ঢাকা ০৭:৫৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৮ এপ্রিল ২০২৫, ২৫ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নওগাঁয় বেড়িয়ে আসছে চাঁন্দাশ ইউপি চেয়ারম্যানের নানা কুকীর্তি

কাজী সাঈদ টিটো, নওগাঁ
  • Update Time : ০৭:০২:৪৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ অগাস্ট ২০২৪
  • / ৯৭ Time View

নওগাঁ : দু:স্থ মাতাদের চাল বিতরণ না করে মজুদ করে রাখার বিষয় জানতে চাঁন্দাশ ইউপি ভবনে জনতার ভীড়।

নওগাঁর মহাদেবপুরে চাঁন্দাশ ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদান নবী রিপনের বিরুদ্ধে ওই ইউনিয়নের নির্বাচিত ১০ জন মেম্বার অনাস্থা প্রস্তাব দেবার পর একে একে তার নানা কুকীর্তি ফাঁস হয়ে পড়ছে। এনিয়ে স্থানীয় জনমনে চলছে তোলপাড়।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন যে, বিভিন্ন চোর সিন্ডিকেটের সাথে ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদান নবী রিপনের ছিল দারুন সখ্য। তাদের দিয়ে এলাকায় হেন কাজ নাই যে তিনি করাতেন না। এসব ফাঁস হয়ে পড়লেও রাজনৈতিক কারণে তার বিরুদ্ধে কোনই ব্যবস্থা নেননি কেউ।

তারা জানান, গত ২০২০ সালের ২ নভেম্বর রাত ৯টার দিকে ওই ইউনিয়নের চাকলা গ্রামে গ্রামবাসীরা একটি চোরাই মোটরসাইকেলসহ চোরকে হাতে নাতে ধরলেও চেয়ারম্যান তাকে কৌশলে ছেড়ে দেন। পরে থানা পুলিশ ওই চোরকে গ্রেপ্তার করলেও চোরকে পালিয়ে যেতে সহায়তাকারি হিসেবে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কোনই ব্যবস্থা নেয়নি।

২০২০ সালের ৩ নভেম্বর মহাদেবপুর দর্পণ নামক ফেসবুক আইডি থেকে প্রচারিত একটি লাইভ ভিডিও ভাইরাল হয়। সেখানে উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও চাঁন্দাশ ইউনিয়নের চাকলা গ্রামের বেলাল হোসেনের ছেলে মিলন হুসাইন জনি, আব্দুল কাদেরের ছেলে আব্দুল্লাহ আল হাসান, মোজাফ্ফর রহমানের ছেলে রফিকুল ইসলাম, ইব্রাহিম হেসেনের ছেলে ইউসুফ আলী, আশরাফুল ইসলামের ছেলে আনোয়ার হোসেন সাব্বির প্রমুখ জানান, ২ নভেম্বর রাত ৯টার দিকে তারা গ্রামের রাস্তা দিয়ে কাঞ্চন গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে আশিক ইসলামকে একটি মোটরসাইকেল ঠেলে নিয়ে আসতে দেখে তারা আশিককে আটকান। জিজ্ঞাসাবাদে সে প্রথমে জানায় গাড়ীর তেল ফুড়িয়ে গেছে, পরে জানায় চাবি হারিয়ে গেছে। জেরার মুখে সে স্বীকার করে যে, মোটরসাইকেলটি সে মহাদেবপুর মসজিদ থেকে চুরি করেছে।

নওগাঁ : দু:স্থ মাতাদের চাল বিতরণ না করে মজুদ করে রাখার বিষয় জানতে চাঁন্দাশ ইউপি ভবনে জনতার ভীড়।

এসময় ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদান নবী রিপন সেখানে এসে আশিককে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের অজুহাতে নিজ হেফাজতে নেন। খবর পেয়ে মহাদেবপুর থানার এসআই আবু বক্কর সিদ্দিক সেখানে পৌঁছলে চেয়ারম্যান জানান যে, চোর পালিয়ে গেছে। পুলিশ মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করে মালিককে ফিরিয়ে দেয়। কিন্তু চেয়ারম্যান অজ্ঞাত কারণে হাতে নাতে আটক চোরকে ছেড়ে দেন।

খবর পেয়ে মহাদেবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) পরদিন সকালে অভিযান চালিয়ে আশিককে তার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে ওই মোটরসাইকেল চুরির মামলায় কোর্টে চালান দেয়। চোরকে পালিয়ে যেতে প্রত্যক্ষভাবে সহায়তা করলেও তখন রাজনৈতিক কারণে পুলিশ ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিতে সক্ষম হয়নি।

জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদান নবী রিপন বিষয়টি অস্বীকার করেন।

দেশের পরিবর্তীত পরিস্থিতিতে স্থানীয়রা মসজিদের মত পবিত্র জায়গা থেকে চুরি করা ব্যক্তিকে পালিয়ে যেতে সহায়তা করার অপরাধে তার বিচার দাবি করেন।

