ঢাকা ০৩:৪০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজঃ
ইসরাইলকে পশ্চিম তীর দখল করতে দেবো না: ট্রাম্প শাহরুখ-আরিয়ানের বিরুদ্ধে মামলা, আদালতে খারিজ শাহরুখ-আরিয়ানের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করলেন সমীর ওয়াংখেড়ে চেন্নাইয়ে থালাপতি বিজয়ের সমাবেশে পদপিষ্ট হয়ে ৩৪ জনের মৃত্যু জনগণ যেভাবে চায়, আমাদের সেভাবে চলতে হবে : তারেক রহমান বাদামতলীতে ঢাকা ৭ আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশী রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ মনি’র গণসংযোগ দোলনের চিকিৎসার দায়িত্ব নিলেন তারেক রহমান পাচার হওয়া সম্পদ ফিরিয়ে দেওয়ার আহ্বান ড. ইউনূসের ঢাকা ৭ আসনের মানুষের খাদেম হতে চাই – আলহাজ্ব আব্দুর রহমান টঙ্গীর কেমিক্যাল গুদামে অগ্নিকাণ্ডস্থল পরিদর্শনে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক

টঙ্গীতে লাইসেন্সবিহীন অটো কারখানার দৌরাত্ম্য

মোঃ হানিফ হোসেন, টঙ্গী
  • Update Time : ০৯:৩৬:০৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • / ৯০৭ Time View

টঙ্গীতে লাইসেন্সবিহীন অটো কারখানার দৌরাত্ম্য: জনজীবন বিপন্ন, প্রশাসন অভিযানের ঘোষণা দিলেও বাস্তবতা অনিশ্চিতদ গাজীপুরের টঙ্গী শিল্পাঞ্চল বহু বছর ধরেই দেশের শিল্পবাণিজ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। তবে সম্প্রতি এখানে অবৈধ অটো কারখানার দৌরাত্ম্য ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।

কাঁঠাল দিয়া, বাকরাল, চেরাগআলি, বনমালা ও মিলগেট, , স্কুইড রোড, ফকির মার্কেট, দেওড়া, মুদাফা, এলাকা জুড়ে গড়ে ওঠা এই কারখানাগুলোতে প্রতিদিন হাজার, হাজার অটো তৈরি হচ্ছে। এসব কারখানায় কোনো বৈধ সিটি কর্পোরেশনের লাইসেন্স নেই। অনেক কারখানার মালিক হাইকোর্টের রায়ের দোহাই দিয়ে নিজেদের কার্যক্রমকে বৈধতার আড়াল হিসেবে দেখান।

অন্যদিকে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, সিটি কর্পোরেশন ও থানার কর্মকর্তাদের মাসিকভাবে লাখ লাখ টাকা ঘুষ দেওয়া হয়, যার বিনিময়ে এই কারখানাগুলো টিকে থাকে। টঙ্গী শিল্পাঞ্চলে অবৈধ অটো কারখানার কার্যক্রম শুধু আইন লঙ্ঘনের সমস্যা নয়, বরং এটি সাধারণ মানুষের জীবন ও সড়ক নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি সৃষ্টি করেছে। মহাসড়কে প্রতিনিয়ত ঘটে দুর্ঘটনা। রাস্তায় ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহনের সংখ্যা বাড়ছে। এসব কারখানায় শিশুশ্রম ব্যবহার, স্বাস্থ্যঝুঁকিপূর্ণ রাসায়নিক ও রঙের ব্যবহার, এবং শব্দদূষণ চারপাশের মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। কাঁঠাল দিয়া এলাকার মোমিন সরকার বলেন, এইসব অটো কারখানার মেশিন চলার শব্দে রাত-দিন আমরা ঘুমাতে পারি না। পরিবারসহ শান্তিতে থাকা কঠিন হয়ে গেছে।

টঙ্গী পাইলট স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র পাভেল জানান, অটো তৈরিতে ব্যবহৃত রং ও কেমিক্যালের কারণে আমাদের শ্বাসকষ্ট হয়। হাঁপানি ও অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। চেরাগআলির বাসিন্দা নুরুজ্জামান বলেন, রাস্তার মধ্যে এই অটোর কারণে চলাচল করা দায় হয়ে গেছে। প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে।

বনমালা এলাকার গৃহিণী মমতাজ বেগম বলেন, রাত-দিন বিকট শব্দে ঘুম ভেঙে যায়। কারখানার মালিকরা কথা বললে সন্ত্রাসী আচরণ করে। অবৈধ অটো কারখানার মালিকরা বিভিন্ন যুক্তি দেখান। বিশ্ব ওলি খাজা বাবা ফরিদপুরী সাইকেল স্টোরের মালিক মাহবুবুর রহমান শামীম দাবি করেন, হাইকোর্টের একটি রায় আমাদের হাতে আছে। সেই রায়ের ভিত্তিতে আমরা অটো তৈরি করছি। বিএম কর্পোরেশনের মালিক ওহিদুল ইসলামও বলেন, হাইকোর্টের রায়ের ভিত্তিতে আমরা অটো তৈরি করছি। তবে সিটি কর্পোরেশনের অনুমতি নেই।

