ঢাকা ০২:৪১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০১ অগাস্ট ২০২৫, ১৭ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন ছাত্র হল ধসে আহত অন্তত ১০ শ্রমিক

আসাদুল্লাহ আল গালিব, জাককানইবি প্রতিনিধি
  • Update Time : ০৫:১৬:৩৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫
  • / ২২০ Time View

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন ছাত্র হলের ছাদ ঢালাইয়ের সময় অংশবিশেষ ধসে পড়ে অন্তত ১০ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে এ দুর্ঘটনা ঘটে। আহত শ্রমিকদের উদ্ধার করে ত্রিশালের সাস্থ কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য নেয়া হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুরের দিকে ছাদ ঢালাইয়ের কাজ চলাকালে হঠাৎ নির্মাণাধীন ভবনের একটি অংশ ধসে পড়ে। এ সময় সেখানে কর্মরত শ্রমিকদের কয়েকজন ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়েন। স্থানীয় শ্রমিক ও প্রত্যক্ষদর্শীরা দ্রুত তাদের উদ্ধার করে।

সরাসরি ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত হচ্ছিল নিম্নমানের রড এবং রড বাঁধার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছিল সাধারণ পাটের দড়ি। শ্রমিকদের নিরাপত্তা সরঞ্জাম বলতে হেলমেট কিংবা সুরক্ষামূলক পোশাক কিছুই ছিল না। ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে তারা কাজ করছিলেন। বৃষ্টির মধ্যে ছাদ ঢালাইয়ের কাজ চালানো নিয়েও ছিল ব্যাপক অনিয়ম।

এ বিষয়ে এক শ্রমিক জানান, “আমি প্রায় ১০ বছর যাবৎ এ ধরনের নির্মাণকাজের সাথে যুক্ত। কিন্তু কখনও বৃষ্টির মধ্যে ছাদ ঢালাই করতে দেখিনি। কাজটি অত্যন্ত নিম্নমানেরভাবে পরিচালিত হচ্ছিল। ইঞ্জিনিয়ার স্যার কী ভেবে বৃষ্টির মধ্যে ছাদ ঢালাই করতে বলেছে, আমার জানা নেই।”

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বক্তব্য দেয়নি। প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলীর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দফতরের একটি সূত্র জানিয়েছে, দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত কমিটি গঠনের কথা ভাবা হচ্ছে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম এন্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, “প্রতিবারই আমরা শুনি নির্মাণকাজে অনিয়মের কথা। এই ঘটনার পরেও যদি কর্তৃপক্ষ নিরব থাকে, তাহলে ভবিষ্যতে বড় ধরনের প্রাণহানির আশঙ্কা থেকেই যায়। প্রশাসন যদি সময়মতো নজরদারি করতো, তাহলে এমন দুর্ঘটনা ঘটতো না।এটা শুধু দুর্ঘটনা নয়, এটি প্রশাসনের উদাসীনতার ফল। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বড় প্রকল্পেই অনিয়মের অভিযোগ ওঠে, কিন্তু কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয় না। আজ শ্রমিক আহত হয়েছে, কাল শিক্ষার্থীর জীবনও বিপন্ন হতে পারে।”

প্রসঙ্গত, নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট নিরসনে বহুমূল্য ছাত্র হল নির্মাণের কাজ চলছিল। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরেই এই প্রকল্পে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ উঠছিল। এর আগে, কয়েকদিন আগেও নির্মাণাধীন ভবন থেকে পড়ে এক শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। তখনো প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা মনে করছেন, নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান এই নির্মাণ কার্যক্রমে নজরদারির অভাব এবং দায়সারা মনোভাবের কারণেই বারবার এমন দুর্ঘটনা ঘটছে।

 

Please Share This Post in Your Social Media

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন ছাত্র হল ধসে আহত অন্তত ১০ শ্রমিক

আসাদুল্লাহ আল গালিব, জাককানইবি প্রতিনিধি
Update Time : ০৫:১৬:৩৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন ছাত্র হলের ছাদ ঢালাইয়ের সময় অংশবিশেষ ধসে পড়ে অন্তত ১০ জন শ্রমিক আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে এ দুর্ঘটনা ঘটে। আহত শ্রমিকদের উদ্ধার করে ত্রিশালের সাস্থ কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য নেয়া হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুরের দিকে ছাদ ঢালাইয়ের কাজ চলাকালে হঠাৎ নির্মাণাধীন ভবনের একটি অংশ ধসে পড়ে। এ সময় সেখানে কর্মরত শ্রমিকদের কয়েকজন ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়েন। স্থানীয় শ্রমিক ও প্রত্যক্ষদর্শীরা দ্রুত তাদের উদ্ধার করে।

সরাসরি ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, নির্মাণ কাজে ব্যবহৃত হচ্ছিল নিম্নমানের রড এবং রড বাঁধার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছিল সাধারণ পাটের দড়ি। শ্রমিকদের নিরাপত্তা সরঞ্জাম বলতে হেলমেট কিংবা সুরক্ষামূলক পোশাক কিছুই ছিল না। ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে তারা কাজ করছিলেন। বৃষ্টির মধ্যে ছাদ ঢালাইয়ের কাজ চালানো নিয়েও ছিল ব্যাপক অনিয়ম।

এ বিষয়ে এক শ্রমিক জানান, “আমি প্রায় ১০ বছর যাবৎ এ ধরনের নির্মাণকাজের সাথে যুক্ত। কিন্তু কখনও বৃষ্টির মধ্যে ছাদ ঢালাই করতে দেখিনি। কাজটি অত্যন্ত নিম্নমানেরভাবে পরিচালিত হচ্ছিল। ইঞ্জিনিয়ার স্যার কী ভেবে বৃষ্টির মধ্যে ছাদ ঢালাই করতে বলেছে, আমার জানা নেই।”

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বক্তব্য দেয়নি। প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলীর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দফতরের একটি সূত্র জানিয়েছে, দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত কমিটি গঠনের কথা ভাবা হচ্ছে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম এন্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, “প্রতিবারই আমরা শুনি নির্মাণকাজে অনিয়মের কথা। এই ঘটনার পরেও যদি কর্তৃপক্ষ নিরব থাকে, তাহলে ভবিষ্যতে বড় ধরনের প্রাণহানির আশঙ্কা থেকেই যায়। প্রশাসন যদি সময়মতো নজরদারি করতো, তাহলে এমন দুর্ঘটনা ঘটতো না।এটা শুধু দুর্ঘটনা নয়, এটি প্রশাসনের উদাসীনতার ফল। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বড় প্রকল্পেই অনিয়মের অভিযোগ ওঠে, কিন্তু কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয় না। আজ শ্রমিক আহত হয়েছে, কাল শিক্ষার্থীর জীবনও বিপন্ন হতে পারে।”

প্রসঙ্গত, নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট নিরসনে বহুমূল্য ছাত্র হল নির্মাণের কাজ চলছিল। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরেই এই প্রকল্পে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ উঠছিল। এর আগে, কয়েকদিন আগেও নির্মাণাধীন ভবন থেকে পড়ে এক শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। তখনো প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা মনে করছেন, নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান এই নির্মাণ কার্যক্রমে নজরদারির অভাব এবং দায়সারা মনোভাবের কারণেই বারবার এমন দুর্ঘটনা ঘটছে।