টঙ্গীতে কেমিক্যাল গুদামে অগ্নিকাণ্ডে চারজনের মৃত্যু, মালিকদের বিরুদ্ধে মামলা

- Update Time : ১০:২১:৫৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
- / ৭৬ Time View
গাজীপুরের টঙ্গীর সাহারা মার্কেট এলাকায় ফেমাস কেমিক্যাল লিমিটেডের রাসায়নিক গুদামে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে চারজনের মৃত্যুর ঘটনায় অবশেষে গুদামের মালিকদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা জোন-৩ এর উপ-সহকারী পরিচালক আব্দুল মান্নান বাদী হয়ে রবিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) টঙ্গী পূর্ব থানায় মামলাটি করেন। মামলায় গুদামের চার মালিক ইসমাইল হোসেন (৪২), সোলাইমান (৩৫), তাজুল ইসলাম (৪০) ও রাকিব (৩৮)-এর নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ১৫-২০ জনকে আসামি করা হয়েছে। তবে মামলা দায়েরের পর থেকেই আসামিরা পলাতক রয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
গত সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সাহারা মার্কেট এলাকার ওই গুদামে আগুন লাগে। প্রায় এক ঘণ্টার চেষ্টায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনলেও প্রাণহানি ঠেকানো যায়নি। আগুন নেভাতে গিয়ে দগ্ধ হয়ে মারা যান ফায়ার সার্ভিসের ফায়ার ওয়্যারহাউজ ইন্সপেক্টর খন্দকার জান্নাতুল নাঈম, ফায়ার ফাইটার শামীম আহমেদ ও নুরুল হুদা। এছাড়া পার্শ্ববর্তী দোকানের কর্মচারী বাবু হাওলাদার (২০) অগ্নিদগ্ধ হয়ে প্রাণ হারান। প্রথমে সবাইকে উদ্ধার করে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে নেওয়া হলেও চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাদের মৃত্যু হয়। এভাবে চারজনের প্রাণহানি গোটা এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। গুদামের ভেতরে থাকা বিপুল পরিমাণ দাহ্য কেমিক্যাল পুড়ে ছাই হয়ে যায় এবং আশপাশের বেশ কয়েকটি দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, দুর্ঘটনার পর থেকে তারা এখনও স্বাভাবিকভাবে ব্যবসা শুরু করতে পারেননি।
ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, অগ্নিকাণ্ডের সাতদিন পরেও গুদাম থেকে বিষাক্ত গ্যাস নির্গত হচ্ছে। এই গ্যাস মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। ফলে ঘটনাস্থলের একশ মিটারের মধ্যে জনসাধারণের চলাচলে সতর্কতা জারি করা হয়েছে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা এড়িয়ে চলার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এ ঘটনায় টঙ্গী ফায়ার সার্ভিসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা শাহিন আলম বলেন, গুদামের মালিকদের আসামি করে মামলা করা হয়েছে।
টঙ্গী পূর্ব থানার ওসি ওহিদুজ্জামান জানান, ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে মামলা দায়ের হয়েছে। আমরা আসামিদের গ্রেফতারে চেষ্টা চালাচ্ছি। স্থানীয়দের অভিযোগ, আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকার ভেতরে দীর্ঘদিন ধরে এসব কেমিক্যাল গুদাম অবৈধভাবে চালানো হলেও প্রশাসনের কার্যকর উদ্যোগ ছিল না। বড় দুর্ঘটনার পর মামলা হলেও মালিকরা প্রভাব খাটিয়ে পার পেয়ে যায়—এমন আশঙ্কাও স্থানীয়দের।
টঙ্গীর এ অগ্নিকাণ্ডে চারজনের মৃত্যু, কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি এবং মালিকদের বিরুদ্ধে মামলা আবারও প্রশ্ন তুলেছে আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবনের ভেতরে বিপজ্জনক কেমিক্যাল গুদাম কীভাবে অনুমোদন পায় এবং প্রশাসন কেন আগে ব্যবস্থা নেয় না। এখন পুলিশের দাবি, মালিকদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে।