আনিসুল হক ও গোলাম সরোয়ারের বেপরোয়া লুটপাট-৫
দুই কুতুবের কথা না শোনায় বিচারকদের করুণ দশা!

- Update Time : ১০:১৮:৪২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৫
- / ৭১ Time View
দৈনিক নওরাজে ধারাবাহিকভাবে সাবেক আইনমন্ত্রী ও সাবেক আইন সচিবসহ দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের পর বিচারাঙ্গণে উৎফুল্লভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। কয়েকজন বিচারপতিসহ জেলা জজ পর্যায়ের কমপক্ষে ২০ জন বিচারক সাধুবাদ জানিয়েছেন নওরোজকে। সামাজিক সীমাবদ্ধতার কারণে তাদের নাম প্রকাশ থেকে আমরা বিরত থাকছি।
সাবেক যুগ্ম সচিব (বাজেট) পরবর্তীতে আইন সচিব গোলাম সরোয়ার প্রতিনিয়ত অবৈধ নির্দেশ অন্যায় আবদার করে চাপে রাখতেন নিম্ন আদালতের বিচারকদের। তার কথামতো কাজ না করলে নেয়া হতো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা। আনিসুল হক ও গোলাম সরোয়ার এই দুই কুতুবের কথা না শোনায় বিচারকদের উপর কি জুলুম নির্যাতন হয়েছে, তা শুনলে অবাক হতে হয়।
বর্তমান বিচারপতি জনাব আব্দুল মান্নান ছিলেন একসময় পিরোজপুরের জেলা ও দায়রা জজ। সেখানে আওয়ামী লীগের মহা-পরাক্রমশালী সাবেক এমপি আব্দুল আউয়ালকে দুর্নীতির মামলায় জামিনের জন্য তৎকালীন জেলা জজ আব্দুল মান্নানকে সচিবালয়ে ডেকে আনেন আলোচ্য আইন সচিব। সচিবালয়ে গোলাম সরোয়ারের কক্ষে তাকে বলা হয় জামিন দিতে হবে। একজন সৎ ন্যায়পরায়ণ বিচারক হিসেবে সেই সময় সচিবের অন্যায় অবদারকে মেনে নিতে পারেননি তাই তিনি মুখের উপরই বলে ফেলেন, আসামীর বিরুদ্ধে গুরুতর দুর্নীতির মামলা রয়েছে। তাকে জামিন দেয়া যায় না। সচিব রেগে গিয়ে বলেন, তুই দিবি না-তোর বাপে দিবে। এরপর সচিবের কক্ষ থেকে ব্যথিত চিত্তে বেরিয়ে এসে তিনি চলে যান কর্মস্থলে। পরে ধার্য্য তারিখে আলোচ্য আসামীর জামিন শুনানীতে তার আবেদন না মঞ্জুর করে জেলহাজতে প্রেরণের নির্দেশ দেন উক্ত জেলা জজ। এই খবরে ক্ষিপ্ত হয়ে ঐদিন বিকাল ৩টা ৪০ মিনিটের মধ্যে দায়িত্বভার অর্পনের নির্দেশ আসে।
বাংলাদেশ তো দুরের কথা পৃথিবীর ইতিহাসে ঘটে এক নজিরবীহিন ঘটনা। তিনি জামিন না মঞ্জুর করলেন বেলা ১.৩০ মিনিটে আর তাকে দায়িত্বভার অপর্নে সময়ে বেধে দেয়া হয় বেলা ৩.৪০ মিনিটের মধ্যে।
প্রশ্ন উঠেছে, মাত্র ২ ঘন্টা ১০ মিনিটের মধ্যে কিভাবে একজন জেলা জজের বদলির প্রস্তাব মন্ত্রী থেকে অনুমোদন হয়ে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির অনুমোদনের পর তা আবার মন্ত্রণালয়ে আসলো। এই এত অল্প সময়ের মধ্যে কিভাবে সম্ভব হলো বদলির এই প্রক্রিয়া। তথ্যাভিজ্ঞ মহলের মতে এই অল্প সময়ের মধ্যে কোনভাবে তা সম্ভব নয়। এতে প্রতিয়মান হয় যে,ওই সময় সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও তার সচিব গোলাম সরোয়ার এতই প্রভাবশালী ছিলো যে সুপ্রিম কোর্টকে তারা কোন আমলেই নেননি। তাই সুপ্রিম কোর্টকে টেক্কা দিয়ে নিজেরাই তরিঘড়ি বদলির জিও জারী করেন। আলোচ্য জেলা জজ মন্ত্রণালয়ে ওএসডি হিসেবে যোগদান করতে আসলে তার যোগদান পত্র গ্রহণে সাবেক আইন সচিব গড়িমসি করেন এবং বেতন ভাতা প্রদানে হয়রানি করেন।
দায়িত্বভার অর্পনের পর তদস্থলে একজন যুগ্ম জেলা জজকে নিয়োগ দিয়ে ঐ দিনই রায় দিয়ে আসামীকে জামিন প্রদান করতে বাধ্য করা হয়। মজার বিষয় হচ্ছে দুদকের মামলায় জামিন দেয়ার ক্ষমতা যুগ্ম জেলা জজের না থাকা সত্তেও তার জামিনের বিষয়টি প্রমাণ করে যে আনিসুল হক ও গোলাম সরোয়াররে ক্ষমতা ছিলো আকাশ চুম্বি। তারা ছিলেন সবকিছু ধরাছোয়ার বাহিরে। জবাবদিহিতার উর্দ্ধে। দায়িত্বভার অর্পন করার পর তাকে মন্ত্রণালয়ে ওএসডি করে রাখা হয়। এনিয়ে তখন প্রিন্ট মিডিয়া ও ইলেকট্রনিক্স মিডিয়াতে শিরোনাম হয়ে উঠেন তৎকালীন জেলা জজ জনাব আব্দুল মান্নান। পরবর্তীতে মিডিয়ার চাপে তাকে কুড়িগ্রামের জেলা জজ হিসেবে বদলী করা হলে তার সময় বিশাল বহরের একটি নিয়োগের তালিকা দেয়া হয়। সচিব টেলিফোনে