ভোটের হাওয়া
নওগাঁ-৩ আসনে অন্তরর্দহে ভরাডুবির শঙ্কা বিএনপিতে,স্বতন্ত্রের হাতছানি ও ফুরফুরে জামায়াত
- Update Time : ১২:১৪:৫৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫
- / ৪১ Time View
অন্তরর্দহে নতুন করে আরেক দফা ভাঙলো উত্তরের জেলা নওগাঁর মহাদেবপুর ও বদলগাছী উপজেলা নিয়ে গঠিত জাতীয় সংসদের নওগাঁ-৩ আসনের বিএনপি। এবার গঠন করা হলো নতুন নামে নতুন উপদল। এর নাম দেয়া হয়েছে ‘‘ধানের শীষ সমর্থক গোষ্ঠী”। এনিয়ে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে বিএনপিতে। দিনের পর দিন চলেছে প্রার্থীতা পরিবর্তনের দাবিতে নানান কর্মসূচি। ফলে এই আসনে এখন ফুরফুরে মেজাজে পুরোপুরি নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে জামায়াত। তারা বলছেন, এবার তারাই বিজয়ী হবেন এই আসনে। তবে বিএনপির নানা উপদল থেকে যে কেউ একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে পাল্টে যাবে ভোটের হাওয়া এমনটিই ভাবছেন এলাকার সাধারণ ভোটাররা।
এ আসনে দীর্ঘদিন ধরে বিএনপি ত্রিধাবিভক্ত। এর একটি গ্রুপে রয়েছেন মহাদেবপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আলহাজ্ব রবিউল আলম বুলেটের নেতৃত্বে উপজেলা ও উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন বিএনপি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের বৃহৎ একটি দল, বদলগাছী উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কৃষক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফজলে হুদা বাবুলের নেতৃত্বে বদলগাছী উপজেলা ও উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন বিএনপি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের একটি দল, আর অপর দলটি হলো বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য, ১৯৯১ থেকে পরপর চার বার এই আসন থেকে নির্বাচিত এমপি, জাতীয় সংসদের সাবেক ডেপুটি স্পীকার প্রয়াত আখতার হামিদ সিদ্দিকী নান্নুর ছেলে গত নির্বাচনে এই আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী উপজেলা বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির ১নং সদস্য পারভেজ আরেফিন সিদ্দিকী জনির নেতৃত্বে মহাদেবপুর উপজেলা ও উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের বিএনপি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের ছায়া কমিটির নেতাকর্মীরা। সম্প্রতি এ গ্রুপ থেকে বেরিয়ে উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও মহাদেবপুরের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুস সাত্তার নান্নুর নেতৃত্বে গঠন করা হয়েছে ধানের শীষে সমর্থক গোষ্ঠী। এনিয়ে এলাকায় চলছে আলোচনা সমালোচনা। গত ৩০ নভেম্বর এরা মহাদেবপুর বাসস্ট্যান্ডে ফজলে হুদা বাবুলের পক্ষে বিশাল সমাবেশ করে।
