ঢাকা ১২:৪২ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৬ জুলাই ২০২৫, ১১ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজঃ

‘দামি ফোন নিয়ে ঘুরলে ছিনতাই তো হবেই’, ভুক্তভোগীকে ওসি

রাজধানী ডেস্ক
  • Update Time : ০৪:০০:৩৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ জুলাই ২০২৫
  • / ৩৬ Time View

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ছিনতাই ও মারধরের শিকার হয়েছেন দৈনিক বণিক বার্তার সহসম্পাদক আহমাদ ওয়াদুদ। বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) রাত ১১টার দিকে তিন রাস্তার মোড় নামক স্থানে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় তার কাছে থাকা মোবাইল ও টাকা নিয়ে গেছে ছিনতাইকারীরা। এ সময় থানায় অভিযোগ দিতে গেলে সেখানেও ভোগান্তির শিকার হন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীর।

এ সময় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) কাছে অভিযোগ দিতে গেলে তিনি ভুক্তভোগীকে বলেন, এত দামি ফোন নিয়ে ঘুরলে ছিনতাই তো হবেই।

জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাত ১১টার সস্ত্রীক বাসায় ফিরছিলেন ওয়াদুদ। তিন রাস্তায় পৌঁছালে একাধিক ছিনতাইকারী এসে চাপাতি দিয়ে আঘাত করে তার সঙ্গে থাকা মোবাইল ও মানিব্যাগ নিয়ে নেয়।

ওয়াদুদ বলেন, আমাকে চাপাতি দিয়ে আঘাত করে মোবাইল, টাকাপয়সাসহ মানিব্যাগ নিয়ে যায়। সৌভাগ্যবশত আঘাত গুরুতর নয়। আমার সঙ্গে আমার স্ত্রী ছিলেন। একটু দূরে থাকায় তিনি নিরাপদ ছিলেন। ঘটনাস্থল থেকে মোহাম্মদপুর থানার দূরত্ব ৩ মিনিট। আমি ও আমার স্ত্রী ঘটনার ৫ মিনিটের মধ্যে থানায় যাই। সোজা ডিউটি অফিসারের রুমে গিয়ে বলি, ৫ মিনিট আগে তিন রাস্তার মোড়ে আমার ছিনতাই হয়েছে। তারা আমাকে বললেন, একটু অপেক্ষা করেন।

তিনি বলেন, আমি লিখিত অভিযোগ দিলে আমাকে একটি ফোন নম্বর দিয়ে তারা বললেন, এটা এএসআই আনারুলের নম্বর। উনি এখন নবোদয় হাউজিংয়ে ব্যস্ত আছেন। আপনি ফোনে উনার সঙ্গে কথা বলেন। আমি তখন তাকে বিনীতভাবে বললাম, আমার মনে হয় এখন ঘটনাস্থলে গেলে ওদের পাওয়া যাবে। দয়া করে এমন কাউকে বলুন, যিনি আমাদের সঙ্গে এখন সেখানে যেতে পারবেন। পরে তারা বলেন, এটা সম্ভব নয়। এটা তার এলাকা।

তিনি আরও বলেন, আমি সেখান থেকে বের হয়ে ওসির রুমে যাই। ওসি ইফতেখার হাসানকে ছিনতাইয়ের ঘটনাটি বললে তিনি বলেন, আমি ওসি হয়েও এই কম দামি ফোন ব্যবহার করি, আপনি এত দামি ফোন নিয়ে ঘুরলে ছিনতাই তো হবেই!

