ঢাকা ০৮:৩৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫, ১ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজঃ
রাকসু নির্বাচন ঘিরে নানা অভিযোগ করলেন ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের দল ঘোষণা, অভিষেক হচ্ছে মাহিদুলের ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই শাহাদাত হোসেন গ্রেপ্তার কারচুপি হলে বাংলাদেশ অচল করে দেবে ছাত্রদল: রাকিব খালেদা জিয়া হাসপাতালে নির্বাচনকে সামনে রেখে কোনো ঝুঁকির মধ্যে যেতে চাই না : সালাহউদ্দিন আহমদ রূপগঞ্জে পেট্রল পাম্পে বিস্ফোরণে দগ্ধ শ্রমিকের মৃত্যু ব্যাংককে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে থাইল্যান্ডের বিচারমন্ত্রীর বৈঠক ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বাবাকে হত্যার দায়ে ছেলের যাবজ্জীবন জাতীয়তাবাদী সাংবাদিক ফোরামের সভায় ডিইউজে নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধ প্যানেলের সিদ্ধান্ত গৃহীত

চিরতরে বন্ধ হয়ে গেল উইন্ডোজ ১০

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক
  • Update Time : ০৫:৪৯:৫৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫
  • / ৩২ Time View

দীর্ঘ প্রায় এক যুগের সঙ্গ শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ হয়ে গেল বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় অপারেটিং সিস্টেম উইন্ডোজ 10। মাইক্রোসফটের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে জানানো হয়েছে, ২০২৫ সালের ১৪ অক্টোবরের পর থেকে উইন্ডোজ 10 আর কোনো সিকিউরিটি আপডেট, বাগ ফিক্স বা টেকনিক্যাল সাপোর্ট পাবে না।

বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি ব্যবহারকারীর প্রিয় এই অপারেটিং সিস্টেমটির আপডেট বন্ধের ঘোষণা প্রযুক্তি দুনিয়ায় এক যুগের সমাপ্তি হিসেবেই দেখা হচ্ছে। একই সঙ্গে সাধারণ ব্যবহারকারীদের মনে প্রশ্ন উঠেছে, এখনো যেসব কম্পিউটারে উইন্ডোজ 10 চলছে, সেগুলো কি একেবারে কাজ করা বন্ধ করবে?

মাইক্রোসফট জানিয়েছে, উইন্ডোজ 10 চালু থাকবে, তবে এতে আর কোনো নতুন ফিচার বা নিরাপত্তা আপডেট দেওয়া হবে না। এর অর্থ, সাইবার আক্রমণ, ভাইরাস সংক্রমণ ও ডেটা চুরির ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যাবে। এমনকি প্রতিষ্ঠানটি স্পষ্ট করেছে, ১৪ অক্টোবরের পর যদি কোনো সিকিউরিটি ত্রুটি ধরা পড়ে, তার দায় মাইক্রোসফট নেবে না।

২০১৫ সালের জুলাই মাসে বাজারে আসে উইন্ডোজ 10। এর আগের সংস্করণ উইন্ডোজ 7 ছিল সাধারণ ব্যবহারকারীদের প্রিয় এবং উইন্ডোজ 8 ছিল টাচস্ক্রিন ডিভাইসের জন্য তৈরি আধুনিক সংস্করণ। এই দুই সংস্করণের সমন্বয় হিসেবেই উইন্ডোজ 10 ডিজাইন করা হয়। সে সময় মাইক্রোসফট ঘোষণা দিয়েছিল, উইন্ডোজ 10-ই হবে তাদের “শেষ অপারেটিং সিস্টেম”, যেটি নিয়মিত আপডেটের মাধ্যমে উন্নত করা হবে।

কিন্তু প্রযুক্তির দ্রুত পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রতিষ্ঠানটি ২০২১ সালে বাজারে আনে উইন্ডোজ 11, যেখানে যুক্ত হয় এআই ফিচার, উন্নত সিকিউরিটি সিস্টেম, মেশিন লার্নিং এবং সম্পূর্ণ নতুন ইউজার ইন্টারফেস।

তবে উইন্ডোজ 11 চালাতে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে হার্ডওয়্যার সীমাবদ্ধতা। ২০১৫ সালের আগে কেনা বেশিরভাগ কম্পিউটারেই প্রয়োজনীয় হার্ডওয়্যার না থাকায় এই ভার্সন চালানো সম্ভব নয়। ফলে ব্যবহারকারীদের নতুন কম্পিউটার কিনতে হবে বা পুরনো হার্ডওয়্যার আপগ্রেড করতে হবে যা অনেকের জন্য ব্যয়বহুল ও জটিল।

