ঢাকা ০৭:২৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৩ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ত্বকী হত্যাকাণ্ডে গ্রেপ্তার দুই আসামি নির্দোষ, দাবি স্বজনদের

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
  • Update Time : ১০:২৫:৫৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • / ১২ Time View

ছবি সংগৃহীত

নারায়ণগঞ্জে আলোচিত তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার দুই আসামি সাফায়েত হোসেন শিপন ও মামুন মিয়া এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত নন বলে দাবি করেছেন তাদের স্বজনরা।

আজ বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবে শিপনের স্ত্রী ফারজানা আহমেদ রিংকি এবং মামুন মিয়ার স্ত্রী রাফিয়া সুলতানা সংবাদ সম্মেলন করে এই দাবি করেন।

তাদের ভাষ্য, পূর্বে র‌্যাবের কাছে গ্রেপ্তার আসামিরা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে শিপন নামের যে ব্যক্তির কথা উল্লেখ করেছেন ওই শিপন আজমেরী ওসমানের গাড়িচালক এবং যে মামুনের কথা বলা হয়েছে, সে আজমেরী ওসমানের খালাতো বোনের জামাই। তাদের নামের সঙ্গে এই দুজনের নাম মিল থাকায় সন্দেহ থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।

শাফাওয়েত হোসেন শিপন, মামুন মিয়া।

এর আগে গত ৮ সেপ্টেম্বর রাতে নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়া থেকে শাফায়েত হোসেন শিপন এবং কালিরবাজার থেকে মামুন মিয়াকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠায় র‌্যাব-১১। পরবর্তীতে ৯ সেপ্টেম্বর শিপন এবং মামুনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত তাদের ৬ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

সংবাদ সম্মেলনে শিপনের স্ত্রী ফারজানা আহমেদ রিংকি বলেন, ‘ত্বকী হত্যাকাণ্ডের মতো স্পর্শকাতর মামলায় কী করে আমার স্বামী আসামি হন, তা বোধগম্য নয়। ত্বকী হত্যাকাণ্ড নিয়ে অসংখ্য সভা-সমাবেশ গত ১১ বছর যাবৎ নারায়ণগঞ্জে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এখনো প্রতি মাসেই এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে মানববন্ধন-সমাবেশ চলমান। কিন্তু কোথাও কোনো সমাবেশে শিপনের নাম আলোচিত হতে শুনিনি। অন্যদিকে ত্বকীর পিতাসহ সভা-সমাবেশ থেকে যাদের দায়ী ও গ্রেপ্তার দাবি করে বিভিন্ন সময় বক্তব্য দেওয়া হয়েছে, তাদের কাউকে আমরা গ্রেপ্তার হতে দেখিনি। অথচ এখন নিরীহ শিপনকে গ্রেপ্তার করে হয়রানি করা হচ্ছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘এমন একজন মানুষকে এভাবে কেউ হত্যাকাণ্ডে সন্দেহ করতে পারে তা আমাদের কাছে কল্পনাতীত। তার বিরুদ্ধে কোনো দিন একটি সাধারণ ডায়েরিও হয়নি। ২০১৩ সালে ত্বকী হত্যাকাণ্ডের পর কোনো দিনও তিনি নারায়ণগঞ্জের বাহিরে থাকেননি। কী উদ্দেশ্যে, কিসের ভিত্তিতে শিপনকে গ্রেপ্তার করা হলো, তা আমাদের কাছে এখনো পরিষ্কার নয়। আমরা শিপনকে গ্রেপ্তারের তীব্র প্রতিবাদ জানাই এবং অবিলম্বে তার মুক্তি দাবি করছি।’

মামুন মিয়ার স্ত্রী রাফিয়া সুলতানা সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘মামুন মিয়াকে র‌্যাব গ্রেপ্তার করেছে। বিগত সময়ে তদন্তকালে যে মামুনের নাম প্রকাশ পেয়েছিল, তিনি হলেন আজমেরী ওসমানের খালাতো বোনের জামাই মামুন। বিষয়টি নারায়ণগঞ্জের অনেকেই জানেন। আমরা আশঙ্কা করছি, আজমেরী ওসমানের খালাতো বোনের জামাই মামুনকে বাঁচানোর জন্য চক্রান্ত করে প্রকৃত আসামি মামুনের পরিবর্তে আমার স্বামী নির্দোষ মামুন মিয়াকে ত্বকী হত্যা মামলায় ফাঁসানোর জন্য চক্রান্ত চলছে।’

