চট্টগ্রাম বন্দর কাউকে দিচ্ছি না, সংস্কার করতে চাচ্ছি: প্রেস সচিব

- Update Time : ০৫:৩১:৫৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৫ মে ২০২৫
- / ১৫৭ Time View
চট্টগ্রাম বন্দর কাউকে দিচ্ছি না। বন্দরকে আমরা সংস্কার করতে চাচ্ছি বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
রোববার রাজধানীতে পুঁজিবাজারভিত্তিক সাংবাদিকদের সংগঠন ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্টস ফোরাম (সিএমজেএফ) আয়োজিত “সিএমজেএফ-টক” অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার ব্যবস্থাপনার বিষয়ে তিন দেশের তিন কোম্পানির সঙ্গে সরকারের আলোচনা চলার কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
তিনি বলেন, “চট্টগ্রাম বন্দরে আমরা গভীর সংস্কার করতে চাচ্ছি। আমরা চাচ্ছি যেন বিশ্বের সবচেয়ে বড় বড় কোম্পানি বন্দর ব্যবস্থাপনা করতে পারে।এজন্য আমরা বিদেশের সবচেয়ে বড় বড় কোম্পানির সঙ্গে কথা বলছি। দুবাই পোর্ট ডিপি ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে কথা বলছি; এপি মুলার মার্কসের সঙ্গে কথা বলছি এবং পোর্ট অব সিঙ্গাপুর অথরিটির সঙ্গে কথা বলছি। ফলে যেটা হবে, ওরা যদি ম্যানেজ করেন, তাহলে আমাদের বন্দরের সক্ষমতা বাড়বে।”
শফিকুল আলম বলেন, বিশ্বের সবচেয়ে বড় বড় কোম্পানিগুলো চট্টগ্রাম বন্দরকে যেন ম্যানেজ করতে পারে, আমরা তা চাচ্ছি। আমরা চট্টগ্রাম বন্দর কাউকে দিচ্ছি না। আমরা চাই টার্মিনালে যেন তারা বিনিয়োগ করেন, ম্যানেজ করেন। ইতোমধ্যে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে আশ্বাস পেয়েছি, তারা তিন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে।
প্রেস সচিব বলেন, “আমরা বন্দর কাউকে দিচ্ছি না। বন্দরে যেন তারা বিনিয়োগ করেন, ম্যানেজ করেন। এখন পর্যন্ত আমরা তাদের কাছ রেসপন্স পেয়েছি যে, তারা তিন বিলিয়ন ডলারের মত বিনিয়োগ করবে।”
দেশে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ছে মন্তব্য করে শফিকুল আলম বলেন, “এফডিআই আসা শুরু হয়েছে। জুনে দেখবেন যে, চীন থেকে একজন কমার্স মিনিস্টারের নেতৃত্ব ১৫০ জনের মতো চাইনিজ বিনিয়োগকারী আসবেন। তারা যদি বাংলাদেশে আসেন, আমরা কর্মসংস্থানে যে প্রবৃদ্ধি চাচ্ছি, সেটা খুব দ্রুত হবে। ”
এনবিআর দুই ভাগ করাটা সরকারের অগ্রাধিকার ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের ট্যাক্স কালেকশনটা সবসময় কম ছিল, এখন বাড়বে।”
সিএমজেএফ কার্যালয়ে এ সংলাপ হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি গোলাম সামদানী ভূঁইয়া। সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক আবু আলী।
জাতীয় নির্বাচন নিয়ে শফিকুল আলম বলেন, আগামী বছরের ৩০ জুনের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এর বাইরে যাবেন না প্রধান উপদেষ্টা। আগের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব ছিল কেবল নির্বাচন করা কিন্তু বর্তমান সরকারের দায়িত্ব সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন।
সংলাপে পুঁজিবাজার নিয়ে প্রেস সচিব বলেন, “কোনো গোষ্ঠীতন্ত্রের কাছে বাজারকে জিম্মি করে রাখতে দেবে না সরকার। আগে তো সব পলিসি করা হত কিছু গোষ্ঠীকে সুবিধা দিতে। এভাবে লুট করায় সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
