ঢাকা ০২:৩৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২১ জুলাই ২০২৫, ৫ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গাড়ি কেনার জন্য টাকা না দেওয়ায় নির্যাতন, ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে স্ত্রীর মামলা

পঞ্চগড় প্রতিনিধি
  • Update Time : ১০:৪৭:৫১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫
  • / ২৭ Time View

স্ত্রী চৈতীর সঙ্গে আসিফ আলী জিভাল। ছবি: সংগৃহীত

পঞ্চগড়ের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আসিফ আলী জিভালের বিরুদ্ধে যৌতুকের দাবিতে মারধর ও পরকীয়ার অভিযোগ তুলেছেন তার স্ত্রী দেওয়ান স্বীকৃতি রহমান ওরফে চৈতী। এ ঘটনায় ঢাকার সিএমএম আদালত ও যশোরে তিনি মামলা করেছেন।

জানা গেছে, চলতি বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি যশোর কোতোয়ালি থানায় যৌতুকের দাবিতে মারধরের অভিযোগে মামলা করেন চৈতী।

ভুক্তভোগী চৈতী যশোরের পুরাতন কসবা বিবি রোড এলাকার দেওয়ান মিজানুর রহমানের মেয়ে। অন্যদিকে অভিযুক্ত আসিফ আলী জিভাল খুলনার সোনাডাঙ্গার বাসিন্দা নওয়াব আলীর ছেলে। তারা দুজনই খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ২০২৪ সালের ১৬ মার্চ ৫০ লাখ টাকা দেনমোহরে তারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।

জিভাল ও চৈতী উভয়ই আগে বিয়ে করেছিলেন। চৈতীর প্রথমপক্ষে একটি মেয়ে রয়েছে।

চৈতী ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, বিয়ের পর মাসখানেক যেতে না যেতেই জিভাল গাড়ি কেনার জন্য তার কাছে ২৫ লাখ টাকা দাবি করেন। কাঙ্ক্ষিত টাকা দিতে না পারায় তাকে শারীরিকভাবে (চড়-থাপ্পড়সহ লাঠি দিয়ে বাড়ি) আঘাত এবং মানসিকভাবে অত্যাচার করা হয়। পরদিন তিনি যশোরে বাবার বাড়ি চলে যান এবং হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন। যশোরে গিয়েও জিভাল ২৫ লাখ টাকার চাপ দিতে থাকেন। বাবার অর্থনৈতিক দৈন্যতার কথা জানিয়ে টাকা দিতে পারবে না জানালে আবারও তাকে মারধর করা হয়।

তিনি অভিযোগ করেন, তাকে চুলের মুঠি ধরে টেনেহিঁচড়ে মেঝেতে ফেলে চড়, লাথি মারা হয়। এতে তার ঠোঁট কেটে যায় এবং শরীরের বিভিন্ন অংশ জখম হয়। তিনি যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন। এরপর দুপক্ষের মীমাংসার পর তিনি আবার শ্বশুরবাড়িতে ফিরে যান।

চৈতী অভিযোগ করেন, বিয়ের পর থেকে পল্লবী নামে এক বিবাহিত নারীর সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কে জড়ান জিভাল। তাদের এ সম্পর্কে বাধা দেওয়ায় তিনি নির্যাতন শুরু করেন। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার সিএমএম আদালত এবং যশোর আদালতে মামলা করেছি। পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসককে বিষয়টি অবহিত করা হলেও কোনো সুরাহা করা হয়নি। এ কারণে ২০২৫ সালের ২ জুলাই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবর অভিযোগপত্র দিয়েছি। চৈতী বলেন, সবকিছু ভুলে আবারও স্বামী-সংসার করতে চাই।

অভিযোগের বিষয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আসিফ আলী জিভাল বলেন, পরিস্থিতির শিকার হয়ে চৈতীকে বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছিলাম। তবে কখনো একসঙ্গে স্বামী-স্ত্রীর সংসার বা থাকা হয়নি। তাকে মারধরের কোনো প্রশ্নই আসে না। তাকে কেন আমি নির্যাতন করব বা যৌতুক চাইব।

তিনি বলেন, মামলার এজাহারে মারধরের যে ঘটনার দিন ও সময় উল্লেখ করা হয়েছে, সে সময় আমি সাভারে প্রশিক্ষণে ছিলাম। মূলত আমাকে হেনস্তা করতে এ ধরনের মামলা করা হয়েছে। মামলা হয়েছে, আদালতই বিচার করবে।

এদিকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা যশোর কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) কবির হোসেন মোল্লা বলেন, মামলাটির তদন্ত চলছে। চূড়ান্ত প্রতিবেদন, না চার্জশিট হবে, তা এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