এ বিষয়ে র‌্যাব-১১-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল তানভীর মাহমুদ পাশা বলেন, উপযুক্ত প্রমাণ সাপেক্ষেই তাদের দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এখানে ভুল-বোঝাবুঝির সুযোগ নেই। আমরা নিরপরাধ কাউকে এখানে আসামি করব না। আমরা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের রিমান্ডে নিয়েছি। তারা যদি নিরপরাধ হয়ে থাকেন তাহলে আদালতই তাদের জামিন দেবেন। আমরা চাইলেই জোর করে কাউকে আটকে রাখতে পারব না। আমরা শিগগিরই এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবাইকে গ্রেপ্তার করে দ্রুত চার্জশিট দেওয়ার চেষ্টা করছি।’

র‍্যাব-১১ সিও তানভির মাহমুদ পাশা বলেন, ২০০৮ সালের ৬ মার্চ শিক্ষার্থী ত্বকীকে নারায়ণগঞ্জের সুধীজন পাঠাগারের সামনে থেকে অপহরণ করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। পরে তার মরদেহ শীতলক্ষ্যা নদীর কুমুদিনী শাখা খালে ফেলে দেয়া হয়। এর দুইদিন পর ৮ মার্চ তার মরদেহ ভেসে উঠে। পরে নারায়ণগঞ্জ সদর থানা পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়। এ ঘটনায় ত্বকীর পিতা রফিউর রাব্বি নারায়ণগঞ্জ সদর থানা একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

তিনি আরও বলেন, পরবর্তীতে বাদীর আবেদনের প্রেক্ষিতে মামলাটির তদন্তভার র‍্যাবের কাছে হস্তান্তর করে আদালত। পরে র‍্যাব আসামি সুলতান শওকত ভ্রমর, ইউসুফ হোসেন লিটন, তায়েব উদ্দিন জ্যাকি, সালেহ রহমান সীমান্তকে গ্রেফতার করে। সে সময় সুলতান ও লিটন ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করেন। সুলতান তার জবানবন্দীতে হত্যাকাণ্ডের সাথে শামীম ওসমানের ভাতিজা আজমেরী ওসমান জড়িত ছিলেন বলে উল্লেখ করেন। পরবর্তীতে আসামিরা আদালত থেকে জামিন নিয়ে পালিয়ে যান।

Please Share This Post in Your Social Media

ত্বকী হত্যাকাণ্ডে গ্রেপ্তার দুই আসামি নির্দোষ, দাবি স্বজনদের

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
Update Time : ১০:২৫:৫৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪

নারায়ণগঞ্জে আলোচিত তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার দুই আসামি সাফায়েত হোসেন শিপন ও মামুন মিয়া এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত নন বলে দাবি করেছেন তাদের স্বজনরা।

আজ বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবে শিপনের স্ত্রী ফারজানা আহমেদ রিংকি এবং মামুন মিয়ার স্ত্রী রাফিয়া সুলতানা সংবাদ সম্মেলন করে এই দাবি করেন।

তাদের ভাষ্য, পূর্বে র‌্যাবের কাছে গ্রেপ্তার আসামিরা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে শিপন নামের যে ব্যক্তির কথা উল্লেখ করেছেন ওই শিপন আজমেরী ওসমানের গাড়িচালক এবং যে মামুনের কথা বলা হয়েছে, সে আজমেরী ওসমানের খালাতো বোনের জামাই। তাদের নামের সঙ্গে এই দুজনের নাম মিল থাকায় সন্দেহ থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।

শাফাওয়েত হোসেন শিপন, মামুন মিয়া।

এর আগে গত ৮ সেপ্টেম্বর রাতে নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়া থেকে শাফায়েত হোসেন শিপন এবং কালিরবাজার থেকে মামুন মিয়াকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠায় র‌্যাব-১১। পরবর্তীতে ৯ সেপ্টেম্বর শিপন এবং মামুনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে আদালত তাদের ৬ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