“বাংলাদেশের পুঁজিবাজার ডাকাতদের আড্ডা হয়ে গেছে। এখানে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা কেবল প্রতারণার শিকার হয়েছেন, পুঁজি হারিয়েছেন।”
বিতর্ক এড়াতে ও বিশ্ব মানের বাজার তৈরি করতে সরকার বিদেশি পরামর্শকের কাছ থেকে পরামর্শ নেওয়ার সিদ্ধান্তে গেছে।
এই কাজে মাস তিনেকের মত সময় লাগবে মন্তব্য করে প্রেস সচিব বলেন, “একটা বড় বিষয় হচ্ছে, ঐতিহাসিকভাবে বিএসইসিতে বা বাংলাদেশের ক্যাপিটাল মার্কেটের যে রিফর্মগুলো যারা করেছেন, তারা সবাই গোষ্ঠী স্বাস্থ্যের দিকে তাকিয়েছিলেন। এই গোষ্ঠীটা একটা পারপাস সার্ভ করছে, ওই গোষ্ঠীর প্রতিপক্ষ এসে আরেকটা পারপাস সার্ভ করেছে।”
পুঁজিবাজার নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকের বিষয় তুলে ধরে তিনি বলেন, “ওই মিটিংয়ে এই ধরনের কথা, মানে এই ডিসকাশনটা খুবই জোরালোভাবে এসেছে যে, আসলে আমরা কেন ব্যবস্থা নিতে পারছি না। এটার কারণ হচ্ছে, পুরো শেয়ার মার্কেটটা হয়ে গেছে ডাকাতদের আড্ডা। পুঁজিবাজারে এক ডাকাত গেলে আরেকটা ডাকাত আসতেছে।”
নির্মোহ ব্যক্তি দিয়ে সংস্কার প্রস্তাব করা হবে। শ্রীলঙ্কা, ভারত সংস্কার করে লাভবান হয়েছে। বাংলাদেশের বাজার ঠিক হয়নি। এজন্য নির্মোহ ব্যক্তিদের দিয়ে সংস্কার কাজটি করবে।
শফিকুল আলম বলেন, “এই রিফর্মটা যে করবে, তারা হচ্ছে এই গোষ্ঠী স্বার্থের অনেক দূরের লোক। তারাই এসে করবে। তারা নির্মহভাবে রিফর্ম করবে। পুরো বিশ্বেই শেয়ার মার্কেটের খুব গভীর রিফর্ম হয়। ভালো জায়গায় যায়। কিন্তু তো বাংলাদেশে দেখা যাচ্ছে যে, যারা রিফর্ম করতে চান, তারা আসলে আরেকটা ধান্দাবাজ গ্রুপ। ”
দেশি-বিদেশি পরামর্শকরা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন করলে দেশের পুঁজিবাজার কোনো গোষ্ঠীর কাছে জিম্মি থাকবে না মন্তব্য করে শফিকুল আলম বলেন, “কোনো গোষ্ঠী যেন মনে না করেন যে, এখান থেকে আমি আমার মতো করে টাকা বানাব। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষা করে কাজ করবে সরকার।”
দুই সপ্তাহ হলো বিনিময় হার বাজারমুখী করা হয়েছে, তারপরও টাকার অবমূল্যায়ন হয়নি মন্তব্য করে শফিকুল আলম বলেন, “এতে বোঝা যায়, সংস্কার ভালো সংকেত দিচ্ছে।”
এর আগে গত ১৪ মে চট্টগ্রাম বন্দর পরিদর্শনে যান প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সেখানে গিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে তিনি বলেন, ‘ চট্টগ্রাম বন্দর অর্থনীতির হৃদপিন্ড। এই বন্দর বাদ দিয়ে অর্থনীতির নতুন পথ খোলা সম্ভব নয়। প্রথম দিন থেকে চেষ্টা করছি, কীভাবে এটার পরিবর্তন করা যায়। একটা সত্যিকার বন্দর হিসেবে তৈরি করতে হবে।’
তিনি বলেন, আমাদের মতো দেশে, একটা বন্দর কয়েকটা টার্মিনাল নিয়ে কথা বলছি। এ রকম ২০-৩০টা বন্দর টার্মিনাল অনেক দেশের আছে। আমাদের হৃদপিণ্ড দিয়ে রোগী বেশি দিন টিকবে না। কাজেই এটাকে শক্তিশালী করতে হবে। এটাই চ্যালেঞ্জ।
প্রধান উপদেষ্টার দেওয়া ওই বক্তব্যের পর থেকেই চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে নানা রকম জল্পনাকল্পনা চলছে। চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের কাছে না দেওয়ার দাবি করছে রাজনৈতিক দলগুলো। আবার অনেকেই বন্দর বিদেশিদের হাতে না দিতে আন্দোলনে রাস্তায়ও নেমেছে।