জাহাজের লস্করই খুন করে ৭ জনকে: র্যাব

- Update Time : ০৫:০০:২৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪
- / ৮৭ Time View
দেশব্যাপী চাঞ্চল্যকর চাঁদপুরের হাইমচরে এমভি আল বাখেরা জাহাজে সাত খুনের ঘটনায় মূল হোতা আকাশ মন্ডল ইরফানকে (২৬) গ্রেফতার করেছে র্যাব।
বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) দুপুর সোয়া ১২টায় র্যাব-১১’র উপঅধিনায়ক মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন সংবাদ সম্মেলনে গ্রেফতার যুবকের বরাত দিয়ে ঘটনা তুলে ধরেন।
গ্রেফতার আকাশ মন্ডল বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার জগদীশ মন্ডলের ছেলে। গ্রেফতারের সময় তার কাছ থেকে একটি হ্যান্ডগ্লাভস, একটি লোটো ব্যাগ, ঘুমের ওষুধের খালি পাতা, নিহতদের ব্যবহৃত পাঁচটি মোবাইলসহ মোট সাতটি মোবাইল এবং রক্তমাখা নীল রঙের একটি জিন্সের প্যান্ট উদ্ধার করা হয়।
নিহতরা হলেন- জাহাজের মাস্টার ফরিদপুরের সদর উপজেলার মো. গোলাম কিবরিয়া (৬৫), তার ভাগনে জাহাজের লস্কর শেখ সবুজ (৩৫), সুকানী নড়াইলের লোহাগড়ার আমিনুল মুন্সী (৪০), লস্কর মাগুরার মোহাম্মদপুরের মো. মাজেদুল ইসলাম (১৭), একই এলাকার লস্কর সজিবুল ইসলাম (২৬), নড়াইলের লোহাগড়ার ইঞ্জিনচালক মো. সালাউদ্দিন মোল্লা (৪০) ও মুন্সিগঞ্জ শ্রীনগর থানার জাহাজের বাবুর্চি রানা (২০)।
গ্রেফতার আকাশ মন্ডলের বরাত দিয়ে মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন বলেন, আট মাস ধরে এমভি আল বাখেরা জাহাজে চাকরি করে আসছেন আকাশ মন্ডল। জাহাজের কর্মচারীরা ছুটি ও বেতন-বোনাস সময় মতো পেতো না এবং বিভিন্ন ধরনের বিল কর্মচারীদের না দিয়ে জাহাজের মাস্টার একাই ভোগ করতেন। জাহাজের মাস্টার সব কর্মচারীর ওপর বিনা কারণে রাগারাগি করতেন এবং কারও ওপর নাখোশ হলে কোনো বিচার বিবেচনা ছাড়াই তাকে জাহাজ থেকে নামিয়ে দিতেন। এমনকি তাদের বকেয়া বেতনও দেওয়া হতো না।
এ ব্যাপারে আকাশ জাহাজের সবাইকে প্রতিবাদ করতে বললে কেউ ভয়ে প্রতিবাদ করতো না। ফলে আকাশের মধ্যে প্রচণ্ড ক্ষোভের সৃষ্টি হয় এবং এই ক্ষোভ থেকে তাকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার পরিকল্পনা করেন তিনি। সেই অনুযায়ী ১৮ ডিসেম্বর তিন পাতা ঘুমের ওষুধ কিনে নিজের কাছে রেখে দেন।
ঘটনার দিন সন্ধ্যায় জাহাজে রাতের খাবারের তরকারির মধ্যে তিন পাতা ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দেন। শুধু সুকানি জুয়েল এবং গ্রেফতার আকাশ ছাড়া সবাই রাতের খাবার খেয়ে তাদের নিজ কেবিনে ঘুমিয়ে পড়েন। রাত আনুমানিক ২টায় ৮-১০টি জাহাজের সঙ্গে সুকানি জুয়েল এবং গ্রেফতার আকাশ তাদের জাহাজটি নোঙর করেন। পরে সুকানি জুয়েল রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লে আকাশ তার পরিকল্পনা মোতাবেক আনুমানিক রাত সাড়ে ৩টায় প্রথমে মাস্টারকে জাহাজে থাকা চাইনিজ কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেন। পরে চিন্তা করেন, জাহাজে থাকা বাকিরা জেনে গেলে তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক ধরা পড়বেন বিধায় একে একে সবাইকে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করেন।
আনুমানিক ভোর সাড়ে ৫টায় সব জাহাজ তাদের গন্তব্যের উদ্দেশে ছেড়ে গেলে তিনি নিজে জাহাজ চালাতে থাকেন এবং এক পর্যায়ে মাঝিরচর এলাকায় জাহাজটি আটকা পড়লে পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ট্রলারে বাজার করার কথা বলে ওঠে পালিয়ে যান।
পরে তিনি গ্রেফতার এড়াতে বাগেরহাটের চিতলমারি এলাকায় আত্মগোপনে চলে যান। তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে র্যাব ওই এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে।
প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদে ওই ঘটনায় তিনি একাই জড়িত বলে জানা যায়। পরে অধিকতর তদন্তের মাধ্যমে বিষয়টি আরও নিশ্চিত হওয়া যাবে বলে মেজর মোহাম্মদ সাকিব হোসেন জানান।
এদিকে মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) রাতে জাহাজ মালিকের পক্ষে মো. মাহবুব মোরশেদ বাদী হয়ে চাঁদপুরের হাইমচর থানায় মামলা করেন। মাহবুব মোরশেদের বাড়ি ঢাকার দোহার এলাকায়। এতে খুন ও ডাকাতির অভিযোগ এনে অজ্ঞাত ৮ থেকে ১০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়।
আরও পড়ুন >>>
চাঁদপুরে জাহাজে হত্যাকাণ্ড : ৭ দিনের রিমান্ডে সেই লস্কর
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
জনপ্রিয়