ঢাকা ০৬:৫৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৩১ মার্চ ২০২৫, ১৭ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ট্রেনের টিকেট কালোবাজারি চক্রের ৬ জন গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ০৪:৩১:২৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ মার্চ ২০২৫
  • / ২১ Time View

বিভিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থার মধ্যে রেলভ্রমন একটি নিরাপদ, সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব হিসেবে সকলের নিকট সুপরিচিত। সাচ্ছন্দে যাতায়াতের জন্য ট্রেনের কোন বিকল্প নাই। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের জনসাধারণের বড় একটি অংশ নিরাপদ যাত্রার মাধ্যম হিসেবে ট্রেনে ভ্রমণ করে থাকে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর শাহজাহানপুর র‍্যাব-০৩ ব্যাটেলিয়ান সদরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে উপ-অধিনায়ক মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু দুষ্কৃতিকারী ও টিকেট কালোবাজারি চক্রের দৌরাত্মে স্বস্তিকর রেলভ্রমনের টিকেট প্রাপ্তি অনেক সাধারণ জনগণের জন্য অস্বস্তি, চিন্তা ও ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনলাইনে টিকেট পাওয়া না গেলেও কালোবাজারে অধিক মূল্যে টিকেট বিক্রি হতে দেখা যায়। টিকেট কালোবাজারিরা বিভিন্ন কৌশলে ট্রেনের টিকেট অগ্রিম সংগ্রহ করে অবৈধভাবে নিজেদের কাছে মজুদ করে রেখে সাধারণ যাত্রীদের নিকট ২/৩ গুন বেশি দামে টিকেট বিক্রি করছে।

সাধারণ যাত্রীদের চাহিদা অনুযায়ী টিকেট না পাওয়া এবং টিকেট কালোবাজারী কর্তৃক অধিক মূল্যে টিকেট বিক্রয়ের বিষয়টি নিয়ে সাম্প্রতিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় ব্যাপক সমালোচিত হয়। বিভিন্ন সময়ে গ্রেফতারকৃত ট্রেনের টিকেট কালোবাজির চক্রের সদস্যদের নিকট থেকে প্রাপ্ত তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষন করে ট্রেনের টিকেট কালোবাজারি প্রতিরোধ ও কালোবাজারিদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে র‍্যাব-৩।

এরই ধারাবাহিকতায় গোয়েন্দা সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় র‍্যাব-৩ গত ২৬ মার্চ রাতে রাজধানীর খিলগাঁও বনশ্রী এলাকায় অভিযান চালিয়ে ট্রেনের টিকেট কালোবাজারী চক্রের সদস্য ১। মোঃ রিয়াজুল ইসলামকে (২৯) গ্রেফতার করা হয়। রিয়াজুল এর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অপর একটি অভিযানে ২৭ তারিখ ভোরে র‍্যাব-১১ এর সহায়তায় ট্রেনের টিকেট কালোবাজারী চক্রের মূলহোতা ২। মোঃ সেলিমকে (৫৩) রাজধানীর ডেমরা থানার ডগাইর বাজার এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।

ধৃত আসামিদের দেওয়া তথ্যমতে ২৭ মার্চ সকালে র‍্যাব-৩ কর্তৃক পৃথক অপর একটি অভিযান চালিয়ে কমলাপুর রেলওয়ে ষ্টেশন থেকে উপরোক্ত আসামিদের সহযোগী কালোবাজারী ট্রেনের টিকেট বিক্রয়কারী সদস্য ৩। সোহেল মিয়া (৩৬), ৪। তৌফিক (২৮), ৫। মাইনুল ইসলাম (২৪), ৬। রাকাতুল ইসলামকে (১৯) গ্রেফতার করা হয়। এসময় তাদের কাছ থেকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যের সর্বমোট ৩১৪টি সিটের ৮২টি ট্রেনের টিকেট, মোবাইল কোম্পানীর ৯৫টি সীম, ১০টি মোবাইল ফোন, ১টি এনআইডি, ১টি ঘড়ি, ৪টি এটিএম কার্ড, ১টি সিপিইউ, ১টি মনিটর, ১টি কি-বোর্ড, ১টি মাউস এবং নগদ ৭১০ টাকা উদ্ধার করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা জানায়, তারা সংঘবদ্ধ টিকেট কালোবাজারী চক্রের সদস্য। ঈদযাত্রায় ট্রেনের টিকেটের বিপুল চাহিদা থাকে। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ পরস্পর যোগসাজশে অনলাইনে অল্পমূল্যে টিকেট ক্রয় করে টিকেট প্রত্যাশী সাধারণ মানুষের কাছে উচ্চমূল্যে গোপনে টিকেট বিক্রি করে।

তারা মূলত ট্রেন ছাড়ার ৩/৪ ঘন্টা আগে থেকে অধিক মূল্যে টিকেট বিক্রির তৎপরতা শুরু করে। ট্রেন ছাড়ার সময় যত ঘনাতে থাকে মজুদকৃত কালোবাজারি টিকেটের দাম তত বাড়তে থাকে। তারা সাধারণত ২/৩ গুন মূল্যে টিকেট বিক্রি করে থাকে। সুযোগ এবং সময় বুঝে অনেক ক্ষেত্রে টিকেটের দাম আরও বাড়িয়ে দেয়।

