টঙ্গী সরকারি হাসপাতালে অনিয়ম,দালাল চক্র ও জনবল সংকট
- Update Time : ০২:৫৯:৫৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / ২৬১ Time View
গাজীপুরের টঙ্গী সরকারি ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল এখন দালালচক্র, দুর্নীতি, নিরাপত্তাহীনতা এবং নারীদের অবহেলার জন্য পরিচিত। গাজীপুরের টঙ্গী শিল্পাঞ্চলের কয়েক লাখ শ্রমজীবী মানুষের একমাত্র ভরসা এই হাসপাতাল।
১৯৯০-এর দশকে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল হিসেবে যাত্রা শুরু হলেও ২০১৭ সালে এটি উন্নীত হয় ২৫০ শয্যায়। তবে শয্যা বৃদ্ধি সেবার মানে কোনো উল্লেখযোগ্য উন্নতি আসেনি বরং বেড়েছে দালালদের প্রভাব, হসপিটালের ভিতর রয়েছে অবৈধ গাড়ির পার্কিং সিএনজি স্টার্ন।স্বেচ্ছাচারিতা, দুর্নীতি, জনবল সংকট ও নারীদের প্রতি অবহেলা। টঙ্গীর আশেপাশের ১০টি হাসপাতালও রাজনৈতিক দালালদের প্রভাবের আওতায় আছে, যা রোগীদের নিরাপদ ও কার্যকর চিকিৎসা পাওয়া আরও কঠিন করে তুলেছে।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আফজালুর রহমান বলেন, আমরা চেষ্টা করছি হাসপাতালটিকে ঢেলে সাজানোর জন্য। কিন্তু ভয়াবহ জনবল সংকটে কাজ করা কঠিন। ২৫০ শয্যার হাসপাতালে পর্যাপ্ত ডাক্তার–নার্স নেই। আনসার প্রহরীও নেই। মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছি, এখনো সাড়া আসেনি। হাসপাতালটি মাত্র তিনজন নিরাপত্তাকর্মী দিয়ে পাহারা দেয়। রাতে পরিত্যক্ত ভবনে ছিনতাইকারীরা অর্থ ও মালামাল ভাগাভাগি করে, আর চিকিৎসক ও নার্সদের উপস্থিতিতেও অনিয়ম চোখে পড়ে। গাইনী বিভাগে ডাক্তাররা প্রায়ই ডিউটিতে দেরি করে আসেন এবং রোগীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে থাকেন। হাসপাতালের আউটডোর ও জরুরি বিভাগের সামনে সক্রিয় দালালচক্র রোগীদের বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকে পাঠিয়ে কমিশন নেয়।
তথ্য রয়েছে টঙ্গীর আশেপাশের হাসপাতালগুলোর দালালদের তালিকা হলো: টঙ্গী মিশন হাসপাতাল – জীবন, মাইনশা হাসপাতাল – সেবা হাসপাতাল – সোহাগ, পদ্মা হাসপাতাল – লিডার, আল মদিনা হাসপাতাল – মতি, নিউ লাইফ হাসপাতাল – শাহনাজ বেগম, ইসলামিয়া হাসপাতাল – আজিজ, ফাতেমা হাসপাতাল – সীমা, তাও: ল্যাব হাসপাতাল – আল আমিন এবং রেডিয়াম হাসপাতাল – নজরুল।
রোগীরা অভিযোগ করেন যে, রোগীর নাম ও অর্থ দিয়ে দালালদের মাধ্যমে প্রাইভেট হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে। দুর্নীতিও সর্বত্র বিরাজ করছে। ১০ টাকার টিকিট থাকা সত্ত্বেও জরুরি বিভাগে মুমূর্ষু রোগীর সেলাইয়ের জন্য ২০০–৫০০ টাকা ঘুষ নেওয়া হয়। হাসপাতালের খাবার নোংরা ও নিম্নমানের। দীর্ঘদিন ধরে ঠিকাদারি সিন্ডিকেটের প্রভাবও আছে। নারীরা গাইনী বিভাগে অভিযোগ করেছেন ডাক্তাররা সময়মতো ডিউটিতে আসেন না, চিকিৎসা না দিয়ে ফোনে ব্যস্ত থাকেন এবং প্রসূতি রোগীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে থাকেন।
বোর্ডবাজার থেকে আসা গৃহিণী হালিমা খাতুন বলেন, আমি গাইনী বিভাগে গিয়েছিলাম। ডাক্তারকে দেখি মাথায় হেলান দিয়ে ফোনে কথা বলছে। আমাদের দিকে ঠিকমতো তাকায়নি। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার পরিস্থিতিও নাজুক। ৫৬ জন আউটসোর্সিং কর্মী থাকলেও দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করেন না। দুর্গন্ধ, ভাঙা টয়লেট, নষ্ট বেসিন ও নিভে থাকা আলো সাধারণ চিত্র।
রোগী ও স্বজনরা জানান, এই পরিবেশ নতুন রোগ ডেকে আনে। হাসপাতালের নামও বিভ্রান্তিকরভাবে পরিবর্তিত হয়েছে – প্রথমে টঙ্গী সরকারি হাসপাতাল, পরে শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতাল এবং সাম্প্রতিক: টঙ্গী সরকারি হাসপাতাল।
ভ্যাকসিন ও চিকিৎসা সরঞ্জামের অবস্থা হতাশাজনক। এক বছর ধরে কোনো ভ্যাকসিন নেই, শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্য সেবায় বড় সংকট রয়েছে এবং চিকিৎসা যন্ত্রপাতির অনেকগুলো অচল। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে টঙ্গী সরকারি হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ আফজালুর রহমান বলেন,ভ্যাকসিন নেই, আনসারও নেই। মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। হাসপাতালের ধারণক্ষমতা বনাম বাস্তবতা উদ্বেগজনক। ২৫০ শয্যার জন্য দিনে ভর্তি রোগী ৩০০+ এবং আউটডোর রোগী ২–৩ হাজার। রোগীরা অভিযোগ করেন, চিকিৎসা নিতে এসে আরও অসুস্থ হয়ে ফিরতে হয়।
মূল সমস্যাসমূহ হলো: দালালচক্র ও রাজনৈতিক প্রভাব, দুর্নীতি ও ঘুষ, জনবল সংকট ও নিরাপত্তাহীনতা, নারীদের প্রতি অবহেলা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাব, ভ্যাকসিন ও চিকিৎসা সরঞ্জামের অপ্রতুলতা। প্রস্তাবিত করণীয়: হাসপাতালের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধি, পর্যাপ্ত ডাক্তার ও নার্স নিয়োগ, দালাল চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ, ভ্যাকসিন ও চিকিৎসা সরঞ্জামের পর্যাপ্ত সরবরাহ, আউটসোর্সিং কর্মীদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিকণ চেষ্টা চলছে, কিন্তু শুধু চিঠি দিয়ে জনগণের আস্থা ফেরানো সম্ভব নয়। শিল্পাঞ্চলের কয়েক লাখ মানুষের ভরসার হাসপাতালকে নিরাপদ, কার্যকর ও রোগমুক্ত করতে এখনই পদক্ষেপ প্রয়োজন।








































































































































































































