ঢাকা ০৩:৫৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৬ অগাস্ট ২০২৫, ২১ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান: আমাদের প্রত্যাশা ও সীমাবদ্ধতা’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

আসাদুল্লাহ আল গালিব, নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
  • Update Time : ১২:০২:১০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৬ অগাস্ট ২০২৫
  • / ৩২ Time View

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান: আমাদের প্রত্যাশা ও সীমাবদ্ধতা’ শীর্ষক আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন প্রশাসনিক ভবনের কনফারেন্স কক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে বলেন, “যত বড় ত্যাগ, তত বড় অর্জন সম্ভব। ৭১, ৯০ কিংবা ২০২৪ সালের কোনো আন্দোলনই ত্যাগ ছাড়া সফল হয়নি। ৯০-এ যেমন কারফিউ ভেঙে মিছিলে গিয়েছিলাম, তেমনি জুলাই ২৪-এও একইভাবে রাজপথে নেমেছিলাম।” তিনি আরও বলেন, “আগামীতে যে সরকারই আসুক, যদি ৫ আগস্টের চেতনা থেকে বিচ্যুত হয়, তবে তাদেরও একই অবস্থা হবে।” পাঠ্যপুস্তকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাস অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানান উপাচার্য।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শহীদ আসির ইনতিশারুল হকের পিতা আ. হ. ম এনামুল হক লিটন এবং শহীদ মো. হৃদয় ইসলামের মাতা মাজেদা খাতুন। বক্তব্যে এনামুল হক লিটন বলেন, “আজকের দিনটি আনন্দের হলেও ব্যক্তিগতভাবে আমার জন্য বেদনার। আমি আমার সন্তানকে হারিয়েছি, তবে তার আত্মত্যাগ দেশের ফ্যাসিবাদ মুক্তির পথ সুগম করেছে।” তিনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নৈতিকতা শিক্ষা এবং ইনসাফভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন। শহীদ হৃদয়ের মাতা মাজেদা খাতুন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমি এখনো আমার ছেলের বিচার পাইনি।”

প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য ডা. মো. মাহবুবুর রহমান লিটন। তিনি বলেন, “আমরা ভুলে যাওয়া জাতি, কিন্তু জুলাই ২৪ ভুলে গেলে চলবে না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমই আমাদের মনে করিয়ে দেবে।” তিনি বলেন, “পৃথিবীর ইতিহাসে শেখ হাসিনার মতো বৈচিত্র্যপূর্ণ ফ্যাসিস্ট আর আছে বলে আমার জানা নেই।”

আলোচনা সভার শুরুতে শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয় এবং পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মুফতি মো. আব্দুল হাকীম। সংগীত বিভাগের শিক্ষার্থীরা জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন। এরপর ‘বৈষম্যের বিরুদ্ধে জুলাই চব্বিশ’ শীর্ষক স্মরণিকার মোড়ক উন্মোচন করা হয়।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. জয়নুল আবেদীন সিদ্দিকী, কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইমদাদুল হুদা, বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এ এইচ এম কামাল, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সাখাওয়াত হোসেন সরকার, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. বখতিয়ার উদ্দিন এবং রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন আয়োজন কমিটির সদস্য-সচিব ও লোকপ্রশাসন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. অলি উল্লাহ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক মো. জিল্লাল হোসাইন।

অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক ড. তারানা নুপুর এবং আহত শিক্ষার্থী নীরব কুমার দাস। শেষে চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।

এর আগে সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে ঢাক-ঢোলের তালে বিজয় র‌্যালি বের হয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। বাদ আসর কেন্দ্রীয় মসজিদে মিলাদ মাহফিল এবং সন্ধ্যায় মন্দিরে প্রার্থনার আয়োজন করা হয়।

Please Share This Post in Your Social Media

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান: আমাদের প্রত্যাশা ও সীমাবদ্ধতা’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত

আসাদুল্লাহ আল গালিব, নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি
Update Time : ১২:০২:১০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৬ অগাস্ট ২০২৫

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান: আমাদের প্রত্যাশা ও সীমাবদ্ধতা’ শীর্ষক আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার (৫ আগস্ট) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন প্রশাসনিক ভবনের কনফারেন্স কক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে বলেন, “যত বড় ত্যাগ, তত বড় অর্জন সম্ভব। ৭১, ৯০ কিংবা ২০২৪ সালের কোনো আন্দোলনই ত্যাগ ছাড়া সফল হয়নি। ৯০-এ যেমন কারফিউ ভেঙে মিছিলে গিয়েছিলাম, তেমনি জুলাই ২৪-এও একইভাবে রাজপথে নেমেছিলাম।” তিনি আরও বলেন, “আগামীতে যে সরকারই আসুক, যদি ৫ আগস্টের চেতনা থেকে বিচ্যুত হয়, তবে তাদেরও একই অবস্থা হবে।” পাঠ্যপুস্তকে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ইতিহাস অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানান উপাচার্য।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শহীদ আসির ইনতিশারুল হকের পিতা আ. হ. ম এনামুল হক লিটন এবং শহীদ মো. হৃদয় ইসলামের মাতা মাজেদা খাতুন। বক্তব্যে এনামুল হক লিটন বলেন, “আজকের দিনটি আনন্দের হলেও ব্যক্তিগতভাবে আমার জন্য বেদনার। আমি আমার সন্তানকে হারিয়েছি, তবে তার আত্মত্যাগ দেশের ফ্যাসিবাদ মুক্তির পথ সুগম করেছে।” তিনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নৈতিকতা শিক্ষা এবং ইনসাফভিত্তিক রাষ্ট্র গঠনের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন। শহীদ হৃদয়ের মাতা মাজেদা খাতুন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “আমি এখনো আমার ছেলের বিচার পাইনি।”

প্রধান আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য ডা. মো. মাহবুবুর রহমান লিটন। তিনি বলেন, “আমরা ভুলে যাওয়া জাতি, কিন্তু জুলাই ২৪ ভুলে গেলে চলবে না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমই আমাদের মনে করিয়ে দেবে।” তিনি বলেন, “পৃথিবীর ইতিহাসে শেখ হাসিনার মতো বৈচিত্র্যপূর্ণ ফ্যাসিস্ট আর আছে বলে আমার জানা নেই।”

আলোচনা সভার শুরুতে শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয় এবং পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মুফতি মো. আব্দুল হাকীম। সংগীত বিভাগের শিক্ষার্থীরা জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেন। এরপর ‘বৈষম্যের বিরুদ্ধে জুলাই চব্বিশ’ শীর্ষক স্মরণিকার মোড়ক উন্মোচন করা হয়।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. জয়নুল আবেদীন সিদ্দিকী, কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইমদাদুল হুদা, বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এ এইচ এম কামাল, ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সাখাওয়াত হোসেন সরকার, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. বখতিয়ার উদ্দিন এবং রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন আয়োজন কমিটির সদস্য-সচিব ও লোকপ্রশাসন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. অলি উল্লাহ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক মো. জিল্লাল হোসাইন।

অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক ড. তারানা নুপুর এবং আহত শিক্ষার্থী নীরব কুমার দাস। শেষে চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।

এর আগে সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে ঢাক-ঢোলের তালে বিজয় র‌্যালি বের হয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। বাদ আসর কেন্দ্রীয় মসজিদে মিলাদ মাহফিল এবং সন্ধ্যায় মন্দিরে প্রার্থনার আয়োজন করা হয়।