উইন্ডোজ 10 বন্ধ হলেও মাইক্রোসফট কর্পোরেট ব্যবহারকারীদের জন্য এক্সটেন্ডেড সিকিউরিটি আপডেট (ESU) সুবিধা রেখেছে। অর্থাৎ, অতিরিক্ত অর্থ প্রদান করে তারা আরও তিন বছর পর্যন্ত সিকিউরিটি আপডেট পেতে পারবেন। তবে সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্য এই সুবিধা নেই।

প্রযুক্তি বিশ্লেষকদের মতে, এই সিদ্ধান্তের ফলে বিপাকে পড়বেন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিগত ব্যবহারকারীরা। তারা হয় নতুন হার্ডওয়ারে বিনিয়োগ করবেন, নয়তো নিরাপত্তা ঝুঁকি নিয়ে কাজ চালিয়ে যাবেন।

প্রযুক্তি গবেষণা সংস্থা ক্যানালিস রিসার্চের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উইন্ডোজ 10 বন্ধ হওয়ার ফলে বিশ্বজুড়ে প্রায় ২৪০ মিলিয়ন কম্পিউটার অকেজো হয়ে পড়বে। এসব ডিভাইসের অনেকগুলোই শেষমেষ ল্যান্ডফিলে চলে যাবে, ফলে পৃথিবীতে ইলেকট্রনিক বর্জ্যের (ই-ওয়েস্ট) পরিমাণ মারাত্মকভাবে বেড়ে যাবে।

বর্তমানে পৃথিবীতে প্রতিবছর প্রায় ৫০ মিলিয়ন টন ই-ওয়েস্ট উৎপন্ন হয়, যার বড় অংশই পুরনো কম্পিউটার ও স্মার্টফোন থেকে আসে। নতুন করে কোটি কোটি ডিভাইস বাতিল হলে পরিবেশের ওপর এর প্রভাব ভয়াবহ হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, মাইক্রোসফটের এই সিদ্ধান্ত একদিকে পিসি মার্কেটে নতুন চাহিদা তৈরি করবে কারণ অনেক ব্যবহারকারী বাধ্য হয়ে নতুন কম্পিউটার কিনবেন তবে অন্যদিকে তা দীর্ঘমেয়াদে ই-ওয়েস্ট ও ব্যয়বৃদ্ধি দুই সংকটকেই তীব্র করবে।

উইন্ডোজ 10-এর অবসান একদিকে যেমন প্রযুক্তির স্বাভাবিক অগ্রযাত্রা, অন্যদিকে এটি মনে করিয়ে দেয় টেকসই প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি।

Please Share This Post in Your Social Media

চিরতরে বন্ধ হয়ে গেল উইন্ডোজ ১০

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক
Update Time : ০৫:৪৯:৫৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫

দীর্ঘ প্রায় এক যুগের সঙ্গ শেষে আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ হয়ে গেল বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় অপারেটিং সিস্টেম উইন্ডোজ 10। মাইক্রোসফটের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে জানানো হয়েছে, ২০২৫ সালের ১৪ অক্টোবরের পর থেকে উইন্ডোজ 10 আর কোনো সিকিউরিটি আপডেট, বাগ ফিক্স বা টেকনিক্যাল সাপোর্ট পাবে না।

বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি ব্যবহারকারীর প্রিয় এই অপারেটিং সিস্টেমটির আপডেট বন্ধের ঘোষণা প্রযুক্তি দুনিয়ায় এক যুগের সমাপ্তি হিসেবেই দেখা হচ্ছে। একই সঙ্গে সাধারণ ব্যবহারকারীদের মনে প্রশ্ন উঠেছে, এখনো যেসব কম্পিউটারে উইন্ডোজ 10 চলছে, সেগুলো কি একেবারে কাজ করা বন্ধ করবে?

