ঢাকা ০৬:৫৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫, ১৬ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
টার্গেট শিক্ষার্থী, কর্মজীবী, ব্যবসায়ী ও রাইড শেয়ারিং যাত্রী

ঢাকার অলিগলিতে ছিনতাই চক্রের রাজত্ব

সাজিদ মাহমুদ ইফতি
  • Update Time : ১১:২৬:১৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ জুলাই ২০২৫
  • / ৮৮ Time View

রাজধানী ঢাকায় সন্ধ্যা নামলেই অলিগলি আর সড়কে নেমে আসে আতঙ্ক। রাত যত গভীর হয় ততো বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে এক শ্রেণির অপরাধী—যারা ছিনতাইকারী নামে পরিচিত। রাজধানীতে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে ছিনতাই। নগরীর ৫০ থানা এলাকায় ছিনতাইকারীদের ৪৩২টি হটস্পট চিহ্নিত হয়েছে। এসব স্থানে সক্রিয় ১২শ ছিনতাইকারী। এদের দৌরাত্ম্যে জনগণের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে

ছিনতাই চক্রের গঠন ও কার্যপ্রণালী:
একটি ছিনতাইকারী চক্র সাধারণত ৩ থেকে ৬ জনের সমন্বয়ে গঠিত। দলের মধ্যে কেউ থাকে চালক, কেউ নজরদার, আবার কেউ মূল হামলাকারী।
তারা খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয় এবং সাধারণত ১ থেকে ২ মিনিটের মধ্যে অপারেশন শেষ করে ফেলে।

চক্রের কাজ:
এরা চলন্ত বাস, প্রাইভেট কার থেকে মোবাইল ফোন, কানের দুল, গলার চেইন টেনে নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে। রাস্তায় প্রকাশ্যে ছুরি, চাকু, চাপাতি বা পিস্তল ধরে নগদ টাকা, মূল্যবান সামগ্রী কেড়ে নিচ্ছে। বাধা দিলেই আঘাত করছে এতে গুরুতর আহতসহ প্রাণহানি হচ্ছে।এসবের সঙ্গে পেশাদার, মাদকাসক্ত এবং শৌখিন ছিনতাইকারীরা জড়িত।এছাড়াও এই চক্রের সদস্যরা
সিএনজিতে যাত্রী সেজে বসে। তারপর টার্গেট কৃত যাত্রীকে সেএনজিতে উঠায় তারপর যাত্রীকে নির্জন এলাকায় নিয়ে অস্ত্র দেখিয়ে সব ছিনিয়ে নেয় এবং তারপর তার চোখে মরিচের গুঁড়া লাগিয়ে নির্জন জায়গায় ফেলে দেয়। নারী যাত্রী হলে ভয়ভীতি এবং হয়রানির মাত্রা আরও বেড়ে যায়।

ঢাকার হটস্পট এলাকা:
নিয়মিত ছিনতাই হয় রাজধানী ঢাকার ২৫ স্পটে। সম্প্রতি ছিনতাইকারী ও ছিনতাইয়ের ঘটনাগুলো পর্যালোচনা করে রাজধানীতে বেশ কয়েকটি স্পটকে ছিনতাইকারীদের ‘হটস্পট’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে চিটাগাং রোড থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত; রায়েরবাগ, শনির আখড়া থেকে কুতুবখালী, বনানী ব্রিজ, বাবুবাজার, কদমতলী, বাদামতলী, মতিঝিল শাপলা চত্বর, ধানমন্ডি ৩২ থেকে মানিক মিয়া এভিনিউ যাওয়ার রাস্তা রয়েছে।

তবে ঢাকা শহরের মধ্যে ছিনতাইকারীদের অভয়ারণ্য বলা চলে মোহাম্মদপুরকে। মোহাম্মদপুর ও বছিলা এলাকায় ছিনতাইকারীদের দমন করা কষ্টসাধ্য হয়ে যাচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য। মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান, বছিলা ৩ রাস্তার মোড়, বছিলা ব্রিজ, নবোদয় হাউজিং, রায়ের বাজার, মোহাম্মদিয়া হাউজিং, বুদ্ধিজীবী কবর স্থানের বিপরীত পাশের রাস্তা ও বছিলা গার্ডেন সিটি এলাকায় ছিনতাইকারীর উৎপাত বেশি লক্ষ্য করা যায়।
পুলিশ সদর দপ্তরের অপরাধ পরিসংখ্যানের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) দস্যুতা (ছিনতাই)-ডাকাতির ঘটনায় মামলা হয়েছে ১৫১টি, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৮২ শতাংশ বেশি।

