টাকা নিয়ে দরজায় নক করলেও দরজা খোলেনি বিদেশিরা: তাসকিন

- Update Time : ১১:০৯:৪২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২৫
- / ৫০ Time View
বিপিএলের চলতি আসরে বিতর্ক যেন পিছু ছাড়ছে না দুর্বার রাজশাহীর। পারিশ্রমিক সংক্রান্ত ইস্যুতে এবার চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে দলের বিদেশি ক্রিকেটারদের মধ্যে।
রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে গতকাল নাটকীয় জয় পেলেও, ম্যাচে অংশ নেননি রাজশাহীর ছয়জন বিদেশি খেলোয়াড়। এই ঘটনায় ম্যাচের পর মুখ খুলেছেন রাজশাহীর অধিনায়ক তাসকিন আহমেদ।
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) মানেই যেন বিতর্ক। তবে এবার যেন সব আসরকে ছাড়িয়ে গেছে ঘরোয়া ক্রিকেটের সবচেয়ে জমজমাট এই টুর্নামেন্টটি।
চলমান দুর্বার রাজশাহী এমন কিছু ঘটনা ঘটিয়েছে, যা শুধু তাদের নয়, পুরো লিগের পেশাদারত্ব ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
রবিবার (২৬ জানুয়ারি) রংপুর রাইডার্সের বিপক্ষে ম্যাচের আগে তাদের হোটেলের পরিবর্তন দিয়ে শুরু। এরপর পারিশ্রমিক ইস্যুতে ক্রিকেটারদের ম্যাচ বয়কটের হুমিক। পরক্ষণে চেক দেওয়া হলে স্থানীয় ক্রিকেটাররা মাঠে এলেও আসেননি বিদেশি ক্রিকেটাররা। রাজশাহী কিংসের অধিনায়ক তাসকিন আহমেদ ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসে জানিয়েছেন, টাকা নিয়ে দরজায় নক করা হলেও বিদেশি ক্রিকেটাররা দরজা খোলেনি। এর বাইরে দলটির অনেক কিছু নিয়েই সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেছেন ডানহাতি এই পেসার।
প্রশ্ন: তাহলে কি দেশি একাদশ নিয়েই সব ম্যাচ মাঠে নামবেন আপনারা?
তাসকিন: আজকে দিনের শুরু থেকেই অনেক ড্রামা দেখেছি আমরা সব প্লেয়াররাই। আমি যতটুকু শুনেছি, টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে নাকি টাকা নিয়েও রুমে নক করেছে বিদেশিদের কেউ দরজা খোলেনি। সবাই মিলে শুরুতে একটু আপসেট ছিল। ১২০ রান হলো, এত সোজা না আজকের উইকেট। ১৫-২০ রান শর্ট ছিল, শেষ দিকে পুরস্কার পাওয়া গেছে।
প্রশ্ন: টাকা নিয়ে দরজায় কড়া নেড়েছিল, তারপরও বিদেশিরা দরজা খোলেনি; পুরো ব্যাপারটি আসলে কী ছিল?
তাসকিন: এটা আমি শুনেছি, ম্যানেজারকে নাকি বলা হয়েছিল টাকা নিয়ে দরজায় নক করতে। কিন্তু ওরা দরজাই খোলেনি। ওরা ভেবেছে, এমনিতেই নক করছে। আমি গিয়েছিলাম, কিন্তু ওরা (বিদেশিরা) বললো— টাকা না দিলে আমরা খেলবো না। আমি আর কী বলবো, আমিও তো প্লেয়ার। (হাসি)।
প্রশ্ন: আর কী কী ড্রামা অপেক্ষা করছে?
তাসকিন: আমার জীবনেও নতুন অভিজ্ঞতা হলো। বুকিং দেওয়া ছিল শেরাটনে, পরে ওয়েস্টিনে। হোটেল ওয়েস্টিনের নাকি সব রুম বুক হয়ে গেছে। চেঞ্জ করলাম হোটেল। আমাদের বোর্ড থেকে ফোন দিয়ে বললো— আসো। খেলো অন্তত। বিদেশিদেরও বলেছে— পেমেন্ট ইস্যু না তোমরা আসো।
প্রশ্ন: একটা স্টেজে গিয়ে অধিনায়কত্ব পাওয়া, এরপর এমন সব পরিস্থিতিতে দলকে মোটিভেট করা। পুরো বিষয়টা অধিনায়ক হিসেবে কতটা কঠিন ছিল?
তাসকিন: আমি প্রতিটা মুহূর্ত উপভোগ করার চেষ্টা করছি। যেহেতু ক্রিকেটই আমার ব্রেড অ্যান্ড বাটার এবং প্যাশন। মাঠে আমরা উপভোগ করেছি আমরা। দেশি বিগ নেইম অত নেই, দুই-তিন জন ছাড়া। সবাই বলেছি, লেটস স্ট্রাইক। সবাই অনেক পজিটিভ ছিল। উপভোগ করেছি, সাহস করে করে চেঞ্জ করছি। বোলিংয়ে আসলে সাপোর্ট করেছি। চেষ্টা করেছি সেরাটা দিয়ে দেখি, এরপর কী হয়।
প্রশ্ন: জাতীয় দলে সহ-অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেছেন, এখানে ভালো করছেন। আপনার জন্যতো দরজা খোলাই, নাকি?
