ঢাকা ০৭:২৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ১২ মে ২০২৫, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নাগরপুরে শিল্প-ঐতিহ্যের নিঃশব্দ সাক্ষী পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

নাগরপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি
  • Update Time : ০২:৫৭:৩৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১২ মে ২০২৫
  • / ৮ Time View

টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুরে ধলেশ্বরী নদীতীরে অবস্থিত পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি। শিল্প ঐতিহ্য ও ইতিহাসের অনন্য নিদর্শন হলেও অবহেলার কারণে হারাচ্ছে তার গৌরবময় অতীত। প্রায় ১৫ একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এই জমিদার বাড়িটি টাঙ্গাইল সদর থেকে ৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া থেকে ১২ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত।

এখানে আজও দাঁড়িয়ে আছে কারুকার্যখচিত অট্টালিকা, পুরোনো মন্দির, নাটমন্দির, দীঘি ও কূপ যা একসময়ের জমিদারি জীবনের নীরব সাক্ষ্য বহন করে চলেছে।

ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে তৎকালীন ব্রিটিশ রাজধানী কলকাতার সঙ্গে মেইল স্টিমার ও যাত্রীবাহী নৌযোগে নাগরপুরের বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

সেই সূত্র ধরেই কলকাতা থেকে আগত ধনাঢ্য ব্যবসায়ী রামকৃষ্ণ সাহা মণ্ডল এখানে জমিদারি শুরু করেন। ১৯১৫ সালে নির্মিত হয় পরপর তিনটি বিশাল অট্টালিকা একই নকশায়,পাশ্চাত্য শিল্পের প্রভাবে।

জমিদারবাড়িটি পরিচিত ছিল ‘তিন তরফ’ বা ‘তিন মহলা’ নামে। প্রতিটি অট্টালিকার সামনের বারান্দায় দুটি পূর্ণাঙ্গ সুন্দরী নারী মূর্তি, রেলিংয়ের কার্নিশে সারি সারি ক্ষুদ্র নারী মূর্তি এবং লতাপাতা-ফুলের অলংকরণে মণ্ডিত নকশা—সবই চমৎকার শৈল্পিক ছোঁয়া বহন করে।

জমিদাররা তাদের প্রজাদের জুতা পায়ে বা মাথায় ছাতা নিয়ে বাড়ির সামনে দিয়ে চলাচলে নিষেধ করতেন—এ থেকেই বোঝা যায় সে সময়কার আভিজাত্যের পরিমাণ।

জমিদারবাড়ির প্রবেশমুখেই রয়েছে একটি পুরোনো মন্দির, যা এককালে দুর্গাপূজার প্রতিমা নির্মাণে বিখ্যাত ছিল। ভারতবর্ষের খ্যাতনামা কারিগররা শরৎকালে এখানে প্রতিমা তৈরি করতেন। এখন সেখানে ইট খসে পড়ছে, নকশাগুলো ঝুঁকিতে। পাশাপাশি রয়েছে তিনটি নাটমন্দির ও মাঠের মাঝে একটি দ্বিতল নাচঘর। পরে এ জমিদারবাড়ির মূল ভবনের একটি অংশ অধিগ্রহণ করে প্রতিষ্ঠিত হয় পাকুটিয়া বিসিআরজি ডিগ্রি কলেজ (১৯৬৭), যা এখনো চালু আছে।

অন্য ভবনগুলোয় বর্তমানে উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র, একটি দাতব্য সংস্থা ও তহশিল অফিস পরিচালিত হচ্ছে। তবে ভবনের অনেক জায়গায় ফাটল, খসে পড়া ছাদ, নষ্ট হয়ে যাওয়া শিল্পকর্ম প্রমাণ করে—এটি আজও যথাযথ সংরক্ষণের বাইরে। নাগরপুরের এই ঐতিহাসিক নিদর্শন প্রতিদিন অনেক পর্যটককে আকৃষ্ট করলেও, সরকারি উদ্যোগের অভাবে ভবনগুলোর রূপ-লাবণ্য হারিয়ে যাচ্ছে। ইতিহাস ও ঐতিহ্যের এমন একটি মহামূল্যবান সম্পদ যেন কালের গর্ভে বিলীন না হয় এই দাবিই এখন জোরালো হচ্ছে স্থানীয়দের মাঝে।

পাকুটিয়া জমিদারবাড়ি শুধু প্রাচীন স্থাপত্য নয় এটি একসময়ের সংস্কৃতি, শাসন ও সমাজবিন্যাসের নিঃশব্দ সাক্ষ্য। যথাযথ সংরক্ষণেই ফিরতে পারে এর হারানো ঐতিহ্য।