উল্লেখ্য, প্রচলিত আইনে দস্যুতার ক্ষেত্রে আসামির সংখ্যা এক থেকে চারজন হয়ে থাকে। আর চারজনের বেশি ব্যক্তি দস্যুতার অপরাধে জড়ালে তা ডাকাতি হিসেবে গণ্য হয়।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর দেশে কিছুদিন পুলিশি কার্যক্রম ছিল না। পরে তা ধীরে ধীরে চালু হয়; যদিও স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে সময় লেগেছে। এতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে এবং চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা ঘটতে থাকে। অবশ্য পুলিশ সক্রিয় হওয়ার পর এ ধরনের অপরাধ কমেছে। কিন্তু তারপরও মানুষের মধ্যে আতঙ্ক রয়ে গেছে।

ছিনতাই প্রতিরোধে করণীয়

সাধারণ মানুষের জন্য:

রাতে একা চলাচল এড়িয়ে চলা

মূল্যবান জিনিসপত্র কম বহন করা

নির্জন রাস্তা এড়িয়ে চলা

প্রশাসনের জন্য:

ছিনতাইয়ের হটস্পট এলাকা গুলোকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা

রাত্রিকালীন টহল বৃদ্ধি

রাইড শেয়ারিং অ্যাপের নিবন্ধন কঠোর করা

উপসংহার

ছিনতাই এক ভয়াবহ নগর-ব্যাধিতে রূপ নিয়েছে। শহরের মানুষ আজ রাতে রাস্তায় নামলেই আতঙ্কে থাকে। সরকার, পুলিশ প্রশাসন ও নাগরিক—সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। না হলে ছিনতাইকারী চক্র এক সময় শুধু ব্যাগ নয়, মানুষের নিরাপত্তাও ছিনিয়ে নেবে।

Please Share This Post in Your Social Media

টার্গেট শিক্ষার্থী, কর্মজীবী, ব্যবসায়ী ও রাইড শেয়ারিং যাত্রী

ঢাকার অলিগলিতে ছিনতাই চক্রের রাজত্ব

সাজিদ মাহমুদ ইফতি
Update Time : ১১:২৬:১৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ জুলাই ২০২৫

রাজধানী ঢাকায় সন্ধ্যা নামলেই অলিগলি আর সড়কে নেমে আসে আতঙ্ক। রাত যত গভীর হয় ততো বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে এক শ্রেণির অপরাধী—যারা ছিনতাইকারী নামে পরিচিত। রাজধানীতে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে ছিনতাই। নগরীর ৫০ থানা এলাকায় ছিনতাইকারীদের ৪৩২টি হটস্পট চিহ্নিত হয়েছে। এসব স্থানে সক্রিয় ১২শ ছিনতাইকারী। এদের দৌরাত্ম্যে জনগণের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে

ছিনতাই চক্রের গঠন ও কার্যপ্রণালী:
একটি ছিনতাইকারী চক্র সাধারণত ৩ থেকে ৬ জনের সমন্বয়ে গঠিত। দলের মধ্যে কেউ থাকে চালক, কেউ নজরদার, আবার কেউ মূল হামলাকারী।
তারা খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয় এবং সাধারণত ১ থেকে ২ মিনিটের মধ্যে অপারেশন শেষ করে ফেলে।

চক্রের কাজ:
এরা চলন্ত বাস, প্রাইভেট কার থেকে মোবাইল ফোন, কানের দুল, গলার চেইন টেনে নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে। রাস্তায় প্রকাশ্যে ছুরি, চাকু, চাপাতি বা পিস্তল ধরে নগদ টাকা, মূল্যবান সামগ্রী কেড়ে নিচ্ছে। বাধা দিলেই আঘাত করছে এতে গুরুতর আহতসহ প্রাণহানি হচ্ছে।এসবের সঙ্গে পেশাদার, মাদকাসক্ত এবং শৌখিন ছিনতাইকারীরা জড়িত।এছাড়াও এই চক্রের সদস্যরা
সিএনজিতে যাত্রী সেজে বসে। তারপর টার্গেট কৃত যাত্রীকে সেএনজিতে উঠায় তারপর যাত্রীকে নির্জন এলাকায় নিয়ে অস্ত্র দেখিয়ে সব ছিনিয়ে নেয় এবং তারপর তার চোখে মরিচের গুঁড়া লাগিয়ে নির্জন জায়গায় ফেলে দেয়। নারী যাত্রী হলে ভয়ভীতি এবং হয়রানির মাত্রা আরও বেড়ে যায়।

