ঢাকা ০৩:৫৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গুড়ের খাঁটি স্বাদ টিকে রেখেছেন দুই যুবক

ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি
  • Update Time : ১২:২৭:২৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫
  • / ১৬ Time View

গুড় তৈরিতে ব্যস্ত আব্দুল জলিল ও সাইফুল ইসলাম।

শীত এলেই ঘরে ঘরে পিঠার আয়োজন। পিঠার প্রাণ আবার খেজুরের গুড়। এদিকে ভেজালের দাপটে খেজুরের খাঁটি গুড় পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।

এর মাঝে এখনও কিছু মানুষ সততা আর পরিশ্রম দিয়ে তৈরি করছেন খেজুরের নিরাপদ গুড়। এমনই দুই যুবক হলেন আব্দুল জলিল ও সাইফুল ইসলাম। ঈশ্বরদীতে ১৯ বছর ধরে তারা তৈরি করছেন খেজুরের নিরাপদ গুড়। ভেজালের বিরুদ্ধে নীরব লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।

প্রতি বছর শীত মৌসুমে নাটোরের গৌরীপুর থেকে ঈশ্বরদীর সাঁড়াগোপালপুর এলাকায় এসে কাজ শুরু করেন তারা। এই এলাকার খেজুর গাছ থেকেই সংগ্রহ করেন রস। একই জায়গায়, একই পদ্ধতিতে তৈরি হয় তাদের গুড়। প্রতিদিন বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সাঁড়াগোপালপুর ও আশপাশের গ্রামে গ্রামে খেজুর গাছে হাঁড়ি বাঁধেন। রাত ২টা থেকে ভোর পর্যন্ত কনকনে শীত উপেক্ষা করে সংগ্রহ করেন রস। সকালে সেই রস বড় কড়াইয়ে জাল দিয়ে তৈরি করেন খেজুরের গুড়। গাছ থেকে গুড়–সব কাজই হয় সবার সামনে। প্রায় ২ থেকে ৩ ঘণ্টা ধরে জাল দেওয়ার পর রস পরিণত হয় গুড়ে। প্রতিদিন তৈরি হয় ৭০ থেকে ৮০ কেজি গুড়।

এই গুড় স্থানীয় বাজারে বিক্রি হয়। সাধারণ গুড় যেখানে ১৫০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হয়, সেখানে তাদের গুড়ের দাম ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। তবুও চাহিদা বেশি।

আব্দুল জলিল জানান, তৈরি হওয়ার আগেই গুড় বিক্রি হয়ে যায়। অগ্রিম অর্ডার নিয়েও সব সময় সরবরাহ করা সম্ভব হয় না।

গাছি সাইফুল ইসলাম বলেন, খাঁটি গুড় তৈরিতে লাভ কম হলেও মানুষকে ভালো জিনিস দিতে পারছি–এই তৃপ্তিই বড়।

স্থানীয় বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম বলেন–বর্তমানে বাজারের অধিকাংশ গুড়ই ভেজাল। গুড়ে মেশানো হচ্ছে চিনি। কোথাও যোগ হচ্ছে রং ও ক্ষতিকর কেমিক্যাল। আব্দুল জলিল ও সাইফুল ইসলামের গুড় কিনে প্রতারিত হওয়ার সুযোগ নেই।

আব্দুল জলিল ও সাইফুল ইসলামের নিরাপদ গুড়ের সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে এলাকার বাইরেও। অনেকে অগ্রিম অর্ডার দিয়ে কিনে নেন। অনলাইন বিক্রেতা এই গুড় কিনে বেশি দামে বিক্রি করেন।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

গুড়ের খাঁটি স্বাদ টিকে রেখেছেন দুই যুবক

ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি
Update Time : ১২:২৭:২৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫

শীত এলেই ঘরে ঘরে পিঠার আয়োজন। পিঠার প্রাণ আবার খেজুরের গুড়। এদিকে ভেজালের দাপটে খেজুরের খাঁটি গুড় পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।

এর মাঝে এখনও কিছু মানুষ সততা আর পরিশ্রম দিয়ে তৈরি করছেন খেজুরের নিরাপদ গুড়। এমনই দুই যুবক হলেন আব্দুল জলিল ও সাইফুল ইসলাম। ঈশ্বরদীতে ১৯ বছর ধরে তারা তৈরি করছেন খেজুরের নিরাপদ গুড়। ভেজালের বিরুদ্ধে নীরব লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন তারা।

প্রতি বছর শীত মৌসুমে নাটোরের গৌরীপুর থেকে ঈশ্বরদীর সাঁড়াগোপালপুর এলাকায় এসে কাজ শুরু করেন তারা। এই এলাকার খেজুর গাছ থেকেই সংগ্রহ করেন রস। একই জায়গায়, একই পদ্ধতিতে তৈরি হয় তাদের গুড়। প্রতিদিন বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সাঁড়াগোপালপুর ও আশপাশের গ্রামে গ্রামে খেজুর গাছে হাঁড়ি বাঁধেন। রাত ২টা থেকে ভোর পর্যন্ত কনকনে শীত উপেক্ষা করে সংগ্রহ করেন রস। সকালে সেই রস বড় কড়াইয়ে জাল দিয়ে তৈরি করেন খেজুরের গুড়। গাছ থেকে গুড়–সব কাজই হয় সবার সামনে। প্রায় ২ থেকে ৩ ঘণ্টা ধরে জাল দেওয়ার পর রস পরিণত হয় গুড়ে। প্রতিদিন তৈরি হয় ৭০ থেকে ৮০ কেজি গুড়।

এই গুড় স্থানীয় বাজারে বিক্রি হয়। সাধারণ গুড় যেখানে ১৫০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হয়, সেখানে তাদের গুড়ের দাম ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। তবুও চাহিদা বেশি।

আব্দুল জলিল জানান, তৈরি হওয়ার আগেই গুড় বিক্রি হয়ে যায়। অগ্রিম অর্ডার নিয়েও সব সময় সরবরাহ করা সম্ভব হয় না।

গাছি সাইফুল ইসলাম বলেন, খাঁটি গুড় তৈরিতে লাভ কম হলেও মানুষকে ভালো জিনিস দিতে পারছি–এই তৃপ্তিই বড়।

স্থানীয় বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম বলেন–বর্তমানে বাজারের অধিকাংশ গুড়ই ভেজাল। গুড়ে মেশানো হচ্ছে চিনি। কোথাও যোগ হচ্ছে রং ও ক্ষতিকর কেমিক্যাল। আব্দুল জলিল ও সাইফুল ইসলামের গুড় কিনে প্রতারিত হওয়ার সুযোগ নেই।

আব্দুল জলিল ও সাইফুল ইসলামের নিরাপদ গুড়ের সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে এলাকার বাইরেও। অনেকে অগ্রিম অর্ডার দিয়ে কিনে নেন। অনলাইন বিক্রেতা এই গুড় কিনে বেশি দামে বিক্রি করেন।