ঢাকা ০২:৫৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২১ নভেম্বর ২০২৫, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের রায়টি ত্রুটিপূর্ণ ছিল: সুপ্রিম কোর্ট

আইন-আদালত ডেস্ক
  • Update Time : ০৪:০০:১৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর ২০২৫
  • / ৪৪ Time View

সুপ্রিম কোর্ট

সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলে আপিল বিভাগের রায়টি ত্রুটিপূর্ণ ছিল বলে জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের গণসংযোগ কর্মকর্তা শফিকুল ইসলামের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলা  হয়েছে।

সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনের উদ্দেশ্যে ১৯৯৬ সালে জাতীয় সংসদে গৃহীত হয় সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী। এই সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ১৯৯৮ সালে হাইকোর্ট বিভাগে একটি রিট আবেদন দাখিল করা হয়। পরবর্তীতে ২০০৪ সালের ৪ আগস্ট হাইকোর্ট বিভাগ ওই রিট খারিজ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বৈধ ঘোষণা করেন। এর বিরুদ্ধে রিট আবেদনকারী পক্ষ ২০০৫ সালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল দাখিল করেন।

দীর্ঘ বিচারকার্য শেষে ২০১১ সালের ১০ মে আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত একটি পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করেন এবং রায় প্রদান করেন। পরবর্তীতে সংক্ষিপ্ত আদেশ প্রদানের প্রায় ১৬ মাস পর ২০১২ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়।

উল্লেখ্য, ইতোমধ্যে সংক্ষিপ্ত আদেশের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল ২০১১ সালের ৩০ জুন সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আনয়নের মাধ্যমে সংবিধান হতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংক্রান্ত বিধানসমূহ বাদ দেয়া হয়।

২০২৪ সালের জুলাই মাসে সংঘটিত অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারসহ একাধিক রাজনৈতিক দল উক্ত রায়ের পুনর্বিবেচনা চেয়ে আপিল বিভাগে রিভিউ আবেদন দাখিল করেন। এ আবেদনের শুনানি শেষে ২০২৫ সালের ২৭ আগস্ট আপীল অনুমতি প্রদান করা হয়।

পরবর্তীতে ২১, ২২, ২৩, ২৮ ও ২৯ অক্টোবর এবং ২, ৪, ৫, ৬ ও ১১ নভেম্বর ২০২৫ তারিখে এ-সংক্রান্ত আপীলের বিস্তারিত শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানি শেষে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির বেঞ্চ ১১ নভেম্বর ২০২৫ তারিখে রায় ঘোষণার জন্য ২০ নভেম্বর দিন ধার্য করেন।

এরই ধারাবাহিকতায় আজ বৃহস্পতিবার আপিল বিভাগ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংক্রান্ত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল ও রিভিউ আবেদন এর সিদ্ধান্ত সংবলিত সংক্ষিপ্ত আদেশ প্রদান করেন। উক্ত সংক্ষিপ্ত আদেশে সংশ্লিষ্ট আপিল ও সিভিল রিভিউসমূহ সর্বসম্মতভাবে মঞ্জুর করা হয়।

আদালত আদেশে উল্লেখ করেন যে- আদালত এই মর্মে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যে, পর্যালোচনাধীন আপিল বিভাগের রায়টি নথি দৃষ্টে স্পষ্টরূপে প্রতীয়মান একাধিক ত্রুটিতে ত্রুটিপূর্ণ ।

এ ছাড়া আদেশে উল্লেখ করা হয় যে পর্যালোচনাধীন রায়টি এতদ্বারা সম্পূর্ণরূপে বাতিল করা হলো। এর ফলে সংবিধানের চতুর্থ ভাগের পরিচ্ছেদ ২ক-এর নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার সম্পর্কিত বিধানাবলী, যা সংবিধান (ত্রয়োদশ সংশোধন) আইন, ১৯৯৬ (১৯৯৬ সনের ১ নং আইন) এর ধারা ৩ দ্বারা সন্নিবেশিত হয়েছিলো, তা এতদ্বারা এই রায়ের মাধ্যমে পুনরুজ্জীবিত ও সক্রিয় করা হয়েছে মর্মে সংক্ষিপ্ত আদেশে বলা হয়।

তবে আদেশে উল্লেখ করা হয় যে, যদিও এইরূপ পুনরুজ্জীবন পরিচ্ছেদ ২ক-এ বর্ণিত নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংক্রান্ত বিধানাবলীর স্বয়ংক্রিয় পুন:স্থাপন নিশ্চিত করে, তবে পুনরুজ্জীবিত অনুচ্ছেদ ৫৮খ(১) এবং অনুচ্ছেদ ৫৮গ(২) এর বিধানাবলীর প্রয়োগ সাপেক্ষে উহা কার্যকর হবে।

এছাড়া, আদেশে বলা হয় যে, পুন:স্থাপিত ও পুনরুজ্জীবিত পরিচ্ছেদ ২ক-এ বর্ণিত নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংক্রান্ত বিধানাবলী কেবলমাত্র উক্তরূপ ভবিষ্যত প্রয়োগযোগ্যতার ভিত্তিতেই কার্যকর হবে। সংক্ষিপ্ত আদেশে আরও উল্লেখ করা হয় যে, পরবর্তীতে আদালত পূর্ণাঙ্গ রায় প্রদান করবে।

