ঢাকা ০৭:৪৪ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ১ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার শ্রদ্ধা

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ০৯:৩২:১৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫
  • / ২৫ Time View

শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

একাত্তরে পরাজয় নিশ্চিত জেনে পাকিস্তানি বাহিনী তাদের দোসরদের সহায়তায় এ দেশের যে মেধাবী সন্তানদের হত্যা করেছিল, সেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছে জাতি। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস রোববার সকালে মিরপুরে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

সকাল ৭টার ৩ মিনিটে প্রথমে রাষ্ট্রপতি বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর ৭টা ২২ মিনিটে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান প্রধান উপদেষ্টা। শ্রদ্ধা নিবেদন করে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা কিছুসময় নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। এ সময় বিউগলে বাজানো হয় করুণ সুর। সেনাবাহিনীর একটি চৌকশ দল সশস্ত্র সালাম জানায়।

পরে স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে প্রধান উপদেষ্টা শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, প্রধান বিচারপতি ও উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।

একাত্তরের ২৫ মার্চ কালরাত থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময়জুড়েই পাকিস্তানি বাহিনী পরিকল্পিতভাবে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে। তবে বিজয়ের প্রাক্কালে এ হত্যাযজ্ঞ ভয়াবহ রূপ নেয়। এ কাজে তাদের সহযোগিতা এ দেশীয় দোসররা। ডিসেম্বরের মধ্যভাগে মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির বিজয় যখন অনিবার্য; তখন রাজাকার, আল-বদর বাহিনীর সহযোগিতায় পাকিস্তানি বাহিনী হত্যা করে বাংলাদেশের প্রথিতযশা বুদ্ধিজীবীদের; এর উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশকে পঙ্গু করে দেওয়া।

১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পরিকল্পিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, চিকিৎসক, শিল্পী, লেখক, সাংবাদিকসহ বহু খ্যাতিমান বাঙালিকে হত্যা করে। এই হত্যাকণ্ডে প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করে রাজাকার, আলবদর ও আল শামস বাহিনীর সদস্যরা।

পরে শরীরে নিষ্ঠুর নির্যাতনের চিহ্নসহ জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের লাশ পাওয়া যায় মিরপুর ও রায়েরবাজার এলাকায়। পরে তা বধ্যভূমি হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে।

দিবসটি উপলক্ষে দেওয়া বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেছেন, “বুদ্ধিজীবীরা একটি জাতির উন্নয়ন ও অগ্রগতির অন্যতম রূপকার। জাতির বুদ্ধিবৃত্তিক কারিগররা মুক্তবুদ্ধির চর্চা, সৃজনশীল কর্মকাণ্ড, উদ্ভাবনী ক্ষমতা এবং গণতান্ত্রিক চেতনা বিকাশের মাধ্যমে একটি জ্ঞাননির্ভর সমৃদ্ধ জাতি গঠনে ভূমিকা রাখেন।

“এ কারণেই, পরাজয়ের দ্বারপ্রান্তে থাকা হানাদার বাহিনী তাদের আত্মসমর্পণের অব্যবহিত পূর্বে জাতিকে মেধাশূন্য করার হীন উদ্দেশ্যে ঢাকাসহ সারা দেশে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালায়। নির্মমভাবে গুম ও হত্যা করে দেশের প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক, চিকিৎসক, বিজ্ঞানী, দার্শনিক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, সাংবাদিক, শিল্পী, রাজনৈতিক চিন্তাবিদসহ বহু গুণীজনকে। স্বাধীনতার উষালগ্নে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হারানোর এ ক্ষত বাংলাদেশ আজও বহন করে চলেছে।”

প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস তার বাণীতে বলেন, “বাঙালি জাতির বিজয়ের প্রাক্কালে হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা এসব দেশপ্রেমিক শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, চিকিৎসক, বিজ্ঞানী, আইনজীবী, শিল্পী, প্রকৌশলী, দার্শনিক, রাজনৈতিক ও চিন্তাবিদসহ দেশের মেধাবী সন্তানদের নির্মমভাবে গুম ও হত্যা করে।

“এ পরিকল্পিত নৃশংস হত্যাযজ্ঞের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার দ্বারপ্রান্তে থাকা বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করে একটি ব্যর্থ জাতিতে পরিণত করাই ছিল স্বাধীনতাবিরোধীদের মূল উদ্দেশ্য।”

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্বপ্নের কথা তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আমাদের শহীদ বুদ্ধিজীবীরা স্বপ্ন দেখেছিলেন একটি গণতান্ত্রিক উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার।

“জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সমগ্র জাতিকে সাথে নিয়ে তেমনই একটি বৈষম্যহীন, ন্যায়ভিত্তিক নতুন বাংলাদেশ গড়ার কাজ শুরু করেছে। এর মাধ্যমে আমাদের শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আমৃত্যু লালিত স্বপ্নের সফল বাস্তবায়ন সম্ভব হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।”