অন্যদিকে, শাকিল অটো কারখানার মালিক তরিকুল ইসলাম বলেন, আমরা কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছি। বেকারদের কর্মসংস্থান দিচ্ছি এবং দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছি।

তবে মালিকদের এই যুক্তি সঙ্গতিপূর্ণ নয়। স্থানীয়রা বলছেন, কর্মসংস্থানের আড়ালে চলছে অবৈধ কার্যক্রম, বিদ্যুৎ চুরি, কর ফাঁকি এবং শিশুশ্রম। অধিকাংশ কারখানায় আবাসিক মিটার ব্যবহার করে বাণিজ্যিক বিদ্যুৎ নেওয়া হয়, যা সরকারের রাজস্ব ক্ষতি করছে। এ ছাড়াও, মানহীন অটো তৈরি হওয়ায় মহাসড়কে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটছে। স্থানীয় সূত্রে অভিযোগ, এসব কারখানা মাসিক লাখ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে টিকে থাকে। সিটি কর্পোরেশনকে এই মাসে কয়েক লাখ টাকা এবং থানায় প্রতি মাসে তিন লাখ টাকা দেওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে। তবে এই অভিযোগের সরাসরি প্রমাণ পাওয়া যায়নি। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের টঙ্গী অঞ্চলের রেভিনিউ কর্মকর্তা ইমরান এইচ সরকার এ অভিযোগকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, এটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও বানোয়াট। সিটি কর্পোরেশন কখনো অবৈধভাবে টাকা গ্রহণ করে না।

টঙ্গী পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি হারুনুর রশিদও বলেছেন, আমরা কোনো প্রকার চাঁদা নিই না। তবে যদি সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অভিযান চালান, আমরা সহযোগিতা করব।

প্রশাসন বারবার অভিযান চালানোর ঘোষণা দিলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দীর্ঘমেয়াদে দেখা যায়নি। কয়েক বছর পরপর পরিচালিত অভিযানেও কয়েকটি কারখানা বন্ধ হয়, কিন্তু পরে আবার নতুন করে চালু হয়ে যায়। এই অবস্থায় স্থানীয়রা হতাশ। তারা জানতে চাইছেন, এবার কি সত্যিই প্রশাসন কঠোর হবে, নাকি এই অবৈধ কার্যক্রম চলতেই থাকবে। শিশুশ্রমের প্রসঙ্গ বিশেষভাবে উদ্বেগজনক। কারখানায় অল্প বয়সী শিশুদের ঝালাই, রঙ মেশানো, কাঁচামাল বহন, মেশিনের পাশে কাজ করতে বাধ্য করা হয়। এটি শিশুদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। পাশাপাশি রাসায়নিকের গন্ধ ও ধোঁয়া শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, চামড়ার সমস্যা এবং অন্যান্য রোগের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। মালিকরা নিজেদের বৈধতার আড়াল হিসেবে হাইকোর্টের রায় দেখান, কিন্তু প্রশাসন জানাচ্ছে, রায়ের কপি তাদের কাছে নেই। সিটি কর্পোরেশনের অনুমোদন ছাড়া এই রায়ের ভিত্তিতে কারখানা চালানো বৈধ নয়। এ অবস্থায় আইন এবং আদালতের নির্দেশের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, এসব কারখানা থেকে তৈরি অটো সারা দেশে বিতরণ করা হয়। মানহীন অটো ব্যবহারের ফলে মহাসড়কে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। সাধারণ মানুষ রাস্তায় নিরাপদে চলাচল করতে পারছে না। শিশু, বৃদ্ধ, নারী—সবাই ঝুঁকির মধ্যে। বিদ্যুৎ চুরি ও কর ফাঁকি ছাড়া এই কারখানাগুলোতে শব্দদূষণও ভয়াবহ মাত্রায়। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, রাত-দিন কটকট শব্দে ঘুম ভেঙে যায়, মনমতো কাজ করা সম্ভব নয়। সিটি কর্পোরেশনের অভিযানের ঘোষণা হলেও বাস্তবে কতটা কার্যকর হবে তা অনিশ্চিত। টঙ্গীর অবৈধ অটো কারখানার বিস্তার শুধুমাত্র একটি স্থানীয় সমস্যা নয়, এটি একটি জাতীয় নিরাপত্তা, অর্থনীতি ও জনস্বাস্থ্যের সংকট। প্রশাসনের অভিযান ছাড়া এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। জনসাধারণ আশা করছে, এবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সিটি কর্পোরেশন যৌথভাবে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে। কার্যকর ব্যবস্থা ছাড়া টঙ্গী ভবিষ্যতে একটি “অটো সাম্রাজ্য”তে পরিণত হবে, যেখানে দুর্ঘটনা, শিশু স্বাস্থ্যঝুঁকি এবং কর-রাজস্ব ক্ষতি দম বন্ধ করবে।

Please Share This Post in Your Social Media

টঙ্গীতে লাইসেন্সবিহীন অটো কারখানার দৌরাত্ম্য

মোঃ হানিফ হোসেন, টঙ্গী
Update Time : ০৯:৩৬:০৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

টঙ্গীতে লাইসেন্সবিহীন অটো কারখানার দৌরাত্ম্য: জনজীবন বিপন্ন, প্রশাসন অভিযানের ঘোষণা দিলেও বাস্তবতা অনিশ্চিতদ গাজীপুরের টঙ্গী শিল্পাঞ্চল বহু বছর ধরেই দেশের শিল্পবাণিজ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। তবে সম্প্রতি এখানে অবৈধ অটো কারখানার দৌরাত্ম্য ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।

কাঁঠাল দিয়া, বাকরাল, চেরাগআলি, বনমালা ও মিলগেট, , স্কুইড রোড, ফকির মার্কেট, দেওড়া, মুদাফা, এলাকা জুড়ে গড়ে ওঠা এই কারখানাগুলোতে প্রতিদিন হাজার, হাজার অটো তৈরি হচ্ছে। এসব কারখানায় কোনো বৈধ সিটি কর্পোরেশনের লাইসেন্স নেই। অনেক কারখানার মালিক হাইকোর্টের রায়ের দোহাই দিয়ে নিজেদের কার্যক্রমকে বৈধতার আড়াল হিসেবে দেখান।

অন্যদিকে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, সিটি কর্পোরেশন ও থানার কর্মকর্তাদের মাসিকভাবে লাখ লাখ টাকা ঘুষ দেওয়া হয়, যার বিনিময়ে এই কারখানাগুলো টিকে থাকে। টঙ্গী শিল্পাঞ্চলে অবৈধ অটো কারখানার কার্যক্রম শুধু আইন লঙ্ঘনের সমস্যা নয়, বরং এটি সাধারণ মানুষের জীবন ও সড়ক নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি সৃষ্টি করেছে। মহাসড়কে প্রতিনিয়ত ঘটে দুর্ঘটনা। রাস্তায় ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহনের সংখ্যা বাড়ছে। এসব কারখানায় শিশুশ্রম ব্যবহার, স্বাস্থ্যঝুঁকিপূর্ণ রাসায়নিক ও রঙের ব্যবহার, এবং শব্দদূষণ চারপাশের মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। কাঁঠাল দিয়া এলাকার মোমিন সরকার বলেন, এইসব অটো কারখানার মেশিন চলার শব্দে রাত-দিন আমরা ঘুমাতে পারি না। পরিবারসহ শান্তিতে থাকা কঠিন হয়ে গেছে।

টঙ্গী পাইলট স্কুল অ্যান্ড কলেজের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র পাভেল জানান, অটো তৈরিতে ব্যবহৃত রং ও কেমিক্যালের কারণে আমাদের শ্বাসকষ্ট হয়। হাঁপানি ও অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। চেরাগআলির বাসিন্দা নুরুজ্জামান বলেন, রাস্তার মধ্যে এই অটোর কারণে চলাচল করা দায় হয়ে গেছে। প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে।

বনমালা এলাকার গৃহিণী মমতাজ বেগম বলেন, রাত-দিন বিকট শব্দে ঘুম ভেঙে যায়। কারখানার মালিকরা কথা বললে সন্ত্রাসী আচরণ করে। অবৈধ অটো কারখানার মালিকরা বিভিন্ন যুক্তি দেখান। বিশ্ব ওলি খাজা বাবা ফরিদপুরী সাইকেল স্টোরের মালিক মাহবুবুর রহমান শামীম দাবি করেন, হাইকোর্টের একটি রায় আমাদের হাতে আছে। সেই রায়ের ভিত্তিতে আমরা অটো তৈরি করছি। বিএম কর্পোরেশনের মালিক ওহিদুল ইসলামও বলেন, হাইকোর্টের রায়ের ভিত্তিতে আমরা অটো তৈরি করছি। তবে সিটি কর্পোরেশনের অনুমতি নেই।

অন্যদিকে, শাকিল অটো কারখানার মালিক তরিকুল ইসলাম বলেন, আমরা কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছি। বেকারদের কর্মসংস্থান দিচ্ছি এবং দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখছি।

