ঢাকা ১২:৫০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৫, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

টঙ্গীতে জীবিত নবজাতককে মাটি চাপা দেওয়ার ঘটনায় নতুন বিতর্ক

মো : হানিফ হোসেন
  • Update Time : ০৯:৪৬:৫৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫
  • / ৫৫ Time View

গাজীপুরের টঙ্গীর মুরকুন মধ্যপাড়ায় এলাকায় মাটি চাপা দেওয়া নবজাতককে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করার ঘটনার পর আজ নতুন করে তীব্র ক্ষোভ ও বিতর্ক ছড়িয়ে পড়েছে। গতকাল ভোরে যে নবজাতকের ক্ষীণ কান্না শুনে স্থানীয়রা মাটি খুঁড়ে তাকে উদ্ধার করেন সে শিশুটি এখন সুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। কিন্তু আজ পুরো এলাকার ক্ষোভের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে নবজাতকের চিকিৎসা নয়, বরং নেশাগ্রস্ত অভিযোগে থাকা বাবা-মাকে পুলিশের পক্ষ থেকে আর্থিক অনুদান দেওয়া।

গতকাল সকালে মাটি খুঁড়ে শিশুটিকে উদ্ধার করার পর স্থানীয় এক নিঃসন্তান নারী তাকে দত্তক নিয়ে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করেন। নবজাতক এখন সম্পূর্ণ নিরাপদ। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন যতটা ভয়াবহ অবস্থায় শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়েছিল, তার তুলনায় সে এখন আশ্চর্যজনকভাবে স্থিতিশীল।স্থানীয়দের ভাষায় আল্লাহর রহমত না হলে বাচ্চাটা তো বাঁচতই না। কান্নাটা যদি আমরা না শুনতাম, শিশুটির জীবনটাই শেষ হয়ে যেত।

এদিকে বাবা-মা স্বপন ও খালেদা পুলিশকে প্রথমে দাবি করেছিলেন, শিশু জন্মের পর মারা গিয়েছিল। তারা দুজনেই অসুস্থ ছিলেন এবং মানসিকভাবে ভয় পেয়ে গিয়ে কাউকে না জানিয়ে বাড়ির পাশে গর্ত করে শিশুটিকে মাটি চাপা দেন। গতকাল পুলিশও এই বক্তব্যকে ভিত্তি ধরে ঘটনাটিকে ‘অসহায়ত্ব’ হিসেবে দেখে মানবিক আচরণ করে। পুলিশের ভাষায়—“মা খুবই দুর্বল ছিল, বাবা অসহায়। তাই প্রথমে কোনো আইনগত ব্যবস্থা না নিয়ে মানবিক কারণে তাদের পাশে দাঁড়ানো হয়েছে। কিন্তু আজ এলাকাবাসী পুলিশের এই অবস্থানের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। কারণ তাদের দাবি ওরা অসুস্থ নয়, নেশাগ্রস্ত। সব সময় নেশা করে।

নেশা না করলে কেউ জীবিত বাচ্চাকে মাটি চাপা দেয়? এলাকাবাসীর অভিযোগ স্বপন ও খালেদা বছরের পর বছর নেশার মধ্যে থাকে, এবং শিশুটিকে মাটি চাপা দেওয়ার ঘটনাটিও নেশার প্রভাবে ঘটেছে। তারা আরও দাবি করেছে পরিবারের রক্ত পরীক্ষা, নেশা পরীক্ষা এবং মানসিক অবস্থার পূর্ণ তদন্ত না করে কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়া উচিত নয়। কিন্তু যে বিষয়টি আজ সবচেয়ে বড় বিতর্ক সৃষ্টি করেছে তা হলো পুলিশের পক্ষ থেকে এই নেশাগ্রস্ত অভিযোগে থাকা বাবা-মাকে ১৫ হাজার টাকা অনুদান দেওয়া। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিসি ক্রাইম মহিউদ্দিন আহমেদ আজ দুপুরে জানান মানবিক কারণে বাবা-মাকে ১৫ হাজার টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে। তারা অসহায়, তাই আমরা সাহায্যের হাত বাড়িয়েছি।

