ঢাকা ০১:৪৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৮ জুলাই ২০২৫, ১২ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ব্রেকিং নিউজঃ
যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২৫টি উড়োজাহাজ কিনবে সরকার রেহানার ছেলে ববির বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলা স্টারলিংকের ৮ স্যাটেলাইট স্টেশন ধ্বংস করলো রাশিয়া! মহানবীকে (সা.) কটূক্তির অভিযোগে কিশোর গ্রেপ্তার, ১৩ বাড়িতে ভাঙচুর তিন দিনের মধ্যে ঐকমত্যের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারব : আলী রীয়াজ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটি ছাড়া সব কমিটি স্থগিত দুর্নীতিবাজরাই কি বিচারপতি নিয়োগ পাচ্ছেন! গুলশানে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে গ্রেপ্তার রিয়াদের ফেসবুক পোস্ট ভাইরাল হাসিনা ও আ.লীগ সন্ত্রাসীদের পুশইন করুন : নাহিদ ইসলাম মসজিদ নির্মাণকে কেন্দ্র করে নিহতের ঘটনায় ১৪৪ ধারা জারি

গুলশানে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে গ্রেপ্তার রিয়াদের ফেসবুক পোস্ট ভাইরাল

সোশ্যাল মিডিয়া
  • Update Time : ১০:৫৬:৩০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ জুলাই ২০২৫
  • / ২১ Time View

আব্দুর রাজ্জাক রিয়াদ। ছবি : সংগৃহীত

রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশানে চাঁদাবাজির অভিযোগে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৫ নেতা। তারা গুলশানের বাসিন্দা সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের স্বামী সিদ্দিক আবু জাফরের কাছে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। ‘প্রোটেকশন মানি’ হিসেবে এই টাকা চাওয়া হয় বলে দাবি করেন ভুক্তভোগী।

তিনি জানান, আমাদের প্রোটেকশন হিসেবে তারা এ টাকা দাবি করে। টাকা না দিলে আওয়ামী লীগের দোসর বলে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। বাধ্য হয়ে তাদের হাতে নগদ ১০ লাখ টাকা তুলে দেন সিদ্দিক আবু জাফর। কিন্তু এতে সন্তুষ্ট না থেকে চাহিদা মতো বাকি ৪০ লাখ টাকা চাঁদা নিতে আরও কয়েকবার শাম্মীদের বাড়িতে যান ওই নেতারা। সেখানে গিয়ে অবশেষে ধরা পড়েন পুলিশের হাতে।

এ ঘটনায় রোববার (২৭ জুলাই) শাম্মী আহমেদের স্বামী সিদ্দিক আবু জাফর গুলশান থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।

পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া ৫ জন হলেন— মো. সাকাদাউন সিয়াম, সাদমান সাদাব, মো. আমিনুল ইসলাম, ইব্রাহীম হোসেন মুন্না ও আব্দুর রাজ্জাক রিয়াদ।

পাঁচজনের মধ্যে চারজন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিভিন্ন কমিটিতে আছেন। এর মধ্যে ইব্রাহীম হোসেন মুন্না বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঢাকা মহানগর শাখার আহ্বায়ক। একই কমিটির সদস্য মো. সাকাদাউন সিয়াম ও সাদমান সাদাব।

আব্দুর রাজ্জাক রিয়াদ নামে আরেকজন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের সদস্য।

এছাড়া আব্দুর রাজ্জাক রিয়াদ পুলিশ সংস্কার কমিশনের মেম্বার বলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক পোস্টের মাধ্যমে দাবি করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম সদস্যসচিব মাহিন সরকার।

তিনি তার পোস্টে লেখেন, আব্দুর রাজ্জাক নামে যে ছেলেটা গ্রেপ্তার হয়েছে সে পুলিশ সংস্কার কমিশনের মেম্বার। অর্থাৎ, গুরুত্বের বিচারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি মন্ত্রণালয়ের সে লিস্টেড ছাত্র প্রতিনিধি। বাংলাদেশে যে কালচার চলে তাতে সে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কোনোভাবে যুক্ত, এই পরিচয়েই অর্থ উপার্জন করতে পারে। তার মতো ব্যক্তিকে কীভাবে স্বরাষ্ট্র বিভাগের পুলিশ সংস্কার কমিশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় সুপারিশ করা হলো এটা সামনে আনা প্রয়োজন।

