ঢাকা ০৩:১৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
গণসমাবেশে হাজারো মানুষের ঢল

তিস্তা মহাপরিকল্পনা নিয়ে কোনো ষড়যন্ত্র সহ্য করা হবে না : রাশেদ খান মেনন

Reporter Name
  • Update Time : ১১:৫৪:১০ অপরাহ্ন, শনিবার, ৬ মে ২০২৩
  • / ৭৩ Time View

কামরুল হাসান টিটু, রংপুর: উত্তর জনপদের মানুষের জীবন-জীবিকা, কৃষি ও প্রকৃতি বাঁচাতে দ্রুত তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন।

বৈষম্য দূরীকরণ, দারিদ্রতার হার কমানোসহ নদী নির্ভর উত্তরাঞ্চলকে মরুকরণ থেকে বাঁচাতে তিস্তা চুক্তির পাশাপাশি তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন ছাড়া বিকল্প কোন পথ খোলা নেই বলে মন্তব্য করেছেন দেশের প্রবীণ এই সংসদ সদস্য। এবার জাতীয় বাজেটে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে অর্থ বরাদ্দের জন্য তিনি জোর দাবি জানিয়েছে।

শনিবার (৬ মে) বিকেলে রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে অনুষ্ঠিত গণসমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। নিজস্ব অর্থায়নে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন, তিস্তা চুক্তি সই ও রংপুর বিভাগের উন্নয়ন বৈষম্য নিরসনের দাবিতে তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদ এই গণসমাবেশের আয়োজন করে।

বক্তৃতায় রাশেদ খান মেনন বলেন, তিস্তা মহাপরিকল্পনা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নিজেই উদ্যোগ নিয়েছিলেন। আমরা তার উদ্যোগে আনন্দিত হয়েছিলাম। কিন্তু আফসোস সেই তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে আজ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি। আজ তিস্তা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। চরের ওপর চর পড়েছে। আর ভাঙনের পর ভাঙনে তিস্তাপাড়ের মানুষ আজ নিঃস্ব।

তিস্তা মহাপরিকল্পনা নিয়ে কোনো ষড়যন্ত্র সহ্য করা হবে না বলে হুংকার দিয়ে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, তিস্তা আমার নদী, আমাদের নদী। তিস্তা মহাপরিকল্পনার বাস্তবায়ন আমাদের সবার দাবি, এটা আমাদের প্রাণের দাবি। এরমধ্যে যারা নিরাপত্তা, ভূ-রাজনীতি ও চীন-ভারতের সম্পর্কের প্রশ্ন খুঁজে, আমি তাদের বলবো এই খেলা আমাদের নিয়ে খেলবেন না। তিস্তা মহাপরিকল্পনার বাস্তবায়ন নিয়ে নতুন কোন চক্রান্ত, বাঁধা আমরা মানব না। আগামী জাতীয় বাজেট অধিবেশন আমরা সংসদেও তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য অর্থ বরাদ্দ চাইব।

সমাবেশে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, প্রধানমন্ত্রীর হাত ধরে উত্তরবঙ্গের মঙ্গা দূর হয়েছে। আপনার (শেখ হাসিনার) হাত ধরেই আপনার ঘোষিত তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য এবারের বাজেটে টাকা চাই। এবারের বাজেটে আমাদের এক নম্বর দাবি হবে তিস্তা মহাপরিকল্পনার জন্য টাকা দেও, টাকা দেও।

সাবেক তথ্যমন্ত্রী বলেন, তিস্তার পানি ভারত থেকে আসে। সেটা নিয়ে পানি চুক্তির ব্যাপার রয়েছে। ২০১২ সালে ভারত-বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক থেকে তা নিয়ে সমঝোতা হয়েছে। তিস্তার পানি চুক্তি হবে বলে একমতও হয়েছে ভারত। কিন্তু আজ পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন হয়নি। প্রতিবছর সরকার তাগাদা দিচ্ছে কিন্তু হচ্ছে হচ্ছে করেও হচ্ছে না। আমরা শুধু তিস্তার পানি চুক্তি চাই না, আমরা চাই তিস্তা মহাপরিকল্পনারও বাস্তবায়ন হোক।