Please Share This Post in Your Social Media

নাগরপুরে শিল্প-ঐতিহ্যের নিঃশব্দ সাক্ষী পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

নাগরপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি
Update Time : ০২:৫৭:৩৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১২ মে ২০২৫

টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুরে ধলেশ্বরী নদীতীরে অবস্থিত পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি। শিল্প ঐতিহ্য ও ইতিহাসের অনন্য নিদর্শন হলেও অবহেলার কারণে হারাচ্ছে তার গৌরবময় অতীত। প্রায় ১৫ একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এই জমিদার বাড়িটি টাঙ্গাইল সদর থেকে ৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া থেকে ১২ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত।

এখানে আজও দাঁড়িয়ে আছে কারুকার্যখচিত অট্টালিকা, পুরোনো মন্দির, নাটমন্দির, দীঘি ও কূপ যা একসময়ের জমিদারি জীবনের নীরব সাক্ষ্য বহন করে চলেছে।

ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে তৎকালীন ব্রিটিশ রাজধানী কলকাতার সঙ্গে মেইল স্টিমার ও যাত্রীবাহী নৌযোগে নাগরপুরের বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

সেই সূত্র ধরেই কলকাতা থেকে আগত ধনাঢ্য ব্যবসায়ী রামকৃষ্ণ সাহা মণ্ডল এখানে জমিদারি শুরু করেন। ১৯১৫ সালে নির্মিত হয় পরপর তিনটি বিশাল অট্টালিকা একই নকশায়,পাশ্চাত্য শিল্পের প্রভাবে।

জমিদারবাড়িটি পরিচিত ছিল ‘তিন তরফ’ বা ‘তিন মহলা’ নামে। প্রতিটি অট্টালিকার সামনের বারান্দায় দুটি পূর্ণাঙ্গ সুন্দরী নারী মূর্তি, রেলিংয়ের কার্নিশে সারি সারি ক্ষুদ্র নারী মূর্তি এবং লতাপাতা-ফুলের অলংকরণে মণ্ডিত নকশা—সবই চমৎকার শৈল্পিক ছোঁয়া বহন করে।

জমিদাররা তাদের প্রজাদের জুতা পায়ে বা মাথায় ছাতা নিয়ে বাড়ির সামনে দিয়ে চলাচলে নিষেধ করতেন—এ থেকেই বোঝা যায় সে সময়কার আভিজাত্যের পরিমাণ।

জমিদারবাড়ির প্রবেশমুখেই রয়েছে একটি পুরোনো মন্দির, যা এককালে দুর্গাপূজার প্রতিমা নির্মাণে বিখ্যাত ছিল। ভারতবর্ষের খ্যাতনামা কারিগররা শরৎকালে এখানে প্রতিমা তৈরি করতেন। এখন সেখানে ইট খসে পড়ছে, নকশাগুলো ঝুঁকিতে। পাশাপাশি রয়েছে তিনটি নাটমন্দির ও মাঠের মাঝে একটি দ্বিতল নাচঘর। পরে এ জমিদারবাড়ির মূল ভবনের একটি অংশ অধিগ্রহণ করে প্রতিষ্ঠিত হয় পাকুটিয়া বিসিআরজি ডিগ্রি কলেজ (১৯৬৭), যা এখনো চালু আছে।

অন্য ভবনগুলোয় বর্তমানে উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র, একটি দাতব্য সংস্থা ও তহশিল অফিস পরিচালিত হচ্ছে। তবে ভবনের অনেক জায়গায় ফাটল, খসে পড়া ছাদ, নষ্ট হয়ে যাওয়া শিল্পকর্ম প্রমাণ করে—এটি আজও যথাযথ সংরক্ষণের বাইরে। নাগরপুরের এই ঐতিহাসিক নিদর্শন প্রতিদিন অনেক পর্যটককে আকৃষ্ট করলেও, সরকারি উদ্যোগের অভাবে ভবনগুলোর রূপ-লাবণ্য হারিয়ে যাচ্ছে। ইতিহাস ও ঐতিহ্যের এমন একটি মহামূল্যবান সম্পদ যেন কালের গর্ভে বিলীন না হয় এই দাবিই এখন জোরালো হচ্ছে স্থানীয়দের মাঝে।

পাকুটিয়া জমিদারবাড়ি শুধু প্রাচীন স্থাপত্য নয় এটি একসময়ের সংস্কৃতি, শাসন ও সমাজবিন্যাসের নিঃশব্দ সাক্ষ্য। যথাযথ সংরক্ষণেই ফিরতে পারে এর হারানো ঐতিহ্য।