রিয়াদের পরিচয় নিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আল আমিন হোসাইন বলেন, তার পরিচয়ের বিষয়ে আমরা এখনো নিশ্চিত কিছু বলতে পারব না। তবে তিনি আমাদের কাছে দাবি করেছেন, তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যাওয়া আসা করেন।

চাঁদা দাবির অভিযোগে নিজেদের পাঁচজন গ্রেপ্তার হওয়ায় বেশ বিপাকে পড়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সারা দেশে নানামুখী সমালোচনার মধ্যে পড়েছে এ সংগঠন। এরই মধ্যে তিনজনকে সাংগঠনিক শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে বহিষ্কার করেছে সংগঠনটি।

বহিষ্কৃতরা হলেন— বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঢাকা মহানগর শাখার আহ্বায়ক ইব্রাহিম হোসেন মুন্না, সদস্য মো. সাকাদাউন ও সাদাব। শনিবার (২৬ জুলাই) রাতেই তাদের বহিষ্কার করা হয়।

এ দিকে আজ রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটি ছাড়া সব কমিটি স্থগিত ঘোষণা করেছেন সংগঠনটির সভাপতি রশিদুল ইসলাম রিফাত।রাজধানীর শাহবাগে চলমান বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে ডাকা এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন তিনি।

এদিকে, সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের গুলশানের বাসায় চাঁদাবাজির অভিযোগে দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন

এদিকে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক আব্দুর রাজ্জাক রিয়াদ গ্রেপ্তার হওয়ার পর নৈতিকতার বিষয় নিয়ে দেওয়া রিয়াদের কয়েকটি ফেসবুক পোস্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

আব্দুর রাজ্জাক রিয়াদের সবচেয়ে আলোচিত স্ট্যাটাস হলো, ‘রাজনীতি তারাই করুন, যারা মানুষের সেবা করতে চান। নিজের জন্য কিছু করতে চাইলে ব্যবসা করুন, রাজনীতি নয়।’

আরেকটি পোস্টে রিয়াদ লিখেছেন, একবার কেউ উর্দু ভাষার প্রখ্যাত লেখক সাদাত হাসান মান্টোকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘আপনার দেশের অবস্থা কেমন?’

মান্টো জবাব দেন, ‘জেলখানার নামাজের মতো।’ প্রশ্নকারী বলেন, ‘বুঝলাম না।’

মান্টোর ব্যাখ্যা ছিল, ‘আজান দেয় বাটপার, ইমামতি করে খুনি, আর নামাজ পড়ে সব চোর।’

এদিকে সামাজিক মাধ্যমে রিয়াদের বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে তোলা ছবি নিয়েও চলছে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনা।

এর আগে গুলশান থানায় একটি মামলা দায়ের করেন সিদ্দিক আবু জাফর। মামলায় তিনি ছয়জনকে আসামি করেন। অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন আব্দুর রাজ্জাক রিয়াদ, কাজী গৌরব অপু, সাকাদাউন সিয়াম, সাদমান সাদাব, মো. ইব্রাহিম হোসেন এবং এক শিশু মো. আমিনুল ইসলাম। অভিযুক্ত শিশু আমিনুল ইসলামের বিচার প্রক্রিয়া পৃথক আদালতে সম্পন্ন হবে।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গত ১৭ জুলাই সকাল ১০টার দিকে আসামি আব্দুর রাজ্জাক রিয়াদ ও কাজী গৌরব অপু গুলশানের ৮৩ নম্বর রোডে সাবেক সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য শাম্মি আহমেদের বাসায় যান। সেখানে তারা হুমকি-ধমকি দিয়ে ৫০ লাখ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার দাবি করেন। টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে তারা শাম্মি আহমেদকে ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ আখ্যা দিয়ে পুলিশ দিয়ে গ্রেপ্তারের ভয় দেখান এবং টাকার জন্য চাপ দিতে থাকেন। একপর্যায়ে মামলার বাদী সিদ্দিক আবু জাফর বাধ্য হয়ে নিজের কাছে থাকা নগদ পাঁচ লাখ টাকা এবং ভাইয়ের কাছ থেকে আরও পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে আসামিদের দেন।