গণসমাবেশের উদ্বোধক রংপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, পদ্মা সেতু যদি দেশের টাকায় নির্মাণ করা সম্ভব হয়, তাহলে তিস্তা মহাপরিকল্পনাও বায়স্তবায়ন করা সম্ভব। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর সাহসী পদক্ষেপের কারণে আমাদের দেশের মানুষের নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু হয়েছে। ওই পদ্মা সেতুতে রংপুর বিভাগের মানুষের ট্যাক্স ও ভ্যাটের টাকা দেয়া রয়েছে। বর্তমানে দেশে অনেকগুলো মেগাপ্রকল্প চলমান রয়েছে। কিন্তু উত্তরের মানুষের জন্য কোন মেগাপ্রকল্প নেই। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে তার ঘোষিত তিস্তা মহাপরিকল্পনার বাস্তবায়ন চাই।

সংসদে রংপুর অঞ্চলের এমপি-মন্ত্রীরা মনোনয়ন হারাবার ভয়ে তিস্তা নিয়ে কথা বলেন না অভিযোগ তুলে সিটি মেয়র মোস্তাফিজার বলেন, আমরা চীন-ভারত বুঝি না। পদ্মা সেতুর মতো আমরা নিজস্ব অর্থায়নে তিস্তা মহাপরিকল্পনার বাস্তবায়ন দেখতে চাই। এটি গণমানুষের দাবিতে পরিণত হয়েছে। কিন্তু আমাদের এমপি-মন্ত্রীরা সংসদে প্রধানমন্ত্রীর কাছে তিস্তার দাবি তুলে ধরতে ভয় পায়। কারণ তারা মনোনয়ন হারানোর ভয় করে। যারা জনগণের গণ দাবি নিয়ে কথা বলতে চান না তাদেরকে রংপুরের মানুষ আগামীতে লাল কার্ড দেখাবে।

গণসমাবেশে তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শফিয়ার রহমানের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী এমপি, বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি নাজমুল হক প্রধান, তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য গেরিলা লিডার বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল ইসলাম কানু প্রমুখ।

তিস্তা নদীর সুরক্ষাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার দাবি জানিয়ে নেতৃবৃন্দ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে তিস্তা মহাপরিকল্পনার কথা শুনে আসছি। আজ পর্যন্ত তার বাস্তবায়ন শুরু হয়নি। অর্থ বরাদ্দ হয়নি। আর কিছুদিন পর ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপিত হবে। মাত্র সাড়ে আট হাজার কোটি টাকার জন্য তিস্তা মহাপরিকল্পনা আলোর মুখ দেখবে না, এটা আমরা বিশ্বাস করি না। তিস্তার সাথে রংপুর অঞ্চলের কোটি মানুষের জীবন-জীবিকা জড়িত। আমরা চীন-ভারত বুঝি না। নিজস্ব অর্থায়নে এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে আসন্ন বাজেটে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ দিতে হবে। যদি এটি করা না হয় তাহলে অচিরেই বৃহত্তর আন্দোলন ও সংগ্রামের কর্মসূচি দেওয়া হবে।

তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানী বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর বসবাস রংপুরে। তারপরও বিশেষ কোনো বরাদ্দ ও ব্যবস্থা নেই। বরং রংপুরকে পিছিয়ে রাখার বন্দোবস্ত করা হয়েছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে মোট বরাদ্দের ১ শতাংশের চেয়ে কম বরাদ্দ রংপুর বিভাগের জন্য দেওয়া হয়। দেশে চলমান তিন লাখ কোটি টাকার মেগাপ্রকল্প চললেও রংপুর বিভাগের জন্য কোনো মেগাপ্রকল্প নেই। তিস্তা সুরক্ষায় মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে সাড়ে আট হাজার কোটি টাকার কথা বলা হয়েছে। অথচ তিস্তা নদীর ভাঙন-বন্যায় প্রতিবছর যে পরিমাণ ক্ষতি হয়, তার পরিমাণ নিঃসন্দেহে সাড়ে আট হাজার কোটি টাকার বহুগুণ বেশি।

এই মূহূর্তে সরকারের উচিত হবে, সাড়ে আট হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে বিজ্ঞানসম্মতভাবে তিস্তার পরিচর্যা নিশ্চিত করা। এটি হলে প্রতিবছর ভাঙন ও বন্যা থেকে রক্ষা পাবে হাজার হাজার কোটি টাকা। রংপুরের সাথে সারাদেশের বৈষম্য কমিয়ে আনার জন্যেও তিস্তা সুরক্ষার কোনো বিকল্প নেই।

