ঢাকা ০৩:৫০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর ২০২৫, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চাকরি হারালেন ৩ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • Update Time : ১০:৪১:৪৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর ২০২৫
  • / ৩৫ Time View

বুনিয়াদি প্রশিক্ষণরত তিনজন সহকারী কমিশনারকে (নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট) চাকরিচ্যুত করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

বুধবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এহছানুল হক সাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।

চাকরিচ্যুতদের মধ্যে কাজী আরিফুর রহমান ফরিদপুরে, অনুপ কুমার বিশ্বাস বগুড়ায় ও নবমিতা সরকার পিরোজপুরে সহকারী কমিশনার হিসেবে কর্মরত অবস্থায় বুনিয়াদি প্রশিক্ষণে ছিলেন।

বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস নিয়োগ বিধিমালা, ১৯৮১-এর বিধি ৬(২)(এ) অনুযায়ী বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের ৪৩তম ব্যাচের এ শিক্ষানবিশ সহকারী কমিশনারদের সরকারি চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়েছে বলে  প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।

এতে আরও বলা হয়েছে, সরকারি চাকরিকালীন সময়ে তাদের কাছে কোনো প্রকার আর্থিক পাওনা থাকলে ‘দ্যা পাবলিক ডিমান্ড রিকভারি অ্যাক্ট, ১৯১৩’ অনুযায়ী তা আদায়যোগ্য হবে।

এই কর্মকর্তাদের কেন চাকরিচ্যুত করা হয়েছে, তা প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়নি। তাদের দুইজন  জানান, চাকরিচ্যুতির কোনো কারণ তাদের জানানো হয়নি।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, উল্লিখিত কর্মকর্তাদের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ শেষ হয়েছে বুধবার। অর্থাৎ চাকরিচ্যুত এই কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ থেকে বিদায়ের দিনেই চাকরি থেকে বিদায় দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস নিয়োগ বিধিমালা, ১৯৮১-এর বিধি ৬(২)(এ) বলা হয়েছে, ‘শিক্ষানবীশ মেয়াদ চলাকালে কোনো শিক্ষানবীশীর সংশ্লিষ্ট চাকরিতে বহাল থাকার অযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হইলে কমিশনের (পিএসসি) সহিত পরামর্শ ব্যতিরেকে সরকার সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে নিয়োগের অবসান করাইতে পারিবেন।’

এর আগে ২২ অক্টোবর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে ৪৩ ব্যাচের পুলিশ ক্যাডারের শের শাহ্‌, শোভন কুমার বিশ্বাস, রওশন জামিল ও আশফাক ফেরদৌসকে শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) থেকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছিল।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এ ব্যাচের কর্মকর্তাদের নিয়োগের সময়েও অন্তত ৬৭ জনকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। এরপর চাকরিরত অবস্থায় বিভিন্ন ক্যাডারের আরও ১৩ জনকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

চাকরিচ্যুত তিন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মধ্যে দুইজনের সঙ্গে কথা হয়েছে । তাদের একজন বলেছেন, ‘ছাত্রজীবনে হলে থাকার সময় রাজনৈতিক মিছিল-মিটিংয়ে যেতে হয়েছে। এগুলোকে যদি অযোগ্যতা ধরা হয়, তাহলে কী আর বলবো?’

তিনি বলেন, ‘আমার স্ত্রী সন্তানসম্ভবা, বাবার হার্টে রিং পড়ানো। বুঝতেই পারছেন কী অবস্থায় আছি।’

এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে বিশিষ্ট লেখক ও জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া বলেন, ‘নিয়োগ বিধিমালা অনুযায়ী চাকরিচ্যুত করলেও অতীতে এ ধরনের আদেশ আদালতে টিকেনি। সুনির্দিষ্ট কারণ থাকলে কাউকে চাকরিচ্যুত করাই যায়, তাতে বাধা নেই। কিন্তু, কারণ উল্লেখ না করে চাকরিচ্যুতি ন্যায়বিচারের পরিপন্থী।’

তিনি বলেন, ‘যারা চাকরিচ্যুত হয়েছেন তারা সংবিধান অনুযায়ী আদালতের দারস্থ হতে পারেন। আশা করি তারা ন্যায়বিচার পাবেন।’

অসামরিক কর্মচারীর বরখাস্তের বিষয়ে সংবিধানের ১৩৫(২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘কোন ব্যক্তিকে তাঁহার সম্পর্কে প্রস্তাবিত ব্যবস্থা গ্রহণের বিরুদ্ধে কারণ দর্শাইবার যুক্তিসঙ্গত সুযোগদান না করা পর্যন্ত তাঁহাকে বরখাস্ত বা অপসারিত বা পদাবনমিত করা যাইবে না।’