এতে বলা হয়, এরপর ১৯ জুলাই রাত সাড়ে ১০টার দিকে রিয়াদ ও অপু বাদীর বাসায় গিয়ে তার ফ্ল্যাটের দরজায় জোরে ধাক্কা দেন। বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে গুলশান থানায় জানানো হলে আসামিরা সেখান থেকে চলে যান। পরে ২৬ জুলাই বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে রিয়াদের নেতৃত্বে অন্যান্য আসামিরা ফের বাদীর বাসার সামনে গিয়ে তাকে খুঁজতে থাকে। দারোয়ান মোবাইল ফোনে বিষয়টি জানালে বাদী উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। তখন আসামিরা হুমকি দেয়- দাবি করা বাকি ৪০ লাখ টাকা না দিলে তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হবে। এ ঘটনায় গুলশান থানা পুলিশকে আবারও জানানো হলে তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পাঁচজন আসামিকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করে। এ সময় এজাহারভুক্ত আসামি কাজী গৌরব অপু দৌড়ে পালিয়ে যান।

এদিকে চাঁদাবাজির অভিযোগে গ্রেপ্তার রিয়াদসহ চারজনের সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। রোববার (২৭ জুলাই) ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জিয়াদুর রহমান শুনানি শেষে তাদের এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ডে পাঠানো বাকি তিনজন হলেন- সাকাদাউন সিয়াম, সাদমান সাদাব এবং মো. ইব্রাহিম হোসেন।

রোববার বিকেল ৪টার পর অভিযুক্ত চারজনকে আদালতে হাজির করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার পরিদর্শক মোখলেছুর রহমান। অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তিনি প্রত্যেকের ১০ দিন করে রিমান্ড আবেদন করেন।

রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন শামসুদ্দোহা সুমন। এ সময় বিএনপিপন্থি একাধিক আইনজীবীও রাষ্ট্রপক্ষের পক্ষে সহায়তা করে আসামিদের সর্বোচ্চ রিমান্ড চেয়ে যুক্তি উপস্থাপন করেন। অন্যদিকে, আসামিপক্ষের আইনজীবীরা রিমান্ড বাতিল ও জামিনের আবেদন করেন। দুই পক্ষের শুনানি শেষে আদালত আসামিদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে প্রত্যেকের সাত দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

Please Share This Post in Your Social Media

গুলশানে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে গ্রেপ্তার রিয়াদের ফেসবুক পোস্ট ভাইরাল

সোশ্যাল মিডিয়া
Update Time : ১০:৫৬:৩০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ জুলাই ২০২৫

রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশানে চাঁদাবাজির অভিযোগে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৫ নেতা। তারা গুলশানের বাসিন্দা সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের স্বামী সিদ্দিক আবু জাফরের কাছে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। ‘প্রোটেকশন মানি’ হিসেবে এই টাকা চাওয়া হয় বলে দাবি করেন ভুক্তভোগী।

তিনি জানান, আমাদের প্রোটেকশন হিসেবে তারা এ টাকা দাবি করে। টাকা না দিলে আওয়ামী লীগের দোসর বলে পুলিশে ধরিয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। বাধ্য হয়ে তাদের হাতে নগদ ১০ লাখ টাকা তুলে দেন সিদ্দিক আবু জাফর। কিন্তু এতে সন্তুষ্ট না থেকে চাহিদা মতো বাকি ৪০ লাখ টাকা চাঁদা নিতে আরও কয়েকবার শাম্মীদের বাড়িতে যান ওই নেতারা। সেখানে গিয়ে অবশেষে ধরা পড়েন পুলিশের হাতে।

এ ঘটনায় রোববার (২৭ জুলাই) শাম্মী আহমেদের স্বামী সিদ্দিক আবু জাফর গুলশান থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।

পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া ৫ জন হলেন— মো. সাকাদাউন সিয়াম, সাদমান সাদাব, মো. আমিনুল ইসলাম, ইব্রাহীম হোসেন মুন্না ও আব্দুর রাজ্জাক রিয়াদ।

পাঁচজনের মধ্যে চারজন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিভিন্ন কমিটিতে আছেন। এর মধ্যে ইব্রাহীম হোসেন মুন্না বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঢাকা মহানগর শাখার আহ্বায়ক। একই কমিটির সদস্য মো. সাকাদাউন সিয়াম ও সাদমান সাদাব।

আব্দুর রাজ্জাক রিয়াদ নামে আরেকজন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের সদস্য।

এছাড়া আব্দুর রাজ্জাক রিয়াদ পুলিশ সংস্কার কমিশনের মেম্বার বলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক পোস্টের মাধ্যমে দাবি করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম সদস্যসচিব মাহিন সরকার।

তিনি তার পোস্টে লেখেন, আব্দুর রাজ্জাক নামে যে ছেলেটা গ্রেপ্তার হয়েছে সে পুলিশ সংস্কার কমিশনের মেম্বার। অর্থাৎ, গুরুত্বের বিচারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি মন্ত্রণালয়ের সে লিস্টেড ছাত্র প্রতিনিধি। বাংলাদেশে যে কালচার চলে তাতে সে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কোনোভাবে যুক্ত, এই পরিচয়েই অর্থ উপার্জন করতে পারে। তার মতো ব্যক্তিকে কীভাবে স্বরাষ্ট্র বিভাগের পুলিশ সংস্কার কমিশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় সুপারিশ করা হলো এটা সামনে আনা প্রয়োজন।

রিয়াদের পরিচয় নিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আল আমিন হোসাইন বলেন, তার পরিচয়ের বিষয়ে আমরা এখনো নিশ্চিত কিছু বলতে পারব না। তবে তিনি আমাদের কাছে দাবি করেছেন, তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যাওয়া আসা করেন।

চাঁদা দাবির অভিযোগে নিজেদের পাঁচজন গ্রেপ্তার হওয়ায় বেশ বিপাকে পড়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সারা দেশে নানামুখী সমালোচনার মধ্যে পড়েছে এ সংগঠন। এরই মধ্যে তিনজনকে সাংগঠনিক শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে বহিষ্কার করেছে সংগঠনটি।

বহিষ্কৃতরা হলেন— বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঢাকা মহানগর শাখার আহ্বায়ক ইব্রাহিম হোসেন মুন্না, সদস্য মো. সাকাদাউন ও সাদাব। শনিবার (২৬ জুলাই) রাতেই তাদের বহিষ্কার করা হয়।

এ দিকে আজ রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটি ছাড়া সব কমিটি স্থগিত ঘোষণা করেছেন সংগঠনটির সভাপতি রশিদুল ইসলাম রিফাত।রাজধানীর শাহবাগে চলমান বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে ডাকা এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন তিনি।

এদিকে, সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আহমেদের গুলশানের বাসায় চাঁদাবাজির অভিযোগে দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন

এদিকে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক আব্দুর রাজ্জাক রিয়াদ গ্রেপ্তার হওয়ার পর নৈতিকতার বিষয় নিয়ে দেওয়া রিয়াদের কয়েকটি ফেসবুক পোস্ট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

আব্দুর রাজ্জাক রিয়াদের সবচেয়ে আলোচিত স্ট্যাটাস হলো, ‘রাজনীতি তারাই করুন, যারা মানুষের সেবা করতে চান। নিজের জন্য কিছু করতে চাইলে ব্যবসা করুন, রাজনীতি নয়।’

আরেকটি পোস্টে রিয়াদ লিখেছেন, একবার কেউ উর্দু ভাষার প্রখ্যাত লেখক সাদাত হাসান মান্টোকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘আপনার দেশের অবস্থা কেমন?’