ঢাকার হটস্পট এলাকা:
নিয়মিত ছিনতাই হয় রাজধানী ঢাকার ২৫ স্পটে। সম্প্রতি ছিনতাইকারী ও ছিনতাইয়ের ঘটনাগুলো পর্যালোচনা করে রাজধানীতে বেশ কয়েকটি স্পটকে ছিনতাইকারীদের ‘হটস্পট’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে চিটাগাং রোড থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত; রায়েরবাগ, শনির আখড়া থেকে কুতুবখালী, বনানী ব্রিজ, বাবুবাজার, কদমতলী, বাদামতলী, মতিঝিল শাপলা চত্বর, ধানমন্ডি ৩২ থেকে মানিক মিয়া এভিনিউ যাওয়ার রাস্তা রয়েছে।

তবে ঢাকা শহরের মধ্যে ছিনতাইকারীদের অভয়ারণ্য বলা চলে মোহাম্মদপুরকে। মোহাম্মদপুর ও বছিলা এলাকায় ছিনতাইকারীদের দমন করা কষ্টসাধ্য হয়ে যাচ্ছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য। মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান, বছিলা ৩ রাস্তার মোড়, বছিলা ব্রিজ, নবোদয় হাউজিং, রায়ের বাজার, মোহাম্মদিয়া হাউজিং, বুদ্ধিজীবী কবর স্থানের বিপরীত পাশের রাস্তা ও বছিলা গার্ডেন সিটি এলাকায় ছিনতাইকারীর উৎপাত বেশি লক্ষ্য করা যায়।
পুলিশ সদর দপ্তরের অপরাধ পরিসংখ্যানের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে (জানুয়ারি-মার্চ) দস্যুতা (ছিনতাই)-ডাকাতির ঘটনায় মামলা হয়েছে ১৫১টি, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৮২ শতাংশ বেশি।

উল্লেখ্য, প্রচলিত আইনে দস্যুতার ক্ষেত্রে আসামির সংখ্যা এক থেকে চারজন হয়ে থাকে। আর চারজনের বেশি ব্যক্তি দস্যুতার অপরাধে জড়ালে তা ডাকাতি হিসেবে গণ্য হয়।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর দেশে কিছুদিন পুলিশি কার্যক্রম ছিল না। পরে তা ধীরে ধীরে চালু হয়; যদিও স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে সময় লেগেছে। এতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে এবং চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা ঘটতে থাকে। অবশ্য পুলিশ সক্রিয় হওয়ার পর এ ধরনের অপরাধ কমেছে। কিন্তু তারপরও মানুষের মধ্যে আতঙ্ক রয়ে গেছে।

ছিনতাই প্রতিরোধে করণীয়

সাধারণ মানুষের জন্য:

রাতে একা চলাচল এড়িয়ে চলা

মূল্যবান জিনিসপত্র কম বহন করা

নির্জন রাস্তা এড়িয়ে চলা

প্রশাসনের জন্য:

ছিনতাইয়ের হটস্পট এলাকা গুলোকে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা

রাত্রিকালীন টহল বৃদ্ধি

রাইড শেয়ারিং অ্যাপের নিবন্ধন কঠোর করা

উপসংহার

ছিনতাই এক ভয়াবহ নগর-ব্যাধিতে রূপ নিয়েছে। শহরের মানুষ আজ রাতে রাস্তায় নামলেই আতঙ্কে থাকে। সরকার, পুলিশ প্রশাসন ও নাগরিক—সবাইকে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। না হলে ছিনতাইকারী চক্র এক সময় শুধু ব্যাগ নয়, মানুষের নিরাপত্তাও ছিনিয়ে নেবে।