জানান, আগের বার তুমি কথা না শোনায় তোমার কি অবস্থা হয়েছে? সেটা খেয়াল রেখে নিম্ন আদালতে যে নিয়োগের তালিকা দেয়া হয়েছে, তাদের সবাইকে নিয়োগ দিবা। আইন ও ন্যায়ের প্রতি অবিচল থেকে দুর্নীতি যে বিচারককে স্পর্শ করতে পারেনি, সেই পরম পূজনীয় জেলা জজ আব্দুল মান্নান এবারও বেকে বসলেন। যত বিপদই আসুক না কেন ন্যায় এবং সত্যের পথ থেকে তিনি বিরত থাকবেন না বলে সাফ সাফ জানিয়ে দেন। এরপর সচিব ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে তৎক্ষনাত জেলা জজের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে রাজশাহীর একটি ট্রাইব্যুনাল কোর্টে শাস্তিমূলক বদলী করার জন্য হাইকোর্টে প্রস্তাব দেন। হাইকোর্ট বিচারককে ঢাকায় বদলীর সুপারিশ করলে আনিসুল হক ও গোলাম সরোয়ার ক্ষিপ্ত হয়ে পুনরায় রিভিউ করে আলোচ্য বিচারককে খুলনার প্রশাসনিক আদালতে শাস্তিমূলক বদলী করেন। সে সময় কিভাবে হাইকোর্টকে উপেক্ষা করা হয়েছিল এটা তার জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত।
এনিয়ে ২০২৪ সালের ৮ অক্টোবর দৈনিক নওরোজে ‘আইনমন্ত্রী ও সচিবের নির্দেশ অমান্যকারী সাহসী বিচারকের ভাগ্যে কি জুটবে!’ শীর্ষক সংবাদ প্রকাশিত হয়।
মহান রাব্বুল আলামিন বিচারকদের সেরা বিচারক। আল্লাহর অশেষ রহমতে সেই লাঞ্ছিত জেলা জজ এখন বিচারপতির আসনে বসা। আর আইনমন্ত্রী জেলে, সচিব আছেন পলাতক।
ফ্যাসিস্ট হাসিনার ব্যক্তিগত আক্রোশের শিকার বর্তমান প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহম্মদ ইউনুসের বিরুদ্ধে হয়রানীমূলক মামলায় ৬ মাসের কারাদন্ড ও ৩০ হাজার টাকা জরিমানার রায় দেন তৎকালীন শ্রম আদালতের চেয়ারম্যান শেখ মেরিনা সুলতানা। তিনি এখন কুষ্টিয়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতের বিচারক।
এই মামলায় ড. ইউনুসকে যেভাবে কষ্ট দেয়া হয়েছে, তা ছিল নজিরবিহীন। হাজিরার দিন আগে থেকে লিফট অচল করে রাখা হতো। বন্ধ করে দেয়া হতো সিড়ির বাতি। অসহনীয় দুর্ভোগে ৭ তলা পর্যন্ত সিড়ি বেয়ে পায়ে হেটে হাজিরা দিতেন বাপের বয়সী প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সে সময় শ্রম আপিল আদালতের চেয়ারম্যান ছিলেন বর্তমানে আইন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (মতামত) জনাব এম এ আউয়াল। জনাব আউয়াল জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সে সময় জামিন দেন ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে। পরবর্তীতে ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ সকল আসামীকে খালাস দিয়ে রায় প্রদান করেন।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে জামিন দেয়ার কারণে আইন সচিব গোলাম সরোয়ার তাকে সচিবালয়ে তার কক্ষে ডেকে নিয়ে অপমান এবং হেনস্তা করেন। অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করার পর তাকে ৭ তলা থেকে লাথি দিয়ে ফেলে দেয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন।
এই সেই সচিব গোলাম সরোয়ার যার বিরুদ্ধে ৫ আগস্টের পর ১০/১২টি মামলা হবার পর নিম্ন আদালতে সবকটি এজাহার থেকে তার নাম বাদ করিয়েছেন। অবশ্য ঐ সময় ৫ আগস্টের পর তিনি কয়েকদিন অফিস করেন। এই সুবাধে তখন নিম্ন আদালতে দায়েরকৃত এহাজার থেকে তার নাম বাদ দেয়ার ব্যবস্থা করেন। বর্তমানে তিনি পলাতক থেকে সচিবের সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করছেন। সুই সুতা তোয়ালে গাড়ী বাড়ি ও ড্রাইভার দারোয়ানের সুযোগ সুবিধা নিচ্ছেন। তবে তিনি সরকারী বাড়িতে থাকেন না। সেই বাড়িতে থাকে তার পরিবার। তিনি আছেন মোহাম্মদপুরের কোন এক গোপন আস্তানায়। যেখান থেকে ইচ্ছে করলে খুব সহজেই তাকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা গ্রেফতার করতে পারে।
কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে আসলে কি তাকে গ্রেফতার করা হবে???
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
জনপ্রিয়