ঘুষখোর জেলা জজের কাছে কি হেরে যাবে নীতিবান ম্যাজিস্ট্রেট?
- Update Time : ১০:০৫:০০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১ নভেম্বর ২০২৫
- / ৪৭৪ Time View
দৈনিক নওরোজে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত শরীয়তপুরের জেলা জজ মোঃ সোলায়মানের বিরুদ্ধে অধঃস্তন আদালতের বিচারকের প্রদত্ত রায় ছিড়ে ফেলা এবং পরবর্তিতে এ নিয়ে চুপ থাকার জন্য বিচারক আরিফুল ইসলামকে প্রকাশ্যে খাস কামড়ায় গালিগালাজ, মিথ্যা মামলা ও পুলিশে সোপর্দ করে, এসিআর খারাপ প্রদান ও বিচারকের পেশাগত জীবনের বারোটা বাজানোর হুমকি দিয়ে কাজ না হওয়ায় পরিশেষে উপায়ান্ত না দেখে মিমাংসার প্রস্তাবসহ নানাবিধ ঘটনা সারাদেশে ভাইরাল হলেও এখনো টনক নড়েনি আইন মন্ত্রণালয়ের।
শরীয়তপুরের আইনজীবি মহলসহ নানা পেশার মানুষ এ নিয়ে ফুঁসে উঠেছে। আইনজীবি সমিতির প্রেসিডেন্ট, সেক্রেটারীর মুখে জেলা জজ সোলায়মানের নতি স্বীকারের বিষয়টি মারাত্মকভাবে খাটো করেছে বিচার বিভাগকে । মানববন্ধন ও কোর্ট বর্জনসহ মারমুখী বিচারপ্রার্থীদের রোষানলে পড়ে বদলীর নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত জেলা জজ আর এজলাসে বসবেন না মর্মে প্রতিশ্রুতি দেন। বিজ্ঞ আইনজীবি নেতৃবৃন্দের কাছে জেলা জজের অসহায় আত্মসমর্পন ও করুণ আবেদনে জেলা জজ সোলায়মান কি বার্তা দিলেন?
নিন্দুকেরা বলছেন, এতে করে মাথা গরম ঘুষখোর জেলা জজ ধরা খেয়ে গেছেন। অবশ্য, ধরা খাওয়া এই সোলায়মানকে বাঁচাতে একটি মহল তৎপর। মহলটি বিষয়টিকে ভিন্ন খাতে প্রভাবিত করার জন্য উল্টো ভুক্তোভোগী বিচারক আরিফুল ইসলামকে স্বৈরাচারের দোসর বানাতে উঠে পড়ে লেগেছেন।
আরিফুল ইসলাম কিভাবে স্বৈরাচারের দোসর হলেন এবং কেমনতর বিচারক তার স্বরুপ উদ্ঘাটনে নওরোজ অনুসন্ধানে যা জানা যায়, সুধি পাঠকদের খেদমতে তা তুলে ধরা হলোঃ
ঐতিহাসিক ৫ই আগস্ট এর পর শরীয়তপুর থেকে ঢাকায় মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে বদলী হয়ে ঢাকায় আসেন। ঢাকায় বদলী হয়ে আসার পথটি তার জন্য মসৃণ ছিল না এ নিয়ে পরবর্তীতে বিস্তারিত দেওয়া হবে।
ঢাকার সিএমএম কোর্টের ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে আরিফুল ইসলামই সর্বপ্রথম শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট ইস্যু করেন। সিআর-২২২/২৫ মামলায় শেখ হাসিনাসহ ২৮৬ জন আসামীর বিরুদ্ধে সরাসরি ওয়ারেন্ট ইস্যু করেন, যা বাংলাদেশে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রথম ওয়ারেন্ট, উক্ত ওয়ারেন্ট দেওয়ার কারণে তাকে প্রতিনিয়ত নানা রকম হুমকি ও বিব্রতকর অবস্থার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। ম্যাজিস্ট্রেট এর এই দূঃসাহসিক আদেশটি বিচার বিভাগে ঘাপটি মেরে বসে থাকা স্বৈরাচারের দোসর অনেকের মনঃপুত হয়নি।
২০২৩ সালের ১১ জুন শরীয়তপুরে যোগদানের পর সিনিয়র সহকারী জজ হিসেবে আরিফুল ইসলামকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০২৪ এর অনুসন্ধান কমিটির দায়িত্ব প্রদান করা হলে তিনি তৎকালীন প্রতিমন্ত্রী এনামুল হক শামীমকে শোকজ করেন।
শোকজের জবাব দিতে আসলে খাস কামড়ায় বসতে না বলায়, এনামুল হক শামীম ঐ সময় শরীয়তপুরের আইনজীবি বারে প্রকাশ্যে ঘোষণা দেন, “আরিফ কিভাবে বিচার বিভাগে চাকরী করেন আমি দেখে নিবো” সাথে সাথেই জেলা জজ অনুপ কুমারকে ম্যাজিস্ট্রেট আরিফুলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেন।
এ বিষয়ে অনুপ কুমার আলোচ্য বিচারককে ধমক দিয়ে বলেন, “তোমার চাকরি করার দরকার নাই, এখানে থাকলে তুমি বিপদে পড়বে কেউ তোমাকে বাঁচাতে পারবে না, চলে যাও ইস্তফা দিয়ে”। শরিয়তপুরে থাকলে তার ক্ষতি হতে পারে এমনটা টের পেয়ে আরিফুল ইসলাম তার অর্জিত ছুটি নিয়ে প্রাণভয়ে শরিয়তপুর থেকে বদলী হওয়ার চেষ্টা করতে থাকেন।
মোঃ আরিফুল ইসলাম সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে ২০১৭ সাল হতে ২০২৩ সাল পর্যন্ত টাঙ্গাইলে চাকুরি করলেও সুদীর্ঘ সাড়ে ছয় বছর কর্মকালে তাকে আমলী আদালতের ক্ষমতা দেয়া হয়নি, তাকে সব সময় বন আদালতের দায়িত্ব পালন করতে হয়েছে। উক্ত সময়ে টাঙ্গাইলের সিজেএম ভবনের নির্মাণ কাজের ব্যাপারে তৎকালিন মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাকের ছোট ভাই এর দুর্নীতির চিত্রসমূহ মন্ত্রনালয়ে পাঠালে আরিফুল ইসলামকে ম্যাজিস্ট্রেট ইন চার্জ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয় তৎকালিন আইন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব বিকাশ কুমারের নির্দেশে।
এটা কি কোন স্বৈরাচারের দোসরের নমুনা?
ন্যায় বিচারের ব্রত নিয়ে বিচার বিভাগে যোগদান করেন মোঃ আরিফুল ইসলাম। বাংলাদেশ জুডিসিয়াল সার্ভিসে চাকুরির শুরুতেই বৈষম্যের শিকার হন তিনি। বাংলাদেশের জুডিসিয়াল সার্ভিস এর ৭ম ব্যাচের কর্মকর্তা হিসেবে অধিকাংশ বিচারক ২০১৪ ইং তারিখে চাকুরিতে যোগদান করলেও ছাত্রদলের সাথে সম্পৃক্ততার কারণে তাকে বাদ দেয়া হয়। তিনি মেধাতালিকায় ১২তম স্থান অর্জনের পরও তিনি কোন কারন ছাড়াই যথাসময়ে পোস্টিং পান নাই। তিনি চাকুরিতে যোগদান করেন ২০১৫ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার চৌকি আদালতে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলে থাকাবস্থায় ২০০৯ সালে স্বৈরাচারের দোসরা তাকে হল থেকে বের করে দেয়।
জুলাই আন্দোলনের সাড়া জাগানো কর্মসূচিতে জনাব মোঃ আরিফুল ইসলাম ও তার স্ত্রী ডাঃ মোশাররেফা মোহাম্মদ সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন এবং ৫ই আগস্টে স্বামী-স্ত্রী দুইজন মিলে ৩২ নং বাড়িতে গিয়ে ছাত্রদের উৎসাহিত করেন. যার ভিডিও সোসাল মিডিয়াতে ভাইরাল হয়। এই জুলাই যোদ্ধা ম্যাজিস্ট্রেট আরিফুল ইসলামকে নিয়ে চলছে নানারকম ষড়যন্ত্র।
“চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে বিএনপি” বইটি আগস্ট ২০২৫ প্রকাশিত হয়, উক্ত বইটির তথ্য ও উপাত্ত বিশ্লেষণে আছেন ম্যাজিস্ট্রেট আরিফুল ইসলামের স্ত্রী ডা. মোশাররেফা মোহাম্মদ এবং বিশ্লেষক হিসেবে আছেন ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ আরিফুল ইসলাম সোহেল। উক্ত বইয়ের সম্পাদক বাবুল তালুকদার যিনি বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক। উল্লেখযোগ্য যে স্বৈরাচার সরকার পতনের পর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের এলামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সর্বকনিষ্ঠ মেম্বার হিসেবে ২০২৪ সালের নভেম্বর মাসে ম্যাজিস্ট্রেট আরিফুল ইসলামকে নির্বাচিত করা হয়।
মোঃ আরিফুল ইসলাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ঢাকা, ০৯-০৭-২০২৫ খ্রিঃ তারিখ হতে কর্মরত আছেন। বিচারিক জীবনের প্রায় ১১ বছরের কর্মকালে ম্যাজিস্ট্রেট আরিফুল ইসলাম ঢাকায় পদায়ন পাননি এমনকি ঢাকার বাইরে কোন গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন না।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
জনপ্রিয়


































































































