চতুর্থ কৃষি বিপ্লবের ধারাবাহিকতায় বাকৃবিতে আন্তর্জাতিক কৃষি প্রকৌশল সম্মেলন

- Update Time : ১০:৪৯:০৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
- / ২৮ Time View
আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির উদ্ভাবন এবং কৃষক পর্যায়ে সেগুলোর ব্যবহার নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) শুরু হয়েছে ‘ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন এগ্রিকালচারাল মেশিনারি অ্যান্ড বায়োরিসোর্স ইঞ্জিনিয়ারিং (আইসিএএমবিই-২০২৫)’। দুই দিনব্যাপী এই সম্মেলনের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ সোসাইটি অব এগ্রিকালচারাল মেশিনারি অ্যান্ড বায়োরিসোর্স ইঞ্জিনিয়ারিং (বিএসএএমবিই) এবং বাকৃবির কৃষি শক্তি ও যন্ত্র বিভাগ।
বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে নয়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের হেলিপ্যাডে কৃষি প্রযুক্তি মেলার উদ্বোধনের মাধ্যমে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়া এবং বাকৃবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ. কে. ফজলুল হক ভূঁইয়া মেলার উদ্বোধন করেন।
মেলায় বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) ও বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি)-সহ ৮টি কৃষি প্রযুক্তি বিষয়ক প্রতিষ্ঠান তাদের উদ্ভাবিত প্রযুক্তি প্রদর্শন করে৷ মেলায় কৃষকদের উদ্দেশ্যে নতুন কৃষি যন্ত্রপাতির লাইভ ডেমোনস্ট্রেশন, ফসল সংরক্ষণের উদ্ভাবনী পদ্ধতি, বায়োগ্যাস ও সৌরশক্তিচালিত যন্ত্রপাতির প্রদর্শনী করা হয়। এছাড়া কৃষি যন্ত্রপাতির সহজলভ্যতা এবং ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের জন্য বিশেষ ঋণ সহায়তার বিষয়ে পরামর্শও দেওয়া হয়।
মেলার উদ্বোধনী পর্ব শেষে সৈয়দ নজরুল ইসলাম সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয় ‘কৃষি গবেষণা, যান্ত্রিকীকরণ এবং প্রযুক্তির উৎকর্ষতা’ বিষয়ক আলোচনা। আয়োজক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মো. আবদুল আওয়ালের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী আলোচনায় প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়া। প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক এ. কে. ফজলুল হক ভূঁইয়া। সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) বাংলাদেশের প্রতিনিধি জিয়াওকুন শি, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নাজমুন নাহার করিম, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. মো. আবদুল্লাহ ইউসুফ আখন্দ এবং এসিআই মোটরস লিমিটেডের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুব্রত রঞ্জন দাস।
আলোচনা সভায় শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজন কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক মোহাম্মদ আশিক-ই-রব্বানী।
এসময় উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ. কে. ফজলুল হক ভূঁইয়া বলেন, ‘কৃষির সকল পর্যায়ে যান্ত্রিকীকরণ এখন আবশ্যক। তবে আন্তর্জাতিকভাবে বিদ্যমান যন্ত্রের ওপর নির্ভরশীল না থেকে আমাদের দেশের চাহিদা অনুযায়ী যন্ত্র নকশা করতে হবে। কৃষকের আর্থ-সামাজিক অবস্থা বিবেচনায় রেখে যন্ত্র তৈরি করতে হবে, যাতে কৃষকরা লাভবান হতে পারেন।’
কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়া বলেন, সারাবিশ্ব এখন চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ধারাবাহিকতায় শিল্পের অগ্রগতির দিকে ধাবিত হচ্ছে। নতুন প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্তির জন্য সরকারি পর্যায়ে নীতিনির্ধারণ এবং তা বাস্তবায়নের জন্য কাজ চলছে। মডার্ন ইরিগেশন, ড্রোনের ব্যবহার, স্যাটেলাইট ভিত্তিক প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রতি গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। যেকোনো নতুন প্রযুক্তি যুক্ত করার জন্য সরকার ও নীতি নির্ধারক পর্যায় থেকে কিছু নির্দেশনা থাকে। আমি আশা করছি এই সম্মেলন কৃষি যান্ত্রিকীকরণের ক্ষেত্রে বিস্ময়কর কিছু ধারণা নিয়ে আসবে৷ বর্তমানে দেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে উৎপাদন বাড়ানো জরুরি, যা যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে নিশ্চিত করা যেতে পারে। আর যান্ত্রিকীকরণে উৎকর্ষ সাধনের জন্য দক্ষ কৃষি প্রকৌশলীদের প্রয়োজন।
সম্মেলনের প্রথম দিনের শেষ পর্বে প্লেনারি সেশনে মূল বক্তা হিসেবে দক্ষিণ কোরিয়ার চুংনাম ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. সান-ওক চুং, কানাডার সাসকাচেওয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. অজয় কে. দলাই, বাকৃবির অধ্যাপক ড. মো. মনজুরুল আলম এবং চীনের চায়না এগ্রিকালচারাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. ঝাও ঝ্যাং স্মার্ট কৃষি প্রযুক্তি, স্বয়ংক্রিয় চাষাবাদ, ফসল সংরক্ষণ এবং বায়োসিস্টেমস ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে তাঁদের গবেষণা উপস্থাপন করেন। পাশাপাশি অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীরা তাদের গবেষণা আইডিয়া পোস্টার আকারে উপস্থাপন করেন।
সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে ব্যবসায়ী, নীতি নির্ধারক ও কৃষকদের উপস্থিতিতে ডায়ালগ সেশন ও পোস্টার উপস্থাপনা অনুষ্ঠিত হবে। প্লেনারি সেশন, পোস্টার ও মৌখিক উপস্থাপনাসহ মোট ১৬০টি গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হবে।