ধর্ষণের অভিযোগে আত্মগোপনে থাকা যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামী গ্রেফতার

- Update Time : ০৫:০০:৪৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৭ মার্চ ২০২৪
- / ২৩৬ Time View
দিনাজপুর জেলার খানসামা থানাধীন এলাকায় জোরপূর্বক ধর্ষণ করে গর্ভপাত ঘটানোর অপরাধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামী তসলিম উদ্দিন (৫২) কে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-৩।
বুধবার দুপুরে টিকাটুলি র্যাব-৩ এর কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অধিনায়ক লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, আসামী তসলিম পেশায় তরমুজ ব্যবসার আড়ালে দীর্ঘ ২২ বছর পলাতক ছিলেন।
গত ২৬ তারিখ নারায়ণগঞ্জ জেলার ভুলতা গাউসিয়া মার্কেট সংলগ্ন ফলপট্টি এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ ও অনুসন্ধানে জানা যায়, গ্রেফতারকৃত তসলিম উদ্দিন ২০০০ সালে দিনাজপুর জেলার খানসামা থানাধীন খামারপাড়া ইউনিয়নে ‘প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ’ নামক এনজিওতে সুপারভাইজার হিসেবে চাকরি করতো। তিনি ৪ নং খামারপাড়া ইউনিয়নের ৭টি বিদ্যালয়ের প্রায় ১৪ জন শিক্ষকের সুপারভাইজিং অফিসার ছিল এবং তারই অধীনে ভিকটিম বালাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ এনজিও থেকে নিয়োগকৃত শিক্ষিকা হিসেবে কর্মরত ছিল।
ভিকটিম ও আসামি একই কর্মসূচির আওতায় চাকরিতে থাকার সুবাদে তাদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। নিয়মিত কর্মসূচীর অংশ হিসাবে গ্রেফতারকৃত আসামি ভিকটিমকে সাথে নিয়ে বাচ্চাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে অভিভাবকদের সাথে কথা বলত। তসলিমের সাথে ভিকটিমের এভাবে নিয়মিত ঘনঘন যোগাযোগ হওয়ায় দুজনের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে।
আসামী তসলিম তখন বিবাহিত ও দুই সন্তানের জনক। কিন্তু ভিকটিম তার বিবাহিত জীবন সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজানা ছিল।
অধিনায়ক আরিফ মহিউদ্দিন আরও জানান, গ্রেফতারকৃত তসলিম ছিল লম্পট প্রকৃতির। স্কুল ও কলেজ জীবনে সে প্রতারণা করে একাধিক নারীর সাথে অনৈতিক সম্পর্কে লিপ্ত ছিল বলে সে স্বীকার করে।
ভিকটিমের সাথে তার ঘনিষ্ট যোগাযোগ বৃদ্ধি পাওয়ার একপর্যায়ে সে ভিকটিমকে নানাভাবে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনে প্রলুব্ধ করে। শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনে ভিকটিমের অসম্মতি থাকায় সে ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবকদের সাথে কথা বলার নাম করে সুবিধাজনক স্থানে নিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে।
একাধিকবার জোরপূর্বক ধর্ষণের ফলে ভিকটিম গর্ভবতী হয়ে পড়ে। ভিকটিম গর্ভবতী হওয়ার বিষয়টি তসলিমকে জানালে সে বিষয়টি অস্বীকার করে এবং গর্ভের ভ্রূণ নষ্ট করার জন্য চাপ সৃষ্টি করতে থাকে। ভিকটিম এতে রাজি না হয়ে তসলিমকে বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকলে তসলিম নিজেকে বিবাহিত দাবী করে এবং তার পক্ষে ভিকটিমকে বিয়ে করা অসম্ভব বলে সাফ জানিয়ে দেয়।
অন্তঃসত্ত্বা ভিকটিম বাধ্য হয়ে বিষয়টি তসলিমের পরিবারকে জানালে তসলিম সম্মানহানির প্রতিশোধ নিতে প্রতারণা করে ভিকটিমকে তার সাথে একান্তে যোগাযোগের কথা বলে একটি বেসরকারী ক্লিনিকে নিয়ে গর্ভপাত করায়। এসময় ভিকটিম ৫ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিল। মানসম্মান এবং গর্ভের সন্তান হারিয়ে ভিকটিম অসহায় ও আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে পড়ে এবং বিয়ের জন্য প্রচন্ড চাপ সৃষ্টি করে। এমনকি এসময় সে আত্মহত্যার চেষ্টাও করে।
তখন গ্রেফতারকৃত আসামী পূর্বের চাকরি ছেড়ে দিয়ে ঢাকায় একটি ঔষধ কোম্পানির ডেলিভারি ম্যান হিসেবে যোগদান করে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। তখন ভিকটিম ও ভিকটিমের পরিবার বাধ্য হয়ে তসলিমের বিরুদ্ধে ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ধর্ষণসহ ভ্রূণ নষ্ট করার অপরাধে পেনাল কোডের ৩১৩ ধারায় দিনাজপুর জেলার খানসামা থানায় একটি মামলা দায়ের করে।
মামলাটির দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে ২০১৩ সালে বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল, দিনাজপুর তার বিরুদ্ধে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড প্রদানের রায় ঘোষনা করেন।
মামলা রুজু হওয়ার পরেই তসলিম স্ত্রী-সন্তান নিয়ে নিজ এলাকা ত্যাগ করে ঢাকায় চলে আসে। এমনকি গ্রেফতার এড়াতে সে ঘনঘন স্থান পরিবর্তন করতে থাকে। প্রথম ২ বছর সে ঢাকায় একটি ঔষধ কোম্পানির ডেলিভারি ম্যান, এরপর ৩ বছর সিলেটে একটি দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করে। এরপর ঢাকায় ফেরৎ এসে একটি লিমিটেড কোম্পানীর অর্ডারলি হিসেবে কাজ করে।
রায় হওয়ার পর আত্মগোপনে থাকার উদ্দেশ্যে গাজীপুরে কখনো ভ্যান চালিয়ে, কখনো মাটিকাটা শ্রমিকের কাজ করে, কখনো এনজিওর মাঠ কর্মী হিসেবে জীবিকা নির্বাহ করে।
এনজিওর মাঠকর্মী থাকাকালীন গাজীপুরের শ্রীপুর এবং কাশিমপুর এলাকার বিভিন্ন গ্রাহকের কাছ থেকে নামে বেনামে প্রতারণার মাধ্যমে সুকৌশলে ০৮ থেকে ১০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে নারায়ণগঞ্জের ভুলতা গাউছিয়া এলাকায় সে আত্মগোপন করে। সে গাউছিয়া বাজারে ফলপট্টিতে একটি ফলের আড়তের তরমুজ ব্যবসা শুরু করে। এভাবে দীর্ঘ ২২ বছর পলাতক থাকার পর র্যাব-৩ এর একটি চৌকস আভিযানিক দলের হাতে সে গ্রেফতার হয়।
গ্রেফতারকৃত তসলিম উদ্দিন চার ভাই ও তিন বোনের মধ্যে পঞ্চম। তার বাবা ছিলেন কৃষক এবং মা গৃহিনী। সে সৈয়দপুর কলেজ থেকে ১৯৯১ সালে আইএসসি পাস করে। সে বিভিন্ন বাসায় লজিং থেকেই লেখাপড়া করেছে। তার এক ছেলে এবং এক মেয়ে রয়েছে।