সংবাদ সম্মেলনে শিপনের স্ত্রী ফারজানা আহমেদ রিংকি বলেন, ‘ত্বকী হত্যাকাণ্ডের মতো স্পর্শকাতর মামলায় কী করে আমার স্বামী আসামি হন, তা বোধগম্য নয়। ত্বকী হত্যাকাণ্ড নিয়ে অসংখ্য সভা-সমাবেশ গত ১১ বছর যাবৎ নারায়ণগঞ্জে অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এখনো প্রতি মাসেই এই হত্যাকাণ্ড নিয়ে মানববন্ধন-সমাবেশ চলমান। কিন্তু কোথাও কোনো সমাবেশে শিপনের নাম আলোচিত হতে শুনিনি। অন্যদিকে ত্বকীর পিতাসহ সভা-সমাবেশ থেকে যাদের দায়ী ও গ্রেপ্তার দাবি করে বিভিন্ন সময় বক্তব্য দেওয়া হয়েছে, তাদের কাউকে আমরা গ্রেপ্তার হতে দেখিনি। অথচ এখন নিরীহ শিপনকে গ্রেপ্তার করে হয়রানি করা হচ্ছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘এমন একজন মানুষকে এভাবে কেউ হত্যাকাণ্ডে সন্দেহ করতে পারে তা আমাদের কাছে কল্পনাতীত। তার বিরুদ্ধে কোনো দিন একটি সাধারণ ডায়েরিও হয়নি। ২০১৩ সালে ত্বকী হত্যাকাণ্ডের পর কোনো দিনও তিনি নারায়ণগঞ্জের বাহিরে থাকেননি। কী উদ্দেশ্যে, কিসের ভিত্তিতে শিপনকে গ্রেপ্তার করা হলো, তা আমাদের কাছে এখনো পরিষ্কার নয়। আমরা শিপনকে গ্রেপ্তারের তীব্র প্রতিবাদ জানাই এবং অবিলম্বে তার মুক্তি দাবি করছি।’

মামুন মিয়ার স্ত্রী রাফিয়া সুলতানা সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘মামুন মিয়াকে র‌্যাব গ্রেপ্তার করেছে। বিগত সময়ে তদন্তকালে যে মামুনের নাম প্রকাশ পেয়েছিল, তিনি হলেন আজমেরী ওসমানের খালাতো বোনের জামাই মামুন। বিষয়টি নারায়ণগঞ্জের অনেকেই জানেন। আমরা আশঙ্কা করছি, আজমেরী ওসমানের খালাতো বোনের জামাই মামুনকে বাঁচানোর জন্য চক্রান্ত করে প্রকৃত আসামি মামুনের পরিবর্তে আমার স্বামী নির্দোষ মামুন মিয়াকে ত্বকী হত্যা মামলায় ফাঁসানোর জন্য চক্রান্ত চলছে।’

এ বিষয়ে র‌্যাব-১১-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল তানভীর মাহমুদ পাশা বলেন, উপযুক্ত প্রমাণ সাপেক্ষেই তাদের দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এখানে ভুল-বোঝাবুঝির সুযোগ নেই। আমরা নিরপরাধ কাউকে এখানে আসামি করব না। আমরা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের রিমান্ডে নিয়েছি। তারা যদি নিরপরাধ হয়ে থাকেন তাহলে আদালতই তাদের জামিন দেবেন। আমরা চাইলেই জোর করে কাউকে আটকে রাখতে পারব না। আমরা শিগগিরই এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবাইকে গ্রেপ্তার করে দ্রুত চার্জশিট দেওয়ার চেষ্টা করছি।’

র‍্যাব-১১ সিও তানভির মাহমুদ পাশা বলেন, ২০০৮ সালের ৬ মার্চ শিক্ষার্থী ত্বকীকে নারায়ণগঞ্জের সুধীজন পাঠাগারের সামনে থেকে অপহরণ করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। পরে তার মরদেহ শীতলক্ষ্যা নদীর কুমুদিনী শাখা খালে ফেলে দেয়া হয়। এর দুইদিন পর ৮ মার্চ তার মরদেহ ভেসে উঠে। পরে নারায়ণগঞ্জ সদর থানা পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়। এ ঘটনায় ত্বকীর পিতা রফিউর রাব্বি নারায়ণগঞ্জ সদর থানা একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

তিনি আরও বলেন, পরবর্তীতে বাদীর আবেদনের প্রেক্ষিতে মামলাটির তদন্তভার র‍্যাবের কাছে হস্তান্তর করে আদালত। পরে র‍্যাব আসামি সুলতান শওকত ভ্রমর, ইউসুফ হোসেন লিটন, তায়েব উদ্দিন জ্যাকি, সালেহ রহমান সীমান্তকে গ্রেফতার করে। সে সময় সুলতান ও লিটন ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করেন। সুলতান তার জবানবন্দীতে হত্যাকাণ্ডের সাথে শামীম ওসমানের ভাতিজা আজমেরী ওসমান জড়িত ছিলেন বলে উল্লেখ করেন। পরবর্তীতে আসামিরা আদালত থেকে জামিন নিয়ে পালিয়ে যান।