এ কথা শোনার পরই এলাকাবাসী ক্ষোভে ফেটে পড়ে। তাদের দাবি যে লোক নিজের বাচ্চাকে মাটির নিচে চাপা দেয়, তাকে কেন অনুদান দেওয়া হলো? বাচ্চাটা তো জীবিত! যে মহিলা বাচ্চাটাকে বাঁচিয়ে হাসপাতালে নিয়ে গেছে, পুলিশ কি তার পাশে দাঁড়ানো উচিত ছিল না? শিশুটির চিকিৎসার খরচে সাহায্য করল না কেন? নবজাতকের জন্য অনুদান না দিয়ে নেশাগ্রস্ত বাবা-মাকে টাকা দেওয়া মানে আরও নেশা করার সুযোগ দেওয়া। এলাকায় আজ বিকেল থেকে উত্তেজনা চরমে উঠেছে। অনেকে বিক্ষোভ করেছে এবং বারবার পুলিশকে প্রশ্ন করেছে নবজাতকের জীবনের মূল্য কি একটি মানবিক সিদ্ধান্তের চেয়েও কম? শিশুটি জীবিত থাকা সত্ত্বেও বাবা-মাকে অনুদান দেওয়াকে তারা ‘ভুল ও বিপরীতমুখী সিদ্ধান্ত’ বলে দাবি করছে। পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে এলাকাবাসীর অভিযোগ গুরুত্বসহকারে তদন্ত করা হবে।

পুলিশের ভাষায় গতকাল আমরা পরিবারটির বক্তব্য অনুযায়ী মানবিক পদক্ষেপ নিয়েছি। কিন্তু আজ যেসব অভিযোগ এসেছে নেশাগ্রস্ত হওয়া, শিশুর প্রতি অবহেলা, গোপনে মাটি চাপা সবগুলো বিষয় এখন নতুন করে তদন্তে নেওয়া হবে। প্রয়োজন হলে চিকিৎসা পরীক্ষা ও নেশা পরীক্ষা করা হবে। শিশুটি এখন নিরাপদ, কিন্তু তার জন্মের প্রথম দিনটি যেন একটি অন্ধকার রহস্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। কে সত্য বলছে অসহায় বাবা-মা, নাকি নেশাগ্রস্ত অভিযোগ তোলা এলাকাবাসী? শিশুটি আদৌ মারা গিয়েছিল, নাকি জন্মের পর বেঁচে ছিল এ প্রশ্ন আজও স্পষ্ট হয়নি। তবে একটি জিনিস পরিষ্কার—নবজাতকের জীবন বাঁচানো মহিলা এবং স্থানীয়দের জন্যই আজ সে বেঁচে আছে। কিন্তু তার চিকিৎসায় সহযোগিতা না করে, বরং যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তাদের হাতে অনুদান তুলে দেওয়ায় এলাকায় ক্ষোভের আগুন থামছে না। পুরো টঙ্গী এখন এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে একটি নিষ্পাপ জীবনের মূল্য কোথায়, আর মানবিকতা কোথায় দাঁড়িয়ে?

Please Share This Post in Your Social Media

টঙ্গীতে জীবিত নবজাতককে মাটি চাপা দেওয়ার ঘটনায় নতুন বিতর্ক

মো : হানিফ হোসেন
Update Time : ০৯:৪৬:৫৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫

গাজীপুরের টঙ্গীর মুরকুন মধ্যপাড়ায় এলাকায় মাটি চাপা দেওয়া নবজাতককে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করার ঘটনার পর আজ নতুন করে তীব্র ক্ষোভ ও বিতর্ক ছড়িয়ে পড়েছে। গতকাল ভোরে যে নবজাতকের ক্ষীণ কান্না শুনে স্থানীয়রা মাটি খুঁড়ে তাকে উদ্ধার করেন সে শিশুটি এখন সুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। কিন্তু আজ পুরো এলাকার ক্ষোভের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে নবজাতকের চিকিৎসা নয়, বরং নেশাগ্রস্ত অভিযোগে থাকা বাবা-মাকে পুলিশের পক্ষ থেকে আর্থিক অনুদান দেওয়া।

গতকাল সকালে মাটি খুঁড়ে শিশুটিকে উদ্ধার করার পর স্থানীয় এক নিঃসন্তান নারী তাকে দত্তক নিয়ে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করেন। নবজাতক এখন সম্পূর্ণ নিরাপদ। চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন যতটা ভয়াবহ অবস্থায় শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়েছিল, তার তুলনায় সে এখন আশ্চর্যজনকভাবে স্থিতিশীল।স্থানীয়দের ভাষায় আল্লাহর রহমত না হলে বাচ্চাটা তো বাঁচতই না। কান্নাটা যদি আমরা না শুনতাম, শিশুটির জীবনটাই শেষ হয়ে যেত।

এদিকে বাবা-মা স্বপন ও খালেদা পুলিশকে প্রথমে দাবি করেছিলেন, শিশু জন্মের পর মারা গিয়েছিল। তারা দুজনেই অসুস্থ ছিলেন এবং মানসিকভাবে ভয় পেয়ে গিয়ে কাউকে না জানিয়ে বাড়ির পাশে গর্ত করে শিশুটিকে মাটি চাপা দেন। গতকাল পুলিশও এই বক্তব্যকে ভিত্তি ধরে ঘটনাটিকে ‘অসহায়ত্ব’ হিসেবে দেখে মানবিক আচরণ করে। পুলিশের ভাষায়—“মা খুবই দুর্বল ছিল, বাবা অসহায়। তাই প্রথমে কোনো আইনগত ব্যবস্থা না নিয়ে মানবিক কারণে তাদের পাশে দাঁড়ানো হয়েছে। কিন্তু আজ এলাকাবাসী পুলিশের এই অবস্থানের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। কারণ তাদের দাবি ওরা অসুস্থ নয়, নেশাগ্রস্ত। সব সময় নেশা করে।

