ঢাকা ০৪:০৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫, ৭ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজঃ
রমজানেও মানবেতর জীবনযাপন

জেলা ক্রীড়া অফিসারের উদাসীনতায় বেতন পাচ্ছেন না কর্মচারীরা

কামরুল হাসান টিটু, রংপুর ব‌্যু‌রো
  • Update Time : ১০:২১:২৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫
  • / ৬ Time View

সদ্য বদলি হওয়া রংপুর জেলা ক্রীড়া অফিসার আসাদুজ্জামানের উদাসীনতা ও কর্মচারীদের কোনঠাসা করে রাখার অপচেষ্টার কারনে তিন মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন কর্মচারীরা। সপ্তাহ ঘুরলেই ঈদ। পরিবার পরিজনের ঈদের কেনাকাটা তো দুরের কথা বেতন না পাওয়ায় রমজানে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা।

কর্মচারী সুত্রে জানা যায়, রংপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থায় ৬ জন কর্মচারী কর্মরত। দীর্ঘদিন ধরে স্বল্প বেতনে চাকুরী করছেন তারা। যা বেতন পান, তা দিয়ে কোনমতে তাদের সংসার চলে তাদের। হঠাৎ করে গত বছরের ডিসেম্বর এবং চলতি বছরের জানুয়ারী ফেব্রুয়ারি ও চলতি মাসেরসহ ৪ মাসের বেতন বকেয়া পরেছে। কোন কারণ ছাড়াই শুধুমাত্র কর্মচারীদের নিজের হীনস্বার্থে ব্যবহার করতে না পারায় বেতন বন্ধ করে দেন তিনি। যার কারনে রোজায় একধরনের পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন কর্মচারীরা।

জেলা ক্রীড়া সংস্থার সচিব আলী হাসান শাকিল জানান, আমরা তো অল্প বেতনে চাকুরী করি। সেটাও বন্ধ আছে বর্তমান মাসসহ ৪ মাস থেকে। বেতন না পাওয়ায় রমজান মাসে আমরা খুবই কষ্টে আছি। তিনি আরো বলেন, জেলা ক্রীড়া অফিসারের নানা অনিয়মে প্রতিবাদ করায় আমাদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি আমাদের বেতন বন্ধ করে রেখেছেন। আমরা এর দ্রুত সমাধান চাই।

এদিকে জেলা ক্রীড়া অফিসার আসাদুজ্জামানের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম আর দুর্নীতি তুলে ধরে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন রংপুর মহানগর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যুগ্ম আহবায়ক জামিল হোসেন।

যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, নীলফামারীতে বদলি হওয়া জেলা ক্রীড়া অফিসার আসাদুজ্জামান ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে আওয়ামীলীগের দলীয় পরিচয় দিয়ে রংপুর জেলা ও লালমনিরহাট জেলার ক্রীড়া অফিসার হিসেবে দীর্ঘ আড়াই বছর ধরে দায়িত্ব পালন করেছেন। ইউসেফ নামক একটি সংস্থা থেকে প্রশিক্ষণের বরাদ্দ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবকলীগের নেতা আবু সাঈদের সাথে আতাত করে তার ক্লাবের ছেলে মেয়েদের নামমাত্র প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে অর্থ হাতিয়ে নেন তিনি। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে লীগ পরিচালনায় নয়ছয় করে অর্থ আত্মসাধ করেন এই ক্রীড়া অফিসার। শুধু তাই নয়, ৫ আগস্ট পরবর্তিতে স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা আবু সাঈদকে এডহক কমিটিতেও রেখেছিলেন তিনি। পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ করায় সেই স্বেচ্ছাসেবকলীগের নেতার নাম বাদ দিতে বাধ্য হন। তার এসব অপকীর্তি সম্বলিত অভিযোগ পেয়ে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় থেকে তাকে রংপুর থেকে নীলফামারী জেলা বদলীয় করেছেন।

এ বিষয়ে রংপুর মহানগর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যুগ্ম আহবায়ক জামিল হোসেন বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর জেলা ক্রীড়া অফিসার আসাদুজ্জামান এর নানা অনিয়ম আর স্বেচ্ছাচারিতা নিয়ে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করেছি কিন্তু এখনও কোন ফলাফল পাইনি। কবে কি হবে জানি না।

বদলি হওয়া রংপুর জেলা ক্রীড়া অফিসার আসাদুজ্জামান বলেন, একজন কর্মচারীর নামে অভিযোগ রয়েছে। তার অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত প্রক্রিয়াধিন। তাছাড়া আমি চলতি মাসে বদলী হয়েছি। আমার স্থলে যিনি যোগদান করবেন, তিনি বেতনের ব্যবস্থা করবেন।

রংপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল বলেন, কর্মচারীরা যাতে বেতন পান, সেই বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা হচ্ছে। ঈদের আগে অবশ্যই তাদের বেতন দেয়া হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

