ঢাকা ০৩:৫৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জামায়াত-এনসিপি হঠাৎ যেন ভিন্ন পথে

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ১০:২০:০৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫
  • / ১০০২ Time View

জুলাই অভ্যুত্থানের পর মাঠের বিভিন্ন আন্দোলন ও দাবিদাওয়া আদায়ের আলোচনায় জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) মোটামুটি একই পথে হাঁটছিল বলে মনে হচ্ছিল। রাজনৈতিক বিভিন্ন ইস্যুতে অনেক ক্ষেত্রেই সহাবস্থান নিচ্ছিল দল দুটি। কিন্তু জুলাই জাতীয় সনদ যেন দুই দলকে দুই পথে নিয়ে গেল। জামায়াত সনদে স্বাক্ষর করল। স্বাক্ষর করল না এনসিপি।

জামায়াত ও এনসিপি উভয়েই শুরুতে জানিয়েছিল, তারা জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ছাড়া এতে স্বাক্ষর করবে না। গত শুক্রবার সনদ স্বাক্ষরের আগের দিন বৃহস্পতিবার এনসিপি সংবাদ সম্মেলন করে তাদের এই অবস্থান আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দেয়। সেদিনও জামায়াত বলেছে, তারা স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যাবে, কিন্তু সনদে স্বাক্ষর করবে কি না, সেটা সময়ই বলে দেবে। কিন্তু শুক্রবার বিকেলে দেখা গেলে, জামায়াতের নেতারা অনুষ্ঠানে অংশ নিলেন এবং সনদে স্বাক্ষর করলেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনসিপির একাধিক নেতা জামায়াতের এই পদক্ষেপকে ‘বেইমানি’ বলে অভিহিত করেছেন।

শুক্রবারই এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছিলেন, কিছু রাজনৈতিক দল ঐকমত্যের নামে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে কাগজে সই করছে। আর গতকাল শনিবার এনসিপি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘গতকালকের অনুষ্ঠানে গিয়েছিল, গতকালকে যে প্রক্রিয়ায় স্বাক্ষর করেছে, গণ-অভ্যুত্থান থেকে এবং জনগণ থেকে তারা ছিটকে গিয়েছে।’

এনসিপির প্রধানের দুই দিনের বক্তব্যই যে জামায়াতকে ইঙ্গিত করে, তা ধারণা করছেন অনেকে। তাঁরা বলছেন, দুই দলের সম্পর্কে দূরত্ব বাড়ছে বলে মনে হচ্ছে। আগামী নির্বাচনে দল দুটির জোটবদ্ধ হওয়ার যে আলোচনা রাজনীতির ময়দানে ছিল, তা-ও মনে হয় হোঁচট খেল।

এর আগে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচনের রূপরেখা ঘোষণার পর থেকে দুই দলের মতভিন্নতা প্রকাশ পেতে শুরু করে। আর সেপ্টেম্বরে জামায়াতের যুগপৎ আন্দোলনে এনসিপি যোগ না দেওয়ায় দল দুটির সম্পর্কের টানাপোড়েন চোখে পড়ে। সর্বশেষ জামায়াত জুলাই সনদে স্বাক্ষরের পর সেটা প্রকাশ্যে চলে এসেছে।

জানতে চাইলে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, ‘এনসিপির সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আছে, সম্পর্ক থাকবে। জোটের সম্ভাবনা আছে কি না সময় আসলে দেখা যাবে।’ জুলাই সনদে স্বাক্ষরকারী দলগুলো জুলাই চেতনা থেকে ছিটকে গেছে বলে এনসিপির প্রধান যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটাকে তাঁদের ‘পলিটিক্যাল স্ট্যান্ড’ মন্তব্য করে হামিদুর রহমান বলেন, ‘এখানে আমাদের কিছু বলার নেই।’