ভুক্তভোগী সাংবাদিক অভিযোগ করেন, আমি বাসস্ট্যান্ডসহ মোট তিনটি পয়েন্ট ঘুরে এএসআই আনারুলের সঙ্গে দেখা করি। তার সঙ্গে আরও সাত-আটজন পুলিশ সদস্য ছিলেন। এএসআই আনারুল আমার কথা শুনে বলেন, চলেন আমরা ঘটনাস্থলে যাই। আমি তার সঙ্গে গাড়িতে করে ঘটনাস্থলে যাই। এর মধ্যে প্রায় ৪০ মিনিট পার হয়ে গেছে। তবে ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর আমি ওই ছিনতাইকারীদের সেখানেই বসে থাকতে দেখি। আমি দূর থেকে তাদের দেখিয়ে দিলেও এএসআই আনারুল সেখানে না গিয়ে একটু দূরে অন্য একটি জায়গায় গিয়ে কিছু লোকের সঙ্গে কথোপকথন করেন। মিনিট দুয়েক পরে তিনি ফিরে এলে আমি এএসআই আনারুলকে আবার ওই সন্ত্রাসীদের দেখিয়ে দিই। তবে আনারুল সেখানে না গিয়ে কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। এ সময় সন্ত্রাসীরাও পুলিশসহ আমাকে দেখে আস্তে আস্তে ঘটনাস্থল থেকে সরে যেতে থাকে। ওরা চলে যাওয়ার পর এএসআই আনারুল আমাকে বলেন, এখন তো ওদের পাওয়া যাবে না। আমরা গভীর রাতে এসে এখানে অভিযান চালাব। আপনারা এখন বাসায় চলে যান।

এব্যাপারে এএসআই আনারুল এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ছিনতাইয়ের ঘটনায় একটা লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। আমাদের তদন্ত চলমান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মোহাম্মদপুর থানার ওসি আলী ইফতেখার হাসান বলেন, ভুক্তভোগী মূত্র ত্যাগের জন্য মূল রাস্তা থেকে একটু বাইরের গলির ভেতরে ঢুকেছিলেন। ওখানে মাঝে মধ্যে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে। ছিনতাইয়ের ঘটনাটি সেখানেই ঘটেছে। আমরা অভিযোগ পেয়েছি, এবং আসামিদের ধরতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বক্তব্য সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভুক্তভোগী সাংবাদিক অনেক আগের একটি ছিনতাইয়ের কথা আমাকে বলেন। আমি সে পরিপ্রেক্ষিতে দামি মোবাইল চালানোর কথাটি বলেছি। এ ঘটনার সঙ্গে কোনোভাবে সম্পৃক্ত নয় কথাটি।

সাংবাদিকের ছিনতাই হওয়া মোবাইল উদ্ধার, আটক ৩

Please Share This Post in Your Social Media

‘দামি ফোন নিয়ে ঘুরলে ছিনতাই তো হবেই’, ভুক্তভোগীকে ওসি

রাজধানী ডেস্ক
Update Time : ০৪:০০:৩৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৫ জুলাই ২০২৫

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ছিনতাই ও মারধরের শিকার হয়েছেন দৈনিক বণিক বার্তার সহসম্পাদক আহমাদ ওয়াদুদ। বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) রাত ১১টার দিকে তিন রাস্তার মোড় নামক স্থানে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় তার কাছে থাকা মোবাইল ও টাকা নিয়ে গেছে ছিনতাইকারীরা। এ সময় থানায় অভিযোগ দিতে গেলে সেখানেও ভোগান্তির শিকার হন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীর।

এ সময় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) কাছে অভিযোগ দিতে গেলে তিনি ভুক্তভোগীকে বলেন, এত দামি ফোন নিয়ে ঘুরলে ছিনতাই তো হবেই।

জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাত ১১টার সস্ত্রীক বাসায় ফিরছিলেন ওয়াদুদ। তিন রাস্তায় পৌঁছালে একাধিক ছিনতাইকারী এসে চাপাতি দিয়ে আঘাত করে তার সঙ্গে থাকা মোবাইল ও মানিব্যাগ নিয়ে নেয়।

ওয়াদুদ বলেন, আমাকে চাপাতি দিয়ে আঘাত করে মোবাইল, টাকাপয়সাসহ মানিব্যাগ নিয়ে যায়। সৌভাগ্যবশত আঘাত গুরুতর নয়। আমার সঙ্গে আমার স্ত্রী ছিলেন। একটু দূরে থাকায় তিনি নিরাপদ ছিলেন। ঘটনাস্থল থেকে মোহাম্মদপুর থানার দূরত্ব ৩ মিনিট। আমি ও আমার স্ত্রী ঘটনার ৫ মিনিটের মধ্যে থানায় যাই। সোজা ডিউটি অফিসারের রুমে গিয়ে বলি, ৫ মিনিট আগে তিন রাস্তার মোড়ে আমার ছিনতাই হয়েছে। তারা আমাকে বললেন, একটু অপেক্ষা করেন।