Please Share This Post in Your Social Media

চাকরি হারালেন ৩ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট

নিজস্ব প্রতিবেদক
Update Time : ১০:৪১:৪৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর ২০২৫

বুনিয়াদি প্রশিক্ষণরত তিনজন সহকারী কমিশনারকে (নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট) চাকরিচ্যুত করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

বুধবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এহছানুল হক সাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।

চাকরিচ্যুতদের মধ্যে কাজী আরিফুর রহমান ফরিদপুরে, অনুপ কুমার বিশ্বাস বগুড়ায় ও নবমিতা সরকার পিরোজপুরে সহকারী কমিশনার হিসেবে কর্মরত অবস্থায় বুনিয়াদি প্রশিক্ষণে ছিলেন।

বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস নিয়োগ বিধিমালা, ১৯৮১-এর বিধি ৬(২)(এ) অনুযায়ী বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের ৪৩তম ব্যাচের এ শিক্ষানবিশ সহকারী কমিশনারদের সরকারি চাকরি থেকে অপসারণ করা হয়েছে বলে  প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।

এতে আরও বলা হয়েছে, সরকারি চাকরিকালীন সময়ে তাদের কাছে কোনো প্রকার আর্থিক পাওনা থাকলে ‘দ্যা পাবলিক ডিমান্ড রিকভারি অ্যাক্ট, ১৯১৩’ অনুযায়ী তা আদায়যোগ্য হবে।

এই কর্মকর্তাদের কেন চাকরিচ্যুত করা হয়েছে, তা প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়নি। তাদের দুইজন  জানান, চাকরিচ্যুতির কোনো কারণ তাদের জানানো হয়নি।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, উল্লিখিত কর্মকর্তাদের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ শেষ হয়েছে বুধবার। অর্থাৎ চাকরিচ্যুত এই কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ থেকে বিদায়ের দিনেই চাকরি থেকে বিদায় দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস নিয়োগ বিধিমালা, ১৯৮১-এর বিধি ৬(২)(এ) বলা হয়েছে, ‘শিক্ষানবীশ মেয়াদ চলাকালে কোনো শিক্ষানবীশীর সংশ্লিষ্ট চাকরিতে বহাল থাকার অযোগ্য হিসেবে বিবেচিত হইলে কমিশনের (পিএসসি) সহিত পরামর্শ ব্যতিরেকে সরকার সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে নিয়োগের অবসান করাইতে পারিবেন।’

এর আগে ২২ অক্টোবর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে ৪৩ ব্যাচের পুলিশ ক্যাডারের শের শাহ্‌, শোভন কুমার বিশ্বাস, রওশন জামিল ও আশফাক ফেরদৌসকে শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) থেকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছিল।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, এ ব্যাচের কর্মকর্তাদের নিয়োগের সময়েও অন্তত ৬৭ জনকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। এরপর চাকরিরত অবস্থায় বিভিন্ন ক্যাডারের আরও ১৩ জনকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

চাকরিচ্যুত তিন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মধ্যে দুইজনের সঙ্গে কথা হয়েছে । তাদের একজন বলেছেন, ‘ছাত্রজীবনে হলে থাকার সময় রাজনৈতিক মিছিল-মিটিংয়ে যেতে হয়েছে। এগুলোকে যদি অযোগ্যতা ধরা হয়, তাহলে কী আর বলবো?’

তিনি বলেন, ‘আমার স্ত্রী সন্তানসম্ভবা, বাবার হার্টে রিং পড়ানো। বুঝতেই পারছেন কী অবস্থায় আছি।’

এ বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে বিশিষ্ট লেখক ও জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া বলেন, ‘নিয়োগ বিধিমালা অনুযায়ী চাকরিচ্যুত করলেও অতীতে এ ধরনের আদেশ আদালতে টিকেনি। সুনির্দিষ্ট কারণ থাকলে কাউকে চাকরিচ্যুত করাই যায়, তাতে বাধা নেই। কিন্তু, কারণ উল্লেখ না করে চাকরিচ্যুতি ন্যায়বিচারের পরিপন্থী।’

তিনি বলেন, ‘যারা চাকরিচ্যুত হয়েছেন তারা সংবিধান অনুযায়ী আদালতের দারস্থ হতে পারেন। আশা করি তারা ন্যায়বিচার পাবেন।’

অসামরিক কর্মচারীর বরখাস্তের বিষয়ে সংবিধানের ১৩৫(২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘কোন ব্যক্তিকে তাঁহার সম্পর্কে প্রস্তাবিত ব্যবস্থা গ্রহণের বিরুদ্ধে কারণ দর্শাইবার যুক্তিসঙ্গত সুযোগদান না করা পর্যন্ত তাঁহাকে বরখাস্ত বা অপসারিত বা পদাবনমিত করা যাইবে না।’