২০২১ সালের ২৪ মার্চ মহাদেবপুর দর্পণের আরেকটি লাইভ ভিডিওতে দেখা যায়, চল্লিশ দিনের কর্মসূচিতে নির্ধারিত শ্রমিকদের মধ্যে স্থায়ীভাবে বেশ কয়েকজন শ্রমিক অনুপস্থিত থাকেন। তারা কোন কাজ না করলেও তারা হাজির আছেন বলে চেয়ারম্যান রিপোর্ট দেন এবং তাদেরকে পুরো ভাতা পেতে সহায়তা করেন। এছাড়া যারা মাঝে মাঝে অনুপস্থিত থাকেন তাদেরকেও হাজির দেখিয়ে তাদের ভাতার পুরো টাকা উত্তোলন করলেও অর্ধেক টাকা কেটে রাখেন।

ওইদিন চাঁন্দাশ ইউনিয়নের ইছাপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ইউনিয়নের ৫টি টিমের মধ্যে ৪নং টিমের ৩১ জনের মধ্যে ২৩ জন কাজে যোগ দেন।

শ্রমিকদের সরদার ল²ীপুর গ্রামের ছইমুদ্দিনের ছেলে আনিছুর রহমান জানান, বাঁকিরা কোনদিনই কাজ করেন না। এদের মধ্যে রয়েছেন চৌকিদার আয়নাল হোসেনের ছেলে আবুল কালাম, তার জামাই আনোয়ার হোসেন, চৌকিদার মোস্তাকিন হোসেনের ছেলে মাহফুজ আলম, চেয়ারম্যানের লোক হিসেবে পরিচিত এন্দা হোসেনের ছেলে শামিম হোসেন, আহাদ আলী প্রমুখ।

শ্রমিকরা জানান, যারা কোনদিনই আসেন না তাদেরকে পারিশ্রমিকের টাকা তাদের খাবার জন্য চেয়ারম্যান দিয়েছেন। চেয়ারম্যান মাহমুদান নবী রিপন এসব অভিযোগও অস্বীকার করেন।

স্থানীয়রা এসব বিষয় তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।

উল্লেখ্য, গত ঈদের আগে দু:স্থ মাতাদের জন্য বরাদ্দকরা চাল বিতরণ না করে মজুদ করে রাখায় গত ১৫ আগস্ট দিবাগত রাতে ৫৩০ কেজি চাল জব্দ করা হয় এবং চেয়ারম্যান মাহমুদান নবী রিপনের বিরুদ্ধে এজাহার দায়ের করা হয়। এছাড়া ওই ইউপির নির্বাচিত ১২ জন সদস্যের মধ্যে ১০ জন নানা অভিযোগে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব দিয়ে তার অপসারণ দাবি করেন।

Please Share This Post in Your Social Media

নওগাঁয় বেড়িয়ে আসছে চাঁন্দাশ ইউপি চেয়ারম্যানের নানা কুকীর্তি

কাজী সাঈদ টিটো, নওগাঁ
Update Time : ০৭:০২:৪৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ অগাস্ট ২০২৪

নওগাঁর মহাদেবপুরে চাঁন্দাশ ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদান নবী রিপনের বিরুদ্ধে ওই ইউনিয়নের নির্বাচিত ১০ জন মেম্বার অনাস্থা প্রস্তাব দেবার পর একে একে তার নানা কুকীর্তি ফাঁস হয়ে পড়ছে। এনিয়ে স্থানীয় জনমনে চলছে তোলপাড়।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন যে, বিভিন্ন চোর সিন্ডিকেটের সাথে ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদান নবী রিপনের ছিল দারুন সখ্য। তাদের দিয়ে এলাকায় হেন কাজ নাই যে তিনি করাতেন না। এসব ফাঁস হয়ে পড়লেও রাজনৈতিক কারণে তার বিরুদ্ধে কোনই ব্যবস্থা নেননি কেউ।

তারা জানান, গত ২০২০ সালের ২ নভেম্বর রাত ৯টার দিকে ওই ইউনিয়নের চাকলা গ্রামে গ্রামবাসীরা একটি চোরাই মোটরসাইকেলসহ চোরকে হাতে নাতে ধরলেও চেয়ারম্যান তাকে কৌশলে ছেড়ে দেন। পরে থানা পুলিশ ওই চোরকে গ্রেপ্তার করলেও চোরকে পালিয়ে যেতে সহায়তাকারি হিসেবে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কোনই ব্যবস্থা নেয়নি।