এখানে বিরোধ তুঙ্গে ওঠে গত ৩ নভেম্বর ফজলে হুদা বাবুলকে বিএনপির মনোনয়ন দেয়ায়। তাকে মনোনয়ন দেয়ায় ক্ষুব্ধ হন অপর দুই মনোনয়ন প্রত্যাশী পারভেজ আরেফিন সিদ্দিকী জনি ও রবিউল আলম বুলেট। শুরু থেকেই তারা প্রার্থীতা পরিবর্তন করে নিজ নিজ নামে ধানের শীষের মনোনয়ন দাবি করে মশাল মিছিল, মহাসড়ক অবরোধ করে একের পর এক সমাবেশ করে। সবশেষ বিষয়টি দলের উর্ধে উঠে পরিণত হয় আঞ্চলিকতায়। ফজলে হুদার বাড়ি বদলগাছী উপজেলায়। আর পারভেজ আরেফিন সিদ্দিকী জনি ও রবিউল আলম বুলেটের বাড়ি মহাদেবপুর উপজেলায়। এখানকার ভোটার সংখ্যা বদলগাছীর প্রায় দ্বিগুন। মূলত: মহাদেবপুরের ভোটেই নির্ধারিত হয় জয় পরাজয়। তাই মহাদেবপুরবাসী চান প্রার্থী তাদের এলাকাতেই থাকুক।
প্রার্থী ফজলে হুদা বাবুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি ২০১৮ এর আগে মহাদেবপুরে ঢোকেন কৃষক দল গঠন করতে। কিন্তু এতে তিনি উপজেলা বিএনপিকে সম্পৃক্ত করেননি। কৃষক দলের সব প্রোগ্রাম করা হতো বিএনপিকে ছাড়াই, বিএনপিকে টেক্কা দিয়ে। ২০১৮ তে এই আসনে পারভেজ আরেফিন সিদ্দিকী জনিকে মনোনয়ন দেয়া হলেও তিনি ধানের শীষের ভোট করেননি। তাই এখন উপজেলা বিএনপিও তাকে সমর্থন করছে না। গত দেড় মাস ধরে তারা প্রার্থীর সাথে প্রচারে নামেননি। এমন পরিস্থিতিতে এই উপজেলায় মুখ থুবড়ে পড়েছে ধানের শীষের প্রচার প্রচারণা। মহাদেবপুরের ভোটাররা তাই এখন বিকল্প খুঁজছেন। এই আসনে জামায়াতের মনোনীত প্রার্থীর বাড়িও মহাদেবপুর। তাই তাদের সমর্থকের সংখ্যা বাড়ছে। ফুরফুরে মেজাজে প্রচার চালাচ্ছেন তারা। ইতিমধ্যেই ভীমপুর ইউনিয়নে ৫০ বিএনপি নেতাকর্মী আনুষ্ঠানিকভাবে জামায়াতে যোগ দিয়েছেন। মহাদেবপুরের ভোটাররা এখন বলছেন পারভেজ আরেফিন সিদ্দিকী জনি যদি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড়ান তবে তার পাল্লাই ভারি হবে।
জানতে চাইলে রবিউল আলম বুলেট বলেন, ‘‘বছরের পর বছর জীবন বাজি রেখে বিএনপির সব কর্মসূচি সুচারুরুপে পালন করেছি। গুলি খেয়েছি, জেলে গিয়েছি।” “আর কত পরীক্ষা দিলে বিএনপির মনোনয়ন পাওয়া যাবে” তিনি প্রশ্ন করেন। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, জনাব তারেক রহমান তাকেই চুড়ান্ত মনোনয়ন দেবেন।
পারভেজ আরেফিন সিদ্দিকী জনি বলেন, ২০১৮ সালে নওগাঁর ছয়টি আসনে যাদের মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল এবারও তাদের দেয়া হয়েছে শুধু তাকে ছাড়া। অথচ সেবার তিনি দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছিলেন। তিনিও আশাবাদী যে চুড়ান্ত মনোনয়ন তাকেই দেয়া হবে।
প্রার্থী ফজলে হুদা বাবুল বলেন, তিনি নিজে মহাদেবপুর উপজেলা বিএনপির কার্যালয়ে গিয়ে সভাপতি সম্পাদককে তার পক্ষে কাজ করার অনুরোধ জানিয়েছেন। কিন্তু তারা আসেননি। যে কেউ মনোনয়ন চাইতেই পারেন। তাই শেষ পর্যন্ত তিনি অপেক্ষা করছেন। তিনি আশাবাদী যে শেষ পর্যন্ত সকলে তার পক্ষেই প্রচারে নামবেন।
বিতর্কীত ধানের শীষ সমর্থক গোষ্ঠীর উদ্যোক্তা আব্দুস সাত্তার নান্নু বলেন, চুড়ান্ত মনোনয়নের আগে অন্য দুই গ্রুপের নেতাকর্মীরা যেহেতু প্রচারে নামছেন না, তাই ধানের শীষ সমর্থক গোষ্ঠীর ব্যানারে প্রচার প্রচারণা চালানো হচ্ছে। উপজেলা বিএনপি প্রচারে নামলে এর কার্যক্রম বিলুপ্ত করা হবে।






























































































































































