মান্টো জবাব দেন, ‘জেলখানার নামাজের মতো।’ প্রশ্নকারী বলেন, ‘বুঝলাম না।’

মান্টোর ব্যাখ্যা ছিল, ‘আজান দেয় বাটপার, ইমামতি করে খুনি, আর নামাজ পড়ে সব চোর।’

এদিকে সামাজিক মাধ্যমে রিয়াদের বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে তোলা ছবি নিয়েও চলছে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনা।

এর আগে গুলশান থানায় একটি মামলা দায়ের করেন সিদ্দিক আবু জাফর। মামলায় তিনি ছয়জনকে আসামি করেন। অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন আব্দুর রাজ্জাক রিয়াদ, কাজী গৌরব অপু, সাকাদাউন সিয়াম, সাদমান সাদাব, মো. ইব্রাহিম হোসেন এবং এক শিশু মো. আমিনুল ইসলাম। অভিযুক্ত শিশু আমিনুল ইসলামের বিচার প্রক্রিয়া পৃথক আদালতে সম্পন্ন হবে।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গত ১৭ জুলাই সকাল ১০টার দিকে আসামি আব্দুর রাজ্জাক রিয়াদ ও কাজী গৌরব অপু গুলশানের ৮৩ নম্বর রোডে সাবেক সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য শাম্মি আহমেদের বাসায় যান। সেখানে তারা হুমকি-ধমকি দিয়ে ৫০ লাখ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার দাবি করেন। টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে তারা শাম্মি আহমেদকে ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ আখ্যা দিয়ে পুলিশ দিয়ে গ্রেপ্তারের ভয় দেখান এবং টাকার জন্য চাপ দিতে থাকেন। একপর্যায়ে মামলার বাদী সিদ্দিক আবু জাফর বাধ্য হয়ে নিজের কাছে থাকা নগদ পাঁচ লাখ টাকা এবং ভাইয়ের কাছ থেকে আরও পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে আসামিদের দেন।

এতে বলা হয়, এরপর ১৯ জুলাই রাত সাড়ে ১০টার দিকে রিয়াদ ও অপু বাদীর বাসায় গিয়ে তার ফ্ল্যাটের দরজায় জোরে ধাক্কা দেন। বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে গুলশান থানায় জানানো হলে আসামিরা সেখান থেকে চলে যান। পরে ২৬ জুলাই বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে রিয়াদের নেতৃত্বে অন্যান্য আসামিরা ফের বাদীর বাসার সামনে গিয়ে তাকে খুঁজতে থাকে। দারোয়ান মোবাইল ফোনে বিষয়টি জানালে বাদী উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। তখন আসামিরা হুমকি দেয়- দাবি করা বাকি ৪০ লাখ টাকা না দিলে তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হবে। এ ঘটনায় গুলশান থানা পুলিশকে আবারও জানানো হলে তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পাঁচজন আসামিকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করে। এ সময় এজাহারভুক্ত আসামি কাজী গৌরব অপু দৌড়ে পালিয়ে যান।

এদিকে চাঁদাবাজির অভিযোগে গ্রেপ্তার রিয়াদসহ চারজনের সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। রোববার (২৭ জুলাই) ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জিয়াদুর রহমান শুনানি শেষে তাদের এ রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ডে পাঠানো বাকি তিনজন হলেন- সাকাদাউন সিয়াম, সাদমান সাদাব এবং মো. ইব্রাহিম হোসেন।

রোববার বিকেল ৪টার পর অভিযুক্ত চারজনকে আদালতে হাজির করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গুলশান থানার পরিদর্শক মোখলেছুর রহমান। অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তিনি প্রত্যেকের ১০ দিন করে রিমান্ড আবেদন করেন।

রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন শামসুদ্দোহা সুমন। এ সময় বিএনপিপন্থি একাধিক আইনজীবীও রাষ্ট্রপক্ষের পক্ষে সহায়তা করে আসামিদের সর্বোচ্চ রিমান্ড চেয়ে যুক্তি উপস্থাপন করেন। অন্যদিকে, আসামিপক্ষের আইনজীবীরা রিমান্ড বাতিল ও জামিনের আবেদন করেন। দুই পক্ষের শুনানি শেষে আদালত আসামিদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে প্রত্যেকের সাত দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।