Please Share This Post in Your Social Media

গাড়ি কেনার জন্য টাকা না দেওয়ায় নির্যাতন, ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে স্ত্রীর মামলা

পঞ্চগড় প্রতিনিধি
Update Time : ১০:৪৭:৫১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ জুলাই ২০২৫

পঞ্চগড়ের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আসিফ আলী জিভালের বিরুদ্ধে যৌতুকের দাবিতে মারধর ও পরকীয়ার অভিযোগ তুলেছেন তার স্ত্রী দেওয়ান স্বীকৃতি রহমান ওরফে চৈতী। এ ঘটনায় ঢাকার সিএমএম আদালত ও যশোরে তিনি মামলা করেছেন।

জানা গেছে, চলতি বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি যশোর কোতোয়ালি থানায় যৌতুকের দাবিতে মারধরের অভিযোগে মামলা করেন চৈতী।

ভুক্তভোগী চৈতী যশোরের পুরাতন কসবা বিবি রোড এলাকার দেওয়ান মিজানুর রহমানের মেয়ে। অন্যদিকে অভিযুক্ত আসিফ আলী জিভাল খুলনার সোনাডাঙ্গার বাসিন্দা নওয়াব আলীর ছেলে। তারা দুজনই খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ২০২৪ সালের ১৬ মার্চ ৫০ লাখ টাকা দেনমোহরে তারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।

জিভাল ও চৈতী উভয়ই আগে বিয়ে করেছিলেন। চৈতীর প্রথমপক্ষে একটি মেয়ে রয়েছে।

চৈতী ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, বিয়ের পর মাসখানেক যেতে না যেতেই জিভাল গাড়ি কেনার জন্য তার কাছে ২৫ লাখ টাকা দাবি করেন। কাঙ্ক্ষিত টাকা দিতে না পারায় তাকে শারীরিকভাবে (চড়-থাপ্পড়সহ লাঠি দিয়ে বাড়ি) আঘাত এবং মানসিকভাবে অত্যাচার করা হয়। পরদিন তিনি যশোরে বাবার বাড়ি চলে যান এবং হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন। যশোরে গিয়েও জিভাল ২৫ লাখ টাকার চাপ দিতে থাকেন। বাবার অর্থনৈতিক দৈন্যতার কথা জানিয়ে টাকা দিতে পারবে না জানালে আবারও তাকে মারধর করা হয়।

তিনি অভিযোগ করেন, তাকে চুলের মুঠি ধরে টেনেহিঁচড়ে মেঝেতে ফেলে চড়, লাথি মারা হয়। এতে তার ঠোঁট কেটে যায় এবং শরীরের বিভিন্ন অংশ জখম হয়। তিনি যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন। এরপর দুপক্ষের মীমাংসার পর তিনি আবার শ্বশুরবাড়িতে ফিরে যান।

চৈতী অভিযোগ করেন, বিয়ের পর থেকে পল্লবী নামে এক বিবাহিত নারীর সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্কে জড়ান জিভাল। তাদের এ সম্পর্কে বাধা দেওয়ায় তিনি নির্যাতন শুরু করেন। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার সিএমএম আদালত এবং যশোর আদালতে মামলা করেছি। পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসককে বিষয়টি অবহিত করা হলেও কোনো সুরাহা করা হয়নি। এ কারণে ২০২৫ সালের ২ জুলাই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবর অভিযোগপত্র দিয়েছি। চৈতী বলেন, সবকিছু ভুলে আবারও স্বামী-সংসার করতে চাই।

অভিযোগের বিষয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আসিফ আলী জিভাল বলেন, পরিস্থিতির শিকার হয়ে চৈতীকে বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছিলাম। তবে কখনো একসঙ্গে স্বামী-স্ত্রীর সংসার বা থাকা হয়নি। তাকে মারধরের কোনো প্রশ্নই আসে না। তাকে কেন আমি নির্যাতন করব বা যৌতুক চাইব।

তিনি বলেন, মামলার এজাহারে মারধরের যে ঘটনার দিন ও সময় উল্লেখ করা হয়েছে, সে সময় আমি সাভারে প্রশিক্ষণে ছিলাম। মূলত আমাকে হেনস্তা করতে এ ধরনের মামলা করা হয়েছে। মামলা হয়েছে, আদালতই বিচার করবে।

এদিকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা যশোর কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) কবির হোসেন মোল্লা বলেন, মামলাটির তদন্ত চলছে। চূড়ান্ত প্রতিবেদন, না চার্জশিট হবে, তা এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি।