ঢাকা ০৫:৩৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫, ৭ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

চট্টগ্রামে অস্ত্রসহ তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার

বেলাল উদ্দিন, চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
  • Update Time : ০৩:৫৭:১৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫
  • / ১৯ Time View

শহিদুল ইসলাম ।

চট্টগ্রাম নগরের অপরাধজগতের আলোচিত ও আতঙ্কের নাম, পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী শহিদুল ইসলাম ওরফে বুইশ্যাকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)-৭। রোববার (২১ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত আনুমানিক ১টার দিকে পাঁচলাইশ থানাধীন ব্যস্ত ফিনলে সাউথ সিটি মার্কেট এলাকার সামনে এই অভিযান চালানো হয়, যা মুহূর্তেই নগরজুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রের মতে, বুইশ্যার গ্রেপ্তার কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়; বরং চট্টগ্রামে সক্রিয় সংঘবদ্ধ অপরাধচক্রের বিরুদ্ধে চলমান অভিযানের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।

র‍্যাব ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ি সূত্র জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‍্যাব-৭-এর একটি সিভিল টিম রাতের আঁধারে ফিনলে স্কয়ার মার্কেটের সামনে অবস্থান নেয়। অভিযানের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি টের পেয়ে বুইশ্যা মোটরসাইকেলে দ্রুত পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।

পালানোর সময় তিনি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কে পড়ে যান এবং আহত হন। তাৎক্ষণিকভাবে তাকে হেফাজতে নিয়ে চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অভিযানে তার কাছ থেকে একটি ৯ এমএম পিস্তল উদ্ধার করা হয়েছে বলে র‍্যাব নিশ্চিত করেছে। যদিও র‍্যাব আনুষ্ঠানিকভাবে গোলাগুলির ঘটনা স্বীকার করেনি, তবে ঘটনাস্থলে থাকা একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, অভিযানের সময় কয়েক রাউন্ড গুলির শব্দ শোনা গেছে। এতে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ব্যাপক কৌতূহল ও উদ্বেগ সৃষ্টি হয়।

গ্রেপ্তার শহিদুল ইসলাম বুইশ্যা (৩৫) ভোলা জেলার দৌলতখান থানার ভাণ্ডারী বাড়ির মোহাম্মদ আলীর ছেলে। তিনি বর্তমানে চট্টগ্রাম নগরের পাঁচলাইশ থানাধীন পশ্চিম ষোলশহরের বদিউল আলম গলিতে বসবাস করছিলেন।

পুলিশের নথি অনুযায়ী, বুইশ্যার বিরুদ্ধে পাঁচলাইশ ও চান্দগাঁও থানায় অস্ত্র ও মাদক আইনে অন্তত ১৯টি মামলা রয়েছে। এছাড়া চাঁদাবাজি, ছিনতাই, জমি দখল, ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ নানা ধরনের সংঘবদ্ধ অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ দীর্ঘদিনের।

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, পাঁচলাইশ ও চান্দগাঁও কেন্দ্র করে বুইশ্যার নেতৃত্বে একটি শক্তিশালী অপরাধচক্র সক্রিয় ছিল। এই চক্রের মাধ্যমে চাঁদাবাজি, অবৈধ অস্ত্রের কারবার, মাদক ব্যবসা এবং এলাকাভিত্তিক প্রভাব বিস্তার করা হতো।

এলাকাবাসীর ভাষ্য অনুযায়ী, দীর্ঘদিন ধরে বুইশ্যার নাম উচ্চারিত হলেই এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ত। দোকানপাট, নির্মাণকাজ ও পরিবহন খাত থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায়ের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ২০২২ সালে গ্রেপ্তার হয়ে দীর্ঘদিন কারাবন্দি ছিলেন বুইশ্যা। পরে জামিনে মুক্তি পেয়ে ফের সংঘবদ্ধ অপরাধচক্র গড়ে তুলে নগরে সক্রিয় হয়ে ওঠেন বলে অভিযোগ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর।

পুলিশের দাবি, কারাগার থেকে মুক্তির পর তিনি আগের তুলনায় আরও কৌশলী ও সংগঠিতভাবে অপরাধ পরিচালনা শুরু করেন। গত ৯ অক্টোবর চান্দগাঁও ও পাঁচলাইশ এলাকায় যৌথ অভিযানে বুইশ্যা বাহিনীর তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওই সময় উদ্ধার করা হয় বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, গোলাবারুদ ও মাদকদ্রব্য। উদ্ধারকৃত অস্ত্রের মধ্যে ছিল পাঁচটি বিদেশি পিস্তল, তিনটি বিদেশি বন্দুক, দুটি দেশীয় পাইপগান, একটি শর্ট শুটার গান এবং দুটি দেশীয় লম্বা বন্দুক। পাশাপাশি নগদ অর্থ, ড্রোন, ওয়াকিটকি ও টাকা গণনার মেশিন উদ্ধার করা হয়, যা অপরাধচক্রের প্রযুক্তিনির্ভর কার্যক্রমের ইঙ্গিত দেয়।

গ্রেপ্তার তিনজন হলেন বেলাল (২৮), হৃদয় বড়ুয়া (৩০) ও মো. আজাদ (২৩)। তবে ওই অভিযানে মূল হোতা বুইশ্যা ও আইয়ুব আলীসহ ২৪ জন সহযোগী পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। চলতি মাসের ৬ ডিসেম্বর চান্দগাঁও থানার বাড়ইপাড়া জামাল কলোনিতে অভিযান চালিয়ে বুইশ্যা বাহিনীর সদস্য ইমন হোসেন ওরফে আবদুর রহমানকে (২২) গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় একটি একনলা বন্দুক।

নাটোরের বরাইগ্রাম থানার জামাই দীঘার মৃত ফজলুর রহমানের ছেলে ইমন দীর্ঘদিন ধরে বুইশ্যা বাহিনীর হয়ে অস্ত্র বহন, সন্ত্রাসী কার্যক্রমে সহায়তা এবং এলাকায় আধিপত্য বিস্তারে যুক্ত ছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক আইনে পাঁচটি মামলা রয়েছে। র‍্যাব-৭-এর একটি সূত্র জানায়, বুইশ্যার বিরুদ্ধে মাদক, অস্ত্র, চাঁদাবাজি ও ছিনতাইসহ একাধিক মামলা রয়েছে। সর্বশেষ গ্রেপ্তারের ঘটনায় নতুন মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। একই সঙ্গে তার পলাতক সহযোগীদের গ্রেপ্তারে অভিযান জোরদার করা হয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এক কর্মকর্তা বলেন, “শীর্ষ সন্ত্রাসী বুইশ্যার গ্রেপ্তার চট্টগ্রাম নগরের অপরাধ দমনে বড় সাফল্য। তবে পুরো অপরাধচক্র ভেঙে না ফেলা পর্যন্ত অভিযান চলমান থাকবে।”

Please Share This Post in Your Social Media

চট্টগ্রামে অস্ত্রসহ তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার

বেলাল উদ্দিন, চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
Update Time : ০৩:৫৭:১৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫

চট্টগ্রাম নগরের অপরাধজগতের আলোচিত ও আতঙ্কের নাম, পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী শহিদুল ইসলাম ওরফে বুইশ্যাকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)-৭। রোববার (২১ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত আনুমানিক ১টার দিকে পাঁচলাইশ থানাধীন ব্যস্ত ফিনলে সাউথ সিটি মার্কেট এলাকার সামনে এই অভিযান চালানো হয়, যা মুহূর্তেই নগরজুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রের মতে, বুইশ্যার গ্রেপ্তার কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়; বরং চট্টগ্রামে সক্রিয় সংঘবদ্ধ অপরাধচক্রের বিরুদ্ধে চলমান অভিযানের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।

র‍্যাব ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ি সূত্র জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‍্যাব-৭-এর একটি সিভিল টিম রাতের আঁধারে ফিনলে স্কয়ার মার্কেটের সামনে অবস্থান নেয়। অভিযানের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি টের পেয়ে বুইশ্যা মোটরসাইকেলে দ্রুত পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন।

পালানোর সময় তিনি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কে পড়ে যান এবং আহত হন। তাৎক্ষণিকভাবে তাকে হেফাজতে নিয়ে চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অভিযানে তার কাছ থেকে একটি ৯ এমএম পিস্তল উদ্ধার করা হয়েছে বলে র‍্যাব নিশ্চিত করেছে। যদিও র‍্যাব আনুষ্ঠানিকভাবে গোলাগুলির ঘটনা স্বীকার করেনি, তবে ঘটনাস্থলে থাকা একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, অভিযানের সময় কয়েক রাউন্ড গুলির শব্দ শোনা গেছে। এতে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে ব্যাপক কৌতূহল ও উদ্বেগ সৃষ্টি হয়।

গ্রেপ্তার শহিদুল ইসলাম বুইশ্যা (৩৫) ভোলা জেলার দৌলতখান থানার ভাণ্ডারী বাড়ির মোহাম্মদ আলীর ছেলে। তিনি বর্তমানে চট্টগ্রাম নগরের পাঁচলাইশ থানাধীন পশ্চিম ষোলশহরের বদিউল আলম গলিতে বসবাস করছিলেন।

পুলিশের নথি অনুযায়ী, বুইশ্যার বিরুদ্ধে পাঁচলাইশ ও চান্দগাঁও থানায় অস্ত্র ও মাদক আইনে অন্তত ১৯টি মামলা রয়েছে। এছাড়া চাঁদাবাজি, ছিনতাই, জমি দখল, ভয়ভীতি প্রদর্শনসহ নানা ধরনের সংঘবদ্ধ অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ দীর্ঘদিনের।

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, পাঁচলাইশ ও চান্দগাঁও কেন্দ্র করে বুইশ্যার নেতৃত্বে একটি শক্তিশালী অপরাধচক্র সক্রিয় ছিল। এই চক্রের মাধ্যমে চাঁদাবাজি, অবৈধ অস্ত্রের কারবার, মাদক ব্যবসা এবং এলাকাভিত্তিক প্রভাব বিস্তার করা হতো।

এলাকাবাসীর ভাষ্য অনুযায়ী, দীর্ঘদিন ধরে বুইশ্যার নাম উচ্চারিত হলেই এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ত। দোকানপাট, নির্মাণকাজ ও পরিবহন খাত থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায়ের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ২০২২ সালে গ্রেপ্তার হয়ে দীর্ঘদিন কারাবন্দি ছিলেন বুইশ্যা। পরে জামিনে মুক্তি পেয়ে ফের সংঘবদ্ধ অপরাধচক্র গড়ে তুলে নগরে সক্রিয় হয়ে ওঠেন বলে অভিযোগ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর।

পুলিশের দাবি, কারাগার থেকে মুক্তির পর তিনি আগের তুলনায় আরও কৌশলী ও সংগঠিতভাবে অপরাধ পরিচালনা শুরু করেন। গত ৯ অক্টোবর চান্দগাঁও ও পাঁচলাইশ এলাকায় যৌথ অভিযানে বুইশ্যা বাহিনীর তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ওই সময় উদ্ধার করা হয় বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, গোলাবারুদ ও মাদকদ্রব্য। উদ্ধারকৃত অস্ত্রের মধ্যে ছিল পাঁচটি বিদেশি পিস্তল, তিনটি বিদেশি বন্দুক, দুটি দেশীয় পাইপগান, একটি শর্ট শুটার গান এবং দুটি দেশীয় লম্বা বন্দুক। পাশাপাশি নগদ অর্থ, ড্রোন, ওয়াকিটকি ও টাকা গণনার মেশিন উদ্ধার করা হয়, যা অপরাধচক্রের প্রযুক্তিনির্ভর কার্যক্রমের ইঙ্গিত দেয়।

গ্রেপ্তার তিনজন হলেন বেলাল (২৮), হৃদয় বড়ুয়া (৩০) ও মো. আজাদ (২৩)। তবে ওই অভিযানে মূল হোতা বুইশ্যা ও আইয়ুব আলীসহ ২৪ জন সহযোগী পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। চলতি মাসের ৬ ডিসেম্বর চান্দগাঁও থানার বাড়ইপাড়া জামাল কলোনিতে অভিযান চালিয়ে বুইশ্যা বাহিনীর সদস্য ইমন হোসেন ওরফে আবদুর রহমানকে (২২) গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় একটি একনলা বন্দুক।

নাটোরের বরাইগ্রাম থানার জামাই দীঘার মৃত ফজলুর রহমানের ছেলে ইমন দীর্ঘদিন ধরে বুইশ্যা বাহিনীর হয়ে অস্ত্র বহন, সন্ত্রাসী কার্যক্রমে সহায়তা এবং এলাকায় আধিপত্য বিস্তারে যুক্ত ছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদক আইনে পাঁচটি মামলা রয়েছে। র‍্যাব-৭-এর একটি সূত্র জানায়, বুইশ্যার বিরুদ্ধে মাদক, অস্ত্র, চাঁদাবাজি ও ছিনতাইসহ একাধিক মামলা রয়েছে। সর্বশেষ গ্রেপ্তারের ঘটনায় নতুন মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। একই সঙ্গে তার পলাতক সহযোগীদের গ্রেপ্তারে অভিযান জোরদার করা হয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এক কর্মকর্তা বলেন, “শীর্ষ সন্ত্রাসী বুইশ্যার গ্রেপ্তার চট্টগ্রাম নগরের অপরাধ দমনে বড় সাফল্য। তবে পুরো অপরাধচক্র ভেঙে না ফেলা পর্যন্ত অভিযান চলমান থাকবে।”