গ্রেফতারকৃত আসামিরা তিস্তা এক্সপ্রেস, এগারো সিন্ধু প্রভাতি, মহানগর প্রভাতী, দেওয়ানগঞ্জ ঈদ স্পেশাল, জামালপুর এক্সপ্রেস এবং পারাবত এক্সপ্রেস এই সকল ট্রেনের টিকেট কালোবাজারি করে থাকে।

আসামি মোঃ রিয়াজুল ইসলাম (২৯) জানায়, সে এসএসসি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে এবং কম্পিউটার ও গ্রাফিক্স ডিজাইন সম্পর্কে ভালো অভিজ্ঞতা রয়েছে। রিয়াজ ও মূলহোতা সেলিম একই এলাকায় বসবাসের সুবাদে তাদের পরিচয়ের মাধ্যমে সেলিমের প্ররোচনায় রিয়াজ অবৈধ ট্রেনের টিকেট কালোবাজারির সাথে জড়িয়ে পড়ে। মোঃ সেলিম (৫৩) অপর আসামি মোঃ রিয়াজুল ইসলাম (২৯)’কে ঈদ উপলক্ষে অনলাইন হতে টিকেট কাটার জন্য অগ্রীম ৯৫,০০০ হাজার টাকা প্রদান করে। রিয়াজ ফেসবুকের বিভিন্ন পেইজ থেকে সিম বিক্রয়ের বিজ্ঞাপন দেখে তাদের কাছ থেকে প্রতিপিস সিম ১০০ টাকা ও প্রতিটি এনআইডি কার্ড ২০ টাকা করে অনলাইনের মাধ্যমে কিনে ঐ সকল সিম ও এনআইডি দিয়ে রেল সেবা অ্যাপস এ আইডি খুলে বিভিন্ন গন্তব্যের রেল টিকেট সংগ্রহ করে মূলহোতা সেলিমকে প্রদান করতো। আসামি সেলিম মাঠপর্যায়ে গ্রেফতারকৃত অন্য সদস্যদের রেলষ্টেশন এলাকায় নিয়োগ করে যাদের টিকেট প্রয়োজন তাদের খুজে বের করে এবং তাদের নিকট উচ্চমূল্যে টিকিট বিক্রয় করে।

ধৃত আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

Please Share This Post in Your Social Media

ট্রেনের টিকেট কালোবাজারি চক্রের ৬ জন গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদক
Update Time : ০৪:৩১:২৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৮ মার্চ ২০২৫

বিভিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থার মধ্যে রেলভ্রমন একটি নিরাপদ, সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব হিসেবে সকলের নিকট সুপরিচিত। সাচ্ছন্দে যাতায়াতের জন্য ট্রেনের কোন বিকল্প নাই। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের জনসাধারণের বড় একটি অংশ নিরাপদ যাত্রার মাধ্যম হিসেবে ট্রেনে ভ্রমণ করে থাকে।

বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর শাহজাহানপুর র‍্যাব-০৩ ব্যাটেলিয়ান সদরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে উপ-অধিনায়ক মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু দুষ্কৃতিকারী ও টিকেট কালোবাজারি চক্রের দৌরাত্মে স্বস্তিকর রেলভ্রমনের টিকেট প্রাপ্তি অনেক সাধারণ জনগণের জন্য অস্বস্তি, চিন্তা ও ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনলাইনে টিকেট পাওয়া না গেলেও কালোবাজারে অধিক মূল্যে টিকেট বিক্রি হতে দেখা যায়। টিকেট কালোবাজারিরা বিভিন্ন কৌশলে ট্রেনের টিকেট অগ্রিম সংগ্রহ করে অবৈধভাবে নিজেদের কাছে মজুদ করে রেখে সাধারণ যাত্রীদের নিকট ২/৩ গুন বেশি দামে টিকেট বিক্রি করছে।

সাধারণ যাত্রীদের চাহিদা অনুযায়ী টিকেট না পাওয়া এবং টিকেট কালোবাজারী কর্তৃক অধিক মূল্যে টিকেট বিক্রয়ের বিষয়টি নিয়ে সাম্প্রতিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় ব্যাপক সমালোচিত হয়। বিভিন্ন সময়ে গ্রেফতারকৃত ট্রেনের টিকেট কালোবাজির চক্রের সদস্যদের নিকট থেকে প্রাপ্ত তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষন করে ট্রেনের টিকেট কালোবাজারি প্রতিরোধ ও কালোবাজারিদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে র‍্যাব-৩।

