গুচ্ছ পরীক্ষায় প্রক্সি জালিয়াতি: নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে আটক ৩

- Update Time : ০৪:১৮:৪০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৮ অগাস্ট ২০২৫
- / ৪২ Time View
গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় প্রক্সি জালিয়াতির অভিযোগে তিনজনকে আটক করেছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগে চূড়ান্ত ভর্তি প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে এসে ধরা পড়েন ত্রিশালের ওবায়েত হাসান আফিক (রোল: ২০১৬৯৭)। জিজ্ঞাসাবাদে একই চক্রের আরও দুইজনের সম্পৃক্ততা উঠে আসে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, চূড়ান্ত ভর্তি প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে এসে নিজের স্বাক্ষর মেলাতে ব্যর্থ হন আফিক। প্রবেশপত্রের ছবির সঙ্গে চেহারার অমিল ও বিজ্ঞান বিভাগের সাধারণ প্রশ্নের উত্তর দিতে না পারায় ভাইভা বোর্ডের শিক্ষকদের সন্দেহ হয়। অভিভাবকের কথা জানতে চাইলে তিনি বড় ভাই পরিচয়ে পনির উদ্দিন খান পাভেলকে নিয়ে আসেন।
কথোপকথনে অসঙ্গতি ধরা পড়লে শিক্ষকেরা আফিকের ফোনের হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ পরীক্ষা করে পাভেলের সঙ্গে স্বাক্ষরের কৌশল ও ভর্তি লেনদেন নিয়ে আলাপের প্রমাণ পান। পাভেলের ফোনে অসংখ্য ভর্তি ও চাকরিপ্রার্থীর প্রবেশপত্র ও ছবি পাওয়া যায়। জেরার মুখে আফিক প্রক্সি দেওয়ার কথা স্বীকার করেন।
পাভেলের ফোনে কল আসে ‘সিয়াম’ নামে এক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাটাবেইজে অনুসন্ধানে জানা যায়, তিনি সালমান ফারদিন সাজিদ সিয়াম ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে আইন ও বিচার বিভাগের শিক্ষার্থী। জিজ্ঞাসাবাদে সিয়াম স্বীকার করেন, কৌশিক কুমার চন্দ নামে এক শিক্ষার্থীর হয়ে তিনি ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছেন এবং এর বিনিময়ে পাভেলের কাছ থেকে প্রায় ১ লাখ টাকা পাওয়ার কথা ছিল। কৌশিক বর্তমানে লোক প্রশাসন ও সরকার পরিচালনা বিদ্যা বিভাগে ভর্তি হয়েছেন (রোল: ২০৪৩৯৩)।
জবানবন্দির সময় সিয়ামের ফোনে শান্ত ভূইয়া নামে এক শিক্ষার্থীর কল আসে, যিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের ছাত্র এবং সিয়ামের বন্ধু। শান্তর মাধ্যমেই সিয়ামের সঙ্গে পাভেলের পরিচয় হয়েছিল বলে জানা যায়।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে আরও জানা গেছে, পাভেলের বাড়ি মুন্সীগঞ্জের সিরাজদীখানে, আফিকের বাড়ি ময়মনসিংহের ত্রিশালের চরপাড়ায়। সিয়ামের ফোনে আরেক শিক্ষার্থীর ওএমআর শিটের ছবি পাওয়া যায়, যিনি ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগে ভর্তি হয়েছেন। পাভেলের দাবি, তিনি ‘বাবু’ নামে এক ব্যক্তির নির্দেশে কাজ করেন এবং ভর্তি-সংক্রান্ত বিষয়গুলো বাবুই দেখেন। বাবু সম্প্রতি কৌশিককে ভর্তি করাতে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছিলেন।
এখনও আফিকের হয়ে কে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে আফিক ও কৌশিক—দুজনের প্রক্সিই জামালপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রে দেওয়া হয়েছিল। এই ঘটনায় গুচ্ছ ভর্তি প্রক্রিয়ার দুর্বলতা, নতুন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পরীক্ষার স্বচ্ছতা এবং জামালপুর কেন্দ্রকে ঘিরে জালিয়াতি চক্রের বিস্তার নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “ঘটনাটি জামালপুরে ঘটলেও আমাদের ক্যাম্পাসে এসে ধরা পড়েছে। সবার সহযোগিতায় সত্য বের হবে। পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে তদন্ত চালানো হবে। তদন্তে আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বেরিয়ে আসতে পারে।”