এ সময় ছয় দফা তুলে তিস্তার ভাঙন, বন্যা ও খরায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের স্বার্থ সংরক্ষণ, ভাঙনের শিকার ভূমিহীন গৃহহীনদের পুনর্বাসন, তিস্তা নদী সুরক্ষায় বিজ্ঞানসম্মত খনন, মহাপরিকল্পনায় তিস্তা নদী ও নদী তীরবর্তী কৃষকের স্বার্থ সুরক্ষায় ‘কৃষক সমবায় এবং কৃষিভিত্তিক শিল্পকলকারখানা’ স্থাপন, তিস্তা নদীর শাখা-প্রশাখা ও উপ নদীগুলোর সঙ্গে পূর্বেকার সংযোগ স্থাপন এবং দখল-দূষণ মুক্তকরণ এবং নৌ চলাচল পুনরায় চালু ও মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ প্রদানসহ প্রস্তাবিত প্রকল্প এলাকায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কর্মসংস্থান সৃষ্টির দাবি জানান।

এছাড়া তিস্তা নদী বেষ্টিত রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী ও গাইবান্ধা জেলা থেকে আগত তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের নেতৃবৃন্দের পাশাপাশি সংহতি প্রকাশ করে বিভিন্ন উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এবং রাজনৈতিক সংগঠনের নেতারা বক্তব্য রাখেন।

গণসমাবেশ থেকে আগামী মাসের পহেলা জুন রংপুর বিভাগীয় শহরসহ তিস্তা বেষ্টিত পাঁচ জেলায় তিস্তা মহাপরিকল্পনাসহ ছয় দফা বাস্তবায়নের দাবিতে সকাল দশটায় ৫ মিনিট স্তব্ধ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এছাড়া দাবি আদায়ের সপক্ষে জনমত সৃষ্টিতে প্রতিটি জেলায় সভা-সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়।

Please Share This Post in Your Social Media

গণসমাবেশে হাজারো মানুষের ঢল

তিস্তা মহাপরিকল্পনা নিয়ে কোনো ষড়যন্ত্র সহ্য করা হবে না : রাশেদ খান মেনন

Update Time : ১১:৫৪:১০ অপরাহ্ন, শনিবার, ৬ মে ২০২৩

কামরুল হাসান টিটু, রংপুর: উত্তর জনপদের মানুষের জীবন-জীবিকা, কৃষি ও প্রকৃতি বাঁচাতে দ্রুত তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন।

বৈষম্য দূরীকরণ, দারিদ্রতার হার কমানোসহ নদী নির্ভর উত্তরাঞ্চলকে মরুকরণ থেকে বাঁচাতে তিস্তা চুক্তির পাশাপাশি তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন ছাড়া বিকল্প কোন পথ খোলা নেই বলে মন্তব্য করেছেন দেশের প্রবীণ এই সংসদ সদস্য। এবার জাতীয় বাজেটে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে অর্থ বরাদ্দের জন্য তিনি জোর দাবি জানিয়েছে।

শনিবার (৬ মে) বিকেলে রংপুর পাবলিক লাইব্রেরি মাঠে অনুষ্ঠিত গণসমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। নিজস্ব অর্থায়নে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন, তিস্তা চুক্তি সই ও রংপুর বিভাগের উন্নয়ন বৈষম্য নিরসনের দাবিতে তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদ এই গণসমাবেশের আয়োজন করে।

বক্তৃতায় রাশেদ খান মেনন বলেন, তিস্তা মহাপরিকল্পনা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নিজেই উদ্যোগ নিয়েছিলেন। আমরা তার উদ্যোগে আনন্দিত হয়েছিলাম। কিন্তু আফসোস সেই তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে আজ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি। আজ তিস্তা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। চরের ওপর চর পড়েছে। আর ভাঙনের পর ভাঙনে তিস্তাপাড়ের মানুষ আজ নিঃস্ব।

