ঢাকা ০১:৫২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ছেলে মেয়ে উধাও, গ্রেফতার ভয়ে বাড়িছাড়া বাবা মা

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
  • Update Time : ০৭:২০:০৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ অগাস্ট ২০২৪
  • / ৩৩ Time View

প্রেমের টানে ছেলে মেয়ে উধাও হওয়ার জেরে অপহরণ মামলার আসামী হয়েছেন বাবা, মা ও ছেলেসহ চার জন বলে অভিযোগ উঠেছে।

ঘটনাটি ঘটেছে টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ডের চিনামুড়া গ্রামে। পুলিশী হয়রানী আর গ্রেফতার ভয়ে মামলার পর থেকে প্রায় তিনমাস যাবৎ বাড়ি ছাড়া হয়েছেন ছেলের বাবা সিএনজি চালক আব্দুল কাদের আর মা কহিনুর বেগম। ওই মামলায় প্রতিবেশী ভ্যান চালক আয়নাল মিয়ার স্ত্রী হালিমা বেগমও আসামী হয়ে রয়েছেন বাড়ি ছাড়া।

মোকদ্দমা সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ২৩ মে বিকেল সাড়ে ৬ টার দিকে বাদী উজালা বেগম স্বামী মো. আজাহার আলী সরকারের মেয়ে ও বানিয়াফৈর উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্রী তাছলিমা জান্নাত সাদিয়া প্রাইভেট পড়ে আসার পথে সাদা মাইক্রোবাস যোগে অপহরণ করে এলেঙ্গা পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ডের চিনামুড়া গ্রামের আব্দুল কাদেরের ছেলে অন্তর (২০)। অপহরণকালে আমার মেয়ে গলায় ১ ভরি ওজনের একটি চেন ছিল। যার আনুমানিক মূল্য ১ লাখ টাকা বলে মোকদ্দমায় উল্লেখ করা হয়েছে।

স্থানীয় মাতাব্বররাসহ একাধিক এলাকাবাসি জানায়, প্রেমের টানে ছেলে মেয়ে এবার নিয়ে দ্বিতীয় দফায় উধাও হলো। ঘটনাটি কোন অপহরণ নয়। মেয়ে নিজ ইচ্ছায় ছেলের সাথে ঘর সংসার করতে পালিয়েছে। ইতোপূর্বেও স্থানীয় সালিশের মাধ্যমে মেয়েকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ওই সময় একটি আপোষনামাও করা হয়েছিল। তাতে লেখা হয়েছিল যদি পরবর্তীতে ওই মেয়ে আবার ছেলের সাথে পালিয়ে যায়, সেক্ষেত্রে মেয়ের পরিবার কোন মামলা মোকদ্দমা করবেন না। শর্ত অমান্য ও হয়রানী করতে মেয়ের পরিবার অপহরণ মোকদ্দার আশ্রয় নিয়েছেন। অর্থবিত্ত আর সামাজিকভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় মেয়ের পরিবার স্থানীয় মাতাব্বর আর স্বাক্ষীগণের কাছে দেয়া লিখিত প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছেন।

স্থানীয় মাতাব্বর বাতেন সরকার ও আলীম সরকার বলেন, চলতি বছরের মার্চ মাসে ছেলে মেয়ে পালিয়ে যায়। এর ছয়দিন পর তাদের উদ্ধার করা হয়। উভয় পরিবারের সম্মতিতে ও লিখিত আপোষনামার মাধ্যমে মেয়েকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়া হয়। আপোষনামায় ওই মেয়ে যদি আবার ছেলের সাথে পালিয়ে যায়, সেক্ষেত্রে মেয়ের পরিবার কোন মামলা মোকদ্দমা করতে পারবেন না। আপোষনামায় উভয় পরিবারের মাতাব্বররা স্বাক্ষর দিয়েছিলেন।

৭ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর বাবুল খান বলেন, অর্থবিত্ত আর সামাজিকভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় মেয়ের পরিবার স্থানীয় মাতাব্বর আর স্বাক্ষীগণের কাছে দেয়া লিখিত প্রতিশ্রুতি শর্ত ভঙ্গ করে মোকদ্দমাটি করেছেন। এটি অপহরণ নয়, প্রেমঘটিত বিষয়। এরপরও আমরা মেয়েকে আবার ফিরিয়ে দেয়ার আশ^াস দিয়েছি, তবে ওই পরিবার মেয়েকে ফিরিয়ে না নিয়ে মোকদ্দমা চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন।

মেয়ের চাচা শাহজাহান বলেন, গ্রাম্য সালিশে বসতে রাজি হইনি। আইনে যেটি হবে সেটিই আমরা মেনে নিব।

৭ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হেলাল বলেন, এরআগে রমজান মাসে মেয়েটি ওই ছেলের সাথে পালিয়ে যায়। এসময় থানায় একটি অভিযোগ করে মেয়ের পরিবার। ছেলের পরিবার ঘটনাটি আমাকে জানানোর কারণে দুই পরিবার ও স্থানীয় মাতাব্বরদের নিয়ে বিষয়টি মিমাংসা করাসহ মেয়েকে পরিবারের কাছে ফেরত আর থানার অভিযোগ উঠিয়ে নেয়া হয়। সম্প্রতি আবার ছেলে মেয়ে পালিয়ে গেছে বলে আমি শুনেছি। তবে কোন পক্ষই না আসায় বিষয়টি মিমাংসার পদক্ষেপ নেয়া যায়নি।

এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা ও সিআইডি পরিদর্শক জামান জানান, আদালতের নির্দেশনা অনুসারে ভিকটিম উদ্ধারের তৎপরতা চলমান আছে।