Please Share This Post in Your Social Media

জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার শ্রদ্ধা

নিজস্ব প্রতিবেদক
Update Time : ০৯:৩২:১৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫

একাত্তরে পরাজয় নিশ্চিত জেনে পাকিস্তানি বাহিনী তাদের দোসরদের সহায়তায় এ দেশের যে মেধাবী সন্তানদের হত্যা করেছিল, সেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছে জাতি। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস রোববার সকালে মিরপুরে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

সকাল ৭টার ৩ মিনিটে প্রথমে রাষ্ট্রপতি বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর ৭টা ২২ মিনিটে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান প্রধান উপদেষ্টা। শ্রদ্ধা নিবেদন করে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা কিছুসময় নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। এ সময় বিউগলে বাজানো হয় করুণ সুর। সেনাবাহিনীর একটি চৌকশ দল সশস্ত্র সালাম জানায়।

পরে স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে প্রধান উপদেষ্টা শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, প্রধান বিচারপতি ও উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।

একাত্তরের ২৫ মার্চ কালরাত থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময়জুড়েই পাকিস্তানি বাহিনী পরিকল্পিতভাবে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে। তবে বিজয়ের প্রাক্কালে এ হত্যাযজ্ঞ ভয়াবহ রূপ নেয়। এ কাজে তাদের সহযোগিতা এ দেশীয় দোসররা। ডিসেম্বরের মধ্যভাগে মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির বিজয় যখন অনিবার্য; তখন রাজাকার, আল-বদর বাহিনীর সহযোগিতায় পাকিস্তানি বাহিনী হত্যা করে বাংলাদেশের প্রথিতযশা বুদ্ধিজীবীদের; এর উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশকে পঙ্গু করে দেওয়া।

১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পরিকল্পিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, চিকিৎসক, শিল্পী, লেখক, সাংবাদিকসহ বহু খ্যাতিমান বাঙালিকে হত্যা করে। এই হত্যাকণ্ডে প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করে রাজাকার, আলবদর ও আল শামস বাহিনীর সদস্যরা।

পরে শরীরে নিষ্ঠুর নির্যাতনের চিহ্নসহ জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের লাশ পাওয়া যায় মিরপুর ও রায়েরবাজার এলাকায়। পরে তা বধ্যভূমি হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে।

দিবসটি উপলক্ষে দেওয়া বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেছেন, “বুদ্ধিজীবীরা একটি জাতির উন্নয়ন ও অগ্রগতির অন্যতম রূপকার। জাতির বুদ্ধিবৃত্তিক কারিগররা মুক্তবুদ্ধির চর্চা, সৃজনশীল কর্মকাণ্ড, উদ্ভাবনী ক্ষমতা এবং গণতান্ত্রিক চেতনা বিকাশের মাধ্যমে একটি জ্ঞাননির্ভর সমৃদ্ধ জাতি গঠনে ভূমিকা রাখেন।

“এ কারণেই, পরাজয়ের দ্বারপ্রান্তে থাকা হানাদার বাহিনী তাদের আত্মসমর্পণের অব্যবহিত পূর্বে জাতিকে মেধাশূন্য করার হীন উদ্দেশ্যে ঢাকাসহ সারা দেশে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালায়। নির্মমভাবে গুম ও হত্যা করে দেশের প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক, চিকিৎসক, বিজ্ঞানী, দার্শনিক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, সাংবাদিক, শিল্পী, রাজনৈতিক চিন্তাবিদসহ বহু গুণীজনকে। স্বাধীনতার উষালগ্নে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হারানোর এ ক্ষত বাংলাদেশ আজও বহন করে চলেছে।”

প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস তার বাণীতে বলেন, “বাঙালি জাতির বিজয়ের প্রাক্কালে হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা এসব দেশপ্রেমিক শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, চিকিৎসক, বিজ্ঞানী, আইনজীবী, শিল্পী, প্রকৌশলী, দার্শনিক, রাজনৈতিক ও চিন্তাবিদসহ দেশের মেধাবী সন্তানদের নির্মমভাবে গুম ও হত্যা করে।

“এ পরিকল্পিত নৃশংস হত্যাযজ্ঞের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার দ্বারপ্রান্তে থাকা বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করে একটি ব্যর্থ জাতিতে পরিণত করাই ছিল স্বাধীনতাবিরোধীদের মূল উদ্দেশ্য।”

শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্বপ্নের কথা তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, “আমাদের শহীদ বুদ্ধিজীবীরা স্বপ্ন দেখেছিলেন একটি গণতান্ত্রিক উন্নত ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার।

“জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সমগ্র জাতিকে সাথে নিয়ে তেমনই একটি বৈষম্যহীন, ন্যায়ভিত্তিক নতুন বাংলাদেশ গড়ার কাজ শুরু করেছে। এর মাধ্যমে আমাদের শহীদ বুদ্ধিজীবীদের আমৃত্যু লালিত স্বপ্নের সফল বাস্তবায়ন সম্ভব হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।”