ঢাকা ১২:৩৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৮ অগাস্ট ২০২৫, ২৩ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকদের হুমকি: ছাত্রদল নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষোভ

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
  • Update Time : ০৮:২৫:৩১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ অগাস্ট ২০২৫
  • / ২২ Time View

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস ও বর্ষপূর্তি’ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাধা, অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ ও মারধরের হুমকি দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক জাহিদুল ইসলাম হৃদয়। ঘটনার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) প্রশাসনিক ভবনের সামনে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত বিভিন্ন জাতীয় গণমাধ্যমের সাংবাদিকেরা।

সাংবাদিকদের অভিযোগ, আলোচনা সভার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ট্রেজারার ও রেজিস্ট্রারসহ প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকলেও ছাত্রদল নেতা হৃদয় তাদেরকে প্রকাশ্যে হুমকি দেন এবং উগ্র আচরণ করেন। ঘটনার পর দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, কেন্দ্রীয় ছাত্রদল কিংবা শাখা ছাত্রদলের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

ভুক্তভোগী সময় আলোর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি আশরাফুল আলম বলেন, “ছবি ও ভিডিও ধারণ করার সময় হৃদয় আমাকে সরে যেতে বলেন। আমি পরিচয় দিলে তিনি আমাকে ‘বেয়াদব’ বলে গালি দেন এবং থাপড়ানোর হুমকি দেন।”

এনটিভির প্রতিনিধি রোহান চিশতী বলেন, “আমি প্রতিবাদ জানালে সেদিকে তেড়ে আসেন হৃদয়, মারতে উদ্যত হন।”

বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জান্নাতী বেগম বলেন, “সাংবাদিকদের হেনস্তা কেবল পেশাগত অপমান নয়, এটি ক্যাম্পাসে এক ধরনের ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করছে। এখনো প্রশাসন কিংবা ছাত্রদলের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়া অত্যন্ত লজ্জাজনক।”

সাংবাদিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আবু ইসহাক অনিক বলেন, “শিক্ষার্থী বা প্রশাসনের কেউ সমস্যায় পড়লে, তার পাশে সাংবাদিকরাই আগে দাঁড়ান। অথচ আজ তারাই পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় হুমকির শিকার হচ্ছেন। এটি ফ্যাসিবাদী চর্চার বহিঃপ্রকাশ। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।”

বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত জাহান কিবরিয়া বলেন, “গত বছর ছাত্রলীগের হামলার ঘটনার পরও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন। এখন ছাত্রদলের হুমকির পরও তারা নীরব। তাহলে আমাদের নিরাপত্তা কোথায়?”

এদিকে বিতর্কিত ছাত্রত্ব পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে অভিযুক্ত জাহিদুল ইসলাম হৃদয়কে ঘিরেও। জানা যায়, তিনি অর্থনীতি বিভাগের ২০১২–১৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। দীর্ঘদিন পর ‘বিশেষ বিবেচনায়’ তিনি ২০২৩–২৪ শিক্ষাবর্ষে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ভর্তি হয়েছেন বলে জানিয়েছেন সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. বখতিয়ার উদ্দিন। তবে এই ‘বিশেষ বিবেচনার’ কারণ সম্পর্কে উপাচার্য কোনো স্পষ্ট ব্যাখ্যা দেননি।

মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শাহাদৎ হোসেন, প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি নবাব মো. শওকত জাহান কিবরিয়া, প্রেসক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক আমিরুল ইসলাম বাপন, দপ্তর ও প্রকাশনা সম্পাদক রোহান চিশতী, সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জান্নাতী বেগম, সাংবাদিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আবু ইসহাক অনিক এবং দপ্তর ও প্রচার সম্পাদক মো. সাইফুল ইসলাম সাজ্জাদসহ অন্যান্য গণমাধ্যমকর্মীরা।

মানববন্ধন শেষে সাংবাদিক প্রতিনিধিরা উপাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং লিখিত অভিযোগ জমা দেন। উপাচার্য আশ্বাস দিলেও হুমকিদাতার বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক কোনো প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।

 

সাংবাদিকদের পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা নিশ্চিত না হলে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সংবাদকর্মীরা।

