ঢাকা ০৯:১৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫, ৭ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

তফসিলের আগেই তিস্তা মহাপরিকল্পনা শুরু না হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি ছাত্র-জনতার

আলমগীর হোসেন অপু, রংপুর জেলা প্রতিনিধি
  • Update Time : ০৬:৫০:৫৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫
  • / ৯৮ Time View

তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে রংপুরে ছাত্র-জনতার অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়েছে। বুধবার (২২ অক্টোবর) দুপুরে রংপুর জিলা স্কুল মোড়ে সর্বস্তরের ছাত্র-জনতার ব্যানারে এই কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।

কর্মসূচিতে প্রতিনিধি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ছাড়াও বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীসহ নানান পেশার মানুষ অংশ নেন। এসময় ‘উত্তরের এই বৈষম্য মানি না মানব না, ‘সবার প্রাপ্য সবাই পায়, আমার বেলায় বাজেট নাই’ ‘তিস্তাপাড়ের কান্না আর না আর না ও ভারতবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দেন।

এ সময় বক্তৃতা করেন তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শফিয়ার রহমান, সদস্য বখতিয়ার শিশির, জামায়াতে ইসলামীর মহানগর কমিটির সহকারী সেক্রেটারি রায়হান সিরাজী, এনসিপি নেতা আলমগীর নয়ন, আলমগীর কবির, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সংগঠক খন্দকার নাহিদ হাসান, ইমরান আহমেদ প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধার বুক চিরে প্রবাহিত হয়েছে তিস্তা নদী। তিস্তাপাড়ের দুই কোটি মানুষের কাছে এটি সাধারণ একটি নদী হলেও আমাদের আনন্দ-বেদনা, শিল্প ও সংস্কৃতির অংশ। বর্ষা মৌসুমে আমাদের মায়েদের চোখের পানি বৃদ্ধি পায়, বাবাদের হাহাকার বাড়ে। ভারত এই নদীর উজানে বাঁধ দিয়ে শুষ্ক মৌসুমে পানি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। ফলে উত্তরাঞ্চল ক্রমে মরুময় হয়ে পড়ছে; প্রাণ ও প্রকৃতি মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। অপরদিকে বর্ষা মৌসুমে আকস্মিকভাবে পানি ছেড়ে দেওয়ায় স্বল্পমেয়াদি বন্যায় ওই পাঁচ জেলার ঘরবাড়ি, ফসলের জমি, রাস্তাঘাট ও অবকাঠামো ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। প্রতি বছর সহস্রাধিক মানুষ নিঃস্ব হয়ে পড়ছে।

বক্তারা আরও বলেন, এমন পরিস্থিতিতে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে নদীপাড়ের মানুষসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও সাধারণ জনগণ দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে আসছে। পূর্ববর্তী সরকার তিস্তা মহাপরিকল্পনার কথা বলে ভোট নিলেও প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করেনি।

অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা জানুয়ারিতে তিস্তা প্রকল্পের কাজ শুরুর আশ্বাস দিয়েছেন। তবে নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করলে এ প্রকল্প ঝুলে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন নদী আন্দোলনকর্মীরা। তাই বক্তারা নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার আগেই নিজস্ব কোষাগারের অর্থে তিস্তা মহাপরিকল্পনার কাজ শুরু করার দাবি জানান।

সরকার এটি বাস্তবায়ন না করলে উত্তরাঞ্চলের পাঁচ জেলার মানুষকে সঙ্গে নিয়ে কঠোর কর্মসূচি পালনের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। আন্দোলনকারীরা বলেন, সরকার যদি আগামী নভেম্বরের মধ্যে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন না করে, তাহলে শাটডাউন, রোড ব্লকেডসহ বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। আমরা ঐক্যবদ্ধ থেকে তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য এ আন্দোলন চালিয়ে যাব।

এদিকে, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে ধারাবাহিক আন্দোলনের অংশ হিসেবে আগামী বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) ‘স্তব্ধ রংপুর’ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন কমিটি।

কর্মসূচির আহ্বানে জানানো হয়েছে, রংপুর বিভাগের পাঁচ জেলার সর্বস্তরের মানুষ ‘শিক্ষার্থী-শিক্ষক, কৃষক-শ্রমিক, ব্যবসায়ী, দোকানদার, ক্রেতা-বিক্রেতা, পরিবহন মালিক ও শ্রমিকসহ অফিস-আদালতের কর্মকর্তা-কর্মচারী যে যেখানেই থাকবে, সেখানে বেলা ১১টায় নিজের কাজ বন্ধ করে ১৫ মিনিট নিরবভাবে দাঁড়িয়ে থাকবে।

যানবাহন চালকেরাও-মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল, ট্রাক, বাস কিংবা ট্রেন-ওই সময় গাড়ি থামিয়ে ১৫ মিনিট অবস্থান করবেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকরা ক্লাস গ্রহণ থেকে বিরত থাকবেন এবং শিক্ষার্থীরাও শ্রেণিকক্ষে কার্যক্রম বন্ধ রাখবেন। তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক উপমন্ত্রী অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু এই কর্মসূচির ডাক দেন।

