ঢাকা ০১:৫০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩০ মে ২০২৫, ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গৌরব ও ঐতিহ্যের ১৯ বছর, দুই দশকে পা রাখলেন কুবি

কুবি প্রতিনিধি
  • Update Time : ০৫:২৩:৩৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৮ মে ২০২৫
  • / ১১১ Time View

১৯ বছর পার করে ২০ বছের পা রেখেছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি)। বৃহস্পতিবার (২৮মে) বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান পালন করা হয়।

সকাল সাড়ে দশটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন থেকে আনন্দ র‍্যালি, বেলুন ও শান্তির প্রতীক পায়রা ওড়ানো হয়। র‍্যালি শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে কেক কাটা হয়।

পরবর্তীতে বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সুমাইয়া আফরিন সানি ও ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তারিন বিনতে এনামের সঞ্চালনায় আলোচনা সভা ও প্রতিষ্ঠাকালীন শিক্ষকদের সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।

এই অনুষ্ঠানে সভাপতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইংরেজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. এম এম শরীফুল করিম এবং প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ হায়দার আলী। এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাসুদা কামাল, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সোলায়মান এবং প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোঃ আবদুল হাকিম। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থী-শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোঃ আবদুল হাকিম বলেন, ‘শুরুর দিক থেকে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে আছি। এই বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে অনেক স্মৃতি রয়েছে। তবে গত ১৫-১৬ বছর তো আমরা অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিলাম, সে ইতিহাস আর কী বলব। শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে আমাদের পক্ষে মাত্র চারটি ভোট পড়ত। সবাই আমাদের নিয়ে হাসাহাসি করতো, এমনকি পত্র-পত্রিকায় ও এটা নিয়ে লেখা হতো।’

 

বিশেষ অতিথি কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সোলায়মান বলেন, ‘এইবারের কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস আমাদের মনে বিশেষ এক অনুভূতি সৃষ্টি করেছে। এই অনুভূতির জন্য আমাদেরকে ১৮ বছর অপেক্ষা করতে হয়ছে। আজকের এই দিনে আসতে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্যের ত্যাগকে আমি শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি। সেই সাথে আমি প্রতিষ্ঠাকালীন কর্মকর্তা, কর্মচারীদের ত্যাগকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে আজকে আমরা এই পর্যায়ে আসতে পেরেছি। আজকে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে আমাদের একটাই অঙ্গীকার হোক আমরা সকলেই একে অপরের সহিত মিলেমিশে, কোনো বিভাজন না করে বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিয়ে যাব। মনে রাখবেন আপনার সন্তান যদি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য প্রথম চয়েস না রাখে তাহলে আমাদের পরিশ্রম বৃথা। তাই চলুন একসাথে কাজ করি, একসাথে এগিয়ে যায়।’

বিশেষ অতিথি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাসুদা কামাল বলেন,’ আজকে এখানে প্রত্যেকেই স্মৃতিচারণ করছে আমি স্মৃতিচারণের দিকে যাব না। আমি একজন প্রতিষ্ঠাকালীন শিক্ষক হিসেবে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি। দীর্ঘদিন ফ্যাসিস্ট সরকারের শাসনের পর এবারের আয়োজনটা একটু ভিন্ন হয়েছে। আজকে এই দিনটি দেখার জন্য আমাদের আব্দুল কাইয়ুমের জীবন গেছে এবং আরো অনেকই আহত হয়েছেন। এখন অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীরাই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি হচ্ছে তারাই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ। আমাদের অতিতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।’

প্রধান অতিথি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ হায়দার আলী বলেন, ‘আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা মিশন নিয়ে এসেছি। আমার মিশন হচ্ছে দুর্নীতিমুক্ত রেখে সুন্দর বিশ্ববিদ্যালয় গড়তে যা দরকার তা বাস্তবায়ন করা। আমি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়কে এমন একটা পর্যায়ে নিয়ে যেতে চাই যেখানে শিক্ষকদের মধ্যে দলাদলি থাকবে না,গবেষণায় হবে তাদের প্রধান মাপকাঠি। এখন পর্যন্ত আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৮৩জনের মধ্যে ১০১জন শিক্ষকের প্রোফাইল ব্ল্যাঙ্ক। বিশ্বিবদ্যালয়ের শিক্ষকের কাজ শুধু পড়াশোনা করানো নয়। তাই আমরা সকলেই পড়ানোর পাশাপাশি গবেষণা করে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রথম শ্রেণির বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার অঙ্গিকার করি।’

অনুষ্ঠানের সভাপতি অধ্যাপক ড. এম এম শরীফুল করিম কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরুর দিকের সময় নিয়ে স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস এক ঐতিহ্যের ইতিহাস। শুরুতে আমাদের কিছুই ছিল না, বিগত ১৯ বছরে আমাদের ইতিহাস হয়েছে, গৌরব হয়েছে। আমরা পনেরোজন শিক্ষক শুরু করেছিলাম, কারো পিএইচডি ডিগ্রি ছিল না। এখন প্রতিমাসে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থীরা পিএইচডি ডিগ্রির জন্য আবেদন করছে। বিগত ১৫-১৬ বছরে আমরা অনেক অবহেলার শিকার হয়েছি। আজকের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে প্রতিজ্ঞা করতে চাই আগামী  ৩১ মে ২৫ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে একটা নতুন মাইলফলক গড়তে চাই।’

উল্লেখ্য, ২০০৬ সালের ২৮ মে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। ২০০৭ সালে চারটি অনুষদ সাতটি বিভাগের ১৫ জন শিক্ষক এবং ৩০০ শিক্ষার্থীর নিয়ে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে ছয়টি অনুষদের ১৯ টি বিভাগে ৭ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন।