Please Share This Post in Your Social Media

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকদের হুমকি: ছাত্রদল নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষোভ

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
Update Time : ০৮:২৫:৩১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ অগাস্ট ২০২৫

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস ও বর্ষপূর্তি’ উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে বাধা, অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ ও মারধরের হুমকি দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম-আহ্বায়ক জাহিদুল ইসলাম হৃদয়। ঘটনার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) প্রশাসনিক ভবনের সামনে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত বিভিন্ন জাতীয় গণমাধ্যমের সাংবাদিকেরা।

সাংবাদিকদের অভিযোগ, আলোচনা সভার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ট্রেজারার ও রেজিস্ট্রারসহ প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকলেও ছাত্রদল নেতা হৃদয় তাদেরকে প্রকাশ্যে হুমকি দেন এবং উগ্র আচরণ করেন। ঘটনার পর দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, কেন্দ্রীয় ছাত্রদল কিংবা শাখা ছাত্রদলের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

ভুক্তভোগী সময় আলোর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি আশরাফুল আলম বলেন, “ছবি ও ভিডিও ধারণ করার সময় হৃদয় আমাকে সরে যেতে বলেন। আমি পরিচয় দিলে তিনি আমাকে ‘বেয়াদব’ বলে গালি দেন এবং থাপড়ানোর হুমকি দেন।”

এনটিভির প্রতিনিধি রোহান চিশতী বলেন, “আমি প্রতিবাদ জানালে সেদিকে তেড়ে আসেন হৃদয়, মারতে উদ্যত হন।”

বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জান্নাতী বেগম বলেন, “সাংবাদিকদের হেনস্তা কেবল পেশাগত অপমান নয়, এটি ক্যাম্পাসে এক ধরনের ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করছে। এখনো প্রশাসন কিংবা ছাত্রদলের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ না নেওয়া অত্যন্ত লজ্জাজনক।”

সাংবাদিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আবু ইসহাক অনিক বলেন, “শিক্ষার্থী বা প্রশাসনের কেউ সমস্যায় পড়লে, তার পাশে সাংবাদিকরাই আগে দাঁড়ান। অথচ আজ তারাই পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় হুমকির শিকার হচ্ছেন। এটি ফ্যাসিবাদী চর্চার বহিঃপ্রকাশ। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি।”

বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত জাহান কিবরিয়া বলেন, “গত বছর ছাত্রলীগের হামলার ঘটনার পরও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন। এখন ছাত্রদলের হুমকির পরও তারা নীরব। তাহলে আমাদের নিরাপত্তা কোথায়?”

এদিকে বিতর্কিত ছাত্রত্ব পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে অভিযুক্ত জাহিদুল ইসলাম হৃদয়কে ঘিরেও। জানা যায়, তিনি অর্থনীতি বিভাগের ২০১২–১৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। দীর্ঘদিন পর ‘বিশেষ বিবেচনায়’ তিনি ২০২৩–২৪ শিক্ষাবর্ষে স্নাতকোত্তর পর্যায়ে ভর্তি হয়েছেন বলে জানিয়েছেন সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. বখতিয়ার উদ্দিন। তবে এই ‘বিশেষ বিবেচনার’ কারণ সম্পর্কে উপাচার্য কোনো স্পষ্ট ব্যাখ্যা দেননি।

মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শাহাদৎ হোসেন, প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি নবাব মো. শওকত জাহান কিবরিয়া, প্রেসক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক আমিরুল ইসলাম বাপন, দপ্তর ও প্রকাশনা সম্পাদক রোহান চিশতী, সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জান্নাতী বেগম, সাংবাদিক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আবু ইসহাক অনিক এবং দপ্তর ও প্রচার সম্পাদক মো. সাইফুল ইসলাম সাজ্জাদসহ অন্যান্য গণমাধ্যমকর্মীরা।

মানববন্ধন শেষে সাংবাদিক প্রতিনিধিরা উপাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং লিখিত অভিযোগ জমা দেন। উপাচার্য আশ্বাস দিলেও হুমকিদাতার বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক কোনো প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।

 

সাংবাদিকদের পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা নিশ্চিত না হলে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সংবাদকর্মীরা।