Please Share This Post in Your Social Media

তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের রায়টি ত্রুটিপূর্ণ ছিল: সুপ্রিম কোর্ট

আইন-আদালত ডেস্ক
Update Time : ০৪:০০:১৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর ২০২৫

সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলে আপিল বিভাগের রায়টি ত্রুটিপূর্ণ ছিল বলে জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের গণসংযোগ কর্মকর্তা শফিকুল ইসলামের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা বলা  হয়েছে।

সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনের উদ্দেশ্যে ১৯৯৬ সালে জাতীয় সংসদে গৃহীত হয় সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী। এই সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ১৯৯৮ সালে হাইকোর্ট বিভাগে একটি রিট আবেদন দাখিল করা হয়। পরবর্তীতে ২০০৪ সালের ৪ আগস্ট হাইকোর্ট বিভাগ ওই রিট খারিজ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বৈধ ঘোষণা করেন। এর বিরুদ্ধে রিট আবেদনকারী পক্ষ ২০০৫ সালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল দাখিল করেন।

দীর্ঘ বিচারকার্য শেষে ২০১১ সালের ১০ মে আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত একটি পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা করেন এবং রায় প্রদান করেন। পরবর্তীতে সংক্ষিপ্ত আদেশ প্রদানের প্রায় ১৬ মাস পর ২০১২ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়।

উল্লেখ্য, ইতোমধ্যে সংক্ষিপ্ত আদেশের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল ২০১১ সালের ৩০ জুন সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আনয়নের মাধ্যমে সংবিধান হতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংক্রান্ত বিধানসমূহ বাদ দেয়া হয়।

২০২৪ সালের জুলাই মাসে সংঘটিত অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারসহ একাধিক রাজনৈতিক দল উক্ত রায়ের পুনর্বিবেচনা চেয়ে আপিল বিভাগে রিভিউ আবেদন দাখিল করেন। এ আবেদনের শুনানি শেষে ২০২৫ সালের ২৭ আগস্ট আপীল অনুমতি প্রদান করা হয়।

পরবর্তীতে ২১, ২২, ২৩, ২৮ ও ২৯ অক্টোবর এবং ২, ৪, ৫, ৬ ও ১১ নভেম্বর ২০২৫ তারিখে এ-সংক্রান্ত আপীলের বিস্তারিত শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানি শেষে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির বেঞ্চ ১১ নভেম্বর ২০২৫ তারিখে রায় ঘোষণার জন্য ২০ নভেম্বর দিন ধার্য করেন।

এরই ধারাবাহিকতায় আজ বৃহস্পতিবার আপিল বিভাগ নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা সংক্রান্ত সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল ও রিভিউ আবেদন এর সিদ্ধান্ত সংবলিত সংক্ষিপ্ত আদেশ প্রদান করেন। উক্ত সংক্ষিপ্ত আদেশে সংশ্লিষ্ট আপিল ও সিভিল রিভিউসমূহ সর্বসম্মতভাবে মঞ্জুর করা হয়।

আদালত আদেশে উল্লেখ করেন যে- আদালত এই মর্মে সর্বসম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে যে, পর্যালোচনাধীন আপিল বিভাগের রায়টি নথি দৃষ্টে স্পষ্টরূপে প্রতীয়মান একাধিক ত্রুটিতে ত্রুটিপূর্ণ ।

এ ছাড়া আদেশে উল্লেখ করা হয় যে পর্যালোচনাধীন রায়টি এতদ্বারা সম্পূর্ণরূপে বাতিল করা হলো। এর ফলে সংবিধানের চতুর্থ ভাগের পরিচ্ছেদ ২ক-এর নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার সম্পর্কিত বিধানাবলী, যা সংবিধান (ত্রয়োদশ সংশোধন) আইন, ১৯৯৬ (১৯৯৬ সনের ১ নং আইন) এর ধারা ৩ দ্বারা সন্নিবেশিত হয়েছিলো, তা এতদ্বারা এই রায়ের মাধ্যমে পুনরুজ্জীবিত ও সক্রিয় করা হয়েছে মর্মে সংক্ষিপ্ত আদেশে বলা হয়।

তবে আদেশে উল্লেখ করা হয় যে, যদিও এইরূপ পুনরুজ্জীবন পরিচ্ছেদ ২ক-এ বর্ণিত নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংক্রান্ত বিধানাবলীর স্বয়ংক্রিয় পুন:স্থাপন নিশ্চিত করে, তবে পুনরুজ্জীবিত অনুচ্ছেদ ৫৮খ(১) এবং অনুচ্ছেদ ৫৮গ(২) এর বিধানাবলীর প্রয়োগ সাপেক্ষে উহা কার্যকর হবে।

এছাড়া, আদেশে বলা হয় যে, পুন:স্থাপিত ও পুনরুজ্জীবিত পরিচ্ছেদ ২ক-এ বর্ণিত নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংক্রান্ত বিধানাবলী কেবলমাত্র উক্তরূপ ভবিষ্যত প্রয়োগযোগ্যতার ভিত্তিতেই কার্যকর হবে। সংক্ষিপ্ত আদেশে আরও উল্লেখ করা হয় যে, পরবর্তীতে আদালত পূর্ণাঙ্গ রায় প্রদান করবে।