এনসিপি জুলাই অভ্যুত্থানে নায়কের ভূমিকা রেখেছিল, কাজেই তাদের একটু কথা থাকবেই—এ মন্তব্য করে জামায়াতের আরেকজন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল হালিম বলেন, ‘তাদের স্বাক্ষরে রাজি করাতে পারলে সেটা সবচেয়ে বেশি সুন্দর হতো। সবার জন্যই ভালো হতো।’ এনসিপির বিষয়গুলো (জুলাই সনদ নিয়ে এনসিপির দাবি) সরকারকে বিবেচনা করা উচিত বলে জানান তিনি। একই সঙ্গে বলেন, তবে এসবের ফলে দুই দলের সম্পর্কে কোনো প্রভাব পড়বে না।

জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে এনসিপির নেতারা প্রকাশ্যে কিছু বলতে রাজি হননি। তবে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করা নিয়ে জামায়াতের অবস্থানে এনসিপি অসন্তুষ্ট বলে জানিয়েছেন একাধিক নেতা।

এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যেমন সম্পর্ক থাকে, এনসিপি আর জামায়াতের মধ্যেও তেমন রাজনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। জামায়াত আর এনসিপির মধ্যকার সম্পর্ক সব সময় মিডিয়া ফ্রেমিং করেছে। একটা ঐক্য আছে, এই আছে, সেই আছে। এ রকম কিছু না। আমাদের মধ্যে আলাদা কোনো দূরত্বের বিষয় নাই। আগে সম্পর্ক যেমন ছিল। এখনো তেমন।’

জুলাই সনদে স্বাক্ষর নিয়ে নির্বাচনে জামায়াতের সঙ্গে সম্ভাব্য জোটের ভাবনায় কোনো প্রভাব পড়বে কি না জানতে চাইলে সারোয়ার তুষার বলেন, ‘একেকটা ইস্যুতে আমাদের অবস্থান একেক রকম। আমাদের যেটা ঠিক মনে হয়, জনগণের পক্ষে মনে হয়, আমরা সেটাতে থাকব। আমাদের কাছে আগামী নির্বাচনে কার কতটা আসন, এসবের চেয়ে এটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ মানুষকে দেওয়া প্রতিশ্রুতির পক্ষে থাকা।’

Please Share This Post in Your Social Media

জামায়াত-এনসিপি হঠাৎ যেন ভিন্ন পথে

নিজস্ব প্রতিবেদক
Update Time : ১০:২০:০৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫

জুলাই অভ্যুত্থানের পর মাঠের বিভিন্ন আন্দোলন ও দাবিদাওয়া আদায়ের আলোচনায় জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) মোটামুটি একই পথে হাঁটছিল বলে মনে হচ্ছিল। রাজনৈতিক বিভিন্ন ইস্যুতে অনেক ক্ষেত্রেই সহাবস্থান নিচ্ছিল দল দুটি। কিন্তু জুলাই জাতীয় সনদ যেন দুই দলকে দুই পথে নিয়ে গেল। জামায়াত সনদে স্বাক্ষর করল। স্বাক্ষর করল না এনসিপি।

জামায়াত ও এনসিপি উভয়েই শুরুতে জানিয়েছিল, তারা জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি ছাড়া এতে স্বাক্ষর করবে না। গত শুক্রবার সনদ স্বাক্ষরের আগের দিন বৃহস্পতিবার এনসিপি সংবাদ সম্মেলন করে তাদের এই অবস্থান আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দেয়। সেদিনও জামায়াত বলেছে, তারা স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে যাবে, কিন্তু সনদে স্বাক্ষর করবে কি না, সেটা সময়ই বলে দেবে। কিন্তু শুক্রবার বিকেলে দেখা গেলে, জামায়াতের নেতারা অনুষ্ঠানে অংশ নিলেন এবং সনদে স্বাক্ষর করলেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনসিপির একাধিক নেতা জামায়াতের এই পদক্ষেপকে ‘বেইমানি’ বলে অভিহিত করেছেন।

শুক্রবারই এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছিলেন, কিছু রাজনৈতিক দল ঐকমত্যের নামে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে কাগজে সই করছে। আর গতকাল শনিবার এনসিপি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘গতকালকের অনুষ্ঠানে গিয়েছিল, গতকালকে যে প্রক্রিয়ায় স্বাক্ষর করেছে, গণ-অভ্যুত্থান থেকে এবং জনগণ থেকে তারা ছিটকে গিয়েছে।’

