ঢাকা ০৭:০২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ২৪ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

টঙ্গীতে কেমিক্যাল গুদাম সিলগালা, ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত কমিটি গঠন

মোঃ হানিফ হোসেন, টঙ্গী
  • Update Time : ০৭:১৪:৩১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ অক্টোবর ২০২৫
  • / ১০০ Time View

টঙ্গীতে কেমিক্যাল গুদাম সিলগালা, ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত কমিটি গঠন

গাজীপুরের টঙ্গীর সাহারা মার্কেট এলাকায় ফেমাস কেমিক্যাল লিমিটেডের গুদামে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে চারজনের মৃত্যুর পর অবশেষে গুদামটি সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিসের গাজীপুরের উপসহকারী পরিচালক মামুন জানান, জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে গুদামটি সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ঘটনাটির কারণ উদ্ঘাটনে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, যারা আগামী ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে।

ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা জোন-৩ এর উপ-সহকারী পরিচালক আব্দুল মান্নান বাদী হয়ে গত রবিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) টঙ্গী পূর্ব থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় গুদামের চার মালিক ইসমাইল হোসেন (৪২), সোলাইমান (৩৫), তাজুল ইসলাম (৪০) ও রাকিব (৩৮)-এর নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ১৫-২০ জনকে আসামি করা হয়েছে। তবে মামলা দায়েরের পর থেকেই আসামিরা পলাতক রয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মকর্তা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “ফায়ার ফাইটারদের মৃত্যুর ঘটনায় মামলা হলেও এখনো পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি, যা অত্যন্ত হতাশাজনক। গত ২২ সেপ্টেম্বর বিকেলে সাহারা মার্কেট এলাকায় ওই গুদামে আগুন লাগে। প্রায় এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হলেও ফায়ার সার্ভিসের ফায়ার ওয়্যারহাউজ ইন্সপেক্টর খন্দকার জান্নাতুল নাঈম, ফায়ার ফাইটার শামীম আহমেদ, নুরুল হুদা এবং পার্শ্ববর্তী দোকানের কর্মচারী বাবু হাওলাদার (২০) অগ্নিদগ্ধ হয়ে প্রাণ হারান। আহতদের সবাইকে উদ্ধার করে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে নেওয়া হলেও চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাদের মৃত্যু হয়।

অগ্নিকাণ্ডে কোটি টাকার বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। গুদামের ভেতরে থাকা বিপুল পরিমাণ দাহ্য কেমিক্যাল সম্পূর্ণ পুড়ে ছাই হয়ে যায় এবং আশপাশের দোকানও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, অগ্নিকাণ্ডের সাত দিন পরও গুদাম থেকে বিষাক্ত গ্যাস নির্গত হচ্ছে, যা মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এ কারণে ঘটনাস্থলের একশ মিটারের মধ্যে সাধারণ মানুষের চলাচলে সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

টঙ্গী পূর্ব থানার ওসি ওহিদুজ্জামান বলেন, ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে মামলা হয়েছে, আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, আবাসিক এলাকার ভেতরে অবৈধভাবে কেমিক্যাল গুদাম পরিচালনা করা হলেও প্রশাসনের তদারকি ছিল না। বড় দুর্ঘটনার পর মামলা হলেও মালিকরা প্রভাব খাটিয়ে পার পেয়ে যায় এমন আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী। এই ঘটনার পর আবারও প্রশ্ন উঠেছে আবাসিক এলাকায় বিপজ্জনক কেমিক্যাল গুদাম কীভাবে অনুমোদন পেল এবং প্রশাসন আগে ব্যবস্থা নিল না কেন।

Please Share This Post in Your Social Media

টঙ্গীতে কেমিক্যাল গুদাম সিলগালা, ফায়ার সার্ভিসের তদন্ত কমিটি গঠন

মোঃ হানিফ হোসেন, টঙ্গী
Update Time : ০৭:১৪:৩১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ অক্টোবর ২০২৫

গাজীপুরের টঙ্গীর সাহারা মার্কেট এলাকায় ফেমাস কেমিক্যাল লিমিটেডের গুদামে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে চারজনের মৃত্যুর পর অবশেষে গুদামটি সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিসের গাজীপুরের উপসহকারী পরিচালক মামুন জানান, জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে গুদামটি সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ঘটনাটির কারণ উদ্ঘাটনে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, যারা আগামী ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে।

ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা জোন-৩ এর উপ-সহকারী পরিচালক আব্দুল মান্নান বাদী হয়ে গত রবিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) টঙ্গী পূর্ব থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় গুদামের চার মালিক ইসমাইল হোসেন (৪২), সোলাইমান (৩৫), তাজুল ইসলাম (৪০) ও রাকিব (৩৮)-এর নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ১৫-২০ জনকে আসামি করা হয়েছে। তবে মামলা দায়েরের পর থেকেই আসামিরা পলাতক রয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মকর্তা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “ফায়ার ফাইটারদের মৃত্যুর ঘটনায় মামলা হলেও এখনো পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি, যা অত্যন্ত হতাশাজনক। গত ২২ সেপ্টেম্বর বিকেলে সাহারা মার্কেট এলাকায় ওই গুদামে আগুন লাগে। প্রায় এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হলেও ফায়ার সার্ভিসের ফায়ার ওয়্যারহাউজ ইন্সপেক্টর খন্দকার জান্নাতুল নাঈম, ফায়ার ফাইটার শামীম আহমেদ, নুরুল হুদা এবং পার্শ্ববর্তী দোকানের কর্মচারী বাবু হাওলাদার (২০) অগ্নিদগ্ধ হয়ে প্রাণ হারান। আহতদের সবাইকে উদ্ধার করে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে নেওয়া হলেও চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাদের মৃত্যু হয়।

অগ্নিকাণ্ডে কোটি টাকার বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। গুদামের ভেতরে থাকা বিপুল পরিমাণ দাহ্য কেমিক্যাল সম্পূর্ণ পুড়ে ছাই হয়ে যায় এবং আশপাশের দোকানও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, অগ্নিকাণ্ডের সাত দিন পরও গুদাম থেকে বিষাক্ত গ্যাস নির্গত হচ্ছে, যা মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এ কারণে ঘটনাস্থলের একশ মিটারের মধ্যে সাধারণ মানুষের চলাচলে সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

টঙ্গী পূর্ব থানার ওসি ওহিদুজ্জামান বলেন, ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে মামলা হয়েছে, আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, আবাসিক এলাকার ভেতরে অবৈধভাবে কেমিক্যাল গুদাম পরিচালনা করা হলেও প্রশাসনের তদারকি ছিল না। বড় দুর্ঘটনার পর মামলা হলেও মালিকরা প্রভাব খাটিয়ে পার পেয়ে যায় এমন আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী। এই ঘটনার পর আবারও প্রশ্ন উঠেছে আবাসিক এলাকায় বিপজ্জনক কেমিক্যাল গুদাম কীভাবে অনুমোদন পেল এবং প্রশাসন আগে ব্যবস্থা নিল না কেন।