তিনি বলেন, আমি লিখিত অভিযোগ দিলে আমাকে একটি ফোন নম্বর দিয়ে তারা বললেন, এটা এএসআই আনারুলের নম্বর। উনি এখন নবোদয় হাউজিংয়ে ব্যস্ত আছেন। আপনি ফোনে উনার সঙ্গে কথা বলেন। আমি তখন তাকে বিনীতভাবে বললাম, আমার মনে হয় এখন ঘটনাস্থলে গেলে ওদের পাওয়া যাবে। দয়া করে এমন কাউকে বলুন, যিনি আমাদের সঙ্গে এখন সেখানে যেতে পারবেন। পরে তারা বলেন, এটা সম্ভব নয়। এটা তার এলাকা।

তিনি আরও বলেন, আমি সেখান থেকে বের হয়ে ওসির রুমে যাই। ওসি ইফতেখার হাসানকে ছিনতাইয়ের ঘটনাটি বললে তিনি বলেন, আমি ওসি হয়েও এই কম দামি ফোন ব্যবহার করি, আপনি এত দামি ফোন নিয়ে ঘুরলে ছিনতাই তো হবেই!

ভুক্তভোগী সাংবাদিক অভিযোগ করেন, আমি বাসস্ট্যান্ডসহ মোট তিনটি পয়েন্ট ঘুরে এএসআই আনারুলের সঙ্গে দেখা করি। তার সঙ্গে আরও সাত-আটজন পুলিশ সদস্য ছিলেন। এএসআই আনারুল আমার কথা শুনে বলেন, চলেন আমরা ঘটনাস্থলে যাই। আমি তার সঙ্গে গাড়িতে করে ঘটনাস্থলে যাই। এর মধ্যে প্রায় ৪০ মিনিট পার হয়ে গেছে। তবে ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর আমি ওই ছিনতাইকারীদের সেখানেই বসে থাকতে দেখি। আমি দূর থেকে তাদের দেখিয়ে দিলেও এএসআই আনারুল সেখানে না গিয়ে একটু দূরে অন্য একটি জায়গায় গিয়ে কিছু লোকের সঙ্গে কথোপকথন করেন। মিনিট দুয়েক পরে তিনি ফিরে এলে আমি এএসআই আনারুলকে আবার ওই সন্ত্রাসীদের দেখিয়ে দিই। তবে আনারুল সেখানে না গিয়ে কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন। এ সময় সন্ত্রাসীরাও পুলিশসহ আমাকে দেখে আস্তে আস্তে ঘটনাস্থল থেকে সরে যেতে থাকে। ওরা চলে যাওয়ার পর এএসআই আনারুল আমাকে বলেন, এখন তো ওদের পাওয়া যাবে না। আমরা গভীর রাতে এসে এখানে অভিযান চালাব। আপনারা এখন বাসায় চলে যান।

এব্যাপারে এএসআই আনারুল এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ছিনতাইয়ের ঘটনায় একটা লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। আমাদের তদন্ত চলমান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মোহাম্মদপুর থানার ওসি আলী ইফতেখার হাসান বলেন, ভুক্তভোগী মূত্র ত্যাগের জন্য মূল রাস্তা থেকে একটু বাইরের গলির ভেতরে ঢুকেছিলেন। ওখানে মাঝে মধ্যে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে। ছিনতাইয়ের ঘটনাটি সেখানেই ঘটেছে। আমরা অভিযোগ পেয়েছি, এবং আসামিদের ধরতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বক্তব্য সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভুক্তভোগী সাংবাদিক অনেক আগের একটি ছিনতাইয়ের কথা আমাকে বলেন। আমি সে পরিপ্রেক্ষিতে দামি মোবাইল চালানোর কথাটি বলেছি। এ ঘটনার সঙ্গে কোনোভাবে সম্পৃক্ত নয় কথাটি।

সাংবাদিকের ছিনতাই হওয়া মোবাইল উদ্ধার, আটক ৩