নেশা না করলে কেউ জীবিত বাচ্চাকে মাটি চাপা দেয়? এলাকাবাসীর অভিযোগ স্বপন ও খালেদা বছরের পর বছর নেশার মধ্যে থাকে, এবং শিশুটিকে মাটি চাপা দেওয়ার ঘটনাটিও নেশার প্রভাবে ঘটেছে। তারা আরও দাবি করেছে পরিবারের রক্ত পরীক্ষা, নেশা পরীক্ষা এবং মানসিক অবস্থার পূর্ণ তদন্ত না করে কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়া উচিত নয়। কিন্তু যে বিষয়টি আজ সবচেয়ে বড় বিতর্ক সৃষ্টি করেছে তা হলো পুলিশের পক্ষ থেকে এই নেশাগ্রস্ত অভিযোগে থাকা বাবা-মাকে ১৫ হাজার টাকা অনুদান দেওয়া। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিসি ক্রাইম মহিউদ্দিন আহমেদ আজ দুপুরে জানান মানবিক কারণে বাবা-মাকে ১৫ হাজার টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে। তারা অসহায়, তাই আমরা সাহায্যের হাত বাড়িয়েছি।

এ কথা শোনার পরই এলাকাবাসী ক্ষোভে ফেটে পড়ে। তাদের দাবি যে লোক নিজের বাচ্চাকে মাটির নিচে চাপা দেয়, তাকে কেন অনুদান দেওয়া হলো? বাচ্চাটা তো জীবিত! যে মহিলা বাচ্চাটাকে বাঁচিয়ে হাসপাতালে নিয়ে গেছে, পুলিশ কি তার পাশে দাঁড়ানো উচিত ছিল না? শিশুটির চিকিৎসার খরচে সাহায্য করল না কেন? নবজাতকের জন্য অনুদান না দিয়ে নেশাগ্রস্ত বাবা-মাকে টাকা দেওয়া মানে আরও নেশা করার সুযোগ দেওয়া। এলাকায় আজ বিকেল থেকে উত্তেজনা চরমে উঠেছে। অনেকে বিক্ষোভ করেছে এবং বারবার পুলিশকে প্রশ্ন করেছে নবজাতকের জীবনের মূল্য কি একটি মানবিক সিদ্ধান্তের চেয়েও কম? শিশুটি জীবিত থাকা সত্ত্বেও বাবা-মাকে অনুদান দেওয়াকে তারা ‘ভুল ও বিপরীতমুখী সিদ্ধান্ত’ বলে দাবি করছে। পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে এলাকাবাসীর অভিযোগ গুরুত্বসহকারে তদন্ত করা হবে।

পুলিশের ভাষায় গতকাল আমরা পরিবারটির বক্তব্য অনুযায়ী মানবিক পদক্ষেপ নিয়েছি। কিন্তু আজ যেসব অভিযোগ এসেছে নেশাগ্রস্ত হওয়া, শিশুর প্রতি অবহেলা, গোপনে মাটি চাপা সবগুলো বিষয় এখন নতুন করে তদন্তে নেওয়া হবে। প্রয়োজন হলে চিকিৎসা পরীক্ষা ও নেশা পরীক্ষা করা হবে। শিশুটি এখন নিরাপদ, কিন্তু তার জন্মের প্রথম দিনটি যেন একটি অন্ধকার রহস্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। কে সত্য বলছে অসহায় বাবা-মা, নাকি নেশাগ্রস্ত অভিযোগ তোলা এলাকাবাসী? শিশুটি আদৌ মারা গিয়েছিল, নাকি জন্মের পর বেঁচে ছিল এ প্রশ্ন আজও স্পষ্ট হয়নি। তবে একটি জিনিস পরিষ্কার—নবজাতকের জীবন বাঁচানো মহিলা এবং স্থানীয়দের জন্যই আজ সে বেঁচে আছে। কিন্তু তার চিকিৎসায় সহযোগিতা না করে, বরং যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তাদের হাতে অনুদান তুলে দেওয়ায় এলাকায় ক্ষোভের আগুন থামছে না। পুরো টঙ্গী এখন এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে একটি নিষ্পাপ জীবনের মূল্য কোথায়, আর মানবিকতা কোথায় দাঁড়িয়ে?