টঙ্গীতে শহীদ নাফিসার পরিবারে সমাজকল্যাণ উপদেষ্টার আকস্মিক সফর

- Update Time : ০৮:৩৩:৫১ অপরাহ্ন, শনিবার, ৫ জুলাই ২০২৫
- / ১৩ Time View
গাজীপুরের টঙ্গীর এরশাদনগরে শহীদ নাফিসা হোসেন মারওয়ার পরিবারের পাশে দাঁড়াল সরকার।
শুক্রবার দুপুর আড়াইটায় আকস্মিক সফরে শহীদ পরিবারের বাসায় যান মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমিন মুর্শিদ।
শাহাদাতবরণের প্রায় এক বছর পর এই প্রথম কোনো রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের প্রতিনিধি শহীদ পরিবারের কাছে গিয়ে সরাসরি সাক্ষাৎ করেন।
সফরকালে উপদেষ্টা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দীর্ঘ সময় কথা বলেন এবং ফলমূল ও উপহার সামগ্রী প্রদান করেন এবং পরিবারের পাশে থেকে সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
তিনি বলেন, শহীদদের আত্মত্যাগ ইতিহাসের অংশ এবং রাষ্ট্র তাদের পাশে থাকবে, এটিই সরকারের নীতিগত অবস্থান। এসময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জুলাইে শহীদ হয়েছে অথচ রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি থেকে বঞ্চিত তাহলে আপনারা সাংবাদিকেরা আমাদেরকে প্রমাণসহ দিবেন আমরা যথাযথ তাদেরকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদান করব। এখানে আসার পর শহীদ পরিবারের দাবি ছিল জুলাইয়ের সনদ দেয়া।আমরা চেষ্টা করছি জুলাইয়ের শহীদদের সনদ প্রদান করার জন্য। জুলাইয়ের শহীদ সংখ্যা প্রায় দুই হাজার হলেও আহত সংখ্যা প্রায় বিশ হাজারেরও বেশি। তাই শহীদদের সনদ দেয়া সম্ভব হলে আহত যোদ্ধাদের সনদ নিয়ে আমরা চিন্তিত।
সাংবাদিকদের প্রশ্ন উত্তর শেষে উপদেষ্টা শহীদ নাফিসার কবর পরিদর্শন করেন। এবং মাওলানা আনিসুল মুত্তিকিনের মাধ্যমে শহীদের কবরের পাশে দোয়া মোনাজাত করা হয়।
স্মরণকালে শহীদ নাফিসার এক সময়ের সহপাঠী নাঈম আবেগভরা কণ্ঠে বলেন, নাফিসা শুধু একজন বন্ধু ছিল না, আন্দোলনের প্রেরণা ছিল। তার মতো সাহসিকতা আমাদের চলার পথ দেখায়। নাফিসা হোসেন মারওয়া টঙ্গীর সাহাজউদ্দিন সরকার স্কুল অ্যান্ড কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী ছিলেন। গত বছরের ৫ আগস্ট সাভারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে তিনি নিহত হন। ওই সময় তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৭ বছর। এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ফলাফল প্রকাশের আগেই মৃত্যুবরণ করেন তিনি। পরে জানা যায়, পরীক্ষায় তিনি জিপিএ ৪.২৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। নাফিসার বাবা আবুল হোসেন পেশায় চা বিক্রেতা। মা কুলসুম বেগম কাজ করতেন কুয়েতে। মেয়ের মৃত্যুর খবর শুনে তিনি দেশে ফিরে আসেন। মেয়ের ব্যবহৃত বই, খাতা জড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, মেয়েটা পড়ালেখা শেষ করে আমার সঙ্গে সংসারের হাল ধরতে চেয়েছিল। গ্রাফিক্স ডিজাইনার হওয়ার স্বপ্ন ছিল তার। সেই স্বপ্ন আর কখনো বাস্তব হবে না।
নাফিসার মৃত্যুর দিন তিনি বাবাকে শেষবার ফোন করে বলেন, বাবা, আমি গুলি খেয়েছি, মনে হয় আর বাঁচব না। আমি সাভারের ল্যাব জোন হাসপাতালে আছি, আমার লাশটা নিয়ে যেও। কিছুক্ষণের মধ্যেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। নাফিজার ছোট বোন রাইসা বলেন, আপু সবসময় আমাকে আদর করত। এখন তার স্মৃতি ছাড়া কিছুই নেই। সে আর কখনো আসবে না, এটা ভাবতেই পারি না। নাফিসার বাবা জানান, জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন তাদের পরিবারকে পাঁচ লাখ টাকা এবং অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষ থেকে দশ লাখ টাকার চেক দেওয়া হয়েছে।
তবে তিনি অভিযোগ করেন, সমন্বয়কারীদের বারবার ফোন করেও কোনো সাড়া পাওয়া যায় না। তারা ফোন রিসিভ করেন না, দায়িত্বশীল আচরণ করেন না।
শারমিন মুর্শিদের এই সফরের মাধ্যমে শহীদ পরিবারের পাশে সরকারের আনুষ্ঠানিক উপস্থিতি একটি বড় বার্তা দিয়েছে। পরিবারটি আশাবাদী, সরকার কেবল সফর ও প্রতিশ্রুতিতে থেমে থাকবে না, নাফিসার স্বপ্ন ও আত্মত্যাগের প্রতি প্রকৃত দায়বদ্ধতা দেখাবে।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
জনপ্রিয়