Please Share This Post in Your Social Media

ছেলে মেয়ে উধাও, গ্রেফতার ভয়ে বাড়িছাড়া বাবা মা

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
Update Time : ০৭:২০:০৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২০ অগাস্ট ২০২৪

প্রেমের টানে ছেলে মেয়ে উধাও হওয়ার জেরে অপহরণ মামলার আসামী হয়েছেন বাবা, মা ও ছেলেসহ চার জন বলে অভিযোগ উঠেছে।

ঘটনাটি ঘটেছে টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ডের চিনামুড়া গ্রামে। পুলিশী হয়রানী আর গ্রেফতার ভয়ে মামলার পর থেকে প্রায় তিনমাস যাবৎ বাড়ি ছাড়া হয়েছেন ছেলের বাবা সিএনজি চালক আব্দুল কাদের আর মা কহিনুর বেগম। ওই মামলায় প্রতিবেশী ভ্যান চালক আয়নাল মিয়ার স্ত্রী হালিমা বেগমও আসামী হয়ে রয়েছেন বাড়ি ছাড়া।

মোকদ্দমা সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ২৩ মে বিকেল সাড়ে ৬ টার দিকে বাদী উজালা বেগম স্বামী মো. আজাহার আলী সরকারের মেয়ে ও বানিয়াফৈর উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্রী তাছলিমা জান্নাত সাদিয়া প্রাইভেট পড়ে আসার পথে সাদা মাইক্রোবাস যোগে অপহরণ করে এলেঙ্গা পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ডের চিনামুড়া গ্রামের আব্দুল কাদেরের ছেলে অন্তর (২০)। অপহরণকালে আমার মেয়ে গলায় ১ ভরি ওজনের একটি চেন ছিল। যার আনুমানিক মূল্য ১ লাখ টাকা বলে মোকদ্দমায় উল্লেখ করা হয়েছে।

স্থানীয় মাতাব্বররাসহ একাধিক এলাকাবাসি জানায়, প্রেমের টানে ছেলে মেয়ে এবার নিয়ে দ্বিতীয় দফায় উধাও হলো। ঘটনাটি কোন অপহরণ নয়। মেয়ে নিজ ইচ্ছায় ছেলের সাথে ঘর সংসার করতে পালিয়েছে। ইতোপূর্বেও স্থানীয় সালিশের মাধ্যমে মেয়েকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ওই সময় একটি আপোষনামাও করা হয়েছিল। তাতে লেখা হয়েছিল যদি পরবর্তীতে ওই মেয়ে আবার ছেলের সাথে পালিয়ে যায়, সেক্ষেত্রে মেয়ের পরিবার কোন মামলা মোকদ্দমা করবেন না। শর্ত অমান্য ও হয়রানী করতে মেয়ের পরিবার অপহরণ মোকদ্দার আশ্রয় নিয়েছেন। অর্থবিত্ত আর সামাজিকভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় মেয়ের পরিবার স্থানীয় মাতাব্বর আর স্বাক্ষীগণের কাছে দেয়া লিখিত প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছেন।

স্থানীয় মাতাব্বর বাতেন সরকার ও আলীম সরকার বলেন, চলতি বছরের মার্চ মাসে ছেলে মেয়ে পালিয়ে যায়। এর ছয়দিন পর তাদের উদ্ধার করা হয়। উভয় পরিবারের সম্মতিতে ও লিখিত আপোষনামার মাধ্যমে মেয়েকে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেয়া হয়। আপোষনামায় ওই মেয়ে যদি আবার ছেলের সাথে পালিয়ে যায়, সেক্ষেত্রে মেয়ের পরিবার কোন মামলা মোকদ্দমা করতে পারবেন না। আপোষনামায় উভয় পরিবারের মাতাব্বররা স্বাক্ষর দিয়েছিলেন।

৭ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর বাবুল খান বলেন, অর্থবিত্ত আর সামাজিকভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় মেয়ের পরিবার স্থানীয় মাতাব্বর আর স্বাক্ষীগণের কাছে দেয়া লিখিত প্রতিশ্রুতি শর্ত ভঙ্গ করে মোকদ্দমাটি করেছেন। এটি অপহরণ নয়, প্রেমঘটিত বিষয়। এরপরও আমরা মেয়েকে আবার ফিরিয়ে দেয়ার আশ^াস দিয়েছি, তবে ওই পরিবার মেয়েকে ফিরিয়ে না নিয়ে মোকদ্দমা চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন।

মেয়ের চাচা শাহজাহান বলেন, গ্রাম্য সালিশে বসতে রাজি হইনি। আইনে যেটি হবে সেটিই আমরা মেনে নিব।

৭ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হেলাল বলেন, এরআগে রমজান মাসে মেয়েটি ওই ছেলের সাথে পালিয়ে যায়। এসময় থানায় একটি অভিযোগ করে মেয়ের পরিবার। ছেলের পরিবার ঘটনাটি আমাকে জানানোর কারণে দুই পরিবার ও স্থানীয় মাতাব্বরদের নিয়ে বিষয়টি মিমাংসা করাসহ মেয়েকে পরিবারের কাছে ফেরত আর থানার অভিযোগ উঠিয়ে নেয়া হয়। সম্প্রতি আবার ছেলে মেয়ে পালিয়ে গেছে বলে আমি শুনেছি। তবে কোন পক্ষই না আসায় বিষয়টি মিমাংসার পদক্ষেপ নেয়া যায়নি।

এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা ও সিআইডি পরিদর্শক জামান জানান, আদালতের নির্দেশনা অনুসারে ভিকটিম উদ্ধারের তৎপরতা চলমান আছে।