ঢাকা ০২:৪৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশ ঘিরে হামলা-সংঘর্ষ, নিহত ৪

গোপালগঞ্জ
  • Update Time : ১০:১৫:৪২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫
  • / ৭৭ Time View

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশ শেষে ফেরার পথে পুলিশ-সেনাবাহিনী ও স্থানীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে চারজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় পুলিশ-সাংবাদিকসহ আরও ১২ জনের আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

নিহত হওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছেন গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক জ্বীবিতেশ বিশ্বাস। তিনি বলেন, গুলিবিদ্ধ অবস্থায় বেশ কয়েকজন হাসপাতালে আনা হয়েছিল। এরমধ্যে চারজন মৃত ও পুলিশ-সাংবাদিকসহ ১২ জন আহত রয়েছেন।

নিহত ব্যক্তিরা হলেন গোপালগঞ্জ শহরের উদয়ন রোডের বাসিন্দা সন্তোষ সাহার ছেলে দীপ্ত সাহা (২৫), কোটালীপাড়ার রমজান কাজী (১৮), টুঙ্গীপাড়ার সোহেল মোল্লা (৪১) ও সদর উপজেলার ভেড়ার বাজার এলাকার ইমন (২৪)।

জীবিতেষ বিশ্বাস বলেন, আরও ৯ জনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। তাঁদের অস্ত্রোপচার চলছে।

এর আগে গোপালগঞ্জের পৌর পার্কে এনসিপির সমাবেশ শেষে হামলার ঘটনা ঘটে। এরপর ১৪৪ ধারা জারি করা হয়।

ছবি : সংগৃহীত

প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন বলেন, সমাবেশ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আওয়ামী লীগের লোকজন লাঠিসোঁটা নিয়ে এনসিপির নেতা-কর্মীদের ঘিরে হামলা চালান। এ সময় পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা সাউন্ড গ্রেনেড ও ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। এনসিপির নেতা-কর্মীরা অন্যদিক দিয়ে গাড়ি ঘুরিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।

হামলার ঘটনার পর এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা এই হামলা চালিয়েছেন। এ সময় পুলিশ-সেনাবাহিনী নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে। তাদের (এনসিপি) বলা হয়েছিল, সবকিছু ঠিক আছে। কিন্তু তাঁরা সমাবেশস্থলে এসে দেখেন, পরিস্থিতি ঠিক নেই।

প্রসঙ্গত, জুলাইয়ের ১ তারিখ থেকে ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচি পালন করছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। মাসব্যাপী এই কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ গোপালগঞ্জে পদযাত্রা ছিল দলটির। গতকাল মঙ্গলবার দলের ভেরিফায়েড ফেসবুকে এই কর্মসূচিকে ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ নাম দেওয়া হয়।

এই কর্মসূচি ঘিরে গোপালগঞ্জ সদরে আজ সকালে পুলিশের একটি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। কাছাকাছি সময়ে হামলা করা হয় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়ি বহরেও। এ দুই ঘটনায় স্থানীয় ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জড়িত বলে জানায় গোপালগঞ্জ পুলিশ।

দুপুর ১টা ৩৫ মনিটের দিকে গোপালগঞ্জ শহরের পৌরপার্ক এলাকায় এনসিপির সমাবেশ মঞ্চে হামলা চালায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। তারা মঞ্চে থাকা সাউন্ড বক্স, মাইক ও চেয়ার ভাঙচুর করেন এবং উপস্থিত এনসিপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালায়। এনসিপির নেতাকর্মীরা পুলিশের সহায়তায় সেখান থেকে সরে যান।

এ ঘটনার আধা ঘণ্টা পরে ওই সমাবেশ স্থলেই পুলিশি নিরপত্তায় সমাবেশ করে এনসিপি। সেখানে নাহিদ ইসলাম, সারজিস আলম ও আখতার হোসেনসহ কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন।

সমাবেশ শেষ হওয়ার পর এনসিপির নেতারা যখন গাড়ি বহর নিয়ে মাদারীপুর রওনা হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তখন আবার ছাত্রলীগের কয়েকশ নেতাকর্মী তাদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় পুলিশও পিছু হটে। এনসিপির নেতাকর্মীরা পালিয়ে জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে আশ্রয় নেন। হামলাকারীরা এনসিপির সমাবেশ মঞ্চ এবং আশপাশের বিভিন্ন স্থানে চেয়ার-টেবিল ও আসবাবপত্রে অঅগুন ধরিয়ে দেন। এতে শহরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

এরপর থেকে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে হামলাকারীদের ব্যাপক সংঘর্ষ শুরু হয়। গোপালগঞ্জ শহরের বিভিন্ন স্থানে এ সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশের সঙ্গে যোগ দেয় বিজিবি। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকেও বাড়তি জনবল নিয়োজিত করা হয়। বিকেলের দিকে গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারে হামলা ও ভাঙচুরের খবর পাওয়া যায়। এরপর সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশ একযোগে হামলাকারীদের সরাতে অভিযান শুরু করে।

এদিকে জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গোপালগঞ্জে ২২ ঘণ্টার জন্য কারফিউ জারি করা হয়েছে। সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের পাঠানো এক বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়। বার্তায় বলা হয়, আজ বুধবার রাত ৮টা থেকে পরদিন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করা হয়েছে।

Please Share This Post in Your Social Media

গোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশ ঘিরে হামলা-সংঘর্ষ, নিহত ৪

গোপালগঞ্জ
Update Time : ১০:১৫:৪২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫

গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশ শেষে ফেরার পথে পুলিশ-সেনাবাহিনী ও স্থানীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে চারজন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় পুলিশ-সাংবাদিকসহ আরও ১২ জনের আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

নিহত হওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছেন গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক জ্বীবিতেশ বিশ্বাস। তিনি বলেন, গুলিবিদ্ধ অবস্থায় বেশ কয়েকজন হাসপাতালে আনা হয়েছিল। এরমধ্যে চারজন মৃত ও পুলিশ-সাংবাদিকসহ ১২ জন আহত রয়েছেন।

নিহত ব্যক্তিরা হলেন গোপালগঞ্জ শহরের উদয়ন রোডের বাসিন্দা সন্তোষ সাহার ছেলে দীপ্ত সাহা (২৫), কোটালীপাড়ার রমজান কাজী (১৮), টুঙ্গীপাড়ার সোহেল মোল্লা (৪১) ও সদর উপজেলার ভেড়ার বাজার এলাকার ইমন (২৪)।

জীবিতেষ বিশ্বাস বলেন, আরও ৯ জনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়। তাঁদের অস্ত্রোপচার চলছে।

এর আগে গোপালগঞ্জের পৌর পার্কে এনসিপির সমাবেশ শেষে হামলার ঘটনা ঘটে। এরপর ১৪৪ ধারা জারি করা হয়।

ছবি : সংগৃহীত

প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন বলেন, সমাবেশ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আওয়ামী লীগের লোকজন লাঠিসোঁটা নিয়ে এনসিপির নেতা-কর্মীদের ঘিরে হামলা চালান। এ সময় পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা সাউন্ড গ্রেনেড ও ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। এনসিপির নেতা-কর্মীরা অন্যদিক দিয়ে গাড়ি ঘুরিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।

হামলার ঘটনার পর এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা এই হামলা চালিয়েছেন। এ সময় পুলিশ-সেনাবাহিনী নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে। তাদের (এনসিপি) বলা হয়েছিল, সবকিছু ঠিক আছে। কিন্তু তাঁরা সমাবেশস্থলে এসে দেখেন, পরিস্থিতি ঠিক নেই।

প্রসঙ্গত, জুলাইয়ের ১ তারিখ থেকে ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচি পালন করছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। মাসব্যাপী এই কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ গোপালগঞ্জে পদযাত্রা ছিল দলটির। গতকাল মঙ্গলবার দলের ভেরিফায়েড ফেসবুকে এই কর্মসূচিকে ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ নাম দেওয়া হয়।

এই কর্মসূচি ঘিরে গোপালগঞ্জ সদরে আজ সকালে পুলিশের একটি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। কাছাকাছি সময়ে হামলা করা হয় সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়ি বহরেও। এ দুই ঘটনায় স্থানীয় ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জড়িত বলে জানায় গোপালগঞ্জ পুলিশ।

দুপুর ১টা ৩৫ মনিটের দিকে গোপালগঞ্জ শহরের পৌরপার্ক এলাকায় এনসিপির সমাবেশ মঞ্চে হামলা চালায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। তারা মঞ্চে থাকা সাউন্ড বক্স, মাইক ও চেয়ার ভাঙচুর করেন এবং উপস্থিত এনসিপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালায়। এনসিপির নেতাকর্মীরা পুলিশের সহায়তায় সেখান থেকে সরে যান।

এ ঘটনার আধা ঘণ্টা পরে ওই সমাবেশ স্থলেই পুলিশি নিরপত্তায় সমাবেশ করে এনসিপি। সেখানে নাহিদ ইসলাম, সারজিস আলম ও আখতার হোসেনসহ কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন।

সমাবেশ শেষ হওয়ার পর এনসিপির নেতারা যখন গাড়ি বহর নিয়ে মাদারীপুর রওনা হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তখন আবার ছাত্রলীগের কয়েকশ নেতাকর্মী তাদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় পুলিশও পিছু হটে। এনসিপির নেতাকর্মীরা পালিয়ে জেলা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে আশ্রয় নেন। হামলাকারীরা এনসিপির সমাবেশ মঞ্চ এবং আশপাশের বিভিন্ন স্থানে চেয়ার-টেবিল ও আসবাবপত্রে অঅগুন ধরিয়ে দেন। এতে শহরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

এরপর থেকে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে হামলাকারীদের ব্যাপক সংঘর্ষ শুরু হয়। গোপালগঞ্জ শহরের বিভিন্ন স্থানে এ সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশের সঙ্গে যোগ দেয় বিজিবি। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকেও বাড়তি জনবল নিয়োজিত করা হয়। বিকেলের দিকে গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারে হামলা ও ভাঙচুরের খবর পাওয়া যায়। এরপর সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশ একযোগে হামলাকারীদের সরাতে অভিযান শুরু করে।

এদিকে জেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গোপালগঞ্জে ২২ ঘণ্টার জন্য কারফিউ জারি করা হয়েছে। সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের পাঠানো এক বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়। বার্তায় বলা হয়, আজ বুধবার রাত ৮টা থেকে পরদিন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করা হয়েছে।