Please Share This Post in Your Social Media

গৌরব ও ঐতিহ্যের ১৯ বছর, দুই দশকে পা রাখলেন কুবি

কুবি প্রতিনিধি
Update Time : ০৫:২৩:৩৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৮ মে ২০২৫

১৯ বছর পার করে ২০ বছের পা রেখেছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি)। বৃহস্পতিবার (২৮মে) বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান পালন করা হয়।

সকাল সাড়ে দশটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন থেকে আনন্দ র‍্যালি, বেলুন ও শান্তির প্রতীক পায়রা ওড়ানো হয়। র‍্যালি শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে কেক কাটা হয়।

পরবর্তীতে বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সুমাইয়া আফরিন সানি ও ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তারিন বিনতে এনামের সঞ্চালনায় আলোচনা সভা ও প্রতিষ্ঠাকালীন শিক্ষকদের সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।

এই অনুষ্ঠানে সভাপতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইংরেজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. এম এম শরীফুল করিম এবং প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ হায়দার আলী। এছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাসুদা কামাল, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সোলায়মান এবং প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোঃ আবদুল হাকিম। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থী-শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোঃ আবদুল হাকিম বলেন, ‘শুরুর দিক থেকে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে আছি। এই বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে অনেক স্মৃতি রয়েছে। তবে গত ১৫-১৬ বছর তো আমরা অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিলাম, সে ইতিহাস আর কী বলব। শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে আমাদের পক্ষে মাত্র চারটি ভোট পড়ত। সবাই আমাদের নিয়ে হাসাহাসি করতো, এমনকি পত্র-পত্রিকায় ও এটা নিয়ে লেখা হতো।’

 

বিশেষ অতিথি কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সোলায়মান বলেন, ‘এইবারের কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস আমাদের মনে বিশেষ এক অনুভূতি সৃষ্টি করেছে। এই অনুভূতির জন্য আমাদেরকে ১৮ বছর অপেক্ষা করতে হয়ছে। আজকের এই দিনে আসতে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্যের ত্যাগকে আমি শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি। সেই সাথে আমি প্রতিষ্ঠাকালীন কর্মকর্তা, কর্মচারীদের ত্যাগকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে আজকে আমরা এই পর্যায়ে আসতে পেরেছি। আজকে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসে আমাদের একটাই অঙ্গীকার হোক আমরা সকলেই একে অপরের সহিত মিলেমিশে, কোনো বিভাজন না করে বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিয়ে যাব। মনে রাখবেন আপনার সন্তান যদি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য প্রথম চয়েস না রাখে তাহলে আমাদের পরিশ্রম বৃথা। তাই চলুন একসাথে কাজ করি, একসাথে এগিয়ে যায়।’

বিশেষ অতিথি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাসুদা কামাল বলেন,’ আজকে এখানে প্রত্যেকেই স্মৃতিচারণ করছে আমি স্মৃতিচারণের দিকে যাব না। আমি একজন প্রতিষ্ঠাকালীন শিক্ষক হিসেবে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছি। দীর্ঘদিন ফ্যাসিস্ট সরকারের শাসনের পর এবারের আয়োজনটা একটু ভিন্ন হয়েছে। আজকে এই দিনটি দেখার জন্য আমাদের আব্দুল কাইয়ুমের জীবন গেছে এবং আরো অনেকই আহত হয়েছেন। এখন অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীরাই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি হচ্ছে তারাই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ। আমাদের অতিতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।’

প্রধান অতিথি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ হায়দার আলী বলেন, ‘আমি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা মিশন নিয়ে এসেছি। আমার মিশন হচ্ছে দুর্নীতিমুক্ত রেখে সুন্দর বিশ্ববিদ্যালয় গড়তে যা দরকার তা বাস্তবায়ন করা। আমি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়কে এমন একটা পর্যায়ে নিয়ে যেতে চাই যেখানে শিক্ষকদের মধ্যে দলাদলি থাকবে না,গবেষণায় হবে তাদের প্রধান মাপকাঠি। এখন পর্যন্ত আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৮৩জনের মধ্যে ১০১জন শিক্ষকের প্রোফাইল ব্ল্যাঙ্ক। বিশ্বিবদ্যালয়ের শিক্ষকের কাজ শুধু পড়াশোনা করানো নয়। তাই আমরা সকলেই পড়ানোর পাশাপাশি গবেষণা করে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রথম শ্রেণির বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার অঙ্গিকার করি।’

অনুষ্ঠানের সভাপতি অধ্যাপক ড. এম এম শরীফুল করিম কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শুরুর দিকের সময় নিয়ে স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস এক ঐতিহ্যের ইতিহাস। শুরুতে আমাদের কিছুই ছিল না, বিগত ১৯ বছরে আমাদের ইতিহাস হয়েছে, গৌরব হয়েছে। আমরা পনেরোজন শিক্ষক শুরু করেছিলাম, কারো পিএইচডি ডিগ্রি ছিল না। এখন প্রতিমাসে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থীরা পিএইচডি ডিগ্রির জন্য আবেদন করছে। বিগত ১৫-১৬ বছরে আমরা অনেক অবহেলার শিকার হয়েছি। আজকের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে প্রতিজ্ঞা করতে চাই আগামী  ৩১ মে ২৫ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে একটা নতুন মাইলফলক গড়তে চাই।’

উল্লেখ্য, ২০০৬ সালের ২৮ মে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। ২০০৭ সালে চারটি অনুষদ সাতটি বিভাগের ১৫ জন শিক্ষক এবং ৩০০ শিক্ষার্থীর নিয়ে আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে ছয়টি অনুষদের ১৯ টি বিভাগে ৭ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছেন।