ইসরায়েলি আগ্রাসন
গাজা এখন পুরোটাই ধ্বংসস্তূপ, ২০ হাজারের বেশি প্রত্নবস্তু লুট
- Update Time : ১২:১৭:২০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫
- / ৮ Time View
গাজায় দুই বছর ধরে চলা ইসরায়েলের নির্বিচার বোমা হামলায় ব্যাপক প্রাণহানি, সম্পদ ধ্বংসের পাশাপাশি ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক অনেক স্থাপনা ধ্বংস হয়েছে। বোমাবর্ষণ থেকে রক্ষা পায়নি দুর্লভ স্থাপত্যকীর্তি। উপত্যকায় প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে শুরু করে অটোমান যুগ পর্যন্ত সময়ের ২০ হাজারের বেশি দুর্লভ নিদর্শন হারিয়ে গেছে বা লুট হয়ে গেছে।
সোমবার বার্তা সংস্থা আনাদোলু প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে আসে। গাজার সরকারি গণমাধ্যম কার্যালয়ের প্রধান ইসমাইল আল-থাওয়াবতেহ বলেন, ফিলিস্তিনের পরিচয় মুছে ফেলার লক্ষ্যে ইসরায়েলের সেনাবাহিনী গাজার প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানগুলোকে পরিকল্পিত ও ব্যাপকভাবে ধ্বংস করছে। সরকারি তথ্য অনুসারে, ইসরায়েলের বাহিনী গাজা উপত্যকায় ৩১৬টিরও বেশি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান ও ভবন সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে ধ্বংস করেছে, যার বেশির ভাগই মামলুক ও অটোমান যুগের। বাকিগুলো ইসলামী প্রথম শতাব্দী ও বাইজেন্টাইন যুগের।
ইউনেস্কো ঘোষিত ঐতিহ্যবাহী গাজার ৮০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দের মামলুক যুগের প্রাসাদ কাসর আল-বাশাও ইসরায়েলের পরিকল্পিত লক্ষ্যবস্তু থেকে রেহাই পায়নি। অধিকৃত পশ্চিম তীরের বেথলেহেমের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ কেন্দ্রের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বিশেষজ্ঞ হামুদা আল-দাহদার বলেন, গাজা সিটির পুরোনো শহরের আল-দারাজ পাড়ায় অবস্থিত কাসর আল-বাশা প্রাসাদের ৭০ শতাংশ ইসরায়েলের হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এছাড়া গাজার পাশাপাশি ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরেও চলছে ফিলিস্তিনিদের ইতিহাস মুছে দেওয়ার চেষ্টা। সেখানে বুলডোজার দিয়ে ভেঙে দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন বাড়িঘর, আবাস। অনেক ক্ষেত্রে ধ্বংস হচ্ছে ঐতিহাসিক স্থাপনাও।
গাজা এখন পুরোটাই ধ্বংসস্তূপ। এর ৮০ শতাংশের বেশি স্থাপনা গুঁড়িয়ে দিয়েছে ইসরায়েল। আর অনেক স্থানে এ ধ্বংসযজ্ঞের নিচে চাপা পড়ে আছে ঐতিহাসিক নিদর্শন। অনুসন্ধানী ও শ্রমিকরা ধ্বংসস্তূপের নিচে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা এসব নিদর্শনের খোঁজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে গাজার ঐতিহাসিক পরিচয়ের অবশিষ্টাংশ পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণের জন্য উদ্ধারকাজ চালাতে তাদের তেমন কোনো সরঞ্জাম নেই।
সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বিশেষজ্ঞ হামুদা আল-দাহদার বলেন, গাজার ঐতিহ্যের সঙ্গে যা ঘটেছে, তা কেবল ধ্বংস ছিল না, এটি ছিল সংগঠিত লুটপাট। এটা আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে অপরাধ ও বিশ্বব্যাপী সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ওপর আক্রমণ হিসেবে বিবেচিত অনুশীলন। তিনি বলেন, জাদুঘরে রাখা প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে অটোমান আমল পর্যন্ত সময়ের ২০ হাজারের বেশি বিরল নিদর্শন ইসরায়েলের সামরিক অভিযানের সময় গায়েব হয়ে গেছে।
ইসরায়েলি বাহিনী অভিযান চালিয়ে স্থানটি ধ্বংসের পর হাজার হাজার বিরল ও বৈচিত্র্যময় নিদর্শন নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টিও নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘এসব নিদর্শনের প্রতিটি অংশ ঐতিহাসিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ এবং ফিলিস্তিনের সভ্যতার ইতিহাসের একটি অধ্যায়ের প্রতিনিধিত্ব করে। লুটপাট গুরুতর সাংস্কৃতিক অপরাধ, যা জাতীয় পরিচয় ও মানবতা– উভয় ঐতিহ্যকে প্রভাবিত করে।’ ১৯৬৭ সালে ইসরায়েল গাজা উপত্যকা দখল করে। ১৯৯৩ সালে প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (পিএলও) সঙ্গে সম্পাদিত অসলো চুক্তির আওতায় ১৯৯৪ সালে সেনা প্রত্যাহার করে নেয়। তখন ফিলিস্তিন কর্তৃপক্ষ প্রাসাদটি পুনরুদ্ধার ও মূল্যবান ঐতিহাসিক সংগ্রহ সংবলিত একটি জাদুঘরে রূপান্তর করে।
২০০৫ সালে গাজায় আবারও ব্যাপক হামলা চালায় ইসরায়েল। পরে ২০২৩ সালের অক্টোবরে শুরু হওয়া সর্বশেষ যুদ্ধের সময় প্রাসাদটি ধ্বংস ও এর প্রত্নতাত্ত্বিক জিনিসপত্র লুটপাটের শিকার হয়। গাজায় দুই বছর ধরে চালানো ইসরায়েলের গণহত্যা গত ১০ অক্টোবর যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে শেষ হয়। গণহত্যায় উপত্যকার ৬৯ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যার বেশির ভাগই নারী ও শিশু।
Please Share This Post in Your Social Media
-
সর্বশেষ
-
জনপ্রিয়







































































































































































































