ঢাকা ১০:১৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১১ মে ২০২৫, ২৮ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজঃ
প্রকল্প বাস্তবায়নে পরিবেশ রক্ষাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে – পরিবেশ উপদেষ্টা আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা ভারত-পাকিস্তান পূর্ণ যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে : ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির কথা নিশ্চিত করেছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পারিবারিক অনুষ্ঠানে গেলেন বেগম খালেদা জিয়া প্রায় ৫২ মিলিয়ন মানুষ বাংলাদেশে বন্যার ঝুঁকির মধ্যে থাকবে : পরিবেশ উপদেষ্টা রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ সব সমস্যার সমাধান নয়: গয়েশ্বর বাংলাদেশের মানুষ আওয়ামী লীগকে চায় না : মির্জা ফখরুল লঞ্চে দুই তরুণীকে প্রকাশ্যে মারধর, যুবক আটক শাহবাগ ছেড়ে এবার ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়ে আন্দোলনকারীরা
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন

দাফনের ৪৪ দিন পর সাজ্জাদের লাশ উত্তোলন, নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে পরিবার

কামরুল হাসান টিটু, রংপুর ব্যুরো
  • Update Time : ০৮:৫৮:৪৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • / ৩১২ Time View

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত সবজি বিক্রেতা সাজ্জাদ হোসেনের লাশ দাফনের ৪৪ দিন পর উত্তোলন করা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে কবর থেকে তাঁর লাশ তুলে ময়নাতদন্তের জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

লাশ উত্তোলনে নেতৃত্ব দেন রংপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী কমিশনার এটিএম আরিফ ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রংপুর মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মাদ তালেব উদ্দিন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রংপুর মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি থানার এসআই মো. তালেব উদ্দিন বলেন, মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আদালতের আদেশক্রমে সাজ্জাদ হোসেনের লাশ কবর থেকে উত্তোলন করা হয়। পরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য তাঁর লাশ পাঠানো হয়। ময়নাতদন্ত শেষে পুনরায় লাশ দাফন করা হবে।

মরদেহ উত্তোলনের বিষয়টি নিশ্চিত করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এটিএম আরিফ হোসেন বলেন, আদালতের নির্দেশে সাজ্জাদ হোসেনের মরদেহ কবর থেকে উত্তোলনের পর সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। পরে মরদেহের ময়নাতদন্ত শেষ করে আবারো দাফন করা হয়েছে।

গত ১৯ জুলাই বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে নগরীর সিটি বাজার সংলগ্ন রাজা রাম মোহন মার্কেটের সামনে গুলিতে নিহত হন সাজ্জাদ হোসেন। এ ঘটনায় গত ২০ আগস্ট সাজ্জাদ হোসেনের স্ত্রী জিতু বেগম বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন।

মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার বোন শেখ রেহানা, সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, রাশেদ খান মেনন, সাংবাদিক সুভাষ সিংহ রায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব নাইমুল ইসলাম খান, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত ও মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী অপু উকিলকে হুকুমের আসামি করা হয়েছে। এছাড়া মামলায় ৫১ জন নামীয় ও অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে ৩০০ জনকে।

নামীয় অন্য আসামিদের মধ্যে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন এবং রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার (বাধ্যতামূলক অবসর) মো. মনিরুজ্জামানসহ পুলিশ কর্মকর্তা, আইনজীবী, সাবেক জনপ্রতিনিধি, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা রয়েছেন।

মামলার আবেদনে বলা হয়, নিহত সাজ্জাদ হোসেন একজন ব্যবসায়ী।গত ১৯ জুলাই (শুক্রবার) বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে রংপুর নগরীর রাজা রাম মোহন মার্কেটের সামনে ১ থেকে ১০ নং আসামির নির্দেশে অন্য নামীয় ও অজ্ঞাত আসামিদের সঙ্গে ছাত্র-জনতার সংঘর্ষ হয়। এসময় সাজ্জাদ হোসেন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। পরে তার লাশ রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যাওয়ার পথে আসামিদের বাঁধার মুখে পড়েন বাদী। পরে বাধ্য হয়ে ময়নাতদন্ত ছাড়াই তার লাশ দাফন করা হয়।

এদিকে নিহত সাজ্জাদ হোসেনের পরিবারের দাবি, ২০ আগস্ট হত্যা মামলা দায়ের করার পর থেকে আসামিরা বিভিন্নভাবে মামলা তুলে নিতে হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। এতে পুরো পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এ নিয়ে আরও একটি মামলা থানায় করবেন বলে জানিয়েছে ওই পরিবার।

মামলা তুলে নিতে হুমকির অভিযোগ উল্লেখ করে সাজ্জাদের মা ময়না বেগম বলেন, ছেলের বউ মামলা করার পর বিভিন্ন মহল থেকে মামলা তুলে নিতে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তাজহাট এলাকার লোকজন বেশি করে হুমকি দিচ্ছে। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। এ কারণে আমি বাদী হয়ে আরেকটি মামলা করব। আমি চাই আমার সন্তানকে যারা হত্যা করেছে তাদের বিচার হোক।