তিস্তা মহাপরিকল্পনা নিয়ে কোনো ষড়যন্ত্র সহ্য করা হবে না বলে হুংকার দিয়ে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, তিস্তা আমার নদী, আমাদের নদী। তিস্তা মহাপরিকল্পনার বাস্তবায়ন আমাদের সবার দাবি, এটা আমাদের প্রাণের দাবি। এরমধ্যে যারা নিরাপত্তা, ভূ-রাজনীতি ও চীন-ভারতের সম্পর্কের প্রশ্ন খুঁজে, আমি তাদের বলবো এই খেলা আমাদের নিয়ে খেলবেন না। তিস্তা মহাপরিকল্পনার বাস্তবায়ন নিয়ে নতুন কোন চক্রান্ত, বাঁধা আমরা মানব না। আগামী জাতীয় বাজেট অধিবেশন আমরা সংসদেও তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য অর্থ বরাদ্দ চাইব।

সমাবেশে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, প্রধানমন্ত্রীর হাত ধরে উত্তরবঙ্গের মঙ্গা দূর হয়েছে। আপনার (শেখ হাসিনার) হাত ধরেই আপনার ঘোষিত তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য এবারের বাজেটে টাকা চাই। এবারের বাজেটে আমাদের এক নম্বর দাবি হবে তিস্তা মহাপরিকল্পনার জন্য টাকা দেও, টাকা দেও।

সাবেক তথ্যমন্ত্রী বলেন, তিস্তার পানি ভারত থেকে আসে। সেটা নিয়ে পানি চুক্তির ব্যাপার রয়েছে। ২০১২ সালে ভারত-বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক থেকে তা নিয়ে সমঝোতা হয়েছে। তিস্তার পানি চুক্তি হবে বলে একমতও হয়েছে ভারত। কিন্তু আজ পর্যন্ত তা বাস্তবায়ন হয়নি। প্রতিবছর সরকার তাগাদা দিচ্ছে কিন্তু হচ্ছে হচ্ছে করেও হচ্ছে না। আমরা শুধু তিস্তার পানি চুক্তি চাই না, আমরা চাই তিস্তা মহাপরিকল্পনারও বাস্তবায়ন হোক।

গণসমাবেশের উদ্বোধক রংপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা বলেন, পদ্মা সেতু যদি দেশের টাকায় নির্মাণ করা সম্ভব হয়, তাহলে তিস্তা মহাপরিকল্পনাও বায়স্তবায়ন করা সম্ভব। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর সাহসী পদক্ষেপের কারণে আমাদের দেশের মানুষের নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু হয়েছে। ওই পদ্মা সেতুতে রংপুর বিভাগের মানুষের ট্যাক্স ও ভ্যাটের টাকা দেয়া রয়েছে। বর্তমানে দেশে অনেকগুলো মেগাপ্রকল্প চলমান রয়েছে। কিন্তু উত্তরের মানুষের জন্য কোন মেগাপ্রকল্প নেই। আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে তার ঘোষিত তিস্তা মহাপরিকল্পনার বাস্তবায়ন চাই।

সংসদে রংপুর অঞ্চলের এমপি-মন্ত্রীরা মনোনয়ন হারাবার ভয়ে তিস্তা নিয়ে কথা বলেন না অভিযোগ তুলে সিটি মেয়র মোস্তাফিজার বলেন, আমরা চীন-ভারত বুঝি না। পদ্মা সেতুর মতো আমরা নিজস্ব অর্থায়নে তিস্তা মহাপরিকল্পনার বাস্তবায়ন দেখতে চাই। এটি গণমানুষের দাবিতে পরিণত হয়েছে। কিন্তু আমাদের এমপি-মন্ত্রীরা সংসদে প্রধানমন্ত্রীর কাছে তিস্তার দাবি তুলে ধরতে ভয় পায়। কারণ তারা মনোনয়ন হারানোর ভয় করে। যারা জনগণের গণ দাবি নিয়ে কথা বলতে চান না তাদেরকে রংপুরের মানুষ আগামীতে লাল কার্ড দেখাবে।

গণসমাবেশে তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শফিয়ার রহমানের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী এমপি, বাংলাদেশ জাসদের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি নাজমুল হক প্রধান, তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য গেরিলা লিডার বীর মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল ইসলাম কানু প্রমুখ।

