তোরা সরকারের বেতন রেশন খাস না? গুলি করবি না কেন?: এডিসি

- Update Time : ১২:৫৬:৩৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / ১৩৫ Time View
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে হওয়া মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে জবানবন্দি দিয়েছেন মাঠপর্যায়ে দায়িত্বপালনকারী পুলিশের একজন উপপরিদর্শক (এসআই)। তার নাম মো. আশরাফুল ইসলাম। সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ তিনি রাষ্ট্রপক্ষের ৩৯তম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কীভাবে হত্যাযজ্ঞ চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন তা উঠে এসেছে আশরাফুলের জবানবন্দিতে। বিশেষ করে রাজধানীর চাঁনখারপুর এলাকায় আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ার বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বল প্রয়োগের নমুনা তুলে ধরেন তিনি।
জবানবন্দিতে এসআই আশরাফুল বলেন, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট চাঁনখারপুল এলাকায় অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) শাহ আলম মো. আক্তারুল ইসলামের নির্দেশে প্রয়োজন ছাড়াই ছাত্র-জনতাকে লক্ষ্য করে সাউন্ড গ্রেনেড ও গুলি ছোড়া হয়। এসময় অধস্তন পুলিশ কর্মকর্তা ও সদস্যরা গুলি করতে না চাইলে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এডিসি আক্তার। তিনি হুমকি দিয়ে বলেন, ‘তোরা সরকারের বেতন রেশন খাস না? গুলি করবি না কেন? তোদের চাকরি খেয়ে নেব।’
জবানবন্দিতে আশরাফুল ইসলাম বলেন, আমি ১৯৯৪ সালের ১১ জানুয়ারি পুলিশে যোগ দিই। ২০০২ সালের ১৩ জুলাই থেকে ডিএমপিতে কর্মরত আছি। ২০১৮ সালে এসআই (সশস্ত্র) হিসেবে পদোন্নতি পাই। গত বছরের ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে পুলিশের অন্য কর্মকর্তা ও সদস্যদের সঙ্গে ভোরে পিওএম পুলিশ লাইন মিরপুর থেকে রওনা হই। সকালে জরুরি আইনশৃঙ্খলা ডিউটির জন্য শাহবাগ থানায় যাই। সেখানে জানতে পারি, সকালে ডিএমপির কমিশনার হাবিবুর রহমান স্যার এবং যুগ্ম পুলিশ কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী শাহবাগ থানায় উপস্থিত হয়ে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের আন্দোলন দমনে গুলি করাসহ অন্যান্য নির্দেশনা দিয়ে গেছেন।
সাক্ষী আশরাফুল জানান, ওই দিন আন্দোলনকারীদের ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ছিলো। সকাল ৯টার দিকে মোট পাঁচ প্লাটুন পুলিশ, রমনা জোনের তৎকালীন এসি ইমরুল, শাহবাগ থানার ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র) মো. আরশাদ হোসেনকে নিয়ে আইনশৃঙ্খলা ডিউটি নিয়ে ব্রিফ করেন তৎকালীন এডিসি আক্তারুল ইসলাম। ব্রিফিং শেষে নারী পুলিশ ও ডিএমপি পুলিশের দুই প্লাটুন ছাড়া ৬০/৬৫ জন পুলিশ এডিসি আক্তারুল, এসি ইমরুল ও ইন্সপেক্টর মো. আরশাদ হোসেনের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ডিউটিতে যান। তাদের সঙ্গে ছিলেন এসআই আশরাফুল। শহীদ মিনার এলাকায় যাওয়ার এসি ইমরুলসহ কয়েকজন কয়েকটি সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করলে আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এসময় এডিসি আক্তারুলের নির্দেশে কয়েকজন আন্দোলনকারীকে গ্রেফতার করে শাহবাগ থানায় নেওয়া হয়। পরে এডিসি আক্তারুলের নির্দেশে এসি ইমরুল, ইন্সপেক্টর আরশাদ, আনুমানিক ১৫/২০ জন এপিবিএন সদস্য, ডিএমপির ১০/১৫ জন সদস্যের সঙ্গে আশরাফুল সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে চাঁনখারপুলে যান।
এ সময় চাঁনখারপুল সংলগ্ন বংশাল ও চকবাজার এলাকা থেকে আসা ছাত্র-জনতা শাহবাগের দিকে যেতে চাইলে এডিসি আক্তারুল ইসলামের নির্দেশে ছাত্র-জনতাকে লক্ষ্য করে সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ ও গুলি করা হয়।
সাক্ষী আশরাফুল বলেন, ‘এ সময় এডিসি আক্তারুল স্যার বলেন, ‘‘তোমাদের যাদের কাছে পিস্তল ও চায়না রাইফেল আছে তারা আন্দোলনকারীদের দিকে ফায়ার করে তাদের মেরে ফেলো।’’ স্যারের এই অপ্রয়োজনীয় ও অবৈধ আদেশ পালন না করলে স্যার আমাদের অকথ্য ভাষায় গালাগালি করতে থাকে।’
আশরাফুল ইসলাম জবানবন্দিতে আরও বলেন, এরপর কনস্টেবল সুজন হোসেন চাঁনখারপুল মোড়ে কখনো দাঁড়িয়ে, কখনো শুয়ে, কখনো হাঁটু গেড়ে বসে আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে চাইনিজ রাইফেল দিয়ে গুলি করতে থাকেন। তাছাড়া এপিবিএনের কনস্টেবল ইমাজ হোসেন ইমন তার নামে ইস্যুকৃত চায়না রাইফেল দিয়ে আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে গুলি করেন।
জবানবন্দিতে এসআই আশরাফুল বলেন, আমি দেখতে পাই বেশ কয়েকজন আন্দোলনকারী গুলিবিদ্ধ হয়ে রাস্তায় পড়ে গেলে অন্য আন্দোলনকারীরা তাদের ধরাধরি করে নিয়ে যাচ্ছে। এরপর শেখ হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে চানখারপুল এলাকার পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। তখন এডিসি আক্তারুল স্যারের নির্দেশে টিএসটি মোড় হয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান হয়ে শাহবাগ থানায় প্রবেশ করি। এডিসি আক্তারুল স্যারের নির্দেশে নিজ নিজ নামে ইস্যু করা অস্ত্রগুলো শাহবাগ থানার অস্ত্রাগারে জমা দেই।
আশারাফুল তার জবানবন্দিতে বলেন, আমার সঙ্গে থাকা কনস্টেবল নাসিরুল ইসলাম তার নামে ইস্যু করা চায়না রাইফেলের ৪০ রাউন্ড গুলি থানায় জমা করলে আমি তাকে জিজ্ঞাসা করি-তুমি চানখারপুলে চাইনিজ রাইফেল দিয়ে গুলি করার পরও ৪০ রাউন্ড গুলি কীভাবে জমা করলে? উত্তরে কনস্টেবল নাসিরুল জানায়, এডিসি আক্তারুল স্যার আমাকে অতিরিক্ত গুলি সরবরাহ করেছে। পরে পরনের পোশাক পাল্টে সিভিল ড্রেস পরে শাহবাগ থানার পিছন দিয়ে বের হয়ে পায়ে হেঁটে ছাত্র-জনতার সঙ্গে মিশে মিরপুর পুলিশ লাইনে পৌঁছাই।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
জনপ্রিয়