এরই ধারাবাহিকতায় গোয়েন্দা সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্য ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় র‍্যাব-৩ গত ২৬ মার্চ রাতে রাজধানীর খিলগাঁও বনশ্রী এলাকায় অভিযান চালিয়ে ট্রেনের টিকেট কালোবাজারী চক্রের সদস্য ১। মোঃ রিয়াজুল ইসলামকে (২৯) গ্রেফতার করা হয়। রিয়াজুল এর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অপর একটি অভিযানে ২৭ তারিখ ভোরে র‍্যাব-১১ এর সহায়তায় ট্রেনের টিকেট কালোবাজারী চক্রের মূলহোতা ২। মোঃ সেলিমকে (৫৩) রাজধানীর ডেমরা থানার ডগাইর বাজার এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।

ধৃত আসামিদের দেওয়া তথ্যমতে ২৭ মার্চ সকালে র‍্যাব-৩ কর্তৃক পৃথক অপর একটি অভিযান চালিয়ে কমলাপুর রেলওয়ে ষ্টেশন থেকে উপরোক্ত আসামিদের সহযোগী কালোবাজারী ট্রেনের টিকেট বিক্রয়কারী সদস্য ৩। সোহেল মিয়া (৩৬), ৪। তৌফিক (২৮), ৫। মাইনুল ইসলাম (২৪), ৬। রাকাতুল ইসলামকে (১৯) গ্রেফতার করা হয়। এসময় তাদের কাছ থেকে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যের সর্বমোট ৩১৪টি সিটের ৮২টি ট্রেনের টিকেট, মোবাইল কোম্পানীর ৯৫টি সীম, ১০টি মোবাইল ফোন, ১টি এনআইডি, ১টি ঘড়ি, ৪টি এটিএম কার্ড, ১টি সিপিইউ, ১টি মনিটর, ১টি কি-বোর্ড, ১টি মাউস এবং নগদ ৭১০ টাকা উদ্ধার করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামিরা জানায়, তারা সংঘবদ্ধ টিকেট কালোবাজারী চক্রের সদস্য। ঈদযাত্রায় ট্রেনের টিকেটের বিপুল চাহিদা থাকে। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ পরস্পর যোগসাজশে অনলাইনে অল্পমূল্যে টিকেট ক্রয় করে টিকেট প্রত্যাশী সাধারণ মানুষের কাছে উচ্চমূল্যে গোপনে টিকেট বিক্রি করে।

তারা মূলত ট্রেন ছাড়ার ৩/৪ ঘন্টা আগে থেকে অধিক মূল্যে টিকেট বিক্রির তৎপরতা শুরু করে। ট্রেন ছাড়ার সময় যত ঘনাতে থাকে মজুদকৃত কালোবাজারি টিকেটের দাম তত বাড়তে থাকে। তারা সাধারণত ২/৩ গুন মূল্যে টিকেট বিক্রি করে থাকে। সুযোগ এবং সময় বুঝে অনেক ক্ষেত্রে টিকেটের দাম আরও বাড়িয়ে দেয়।

গ্রেফতারকৃত আসামিরা তিস্তা এক্সপ্রেস, এগারো সিন্ধু প্রভাতি, মহানগর প্রভাতী, দেওয়ানগঞ্জ ঈদ স্পেশাল, জামালপুর এক্সপ্রেস এবং পারাবত এক্সপ্রেস এই সকল ট্রেনের টিকেট কালোবাজারি করে থাকে।

আসামি মোঃ রিয়াজুল ইসলাম (২৯) জানায়, সে এসএসসি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে এবং কম্পিউটার ও গ্রাফিক্স ডিজাইন সম্পর্কে ভালো অভিজ্ঞতা রয়েছে। রিয়াজ ও মূলহোতা সেলিম একই এলাকায় বসবাসের সুবাদে তাদের পরিচয়ের মাধ্যমে সেলিমের প্ররোচনায় রিয়াজ অবৈধ ট্রেনের টিকেট কালোবাজারির সাথে জড়িয়ে পড়ে। মোঃ সেলিম (৫৩) অপর আসামি মোঃ রিয়াজুল ইসলাম (২৯)’কে ঈদ উপলক্ষে অনলাইন হতে টিকেট কাটার জন্য অগ্রীম ৯৫,০০০ হাজার টাকা প্রদান করে। রিয়াজ ফেসবুকের বিভিন্ন পেইজ থেকে সিম বিক্রয়ের বিজ্ঞাপন দেখে তাদের কাছ থেকে প্রতিপিস সিম ১০০ টাকা ও প্রতিটি এনআইডি কার্ড ২০ টাকা করে অনলাইনের মাধ্যমে কিনে ঐ সকল সিম ও এনআইডি দিয়ে রেল সেবা অ্যাপস এ আইডি খুলে বিভিন্ন গন্তব্যের রেল টিকেট সংগ্রহ করে মূলহোতা সেলিমকে প্রদান করতো। আসামি সেলিম মাঠপর্যায়ে গ্রেফতারকৃত অন্য সদস্যদের রেলষ্টেশন এলাকায় নিয়োগ করে যাদের টিকেট প্রয়োজন তাদের খুজে বের করে এবং তাদের নিকট উচ্চমূল্যে টিকিট বিক্রয় করে।

ধৃত আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।