রমজানেও মানবেতর জীবনযাপন

জেলা ক্রীড়া অফিসারের উদাসীনতায় বেতন পাচ্ছেন না কর্মচারীরা

কামরুল হাসান টিটু, রংপুর ব‌্যু‌রো
Update Time : ১০:২১:২৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫

সদ্য বদলি হওয়া রংপুর জেলা ক্রীড়া অফিসার আসাদুজ্জামানের উদাসীনতা ও কর্মচারীদের কোনঠাসা করে রাখার অপচেষ্টার কারনে তিন মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন কর্মচারীরা। সপ্তাহ ঘুরলেই ঈদ। পরিবার পরিজনের ঈদের কেনাকাটা তো দুরের কথা বেতন না পাওয়ায় রমজানে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা।

কর্মচারী সুত্রে জানা যায়, রংপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থায় ৬ জন কর্মচারী কর্মরত। দীর্ঘদিন ধরে স্বল্প বেতনে চাকুরী করছেন তারা। যা বেতন পান, তা দিয়ে কোনমতে তাদের সংসার চলে তাদের। হঠাৎ করে গত বছরের ডিসেম্বর এবং চলতি বছরের জানুয়ারী ফেব্রুয়ারি ও চলতি মাসেরসহ ৪ মাসের বেতন বকেয়া পরেছে। কোন কারণ ছাড়াই শুধুমাত্র কর্মচারীদের নিজের হীনস্বার্থে ব্যবহার করতে না পারায় বেতন বন্ধ করে দেন তিনি। যার কারনে রোজায় একধরনের পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন কর্মচারীরা।

জেলা ক্রীড়া সংস্থার সচিব আলী হাসান শাকিল জানান, আমরা তো অল্প বেতনে চাকুরী করি। সেটাও বন্ধ আছে বর্তমান মাসসহ ৪ মাস থেকে। বেতন না পাওয়ায় রমজান মাসে আমরা খুবই কষ্টে আছি। তিনি আরো বলেন, জেলা ক্রীড়া অফিসারের নানা অনিয়মে প্রতিবাদ করায় আমাদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি আমাদের বেতন বন্ধ করে রেখেছেন। আমরা এর দ্রুত সমাধান চাই।

এদিকে জেলা ক্রীড়া অফিসার আসাদুজ্জামানের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম আর দুর্নীতি তুলে ধরে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন রংপুর মহানগর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যুগ্ম আহবায়ক জামিল হোসেন।

যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, নীলফামারীতে বদলি হওয়া জেলা ক্রীড়া অফিসার আসাদুজ্জামান ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে আওয়ামীলীগের দলীয় পরিচয় দিয়ে রংপুর জেলা ও লালমনিরহাট জেলার ক্রীড়া অফিসার হিসেবে দীর্ঘ আড়াই বছর ধরে দায়িত্ব পালন করেছেন। ইউসেফ নামক একটি সংস্থা থেকে প্রশিক্ষণের বরাদ্দ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবকলীগের নেতা আবু সাঈদের সাথে আতাত করে তার ক্লাবের ছেলে মেয়েদের নামমাত্র প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে অর্থ হাতিয়ে নেন তিনি। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে লীগ পরিচালনায় নয়ছয় করে অর্থ আত্মসাধ করেন এই ক্রীড়া অফিসার। শুধু তাই নয়, ৫ আগস্ট পরবর্তিতে স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা আবু সাঈদকে এডহক কমিটিতেও রেখেছিলেন তিনি। পরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে প্রতিবাদ করায় সেই স্বেচ্ছাসেবকলীগের নেতার নাম বাদ দিতে বাধ্য হন। তার এসব অপকীর্তি সম্বলিত অভিযোগ পেয়ে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় থেকে তাকে রংপুর থেকে নীলফামারী জেলা বদলীয় করেছেন।

এ বিষয়ে রংপুর মহানগর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যুগ্ম আহবায়ক জামিল হোসেন বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর জেলা ক্রীড়া অফিসার আসাদুজ্জামান এর নানা অনিয়ম আর স্বেচ্ছাচারিতা নিয়ে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করেছি কিন্তু এখনও কোন ফলাফল পাইনি। কবে কি হবে জানি না।

বদলি হওয়া রংপুর জেলা ক্রীড়া অফিসার আসাদুজ্জামান বলেন, একজন কর্মচারীর নামে অভিযোগ রয়েছে। তার অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত প্রক্রিয়াধিন। তাছাড়া আমি চলতি মাসে বদলী হয়েছি। আমার স্থলে যিনি যোগদান করবেন, তিনি বেতনের ব্যবস্থা করবেন।

রংপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল বলেন, কর্মচারীরা যাতে বেতন পান, সেই বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা হচ্ছে। ঈদের আগে অবশ্যই তাদের বেতন দেয়া হবে।