সাজ্জাদ পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন বলে জানিয়ে তিনি আরো সাংবাদিকদের বলেন, আন্দোলনে আমার ছেলে নিহত হয়েছে। ঢাকায় থাকার কারণে ছেলের লাশটাও আমি দেখতে পারিনি। শেখ হাসিনার নির্দেশে আমার ছেলেকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। আমার ছেলে ছাড়া পুরো সংসার অসহায়। ছেলেই ছিল সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম। এই সরকারের কাছে আমাদের চাওয়া, আমরা যেন বিচার পাই। সংসার চালানোর জন্য সরকার যেন একটা ব্যবস্থা করে দেন।

Please Share This Post in Your Social Media

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন

দাফনের ৪৪ দিন পর সাজ্জাদের লাশ উত্তোলন, নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে পরিবার

কামরুল হাসান টিটু, রংপুর ব্যুরো
Update Time : ০৮:৫৮:৪৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ২ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত সবজি বিক্রেতা সাজ্জাদ হোসেনের লাশ দাফনের ৪৪ দিন পর উত্তোলন করা হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) দুপুরে কবর থেকে তাঁর লাশ তুলে ময়নাতদন্তের জন্য রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

লাশ উত্তোলনে নেতৃত্ব দেন রংপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী কমিশনার এটিএম আরিফ ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রংপুর মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মাদ তালেব উদ্দিন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা রংপুর মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি থানার এসআই মো. তালেব উদ্দিন বলেন, মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে আদালতের আদেশক্রমে সাজ্জাদ হোসেনের লাশ কবর থেকে উত্তোলন করা হয়। পরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য তাঁর লাশ পাঠানো হয়। ময়নাতদন্ত শেষে পুনরায় লাশ দাফন করা হবে।

মরদেহ উত্তোলনের বিষয়টি নিশ্চিত করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এটিএম আরিফ হোসেন বলেন, আদালতের নির্দেশে সাজ্জাদ হোসেনের মরদেহ কবর থেকে উত্তোলনের পর সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। পরে মরদেহের ময়নাতদন্ত শেষ করে আবারো দাফন করা হয়েছে।

গত ১৯ জুলাই বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে নগরীর সিটি বাজার সংলগ্ন রাজা রাম মোহন মার্কেটের সামনে গুলিতে নিহত হন সাজ্জাদ হোসেন। এ ঘটনায় গত ২০ আগস্ট সাজ্জাদ হোসেনের স্ত্রী জিতু বেগম বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন।

মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার বোন শেখ রেহানা, সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, রাশেদ খান মেনন, সাংবাদিক সুভাষ সিংহ রায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব নাইমুল ইসলাম খান, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত ও মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী অপু উকিলকে হুকুমের আসামি করা হয়েছে। এছাড়া মামলায় ৫১ জন নামীয় ও অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে ৩০০ জনকে।

নামীয় অন্য আসামিদের মধ্যে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন এবং রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার (বাধ্যতামূলক অবসর) মো. মনিরুজ্জামানসহ পুলিশ কর্মকর্তা, আইনজীবী, সাবেক জনপ্রতিনিধি, আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা রয়েছেন।

মামলার আবেদনে বলা হয়, নিহত সাজ্জাদ হোসেন একজন ব্যবসায়ী।গত ১৯ জুলাই (শুক্রবার) বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে রংপুর নগরীর রাজা রাম মোহন মার্কেটের সামনে ১ থেকে ১০ নং আসামির নির্দেশে অন্য নামীয় ও অজ্ঞাত আসামিদের সঙ্গে ছাত্র-জনতার সংঘর্ষ হয়। এসময় সাজ্জাদ হোসেন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। পরে তার লাশ রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে যাওয়ার পথে আসামিদের বাঁধার মুখে পড়েন বাদী। পরে বাধ্য হয়ে ময়নাতদন্ত ছাড়াই তার লাশ দাফন করা হয়।

এদিকে নিহত সাজ্জাদ হোসেনের পরিবারের দাবি, ২০ আগস্ট হত্যা মামলা দায়ের করার পর থেকে আসামিরা বিভিন্নভাবে মামলা তুলে নিতে হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। এতে পুরো পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এ নিয়ে আরও একটি মামলা থানায় করবেন বলে জানিয়েছে ওই পরিবার।

মামলা তুলে নিতে হুমকির অভিযোগ উল্লেখ করে সাজ্জাদের মা ময়না বেগম বলেন, ছেলের বউ মামলা করার পর বিভিন্ন মহল থেকে মামলা তুলে নিতে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তাজহাট এলাকার লোকজন বেশি করে হুমকি দিচ্ছে। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। এ কারণে আমি বাদী হয়ে আরেকটি মামলা করব। আমি চাই আমার সন্তানকে যারা হত্যা করেছে তাদের বিচার হোক।

সাজ্জাদ পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন বলে জানিয়ে তিনি আরো সাংবাদিকদের বলেন, আন্দোলনে আমার ছেলে নিহত হয়েছে। ঢাকায় থাকার কারণে ছেলের লাশটাও আমি দেখতে পারিনি। শেখ হাসিনার নির্দেশে আমার ছেলেকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। আমার ছেলে ছাড়া পুরো সংসার অসহায়। ছেলেই ছিল সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম। এই সরকারের কাছে আমাদের চাওয়া, আমরা যেন বিচার পাই। সংসার চালানোর জন্য সরকার যেন একটা ব্যবস্থা করে দেন।