২০২০ সালের ৩ নভেম্বর মহাদেবপুর দর্পণ নামক ফেসবুক আইডি থেকে প্রচারিত একটি লাইভ ভিডিও ভাইরাল হয়। সেখানে উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও চাঁন্দাশ ইউনিয়নের চাকলা গ্রামের বেলাল হোসেনের ছেলে মিলন হুসাইন জনি, আব্দুল কাদেরের ছেলে আব্দুল্লাহ আল হাসান, মোজাফ্ফর রহমানের ছেলে রফিকুল ইসলাম, ইব্রাহিম হেসেনের ছেলে ইউসুফ আলী, আশরাফুল ইসলামের ছেলে আনোয়ার হোসেন সাব্বির প্রমুখ জানান, ২ নভেম্বর রাত ৯টার দিকে তারা গ্রামের রাস্তা দিয়ে কাঞ্চন গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে আশিক ইসলামকে একটি মোটরসাইকেল ঠেলে নিয়ে আসতে দেখে তারা আশিককে আটকান। জিজ্ঞাসাবাদে সে প্রথমে জানায় গাড়ীর তেল ফুড়িয়ে গেছে, পরে জানায় চাবি হারিয়ে গেছে। জেরার মুখে সে স্বীকার করে যে, মোটরসাইকেলটি সে মহাদেবপুর মসজিদ থেকে চুরি করেছে।

নওগাঁ : দু:স্থ মাতাদের চাল বিতরণ না করে মজুদ করে রাখার বিষয় জানতে চাঁন্দাশ ইউপি ভবনে জনতার ভীড়।

এসময় ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদান নবী রিপন সেখানে এসে আশিককে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের অজুহাতে নিজ হেফাজতে নেন। খবর পেয়ে মহাদেবপুর থানার এসআই আবু বক্কর সিদ্দিক সেখানে পৌঁছলে চেয়ারম্যান জানান যে, চোর পালিয়ে গেছে। পুলিশ মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করে মালিককে ফিরিয়ে দেয়। কিন্তু চেয়ারম্যান অজ্ঞাত কারণে হাতে নাতে আটক চোরকে ছেড়ে দেন।

খবর পেয়ে মহাদেবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) পরদিন সকালে অভিযান চালিয়ে আশিককে তার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে ওই মোটরসাইকেল চুরির মামলায় কোর্টে চালান দেয়। চোরকে পালিয়ে যেতে প্রত্যক্ষভাবে সহায়তা করলেও তখন রাজনৈতিক কারণে পুলিশ ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিতে সক্ষম হয়নি।

জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদান নবী রিপন বিষয়টি অস্বীকার করেন।

দেশের পরিবর্তীত পরিস্থিতিতে স্থানীয়রা মসজিদের মত পবিত্র জায়গা থেকে চুরি করা ব্যক্তিকে পালিয়ে যেতে সহায়তা করার অপরাধে তার বিচার দাবি করেন।

২০২১ সালের ২৪ মার্চ মহাদেবপুর দর্পণের আরেকটি লাইভ ভিডিওতে দেখা যায়, চল্লিশ দিনের কর্মসূচিতে নির্ধারিত শ্রমিকদের মধ্যে স্থায়ীভাবে বেশ কয়েকজন শ্রমিক অনুপস্থিত থাকেন। তারা কোন কাজ না করলেও তারা হাজির আছেন বলে চেয়ারম্যান রিপোর্ট দেন এবং তাদেরকে পুরো ভাতা পেতে সহায়তা করেন। এছাড়া যারা মাঝে মাঝে অনুপস্থিত থাকেন তাদেরকেও হাজির দেখিয়ে তাদের ভাতার পুরো টাকা উত্তোলন করলেও অর্ধেক টাকা কেটে রাখেন।

ওইদিন চাঁন্দাশ ইউনিয়নের ইছাপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ইউনিয়নের ৫টি টিমের মধ্যে ৪নং টিমের ৩১ জনের মধ্যে ২৩ জন কাজে যোগ দেন।

শ্রমিকদের সরদার ল²ীপুর গ্রামের ছইমুদ্দিনের ছেলে আনিছুর রহমান জানান, বাঁকিরা কোনদিনই কাজ করেন না। এদের মধ্যে রয়েছেন চৌকিদার আয়নাল হোসেনের ছেলে আবুল কালাম, তার জামাই আনোয়ার হোসেন, চৌকিদার মোস্তাকিন হোসেনের ছেলে মাহফুজ আলম, চেয়ারম্যানের লোক হিসেবে পরিচিত এন্দা হোসেনের ছেলে শামিম হোসেন, আহাদ আলী প্রমুখ।

শ্রমিকরা জানান, যারা কোনদিনই আসেন না তাদেরকে পারিশ্রমিকের টাকা তাদের খাবার জন্য চেয়ারম্যান দিয়েছেন। চেয়ারম্যান মাহমুদান নবী রিপন এসব অভিযোগও অস্বীকার করেন।

স্থানীয়রা এসব বিষয় তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান।

উল্লেখ্য, গত ঈদের আগে দু:স্থ মাতাদের জন্য বরাদ্দকরা চাল বিতরণ না করে মজুদ করে রাখায় গত ১৫ আগস্ট দিবাগত রাতে ৫৩০ কেজি চাল জব্দ করা হয় এবং চেয়ারম্যান মাহমুদান নবী রিপনের বিরুদ্ধে এজাহার দায়ের করা হয়। এছাড়া ওই ইউপির নির্বাচিত ১২ জন সদস্যের মধ্যে ১০ জন নানা অভিযোগে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব দিয়ে তার অপসারণ দাবি করেন।