তিস্তা নদীর সুরক্ষাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার দাবি জানিয়ে নেতৃবৃন্দ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে তিস্তা মহাপরিকল্পনার কথা শুনে আসছি। আজ পর্যন্ত তার বাস্তবায়ন শুরু হয়নি। অর্থ বরাদ্দ হয়নি। আর কিছুদিন পর ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপিত হবে। মাত্র সাড়ে আট হাজার কোটি টাকার জন্য তিস্তা মহাপরিকল্পনা আলোর মুখ দেখবে না, এটা আমরা বিশ্বাস করি না। তিস্তার সাথে রংপুর অঞ্চলের কোটি মানুষের জীবন-জীবিকা জড়িত। আমরা চীন-ভারত বুঝি না। নিজস্ব অর্থায়নে এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে আসন্ন বাজেটে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ দিতে হবে। যদি এটি করা না হয় তাহলে অচিরেই বৃহত্তর আন্দোলন ও সংগ্রামের কর্মসূচি দেওয়া হবে।

তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানী বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীর বসবাস রংপুরে। তারপরও বিশেষ কোনো বরাদ্দ ও ব্যবস্থা নেই। বরং রংপুরকে পিছিয়ে রাখার বন্দোবস্ত করা হয়েছে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে মোট বরাদ্দের ১ শতাংশের চেয়ে কম বরাদ্দ রংপুর বিভাগের জন্য দেওয়া হয়। দেশে চলমান তিন লাখ কোটি টাকার মেগাপ্রকল্প চললেও রংপুর বিভাগের জন্য কোনো মেগাপ্রকল্প নেই। তিস্তা সুরক্ষায় মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে সাড়ে আট হাজার কোটি টাকার কথা বলা হয়েছে। অথচ তিস্তা নদীর ভাঙন-বন্যায় প্রতিবছর যে পরিমাণ ক্ষতি হয়, তার পরিমাণ নিঃসন্দেহে সাড়ে আট হাজার কোটি টাকার বহুগুণ বেশি।

এই মূহূর্তে সরকারের উচিত হবে, সাড়ে আট হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে বিজ্ঞানসম্মতভাবে তিস্তার পরিচর্যা নিশ্চিত করা। এটি হলে প্রতিবছর ভাঙন ও বন্যা থেকে রক্ষা পাবে হাজার হাজার কোটি টাকা। রংপুরের সাথে সারাদেশের বৈষম্য কমিয়ে আনার জন্যেও তিস্তা সুরক্ষার কোনো বিকল্প নেই।

এ সময় ছয় দফা তুলে তিস্তার ভাঙন, বন্যা ও খরায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের স্বার্থ সংরক্ষণ, ভাঙনের শিকার ভূমিহীন গৃহহীনদের পুনর্বাসন, তিস্তা নদী সুরক্ষায় বিজ্ঞানসম্মত খনন, মহাপরিকল্পনায় তিস্তা নদী ও নদী তীরবর্তী কৃষকের স্বার্থ সুরক্ষায় ‘কৃষক সমবায় এবং কৃষিভিত্তিক শিল্পকলকারখানা’ স্থাপন, তিস্তা নদীর শাখা-প্রশাখা ও উপ নদীগুলোর সঙ্গে পূর্বেকার সংযোগ স্থাপন এবং দখল-দূষণ মুক্তকরণ এবং নৌ চলাচল পুনরায় চালু ও মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ প্রদানসহ প্রস্তাবিত প্রকল্প এলাকায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কর্মসংস্থান সৃষ্টির দাবি জানান।

এছাড়া তিস্তা নদী বেষ্টিত রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী ও গাইবান্ধা জেলা থেকে আগত তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের নেতৃবৃন্দের পাশাপাশি সংহতি প্রকাশ করে বিভিন্ন উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এবং রাজনৈতিক সংগঠনের নেতারা বক্তব্য রাখেন।

গণসমাবেশ থেকে আগামী মাসের পহেলা জুন রংপুর বিভাগীয় শহরসহ তিস্তা বেষ্টিত পাঁচ জেলায় তিস্তা মহাপরিকল্পনাসহ ছয় দফা বাস্তবায়নের দাবিতে সকাল দশটায় ৫ মিনিট স্তব্ধ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এছাড়া দাবি আদায়ের সপক্ষে জনমত সৃষ্টিতে প্রতিটি জেলায় সভা-সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়।