ঢাকা ০৬:৫৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫, ১৬ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

টঙ্গীতে ডাইং কারখানায় কেমিক্যালে দগ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ১

মোঃ হানিফ হোসেন
  • Update Time : ১১:৩৯:১৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ জুলাই ২০২৫
  • / ১১৪ Time View

গাজীপুরের টঙ্গীর ভাদাম এলাকায় তামিশনা গ্রুপের ইটাফিল ডাইং অ্যান্ড এক্সসরিজ লিমিটেড কারখানায় ডাইং মেশিনের ফুটন্ত কেমিক্যালযুক্ত পানিতে দগ্ধ হয়ে আব্দুল কুদ্দুস (১৯) নামের এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। একই ঘটনায় ইসমাইল (৩২) নামের আরেকজন শ্রমিক মারাত্মক দগ্ধ হয়ে বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে কারখানার নিচতলায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত কুদ্দুস কুড়িগ্রামের চিলমারী থানার রমনা মিস্ত্রীপাড়ার বাসিন্দা। তিনি কারখানায় সহকারী অপারেটর হিসেবে কর্মরত ছিলেন এবং স্থানীয় আলী আকবরের বাসায় ভাড়া থাকতেন।

দুর্ঘটনার বিবরণ ও মৃত্যুর সময়

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সকালের শিফটে কাজ করার সময় হঠাৎ একটি চলমান ডাইং মেশিনের ঢাকনা খুলে গেলে ফুটন্ত কেমিক্যালযুক্ত পানি ছিটকে পড়ে আব্দুল কুদ্দুস ও ইসমাইলের শরীরে। পরে গুরুতর দগ্ধ কুদ্দুসকে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হলে বিকেল ৩টা ৫০ মিনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। দগ্ধ অপর শ্রমিক ইসমাইলকে ভর্তি করা হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, তার অবস্থাও আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।

ধামাচাপার অভিযোগ ও পুলিশের বক্তব্য

নিহতের পরিবার অভিযোগ করেছে, কারখানা কর্তৃপক্ষ ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে এবং কুদ্দুসের মরদেহ গোপনে হাসপাতাল থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি শাহবাগ থানা পুলিশকে জানালে, জিডি নম্বর ২০৮১, তারিখ ২৯/০৭/২০২৫ অনুযায়ী টঙ্গী পশ্চিম থানা পুলিশকে জানানো হয়। নিহতের বোন মোছাঃ আলো আক্তার থানায় লিখিতভাবে বিষয়টি জানান।

টঙ্গী পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইস্কান্দার হাবিব বলেন, ঘটনার পরপরই আমাদের পুলিশ অফিসার পাঠিয়ে তদন্ত করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কেউ লিখিত অভিযোগ না দেওয়ায় আমরা একটি অপমৃত্যু মামলা নিয়েছি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

শ্রমিক অসন্তোষ ও আন্দোলনের আশঙ্কা

এদিকে ঘটনার পর থেকেই কারখানার শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ ও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টাকে কেন্দ্র করে আগামীকাল (৩০ জুলাই) সকালে শ্রমিক আন্দোলনের আশঙ্কা রয়েছে। স্থানীয়ভাবে জানা যায়, এর আগেও এই কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণ ও গরম পানিতে দগ্ধ হয়ে একাধিক শ্রমিক হতাহত হয়েছেন। তবে নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘাটতির বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় ক্ষোভ বাড়ছে শ্রমিকদের মধ্যে।

Please Share This Post in Your Social Media

টঙ্গীতে ডাইং কারখানায় কেমিক্যালে দগ্ধ হয়ে শ্রমিকের মৃত্যু, আহত ১

মোঃ হানিফ হোসেন
Update Time : ১১:৩৯:১৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ জুলাই ২০২৫

গাজীপুরের টঙ্গীর ভাদাম এলাকায় তামিশনা গ্রুপের ইটাফিল ডাইং অ্যান্ড এক্সসরিজ লিমিটেড কারখানায় ডাইং মেশিনের ফুটন্ত কেমিক্যালযুক্ত পানিতে দগ্ধ হয়ে আব্দুল কুদ্দুস (১৯) নামের এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। একই ঘটনায় ইসমাইল (৩২) নামের আরেকজন শ্রমিক মারাত্মক দগ্ধ হয়ে বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে কারখানার নিচতলায় এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত কুদ্দুস কুড়িগ্রামের চিলমারী থানার রমনা মিস্ত্রীপাড়ার বাসিন্দা। তিনি কারখানায় সহকারী অপারেটর হিসেবে কর্মরত ছিলেন এবং স্থানীয় আলী আকবরের বাসায় ভাড়া থাকতেন।

দুর্ঘটনার বিবরণ ও মৃত্যুর সময়

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সকালের শিফটে কাজ করার সময় হঠাৎ একটি চলমান ডাইং মেশিনের ঢাকনা খুলে গেলে ফুটন্ত কেমিক্যালযুক্ত পানি ছিটকে পড়ে আব্দুল কুদ্দুস ও ইসমাইলের শরীরে। পরে গুরুতর দগ্ধ কুদ্দুসকে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হলে বিকেল ৩টা ৫০ মিনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। দগ্ধ অপর শ্রমিক ইসমাইলকে ভর্তি করা হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, তার অবস্থাও আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।

ধামাচাপার অভিযোগ ও পুলিশের বক্তব্য

নিহতের পরিবার অভিযোগ করেছে, কারখানা কর্তৃপক্ষ ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে এবং কুদ্দুসের মরদেহ গোপনে হাসপাতাল থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি শাহবাগ থানা পুলিশকে জানালে, জিডি নম্বর ২০৮১, তারিখ ২৯/০৭/২০২৫ অনুযায়ী টঙ্গী পশ্চিম থানা পুলিশকে জানানো হয়। নিহতের বোন মোছাঃ আলো আক্তার থানায় লিখিতভাবে বিষয়টি জানান।

টঙ্গী পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইস্কান্দার হাবিব বলেন, ঘটনার পরপরই আমাদের পুলিশ অফিসার পাঠিয়ে তদন্ত করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কেউ লিখিত অভিযোগ না দেওয়ায় আমরা একটি অপমৃত্যু মামলা নিয়েছি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

শ্রমিক অসন্তোষ ও আন্দোলনের আশঙ্কা

এদিকে ঘটনার পর থেকেই কারখানার শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভ ও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টাকে কেন্দ্র করে আগামীকাল (৩০ জুলাই) সকালে শ্রমিক আন্দোলনের আশঙ্কা রয়েছে। স্থানীয়ভাবে জানা যায়, এর আগেও এই কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণ ও গরম পানিতে দগ্ধ হয়ে একাধিক শ্রমিক হতাহত হয়েছেন। তবে নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘাটতির বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় ক্ষোভ বাড়ছে শ্রমিকদের মধ্যে।