তবে মালিকদের এই যুক্তি সঙ্গতিপূর্ণ নয়। স্থানীয়রা বলছেন, কর্মসংস্থানের আড়ালে চলছে অবৈধ কার্যক্রম, বিদ্যুৎ চুরি, কর ফাঁকি এবং শিশুশ্রম। অধিকাংশ কারখানায় আবাসিক মিটার ব্যবহার করে বাণিজ্যিক বিদ্যুৎ নেওয়া হয়, যা সরকারের রাজস্ব ক্ষতি করছে। এ ছাড়াও, মানহীন অটো তৈরি হওয়ায় মহাসড়কে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটছে। স্থানীয় সূত্রে অভিযোগ, এসব কারখানা মাসিক লাখ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে টিকে থাকে। সিটি কর্পোরেশনকে এই মাসে কয়েক লাখ টাকা এবং থানায় প্রতি মাসে তিন লাখ টাকা দেওয়ার কথা শোনা যাচ্ছে। তবে এই অভিযোগের সরাসরি প্রমাণ পাওয়া যায়নি। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের টঙ্গী অঞ্চলের রেভিনিউ কর্মকর্তা ইমরান এইচ সরকার এ অভিযোগকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, এটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও বানোয়াট। সিটি কর্পোরেশন কখনো অবৈধভাবে টাকা গ্রহণ করে না।

টঙ্গী পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি হারুনুর রশিদও বলেছেন, আমরা কোনো প্রকার চাঁদা নিই না। তবে যদি সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট অভিযান চালান, আমরা সহযোগিতা করব।

প্রশাসন বারবার অভিযান চালানোর ঘোষণা দিলেও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ দীর্ঘমেয়াদে দেখা যায়নি। কয়েক বছর পরপর পরিচালিত অভিযানেও কয়েকটি কারখানা বন্ধ হয়, কিন্তু পরে আবার নতুন করে চালু হয়ে যায়। এই অবস্থায় স্থানীয়রা হতাশ। তারা জানতে চাইছেন, এবার কি সত্যিই প্রশাসন কঠোর হবে, নাকি এই অবৈধ কার্যক্রম চলতেই থাকবে। শিশুশ্রমের প্রসঙ্গ বিশেষভাবে উদ্বেগজনক। কারখানায় অল্প বয়সী শিশুদের ঝালাই, রঙ মেশানো, কাঁচামাল বহন, মেশিনের পাশে কাজ করতে বাধ্য করা হয়। এটি শিশুদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। পাশাপাশি রাসায়নিকের গন্ধ ও ধোঁয়া শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, চামড়ার সমস্যা এবং অন্যান্য রোগের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। মালিকরা নিজেদের বৈধতার আড়াল হিসেবে হাইকোর্টের রায় দেখান, কিন্তু প্রশাসন জানাচ্ছে, রায়ের কপি তাদের কাছে নেই। সিটি কর্পোরেশনের অনুমোদন ছাড়া এই রায়ের ভিত্তিতে কারখানা চালানো বৈধ নয়। এ অবস্থায় আইন এবং আদালতের নির্দেশের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, এসব কারখানা থেকে তৈরি অটো সারা দেশে বিতরণ করা হয়। মানহীন অটো ব্যবহারের ফলে মহাসড়কে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। সাধারণ মানুষ রাস্তায় নিরাপদে চলাচল করতে পারছে না। শিশু, বৃদ্ধ, নারী—সবাই ঝুঁকির মধ্যে। বিদ্যুৎ চুরি ও কর ফাঁকি ছাড়া এই কারখানাগুলোতে শব্দদূষণও ভয়াবহ মাত্রায়। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, রাত-দিন কটকট শব্দে ঘুম ভেঙে যায়, মনমতো কাজ করা সম্ভব নয়। সিটি কর্পোরেশনের অভিযানের ঘোষণা হলেও বাস্তবে কতটা কার্যকর হবে তা অনিশ্চিত। টঙ্গীর অবৈধ অটো কারখানার বিস্তার শুধুমাত্র একটি স্থানীয় সমস্যা নয়, এটি একটি জাতীয় নিরাপত্তা, অর্থনীতি ও জনস্বাস্থ্যের সংকট। প্রশাসনের অভিযান ছাড়া এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। জনসাধারণ আশা করছে, এবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সিটি কর্পোরেশন যৌথভাবে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে। কার্যকর ব্যবস্থা ছাড়া টঙ্গী ভবিষ্যতে একটি “অটো সাম্রাজ্য”তে পরিণত হবে, যেখানে দুর্ঘটনা, শিশু স্বাস্থ্যঝুঁকি এবং কর-রাজস্ব ক্ষতি দম বন্ধ করবে।