ঢাকা ০২:৪৮ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৬ মে ২০২৫, ২২ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন না ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা

জাতীয়
  • Update Time : ১১:১০:৫১ অপরাহ্ন, সোমবার, ৫ মে ২০২৫
  • / ২৪ Time View

ছবিঃ সংগৃহীত

হাসপাতালে গিয়ে সরাসরি চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন না ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা। তবে ই-মেইলের মাধ্যমে চিকিৎসককে ওষুধের বিষয়ে ধারণা দিতে পারবেন।
সোমবার (৫ মে) প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দেওয়া স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে এমন প্রস্তাব করা হয়েছে।

স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের প্রধান সুপারিশসমূহ:

স্বতন্ত্র ‘বাংলাদেশ স্বাস্থ্য সার্ভিস’ গঠন
বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডারের পরিবর্তে ‘বাংলাদেশ স্বাস্থ্য সার্ভিস’ নামে একটি স্বতন্ত্র কাঠামো গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এটির জন্য আলাদা পাবলিক সার্ভিস কমিশন (স্বাস্থ্য) গঠন এবং জনবল কাঠামো পুনর্নির্ধারণের সুপারিশ করা হয়েছে।

ক্যারিয়ার প্ল্যানিং ও পদোন্নতি
স্বাস্থ্য সেবা, শিক্ষা ও ব্যবস্থাপনা—এই তিনটি বিভাগে লাইন প্রমোশনের জন্য পর্যাপ্ত পদসোপান তৈরির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, কর্মকর্তাদের জন্য প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে ‘সুপিরিয়র এক্সিকিউটিভ সার্ভিস’-এ প্রবেশের সুযোগ সৃষ্টির সুপারিশ করা হয়েছে।

স্বাস্থ্য শিক্ষা ও সেবা বিভাগ পৃথককরণ
চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে একাডেমিক ও সার্ভিস হাসপাতাল হিসেবে ভাগ করে তাদের ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণ স্ব-স্ব বিভাগের অধীনে ন্যস্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

জনবল নিয়োগ ও উপস্থিতি নিশ্চিতকরণ
নতুন চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের পূর্বেই প্রয়োজনীয় ও দক্ষ জনবল নিয়োগ নিশ্চিত করা এবং উপস্থিতি নিশ্চিতকরণের জন্য ডিজিটাল হাজিরা ও সরেজমিনে তদারকি বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে।

বাজেট বরাদ্দ ও দালাল দমন
সরকারি হাসপাতালগুলোতে শয্যা সংখ্যার পরিবর্তে চিকিৎসা গ্রহণকারী রোগীর সংখ্যা অনুপাতে বাজেট বরাদ্দ এবং দালালদের দৌরাত্ম্য অবসানে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন ও রেগুলেটরি কর্তৃপক্ষ
চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী ও রোগীদের স্বার্থে ভারসাম্য রেখে ‘স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন’ প্রণয়ন এবং ল্যাবরেটরিগুলোর মান গ্রহণের জন্য একটি রেগুলেটরি কর্তৃপক্ষ সৃষ্টির সুপারিশ করা হয়েছে।

ফিজিওথেরাপি বিভাগ ও পদ সৃষ্টি
সব সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বিশেষায়িত হাসপাতাল, আইএইচটি এবং জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সদর জেনারেল হাসপাতালসমূহে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার জন্য ফিজিওথেরাপি বিভাগ এবং ফিজিওথেরাপিস্ট পদ সৃষ্টির প্রস্তাব করা হয়েছে।

কমিউনিটি স্বাস্থ্য কেন্দ্র পরিচালনা
গ্রাম পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত কমিউনিটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলো সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য বেসরকারি সংস্থাগুলোকে দায়িত্ব প্রদান এবং সরকার সুনির্দিষ্ট শর্তে বাজেট বরাদ্দ দিয়ে কেন্দ্রগুলো পরিচালনা আউটসোর্স করার সুপারিশ করা হয়েছে।

এর আগে সোমবার বেলা ১১টার দিকে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার কাছে সংস্কার প্রতিবেদন জমা দেয় স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশন। গত বছরের ১৭ নভেম্বর বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এ কে আজাদ খানকে প্রধান করে ১২ সদস্যের এই কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার।

কমিশনের অন্যরা হলেন- অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ জাকির হোসেন, অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলী, অধ্যাপক ডা. সায়েবা আক্তার, অধ্যাপক ডা. নায়লা জামান খান, সাবেক সচিব এস এম রেজা, অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক, ডা. আজহারুল ইসলাম খান, অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মো. আকরাম হোসেন, অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আতিকুল হক, ডা. আহমেদ এহসানুর রাহমান এবং শিক্ষার্থী প্রতিনিধি ও ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থী উমায়ের আফিফ।

Please Share This Post in Your Social Media

চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন না ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা

জাতীয়
Update Time : ১১:১০:৫১ অপরাহ্ন, সোমবার, ৫ মে ২০২৫

হাসপাতালে গিয়ে সরাসরি চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করতে পারবেন না ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা। তবে ই-মেইলের মাধ্যমে চিকিৎসককে ওষুধের বিষয়ে ধারণা দিতে পারবেন।
সোমবার (৫ মে) প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দেওয়া স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে এমন প্রস্তাব করা হয়েছে।

স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশনের প্রধান সুপারিশসমূহ:

স্বতন্ত্র ‘বাংলাদেশ স্বাস্থ্য সার্ভিস’ গঠন
বিসিএস (স্বাস্থ্য) ক্যাডারের পরিবর্তে ‘বাংলাদেশ স্বাস্থ্য সার্ভিস’ নামে একটি স্বতন্ত্র কাঠামো গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এটির জন্য আলাদা পাবলিক সার্ভিস কমিশন (স্বাস্থ্য) গঠন এবং জনবল কাঠামো পুনর্নির্ধারণের সুপারিশ করা হয়েছে।

ক্যারিয়ার প্ল্যানিং ও পদোন্নতি
স্বাস্থ্য সেবা, শিক্ষা ও ব্যবস্থাপনা—এই তিনটি বিভাগে লাইন প্রমোশনের জন্য পর্যাপ্ত পদসোপান তৈরির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, কর্মকর্তাদের জন্য প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে ‘সুপিরিয়র এক্সিকিউটিভ সার্ভিস’-এ প্রবেশের সুযোগ সৃষ্টির সুপারিশ করা হয়েছে।

স্বাস্থ্য শিক্ষা ও সেবা বিভাগ পৃথককরণ
চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে একাডেমিক ও সার্ভিস হাসপাতাল হিসেবে ভাগ করে তাদের ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণ স্ব-স্ব বিভাগের অধীনে ন্যস্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

জনবল নিয়োগ ও উপস্থিতি নিশ্চিতকরণ
নতুন চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের পূর্বেই প্রয়োজনীয় ও দক্ষ জনবল নিয়োগ নিশ্চিত করা এবং উপস্থিতি নিশ্চিতকরণের জন্য ডিজিটাল হাজিরা ও সরেজমিনে তদারকি বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে।

বাজেট বরাদ্দ ও দালাল দমন
সরকারি হাসপাতালগুলোতে শয্যা সংখ্যার পরিবর্তে চিকিৎসা গ্রহণকারী রোগীর সংখ্যা অনুপাতে বাজেট বরাদ্দ এবং দালালদের দৌরাত্ম্য অবসানে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।

স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন ও রেগুলেটরি কর্তৃপক্ষ
চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী ও রোগীদের স্বার্থে ভারসাম্য রেখে ‘স্বাস্থ্য সুরক্ষা আইন’ প্রণয়ন এবং ল্যাবরেটরিগুলোর মান গ্রহণের জন্য একটি রেগুলেটরি কর্তৃপক্ষ সৃষ্টির সুপারিশ করা হয়েছে।

ফিজিওথেরাপি বিভাগ ও পদ সৃষ্টি
সব সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বিশেষায়িত হাসপাতাল, আইএইচটি এবং জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের সদর জেনারেল হাসপাতালসমূহে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার জন্য ফিজিওথেরাপি বিভাগ এবং ফিজিওথেরাপিস্ট পদ সৃষ্টির প্রস্তাব করা হয়েছে।

কমিউনিটি স্বাস্থ্য কেন্দ্র পরিচালনা
গ্রাম পর্যায়ে প্রতিষ্ঠিত কমিউনিটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলো সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য বেসরকারি সংস্থাগুলোকে দায়িত্ব প্রদান এবং সরকার সুনির্দিষ্ট শর্তে বাজেট বরাদ্দ দিয়ে কেন্দ্রগুলো পরিচালনা আউটসোর্স করার সুপারিশ করা হয়েছে।

এর আগে সোমবার বেলা ১১টার দিকে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার কাছে সংস্কার প্রতিবেদন জমা দেয় স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশন। গত বছরের ১৭ নভেম্বর বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এ কে আজাদ খানকে প্রধান করে ১২ সদস্যের এই কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার।

কমিশনের অন্যরা হলেন- অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ জাকির হোসেন, অধ্যাপক ডা. লিয়াকত আলী, অধ্যাপক ডা. সায়েবা আক্তার, অধ্যাপক ডা. নায়লা জামান খান, সাবেক সচিব এস এম রেজা, অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক, ডা. আজহারুল ইসলাম খান, অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মো. আকরাম হোসেন, অধ্যাপক ডা. সৈয়দ আতিকুল হক, ডা. আহমেদ এহসানুর রাহমান এবং শিক্ষার্থী প্রতিনিধি ও ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থী উমায়ের আফিফ।