এনসিপির প্রধানের দুই দিনের বক্তব্যই যে জামায়াতকে ইঙ্গিত করে, তা ধারণা করছেন অনেকে। তাঁরা বলছেন, দুই দলের সম্পর্কে দূরত্ব বাড়ছে বলে মনে হচ্ছে। আগামী নির্বাচনে দল দুটির জোটবদ্ধ হওয়ার যে আলোচনা রাজনীতির ময়দানে ছিল, তা-ও মনে হয় হোঁচট খেল।

এর আগে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচনের রূপরেখা ঘোষণার পর থেকে দুই দলের মতভিন্নতা প্রকাশ পেতে শুরু করে। আর সেপ্টেম্বরে জামায়াতের যুগপৎ আন্দোলনে এনসিপি যোগ না দেওয়ায় দল দুটির সম্পর্কের টানাপোড়েন চোখে পড়ে। সর্বশেষ জামায়াত জুলাই সনদে স্বাক্ষরের পর সেটা প্রকাশ্যে চলে এসেছে।

জানতে চাইলে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ বলেন, ‘এনসিপির সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আছে, সম্পর্ক থাকবে। জোটের সম্ভাবনা আছে কি না সময় আসলে দেখা যাবে।’ জুলাই সনদে স্বাক্ষরকারী দলগুলো জুলাই চেতনা থেকে ছিটকে গেছে বলে এনসিপির প্রধান যে বক্তব্য দিয়েছেন, সেটাকে তাঁদের ‘পলিটিক্যাল স্ট্যান্ড’ মন্তব্য করে হামিদুর রহমান বলেন, ‘এখানে আমাদের কিছু বলার নেই।’

এনসিপি জুলাই অভ্যুত্থানে নায়কের ভূমিকা রেখেছিল, কাজেই তাদের একটু কথা থাকবেই—এ মন্তব্য করে জামায়াতের আরেকজন সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল হালিম বলেন, ‘তাদের স্বাক্ষরে রাজি করাতে পারলে সেটা সবচেয়ে বেশি সুন্দর হতো। সবার জন্যই ভালো হতো।’ এনসিপির বিষয়গুলো (জুলাই সনদ নিয়ে এনসিপির দাবি) সরকারকে বিবেচনা করা উচিত বলে জানান তিনি। একই সঙ্গে বলেন, তবে এসবের ফলে দুই দলের সম্পর্কে কোনো প্রভাব পড়বে না।

জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে এনসিপির নেতারা প্রকাশ্যে কিছু বলতে রাজি হননি। তবে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করা নিয়ে জামায়াতের অবস্থানে এনসিপি অসন্তুষ্ট বলে জানিয়েছেন একাধিক নেতা।

এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যেমন সম্পর্ক থাকে, এনসিপি আর জামায়াতের মধ্যেও তেমন রাজনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। জামায়াত আর এনসিপির মধ্যকার সম্পর্ক সব সময় মিডিয়া ফ্রেমিং করেছে। একটা ঐক্য আছে, এই আছে, সেই আছে। এ রকম কিছু না। আমাদের মধ্যে আলাদা কোনো দূরত্বের বিষয় নাই। আগে সম্পর্ক যেমন ছিল। এখনো তেমন।’

জুলাই সনদে স্বাক্ষর নিয়ে নির্বাচনে জামায়াতের সঙ্গে সম্ভাব্য জোটের ভাবনায় কোনো প্রভাব পড়বে কি না জানতে চাইলে সারোয়ার তুষার বলেন, ‘একেকটা ইস্যুতে আমাদের অবস্থান একেক রকম। আমাদের যেটা ঠিক মনে হয়, জনগণের পক্ষে মনে হয়, আমরা সেটাতে থাকব। আমাদের কাছে আগামী নির্বাচনে কার কতটা আসন, এসবের চেয়ে এটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ মানুষকে দেওয়া প্রতিশ্রুতির পক্ষে থাকা।’