Please Share This Post in Your Social Media

তফসিলের আগেই তিস্তা মহাপরিকল্পনা শুরু না হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি ছাত্র-জনতার

আলমগীর হোসেন অপু, রংপুর জেলা প্রতিনিধি
Update Time : ০৬:৫০:৫৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫

তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে রংপুরে ছাত্র-জনতার অবস্থান কর্মসূচি পালিত হয়েছে। বুধবার (২২ অক্টোবর) দুপুরে রংপুর জিলা স্কুল মোড়ে সর্বস্তরের ছাত্র-জনতার ব্যানারে এই কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।

কর্মসূচিতে প্রতিনিধি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ছাড়াও বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীসহ নানান পেশার মানুষ অংশ নেন। এসময় ‘উত্তরের এই বৈষম্য মানি না মানব না, ‘সবার প্রাপ্য সবাই পায়, আমার বেলায় বাজেট নাই’ ‘তিস্তাপাড়ের কান্না আর না আর না ও ভারতবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দেন।

এ সময় বক্তৃতা করেন তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শফিয়ার রহমান, সদস্য বখতিয়ার শিশির, জামায়াতে ইসলামীর মহানগর কমিটির সহকারী সেক্রেটারি রায়হান সিরাজী, এনসিপি নেতা আলমগীর নয়ন, আলমগীর কবির, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সংগঠক খন্দকার নাহিদ হাসান, ইমরান আহমেদ প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধার বুক চিরে প্রবাহিত হয়েছে তিস্তা নদী। তিস্তাপাড়ের দুই কোটি মানুষের কাছে এটি সাধারণ একটি নদী হলেও আমাদের আনন্দ-বেদনা, শিল্প ও সংস্কৃতির অংশ। বর্ষা মৌসুমে আমাদের মায়েদের চোখের পানি বৃদ্ধি পায়, বাবাদের হাহাকার বাড়ে। ভারত এই নদীর উজানে বাঁধ দিয়ে শুষ্ক মৌসুমে পানি প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। ফলে উত্তরাঞ্চল ক্রমে মরুময় হয়ে পড়ছে; প্রাণ ও প্রকৃতি মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। অপরদিকে বর্ষা মৌসুমে আকস্মিকভাবে পানি ছেড়ে দেওয়ায় স্বল্পমেয়াদি বন্যায় ওই পাঁচ জেলার ঘরবাড়ি, ফসলের জমি, রাস্তাঘাট ও অবকাঠামো ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। প্রতি বছর সহস্রাধিক মানুষ নিঃস্ব হয়ে পড়ছে।

বক্তারা আরও বলেন, এমন পরিস্থিতিতে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে নদীপাড়ের মানুষসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও সাধারণ জনগণ দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে আসছে। পূর্ববর্তী সরকার তিস্তা মহাপরিকল্পনার কথা বলে ভোট নিলেও প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করেনি।

অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা জানুয়ারিতে তিস্তা প্রকল্পের কাজ শুরুর আশ্বাস দিয়েছেন। তবে নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করলে এ প্রকল্প ঝুলে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন নদী আন্দোলনকর্মীরা। তাই বক্তারা নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার আগেই নিজস্ব কোষাগারের অর্থে তিস্তা মহাপরিকল্পনার কাজ শুরু করার দাবি জানান।

সরকার এটি বাস্তবায়ন না করলে উত্তরাঞ্চলের পাঁচ জেলার মানুষকে সঙ্গে নিয়ে কঠোর কর্মসূচি পালনের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। আন্দোলনকারীরা বলেন, সরকার যদি আগামী নভেম্বরের মধ্যে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন না করে, তাহলে শাটডাউন, রোড ব্লকেডসহ বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। আমরা ঐক্যবদ্ধ থেকে তিস্তা প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য এ আন্দোলন চালিয়ে যাব।

এদিকে, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে ধারাবাহিক আন্দোলনের অংশ হিসেবে আগামী বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) ‘স্তব্ধ রংপুর’ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন কমিটি।

কর্মসূচির আহ্বানে জানানো হয়েছে, রংপুর বিভাগের পাঁচ জেলার সর্বস্তরের মানুষ ‘শিক্ষার্থী-শিক্ষক, কৃষক-শ্রমিক, ব্যবসায়ী, দোকানদার, ক্রেতা-বিক্রেতা, পরিবহন মালিক ও শ্রমিকসহ অফিস-আদালতের কর্মকর্তা-কর্মচারী যে যেখানেই থাকবে, সেখানে বেলা ১১টায় নিজের কাজ বন্ধ করে ১৫ মিনিট নিরবভাবে দাঁড়িয়ে থাকবে।

যানবাহন চালকেরাও-মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল, ট্রাক, বাস কিংবা ট্রেন-ওই সময় গাড়ি থামিয়ে ১৫ মিনিট অবস্থান করবেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকরা ক্লাস গ্রহণ থেকে বিরত থাকবেন এবং শিক্ষার্থীরাও শ্রেণিকক্ষে কার্যক্রম বন্ধ রাখবেন। তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক উপমন্ত্রী অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু এই কর্মসূচির ডাক দেন।