তাসকিন: দেরি আছে না? (হাসি) প্রসেসেই থাকি। সামনে ২ ম্যাচ আছে। ক্রিকেটের উন্নতি করে যেতে চাই। আল্লাহ যেন সুস্থ রাখেন। এগুলো নিয়ে অত ভাবছি না। সময় আসলে দেখা যাবে। সামনে অনেক খেলা আছে। আমি একজন ক্রিকেটার হিসেবে পুরো বিষয়গুলো উপভোগ করছি।
প্রশ্ন: জাতীয় দলে যখন খেলেন, খারাপ পারফরম্যান্সের পর আপনাদের নিয়ে ট্রল হয়। এখন আপনারা ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ খেলছেন। এই দল নিয়েও দারুন পারফরম্যান্স করছেন। রংপুরকে দুবার হারালেন। এতকিছুর পরও নেতিবাচক আলোচনা। আপনাদের সামাজিক মর্যাদা আছে, এসব পরিস্থিতি কেমন অনুভব হয়?
তাসকিন: না, শুধু আমি না; দলের কেউই ভালো ফিল করে না। বিপিএল নিয়ে সবারই আশা থাকে শান্তিপূর্ণভাবে খেলবো। আমাদের দলে একটু সমস্যা হয়েছিল। যেহেতু আমাদের সবার নিজেকে প্রমাণ করার জায়গা একটাই, কারণ সবার ক্যারিয়ার ব্রেড এন্ড বাটার একটাই। এটাই সবাইকে বুস্ট আপ করেছে। অনুভূতিটা ভালো না, তবে এর মধ্যেও সবাই উপভোগ করেছে। অনুভূতি ভালো নয়, তারপরও আমরা চেষ্টা করছি মাঠের ক্রিকেটে কিভাবে ভালো করা যায়।
প্রশ্ন: দীর্ঘদিন খেলছেন, সকালে উঠেই দেখলেন হোটেল ছেড়ে দিতে হবে, এই অভিজ্ঞতা কখনও হয়েছিল?
তাসকিন: হয়নি। অনেক কিছুই নতুন অভিজ্ঞতা হচ্ছে। আমার মনে হয়, এতো চাপে এবং এত সমস্যার মধ্যে থেকে খেলাটা সামনে কাজে দিবে। এত চাপের মধ্যে ভালো করতে পারলে সামনে খেলাটা অনেক সহজ হয়ে যাবে।
প্রশ্ন: পুরো বিপিএল ক্যারিয়ারে ভালো দলে আপনার খেলা হয় না, সবকিছু মিলিয়ে কি মনে হয় ভালো দল পেলে পারফরম্যান্সটা আরও ভালো হতো?
তাসকিন: কিছুটা দুর্ভাগ্যজনক। চারটা সিজন পর পর এমন হলো। ড্রাফটে গেলাম, রাজশাহী আমাকে নিলো। নিজেকে নিজে মোটিভেট করতে থাকি। বড় দল যদি মনে করে আমি তাদের নেওয়ার মতো প্লেয়ার তাহলে নেবে। আফসোস করলে তো আফসোস করাই যায়। কিন্তু নিজেকে মোটিভেট করতে তো হবেই।
প্রশ্ন: বিদেশিরা মাঠে আসেনি, তাদের জন্য আপনার সহমর্মিতা আছে কিনা কিংবা অধিনায়ক হিসেবে তাদের সাথে আলাপ হয়েছে কিনা?
তাসকিন: আসলে দেখেন, আমাদেরও তো আজকে চেক দেওয়া হয়েছে। ২৫ শতাংশ বাকিটা। কাল আমরা প্লেস করবো। খারাপ তো লেগেছিলই, পরে আমরা বোর্ডকে অনুরোধ করেছি, বিদেশি ক্রিকেটার ছাড়া আমরা খেলতে চাই। বোর্ড আমাদের অনুরোধ রেখেছে। কারণ এখানে আমাদের তো ক্যারিয়ারের বিষয় আছে। সবমিলিয়ে পরিস্থিতি আমাদের জন্য সুখকর ছিল না। পরে জেতায় স্বস্তি।
প্রশ্ন: চেক বাউন্স করবে কিনা?
তাসকিন: (বাউন্স করবে) (হাসি)। আশা করি হবে না, উইকেটের মতো বাউন্স করবে না (হাসি)।
প্রশ্ন: কালকেই (সোমবার) আপনাদের ম্যাচ আছে, এই ম্যাচে বিদেশিদের পাওয়া যাবে?
তাসকিন: আসলে এখনও হোটেলে যাইনি। তারা আসলে তো দলের জন্য ভালো হবে। আশা করব তারা যেন আসে। তবে এখন বলতেও পারছি না। ম্যানেজমেন্ট যদি ওদের পে করে, তাহলে ওরা অবশ্যই আসবে।
প্রশ্ন: বিসিবি পেমেন্টের বিষয় নিশ্চিত করার পর কি আপনারা মাঠে এসেছেন?
তাসকিন: হ্যাঁ। সবাই যখন চিন্তা করছিল তখন ফারুক সাহেব ফোন করে বলেছে- টাকা পেতে দেরি হলেও সমস্যা নাই। বিসিবি দেবে তোমরা খেলো মন দিয়ে।
এ বিষয়ে বিসিবি পরিচালক ইফতেখার রহমান মিঠু জানান, ‘এটি অত্যন্ত দুঃখজনক এবং অনাকাঙ্ক্ষিত। এই সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধান করতে হবে। বোর্ড মিটিংয়ে বিষয়টি আলোচনা হয়েছে। তবে প্রতিনিয়ত নতুন সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছি, যা ঠিক করতে হবে।’
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
জনপ্রিয়