর্থন নয়, আমাদের সীমারেখা আছে। আমরা গণতান্ত্রিক উত্তরণের জন্য এই সীমারেখার মধ্যে আপনাকে সমর্থন দিচ্ছি, আপনি দয়া করে এটা অনুধাবন করার চেষ্টা করবেন।’
বৈঠকে বক্তব্যে নির্বাচন সামনে রেখে সরকারি কর্মকর্তাদের পদায়ন নিয়েও কথা বলেন বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘আজকে সচিবালয়ে যে সমস্ত নিয়ম, বদলি–পদায়নের জন্য আপনি মন্ত্রিপরিষদের একটা “ক্যাবিনেট কমিটি” করে দিয়েছেন, এটার কোনো চর্চা নাই। এটার কোনো ট্রাডিশন (প্রচলন) নেই। এটা কোনো নিয়ম নয়। তারা যা করছে পদোন্নতি বা নিয়োগ–বদলির মধ্যে, সেটা ওখানে একটা রাজত্ব সৃষ্টি হয়েছে। আপনি খোঁজ নেবেন। আমরা খুব অসন্তোষ প্রকাশ করছি।’
জুলাই সনদ স্বাক্ষরের পর সেটা সরকার প্রকাশ করলে জনগণ দেখবেন, বুঝবেন এবং তার ভিত্তিতে গণভোটে ‘হ্যাঁ’ অথবা ‘না’ ভোট দিয়ে তাঁদের রায় জানাবেন বলে উল্লেখ করেন সালাহউদ্দিন আহমদ। এই গণভোট জাতীয় নির্বাচনের দিনে হওয়ার পক্ষে অবস্থান তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘গণভোটটা আগে হবে না পরে হবে, এটা তো ঘটনা একই। এটা তাল ধপ করিয়া পড়িল, না পড়িয়া ধপ করিল, কথা তো একই। এটা হ্যাঁ বলবে অথবা না বলবে। এখন যদি একই দিনে একটা ছোট্ট ব্যালটে গণভোট হয়, সেটা আমাদের জন্য সবচাইতে সুবিধাজনক এবং আলাদা ব্যয়বহুল হবে না। আলাদা ম্যানপাওয়ার অ্যারেঞ্জমেন্ট করতে হবে না। আলাদা নির্বাচনী বাক্স হবে না।’
এ প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমরা মনে করি, যারা আগে গণভোট অনুষ্ঠানের জন্য পারসু করছে, সেটা অবশ্য তাদের অধিকার আছে। কিন্তু এটা কতটা যৌক্তিক, আপনারা সবাই একটু চিন্তা করে দেখবেন এবং আমরা মনে করি, সেটা নির্বাচন বিলম্বিত করার একটা প্রয়াসও হয়তো বা হতে পারে।’
জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবে বিএনপি
বৈঠক থেকে বেরিয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, ‘আমরা জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর করব। সেখানে যেসব বিষয়ে নোট অব ডিসেন্ট (ভিন্নমত) আছে, সেগুলো পরিষ্কারভাবে দফাওয়ারি উল্লেখ থাকবে কে, কী বলেছেন।’
‘নোট অব ডিসেন্ট’ দেওয়ার এখতিয়ারের জন্যই বিএনপি ঐকমত্য কমিশনে আলাপ-আলোচনা করেছে বলে উল্লেখ করেন সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, ‘যদি তা না হতো, তাহলে ঐকমত্য কমিশন যদি আমাদের প্রস্তাব দিত, সেই সব প্রস্তাবে যদি সবাই একমত হয়ে যেত, তাহলে তো আলোচনার কোনো প্রয়োজন ছিল না। আলোচনার উদ্দেশ্যই ছিল, যেসব বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো একমত, সেগুলো সংকলিত করা। যেসব বিষয়ে দ্বিমত অথবা ভিন্নমত, সেগুলো সংকলিত করা।’
আগামী ১৭ তারিখ ঐতিহাসিক দলিল জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষরিত হওয়ার অপেক্ষায় আছেন উল্লেখ করে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘সেই স্বাক্ষরিত দলিল সবার কাছে দেওয়া হবে, জাতির জন্য উন্মুক্ত করা হবে। তারপর বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া নিয়ে সরকারের কাছে ঐকমত্য কমিশন বিভিন্ন প্রক্রিয়াসহ সুপারিশ দেবে। সেই সুপারিশ হিসেবে আমরা বলেছি যে গণভোটের মধ্য দিয়ে একই দিনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন সেই সম্মতিটা নেওয়া যায়, যার মধ্য দিয়ে জুলাই জাতীয় সনদের সব প্রস্তাব, যেগুলো ঐকমত্য হয়েছে, সেটা বাস্তবায়ন হবে।’
ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যেই যাবতীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে বিএনপি। এ কথা বৈঠকে জানিয়েছেন উল্লেখ করে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, জুলাই জাতীয় সনদ প্রণয়ন হোক, অন্যান্য কর্মকাণ্ড হোক, সবকিছুর লক্ষ্য হবে আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করা। সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং বিশ্বে যাতে স্বীকৃত হয়, সে রকম একটা ক্রেডিবল ইলেকশন (গ্রহণযোগ্য নির্বাচন) করা।
জুলাই জাতীয় সনদের সঙ্গে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কোনো সম্পর্ক নেই বলে মন্তব্য করেন বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ। সমগ্র জাতি সংস্কারের পক্ষে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী জনগণ যাতে গণভোটের মধ্য দিয়ে এমন এক একটা এখতিয়ার, কর্তৃত্ব দেয় সংসদকে, যাতে করে সেটা বাধ্যবাধকতা থাকে প্রতিপালনে, বাস্তবায়নে। সেটা সাধারণভাবেই কোনো সংশোধনীর মত নয়। সেটাকেই বলা হচ্ছে কনস্টিটিউয়েন্ট পাওয়ার, গাঠনিক ক্ষমতা, সেই সংসদকে দেওয়া হচ্ছে। সেটার অনুকূলে যখন কোনো সংস্কার বা সংশোধন গৃহীত হবে, সেটা চাইলেও জুডিশিয়ারি তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিতে পারবে না। এটাই হচ্ছে গণভোটের ভিত্তি।’
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
জনপ্রিয়