মাইক্রোসফট জানিয়েছে, উইন্ডোজ 10 চালু থাকবে, তবে এতে আর কোনো নতুন ফিচার বা নিরাপত্তা আপডেট দেওয়া হবে না। এর অর্থ, সাইবার আক্রমণ, ভাইরাস সংক্রমণ ও ডেটা চুরির ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যাবে। এমনকি প্রতিষ্ঠানটি স্পষ্ট করেছে, ১৪ অক্টোবরের পর যদি কোনো সিকিউরিটি ত্রুটি ধরা পড়ে, তার দায় মাইক্রোসফট নেবে না।

২০১৫ সালের জুলাই মাসে বাজারে আসে উইন্ডোজ 10। এর আগের সংস্করণ উইন্ডোজ 7 ছিল সাধারণ ব্যবহারকারীদের প্রিয় এবং উইন্ডোজ 8 ছিল টাচস্ক্রিন ডিভাইসের জন্য তৈরি আধুনিক সংস্করণ। এই দুই সংস্করণের সমন্বয় হিসেবেই উইন্ডোজ 10 ডিজাইন করা হয়। সে সময় মাইক্রোসফট ঘোষণা দিয়েছিল, উইন্ডোজ 10-ই হবে তাদের “শেষ অপারেটিং সিস্টেম”, যেটি নিয়মিত আপডেটের মাধ্যমে উন্নত করা হবে।

কিন্তু প্রযুক্তির দ্রুত পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে প্রতিষ্ঠানটি ২০২১ সালে বাজারে আনে উইন্ডোজ 11, যেখানে যুক্ত হয় এআই ফিচার, উন্নত সিকিউরিটি সিস্টেম, মেশিন লার্নিং এবং সম্পূর্ণ নতুন ইউজার ইন্টারফেস।

তবে উইন্ডোজ 11 চালাতে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে হার্ডওয়্যার সীমাবদ্ধতা। ২০১৫ সালের আগে কেনা বেশিরভাগ কম্পিউটারেই প্রয়োজনীয় হার্ডওয়্যার না থাকায় এই ভার্সন চালানো সম্ভব নয়। ফলে ব্যবহারকারীদের নতুন কম্পিউটার কিনতে হবে বা পুরনো হার্ডওয়্যার আপগ্রেড করতে হবে যা অনেকের জন্য ব্যয়বহুল ও জটিল।

উইন্ডোজ 10 বন্ধ হলেও মাইক্রোসফট কর্পোরেট ব্যবহারকারীদের জন্য এক্সটেন্ডেড সিকিউরিটি আপডেট (ESU) সুবিধা রেখেছে। অর্থাৎ, অতিরিক্ত অর্থ প্রদান করে তারা আরও তিন বছর পর্যন্ত সিকিউরিটি আপডেট পেতে পারবেন। তবে সাধারণ ব্যবহারকারীদের জন্য এই সুবিধা নেই।

প্রযুক্তি বিশ্লেষকদের মতে, এই সিদ্ধান্তের ফলে বিপাকে পড়বেন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিগত ব্যবহারকারীরা। তারা হয় নতুন হার্ডওয়ারে বিনিয়োগ করবেন, নয়তো নিরাপত্তা ঝুঁকি নিয়ে কাজ চালিয়ে যাবেন।

প্রযুক্তি গবেষণা সংস্থা ক্যানালিস রিসার্চের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উইন্ডোজ 10 বন্ধ হওয়ার ফলে বিশ্বজুড়ে প্রায় ২৪০ মিলিয়ন কম্পিউটার অকেজো হয়ে পড়বে। এসব ডিভাইসের অনেকগুলোই শেষমেষ ল্যান্ডফিলে চলে যাবে, ফলে পৃথিবীতে ইলেকট্রনিক বর্জ্যের (ই-ওয়েস্ট) পরিমাণ মারাত্মকভাবে বেড়ে যাবে।

বর্তমানে পৃথিবীতে প্রতিবছর প্রায় ৫০ মিলিয়ন টন ই-ওয়েস্ট উৎপন্ন হয়, যার বড় অংশই পুরনো কম্পিউটার ও স্মার্টফোন থেকে আসে। নতুন করে কোটি কোটি ডিভাইস বাতিল হলে পরিবেশের ওপর এর প্রভাব ভয়াবহ হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, মাইক্রোসফটের এই সিদ্ধান্ত একদিকে পিসি মার্কেটে নতুন চাহিদা তৈরি করবে কারণ অনেক ব্যবহারকারী বাধ্য হয়ে নতুন কম্পিউটার কিনবেন তবে অন্যদিকে তা দীর্ঘমেয়াদে ই-ওয়েস্ট ও ব্যয়বৃদ্ধি দুই সংকটকেই তীব্র করবে।

উইন্ডোজ 10-এর অবসান একদিকে যেমন প্রযুক্তির স্বাভাবিক অগ্রযাত্রা, অন্যদিকে এটি মনে করিয়ে দেয় টেকসই প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি।